মেঘ রোদ্দুরের আলাপন পর্ব-০৮

0
2156

#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৮
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ

৪৭.

আজ রিশ এর বিয়ে৷ চারিদিকে মানুষের আনাগোনায় পুরো বাড়ী সজ্জিত ও হৈচৈ।

রিশ এক হাত মুখে নিয়ে নখ কামড়াচ্ছে আর অন্য হাত দিয়ে লেহেঙ্গার দোপাট্টা কুঁচি কুঁচি করছে। চিন্তিত ভঙ্গিতে এপাশ থেকে ওপাশ আর ওপাশ থেকে এপাশ করছে। মিসকাত হাতে রাখা ফোনটা বিছানায় ফেলে বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘রিশ তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো আজব।

‘রিশ এখন মিসকাতের পাশে বসে পড়ে। কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বললো,

“যদি না আসে?

‘আসবে আসবে দেখিস ঠিক আসবে। থাকতে পারবেনা ঘরে বসে।

‘ওনি যে পাথর মানুষ সে তোকে আর কি বলবো।

” যতোই পাথর মানুষ হোক বেবি। পাথরের বুকে ভালোবাসা কোমলতা এনে দেয়।

‘এই মিসকাত দেখ বিয়ের দিন একদম বাংলা ছবির শাবনূর এর ডায়ালগ দিবিনা।

“যাক বাবা ডায়ালগ দিলাম কই?

‘আমার ভাইটারে এইসব ডায়ালগ বলেই পটিয়েছিস।

‘ম মানে?

‘তুই কি ভেবেছিস? আমি জানিনা যে কলেজ লাইফ থেকেই তুই আর ভাইয়া রিলেশনশিপে। আর আমি এইটাও জানি ভাইয়ার সাথে সবার সামনে তুই একদম স্বাভাবিক।

মিসকাত অবাক হয়ে বললো, ‘রিশ ত..মিসকাতকে সব কথা শেষ না করতে দিয়ে রিশ বললো,

‘আমার ভাইটা যে তোকে অনেক ভালোবাসেরে মিসকাত। তাইতো ফোনের ওয়ালপেপারে তোর ছবি।

মিসকাত লজ্জামাখা চেহারায় নুয়ে যায়। রিশ মুচকি হেসে বললো, ‘থাক লজ্জা পেতে হবেনা। এখন আমার চিন্তা কর।

‘ডন্ট ওয়ারি বেবি দেখিস ঠিক আসবে।

৪৮..

স্বাদ গাড়ি বের করো।

‘কেনো স্যার?

‘তোমার ম্যামকে আনতে যাবো তাই।

স্বাদ অবাক হয়ে বললো, ” স্যার কোন ম্যামকে? না মানে রিশ ম্যাম!

“ইয়েস।

‘বাট স্যার আজতো ম্যাম এর বিয়ে।

‘সো হোয়াট স্বাদ?

‘না মানে কিছুনা স্যার। আমি গাড়ি রেডি করছি।

গ্রেনি…গ্রেনি…

‘কি হয়েছে জেইন?

‘ওহ বাপি তুমি? গ্রেনি কোথায়?

” এইতো দাদুভাই। কি হয়েছে?

‘বাপি গ্রেনি আমি কিছু কথা বলতে চায়।

‘কি কথা দাদুভাই?

‘হুম কি কথা?

‘আসলে বাপি আমি বউ আনতে যাচ্ছি।

মিস্টার সেহের মেহেরিয়া আর রিতা মেহেরিয়া হেসে বললে, “রিশ কে তাইতো?

” জেইন অবাক হয়ে বলে “তোমরা কিভাবে জানলে?

‘স্বাদ বলেছে।

” কি!স্বাদ?

“হুম স্যার আমিই বলেছি দাদিমা আর বড় স্যারকে। স্যার আর টাইম ওয়েস্ট করা যাবেনা চলুন।

জেইন স্বাদকে জড়িয়ে ধরে বললো, ” থেঙ্কিউ স্বাদ। তোমার জন্যই আজ আমি এতটুকু।

৪৯.

রিশ কবুল বলতে যাবে এমন সময় গিয়ে জেইন তার হাত ধরে দাঁড় করায়।

“আরে কৃ কি করছেন ছাড়ুন। বাবাই দাভাই আমাকে ধরো। রিশ এর কথায় কেউ হেলদোল দেখালোনা। রিশকে জেইন জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে গাড়ী স্টার্ট দিলো। আর স্বাদকে বললো, ” স্বাদ তুমি এদিকটা সামলে এসো।

‘ওকে স্যার।

থেঙ্কস ম্যাম। আপনি সবাইকে ম্যানেজ করার জন্য।

“আপনাকেও। মিসকাত হেসে বললো।

‘মমতা আমরাতো জানতামইনা যে রিশ জেইনকে ভালোবাসে৷ মিসকাত তুমি কিভাবে জানলে?

” আংকেল আমি রিশ এর বেষ্ট ফ্রেন্ড জানাটা অস্বাভাবিক নয়।

‘হুম রাইট। আমিও জানতাম তুমি কিছুনা কিছুতো জানোই। নয়তো কি রিশ এমনি এমনি বিয়েতে রাজী হয়ে যেতো?

‘ওফ রিলজেম বাদ দে এখন দেখ আহানের সাথে নিহার বিয়েটা। বেচারা এই কয়েকদিন বেশ অভিনয় করেছে। আর এমন অভিনয় করেছে যে মার খেয়েও এসেছে। মমতা ওয়াহিদের কথা শুনে হো হো করে হেসে দেয় উপস্থিত সবাই।

৫০.

মিস্টার জেইন আপনি এমন করতে পারেন না। ছাড়ুন আমায়। জেইন ড্রাইভ করতে করতে বললো,

‘প্রশ্নই উঠেনা।

“আজব আপনি জানেন আপনি কি করেছেন?

‘জানিনা আর জানতে চাইওনা। তবে তুমি একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো রিশ। এখন তুমি মিস রিশ ওয়াহিদ একটু পরই হবে মিসেস রিশ মেহেরিয়া।

রিশ বড় বড় চোখ করে বললো, ‘কিই!

৫১.

বিয়ে সম্পূর্ণ হতেই রিশ পা বাড়ায় বাইরের দিকে। কাজী অফিসে নিয়ে এসেছিলো জেইন তাকে। রিশ যেতেই জেইন তার হাত শক্ত করে ধরে রাখে৷ দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ‘এখন তুমি আমার ওয়াইফ। সো আমার অনুমতি ছাড়া কোথাও যাবেনা। রিশ নাক ফুলিয়ে বললো,” ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছে এখন?

‘ধরে নাও তাই।

জেইন আর রিশ নামে মেহেরিয়া হাউজে।

রিশ একপলক সামনে তাকিয়ে দেখলো। ফুলে ফুলে আলিঙ্গন পুরোটা বাড়ী জুড়ে। রিশ কিছু বুঝে উঠার আগেই জেইন তাকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিয়ে যাচ্ছে সদর দরজায় আর কিছু মেয়ে শাড়ী পড়া অবস্থায় ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে তাদের। তারা সদর দরজায় যেতেই একজন সাদা ফ্রেমের চশমা পরা মহিলাকে দেখতে পেলো রিশ। মহিলাটির বয়স বড়জোড় ৫০ উর্ধ্বো। হুইল চেয়ারে বসে আছেন তিনি। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিমাখা একজন সাবলম্বী পুরুষ। জেইন রিশকে কোল থেকে নামিয়ে হেসে বললো, “গ্রেনি বাপি নিয়ে এসেছি তোমাদের বাড়ীর নতুন সদস্যকে। রিশ এতোক্ষণ বুঝতে পারলো, যে এরা জেইনের দাদিমা আর বাবাই। রিশ জেইনের গ্রেনি আর বাপিকে সালাম করলো আর হাসিমুখে বললো,

‘কেমন আছেন আপনারা?

‘বইনরে ভালো ছিলাম না। সারাদিন একা একা কাটাতে হয়। কিন্তু এখন আর খারাপ থাকবোনা। আমার গল্প করার মানুষ এসে গেছে। রিশ এক পলক জেইনের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে রাখলো ক্ষনিকখন।

৫২.

রিশকে ৪০ মিনিট ধরে ডাকছে জেইন। কিন্তু তার ওয়াশরুম থেকে এখনো বের হওয়ার নাম নেই। ওয়াশরুমের দরজা খুলতে পাওয়ার শব্দে ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সেদিকে তাকায় জেইন। নীল কালার থ্রি পিসটাতে যেনো পরী লাগছে রিশকে। ফরসা দুধে আলতা শরীরের ঘড়নে রিশকে অনেক সুন্দর লাগছে। ভেজা চুল এ টুপ টুপ করে পানি পরছে। রিশ তোয়ালো দিয়ে ‌চুল ঝাঁড়ছে। কখন জেইন তার সামনে চলে গেছে সে টেরও পায়নি।

” আ আপ্ আপনি!

জেইন রিশকে হাত দিয়ে হেচকি এদন দিয়ে নিজের কাছে মিশিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে