মেয়েটি যেন ভিন্নরকম পর্ব-০১

0
36

#মেয়েটি_যেন_ভিন্নরকম

– এই আপনারা গরমকালেও কেন কম্বল সাজিয়ে রেখেছেন? মানুষ কি সারা বছর কম্বল গায়ে দেয়?

– আপা, এটা তো ওয়াশের দোকান। ওয়াশ করে এভাবে রেখে দিয়েছি। যাদেরটা তারা নিয়ে যাবে।

– আমি লেখাপড়া জানি ভাই। উপরে স্পষ্ট করে লেখা আছে ফাহিম ড্রাই ওয়াশ। কিন্তু এই ঠা ঠা গরমের সময় পর্যন্ত মানুষ কম্বল রেখে দেয়? আবার কিছুদিন পরেই তো শীতকাল চলে আসবে!

– তা আপা বলতে পারি না। অর্ডারের জিনিস।

মাথা চুলকায় কামাল। সে এই দোকানের কর্মচারী। আজ দুপুরে খাওয়া ভালো হয় নাই। ডালে লবণ বেশি ছিলো আর মাছ’টা পঁচা। তার উপরে এই মেয়ে’টার উল্টা পাল্টা প্রশ্নে বিরক্ত লাগে। আবার মনটাও খারাপ হয় – আহা, এতো সুন্দর মেয়েটা এমন পাগল পাগল!

– কি বলছেন এমন বিড়বিড় করে? আমার মনে হয় কি জানেন? আপনারা ইচ্ছা করেই কম্বল সাজিয়ে রেখেছেন, এটা আপনাদের মার্কেটিং পলিসি।

– কিসের পলিসি আপা?

বোকার মতো প্রশ্ন করে হা করে থাকে কামাল।

– মার্কেটিং পলিসি। এমন কম্বল সাজানো দেখে কারো না কারো মনে পড়বে, তাই তো আমার কম্বলও তো এই বছর ওয়াশ করি নাই! তখন সে এখানে চলে আসবে। সাথে আরো কয়েকটা সোয়েটার, শাড়ি বা শার্টও আসতে পারে। তখন আপনাদের ব্যবসা তো রমরমা।

কামালের কাছে সুন্দর মতো পাগল মেয়েটা আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু কামালের কপাল ভালো এজন্য অন্য একটা মেয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।

– অদিতি এই ড্রাই ওয়াশের দোকানে কি করছিস? ব্যাটারি কিনে এসে দেখি তোর পাত্তা নেই। এখানে কেন?

এতোক্ষণ যে কামালের সাথে বকবক করছিলো, তার নাম অদিতি। অদিতি আহসান। কপালের পাশে কিছুটা চুল এলোমেলো হয়ে ঘামে লেপ্টে আছে। বান্ধবী মিতুর সাথে ভার্সিটি থেকে ফিরছিলো। হঠাৎ একটা রিক্সা দাঁড় করিয়ে দেয় মিতু। ওর ঘরের ওয়াল ক্লকটার ব্যাটারী শেষ। মনেই থাকে না। আজ রাস্তার পাশে একটা দোকান দেখে রিক্সা দাঁড় করিয়ে কিনতে গিয়েছিলো। আর সেই ফাঁকে অদিতি নজর বুলাচ্ছিলো আশেপাশে। এমন ঠা ঠা রৌদ্দুরের গরমে দোকানে কম্বল সাজিয়ে রাখা দেখে ওর হাসি পায়। ইচ্ছা করেই বিরক্ত করতে আসে।

অদিতির এই এক দোষ। ইচ্ছা করেই এমন দুষ্টামি করে। ক্যাম্পাসের সব মামারা ওকে এজন্য এড়িয়ে চলে। আড়ালে আবডালে বলে ক্ষেপি! তা একটু ক্ষ্যাপাটে স্বভাবের আছে বৈ কি।

এই যেমন সেকেন্ড সেমিস্টারে ওদের একটা ওয়ার্কশপ হবে। তখন একজন টিচার ফাস্ট সেমিস্টারে কার সিজিপিএ কত জিজ্ঞাসা করে নাম টুকে নিচ্ছিলেন। অদিতি উঠে দাঁড়িয়ে বলে বসলো –

‘স্যার, যদি ভালো সিজিপিএ ধারীরাই আপনার ছাত্র ছাত্রী হয় এবং তারাই এসব ওয়ার্কশপে যেতে পারে তাহলে আমাদের আর ক্লাসে থাকার দরকার কী? আপনি এখন থেকে ওদের নিয়েই ক্লাস করেন। আমরা বাকি একশ জন চলে যাই!

শিক্ষক বেচারা আমতাআমতা করতে লাগলেন। শেষে সবার থেকেই নিলেন। সেই বার সবাই অদিতিকে বাহবা দিয়েছিলো। যদিও এরাই অনেকে তারছেড়া বলে!

মিতুর কাজ শেষ। বাড়ির দিকে চলতে থাকে দুই জন। আগে মিতুর বাসা এরপর অদিতির। মিতু নেমে গেলে বাকি’টা পথ একাই যায় অদিতি। রিক্সা থেকে নেমে বাড়তি একশ টাকা রিক্সাওয়ালার হাতে ধরিয়ে দেয়

– মামা এক গ্লাস শরবত খেয়ে নিয়েন। আপনি ঘেমে ভিজে গেছেন।

আর একটা কথা না বলেই হন হন করে অদিতি ওর বাড়ি ঢুকে পড়ে। রিক্সাওয়ালা কিছুটা অবাক হয়ে তাকিতে থাকে।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে