#মেঘ রোদ্দুরের আলাপন
#পার্টঃ০৬
#Writer:মারশিয়া জাহান মেঘ
৩৪.
“তাহলে রিশ ওয়াহিদ কোথায়?
‘ওপাশ…
‘ঠিক আছে আমি দেখছি। সব ইনফরমেশন আমাকে দিবে।
‘স্বাদ..বিডিতে যে আছে সে রিশ নয়।
‘হোয়াট!
‘হুম।
‘স্যার এইটা কি করে সম্ভব!
‘জানিনা। না এইবার দেখছি মাঠে আমাকে নামতে হবে।
‘স্যার তাইতো বলি ফর্মোলা দিচ্ছেনা কেনো।
‘আরে স্বাদ ওর কাছে ফর্মোলা থাকলেতো দিবে।
‘মানে!
‘মানে ফর্মোলা এখনো সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ এর কাছে।
” স্বাদ মেয়েটাকে কোম্পানিতে জয়েন করাও আর নজর রাখো। এমন নজর রাখো যে মেয়েটাকে যেনো ইজিলি বুঝতে পারি আমি যে আসলে সে চায়টা কি।
‘ওকে স্যার।
স্বাদ যেতেই জেইন বিছানায় বসে থুতনিতে এক হাত গুঁজে ভাবলো, ‘আমাকে ছদ্মবেশ নিতে হবে।
৩৫.
“রিশ তুই কি করছিস? হঠাৎ মিসকাত এর কথায় চমকে উঠে রিশ। আমতা আমতা করে বলে, ‘ক্ কই আমিতো আমাট গয়নাগুলো দেখছিলাম। বাবাই দিয়েছে।
‘ওহ তাই বল। সারাদিন দরজা বন্ধ করে কি করিস বলতো? আমার বুঝি একা লাগেনা?
‘ওলে আমার জানরে..একা লাগে বুঝি? তাহলে আমার ভাই সারাদিন তোর সাথে যে গল্প করে ওইটা কি?
‘না.. মানে ওফ রিশ তুই ওনা….
মিসকাতের লজ্জা দেখে রিশ হেসে ফেলে। আর মনে মনে ভাবছে,’ ওফ এই বিপদটা যে কেনো এখন আসতে গেলো।
‘মিসকাত তুই যা…টিভি দেখ আমি অফিসের একটা কাজ সেরেই আসছি।
‘ঠিক আছে। মিসকাত চলে যাওয়ার পর রিশ দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে আলমারি ঘাটতে লাগলো। আর বিরক্ত নিয়ে বললো, ‘ওফ এই রিশ মেয়েটা ফর্মোলাটা কোথায় রেখেছে? এতোদিন ধরে খুঁজছি পাচ্ছিনা। নাহ এইবার বসকে কল করতেই হয়।
‘হ্যালো বস…
ওপাশ….
” বস আমার মনে হয়না এই অফিসার নিজের বাড়ীতে কিছু রেখেছে বলে। কি করা যায়? আর এইদিকে আমাকে রিশ ভেবে একটা জব অফার এসেছে। বস আমি নিশ্চিত ওই মেয়ের কাছেই আছে ফর্মোলা।
ওপাশ..
“স্যার গয়না-ঘাটি সব লুট করে নিয়ে আসবো?
ওপাশ…
‘ওকে স্যার।
৩৬.
স্বাদ মেয়েটা বেরিয়ে যাচ্ছে ওয়াহিদ হাউস থেকে। তুমি অল টিম রেডি করো। আর হুম আমার লোকেশন ট্রেস করো। আমার মন বলছে মেয়েটা এখন যেইখানেই যাচ্ছে সেইখানে ওদের লিডার এন্ড মিস R.W আছেন।
‘ওকে স্যার।
কল কেটে জেইন নকল রিশ এর পিছু নেই। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে সে। নকল রিশ এর গাড়ি থামে একটা পুরনো বাংলোর সামনে। রিশ তাড়াতাড়ি বের হয়ে ঢুকে পড়ে সে বাংলোর ভেরতে।
‘তার মানে এইখানেই ক্যাপ্টেন আছে! আর মিস রিশ ও? না আমাকে ঢুকে দেখতে হবে। জেইন অতি সাবধানে ভেতরে প্রবেশ করে। ভেতরে অনেকগুলো রুম তাই জেইন বুঝতে পারছেনা কোনটাতে ঢুকেছে নকল রিশ। জেইনের পা থেমে যায় বাংলোর শেষ কোনায় রুমটার কাছে। সেইখানে কথা বলছে নকল রিশ ক্যাপ্টেন ডনের সাথে।
‘বস আমি ওর পুরো বাড়ি চেকিং করেছি কিছুই নেই।
‘তোমাকে প্লাস্টিক সার্জারি করে পাঠিয়েছি কি খালি হাতে আসার জন্য?
‘বস আমার কিছুই করার ছিলোনা। আমি নিশ্চিত ওই মেয়েটার কাছেই আছে।
‘হুম সেতো আমি জানি কিন্তু কেথায়!
‘বস চলুন দেখি।
‘দেখবোতো বটেই আগে তোমাকে উপরে পাঠায়..এইটা বলেই ক্যাপ্টেন ডন শুট করে নকল রিশকে৷ সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে যে জেইন নির্বাক। তার কিছুই করার ছিলোনা। ক্যাপ্টেনকে বের হতে দেখেই জেইন তাড়াতাড়ি দরজার বাইরে থেকে সরে যায়। ক্যাপ্টেন যেইদিকে যাচ্ছে পিছু পিছু জেইনও সেইখানে যাচ্ছে। হঠাৎ জেইন সি আইডি অফিসার রিশ ওয়াহিদকে দেখতে পেলো। হাত পা বাঁধা একটা চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে৷ মুখে টেপ।
‘স্যার আমরা সারা বাংলো ঘিরে রেখেছ।
‘স্বাদ সাবধানে থাকতে বলো অল টিমকে। মিস রিশ এর বিপদ অনেক। কোনোভাবেই যেনো কেউ টের না পায় যে আমরা ঘিরে রেখেছি। নয়তে মিস রিশ এর ক্ষতি করে দিবে।
‘ওকে স্যার।
জেইন ফোনটা পকেটে রেখে, হাতে বন্দুকটা তাক করে এগিয়ে যায় ধীরে ধীরে। হঠাৎ গিয়ে শুট করে ক্যাপ্টেন ডনকে। সবাই ঘিরে ফেলে জেইন কে। ওদের টিম থেকে একজন বললো,
‘বন্দুক নিচে… বন্দুক নিচে রাখ…
‘দেখ তোদেরকে কিন্তু সারা বাড়ি ঘিরে রেখেছে অল সি আই ডি টিম পালাতে পারবিনা।
‘হাহা সি আই ডি ধরবে ক্যাপ্টেন ডনকে? ওই ফর্মোলা দিয়ে দে তারপর আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাবো।
‘কখনো পাবিনা ওই ফর্মোলা।
‘ওহ দিবিনাতো? দেখ কি করি.. জেইনকে শুট করতে যাবে এমন সময়…স্বাদ আর অল টিম একে একে সবগুলোকে শুট করে।
‘স্বাদ নিয়ে যাও একে।
এরেস্ট হয় ক্যাপ্টেন ডন। জেইন রিশ এর দিকে একটু তাকিয়ে বন্দুকটা কোমড়ে গুজে স্বাদকে বললো, ‘স্বাদ ওনাকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করো৷ ওনি সিক।
‘ওকে স্যার।
৩৭.
রিশ টিপ টিপ করে চোখ খুলতেই নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করে। জেইন গম্ভীর ফেইস নিয়ে ভেতরে ঢুকে। হাতে ফুল।
‘মিস রিশ কেমন আছেন?
‘রিশ জেইনের কন্ঠ শুনে রিশ মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এ যেনো অভিমানের আকাশ।
কথা বলবেন না?
“না”
‘ঠিক আছে। আমি পরে এসে কথা বলবো..এইটা বলেই জেইন চলে যায়। রিশের দুই গাল বেয়ে পানি ঝড়ছে।
‘রিশ…
কান্না করতে করতে রিলজেম রিশকে ডাকে। রিশ তার দাভাইকে দেখে হো হো করে কেঁদে দেয় ছোট বাচ্চাদের মতো। মমতা ওয়াহিদ আর শাহারিয়া ওয়াহিদ নিরবে চোখের পানি ফেলছে। ওনাদের কষ্ট হচ্ছে এইটা ভেবে যে তাদের মেয়ে সেজে একটা মেয়ে ঘুরে বেরিয়েছে আর তারাই জানেনা?
৩৮.
জেইন কারো সাথে কোনো কথা না বলে পরখ করে রুমে গিয়ে দম করে দরজা লাগিয়ে দেয়। সোজা ওয়াশরুমে গিয়ে ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকে ৮ বছর আগের কথা।
‘একটা মেয়ে এসে জেইনকে বলে ‘আপনাকে আমার ভালো লাগে ভাইয়া’
জেইন তখন সবেমাত্র সি আই ডি টিমে জয়েন করে।
জেইন সামনে থাকা মেয়েটিকে গুটিয়ে একবার দেখে নিলো। পিংক কালার থ্রিপিস পরা। চুলগুলো স্টেটের ফলে ছেড়ে রেখেছে সে। মুখে এক চিলতে হাসি। চোখে কাজল। হাতে ঘড়ি। সাইড ব্যাগ। সব মিলিয়ে বুঝাই যায় যে সে ভার্সিটির স্টুডেন্ট।
জেইন অবাক হয়৷ ভালোও লাগে আবার ভাইয়াও!
‘এই পিচ্চি নাম কি তোমার?
মেয়েটি তখন নাক মুখ খেঁচে তার আশেপাশে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বলেছিলো,”আমাকে বলছেন?
‘এইখানে তুমি ছাড়া কেউ আছে?
মেয়েটি তখন মুখ ফুলিয়ে বলেছিলো,
“আমি পিচ্চি না হু। ভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্রী। আমার নাম রিশ ওয়াহিদ। আর কোন দিক দিয়ে আমাকে আপনার পিচ্চি মনে হয়।
‘বাব্বাহ তুমি এতো বড়?
‘হুম।
‘আচ্ছা পিচ্চি আমি এখন যায়?
‘আরে উত্তরটাতো দিয়ে যান ভাইয়া। আপনাকে আমার অনেক ভালো লাগে।
‘আরে পিচ্চি এতো আবেগ ভালোনা। এইটা বলে সেইদিন জেইন বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে খিল খিল করে হেসে উঠে রিশ এর কান্ডগুলো মনে করে। এরপর যতবারই রিশ এর সাথে দেখা হয়েছে ততবারই রিশের নাকি তাকে ভালো লাগে শুনতে শুনতে পাগল করে ফেলেছে। দিন দিন রিশ এর পাগলামো বাড়তেই থাকে। হঠাৎ জেইন একদিন চলে গেলো দেশের বাইরে। সেইখানে গিয়ে রিশ এর মায়াবী চেহারা বার বার ভাসমান হলেও সব ভুলে কাজে মন দিয়েছে সে। এরপর একদিন খবরের কাগজে দেখে ‘ধর্ষকদের হাত থেকে এই মেয়েটিকে বাঁচান সি আই ডি অফিসার রিশ ওয়াহিদ। রিশ এর নাম আর ছবি দেখে চমকে উঠে সে৷ এরপর ফরেনার টিম জানতে পারে বাংলাদেশে একটা ফর্মোলা চুরি হয়েছে। যা দ্বারা মানুষ সুস্থ হতে পারে। কিন্তু ক্যাপ্টেন ডন তা চেয়েছিলো অন্য দেশকে বিক্রি করে দিতে। এই ফর্মোলা রক্ষার দায়িত্ব জেইন যখন শুনে তাকে আর রিশকে দেওয়া হয়েছে তখন সে বেশ চমকে যায়। এরপরতো বাংলাদেশে চলেই আসলো।
‘দাদুভাই দরজা খুলো”… গ্রেনির ডাকে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে জেইন। হাক ছেড়ে বলে, ‘আসছি গ্রেনি তুমি টেবিলে গিয়ে বসো।
চলবে…