মেঘ বিয়োগের মৌসুম পর্ব-২৩

0
630

#মেঘ_বিয়োগের_মৌসুম
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_২৩

” তোমার মনে হয় না আমার ভাইয়াকে তোমার মেনে নেওয়া উচিৎ? ভাইয়া তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি ওর চোখে তোমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি, ওয়াজিহা। ”

দুজনের সাজ কমপ্লিট হয়ে যাওয়ায় বাড়িতে যাবে বলে ফারাজকে আসতে বলে মৌ আর বেলা পার্লারেই বসে ছিল। মৌ হঠাৎ এমন কথা বলায় চমকে যায়। ফারাজকে সে নিষেধ করেছিল এসব বিষয় নিয়ে কারো সাথে কথা বলতে। ফারাজ তার কথা রাখলো না!

বেলাকে চুপ থাকতে দেখে মৌ আবার বলে ওঠে,” তোমার কোনো চিন্তা করতে হবে না। আমি আমার বাবা-মার সাথে কথা বলব তোমাদের বিষয়ে।”

বেলা একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলে,” এটা আমাদের বিষয় না, ভাবি। এটা তোমার ভাইয়ের বিষয়। আমি মাস সাতেকের মাথায় অন্য কারো সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখতে পারব না। ”
” তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশিই কঠোর হচ্ছো?”
” না। একদমই মনে হয় না। আজ তোমার বিয়ে। এসব বাদ দাও তো। আমার ভাইকে যেহেতু বিয়ে করছো আমাকে সহ্য করতেই হবে এছাড়া কোনো উপায় নেই।”
” প্লিজ ওয়াজিহা।”
” ভাবি এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না প্লিজ। ”

মৌ আর কিছু বলে না। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় ওয়াজিহাকে এভাবে বলে কাজ হবে না। বলতে হবে ওয়াহাজকে। সে বড়ো ভাই। বোনের ভালো সে নিশ্চয়ই বুঝবে।

ফারাজ পার্লারের সামনে এসে গাড়িতে বসেই মৌকে কল দেয়। একবার, দুইবার, তিনবারেও সে কল রিসিভ করে না। বাহিরে বসে বারবার হর্ণ বাজায় তবুও কেউ বাহিরে না আসায় আর কোনো পথ না পেয়ে কন্টাক্ট নম্বর থেকে বেলার নাম্বার খুঁজে বের করে। স্ক্রিনে বেলার নাম এবং নম্বর জ্বলজ্বল করছে। নম্বরটা থাকা সত্বেও সে কখনো নিজের ইচ্ছেতে বেলাকে ফোন দেয়নি। স্ক্রিনে থাকা নম্বরটিতে কল দিতে গিয়েও সে দিতে পারছে না। সে জানে বেলা তার কল পেয়ে তার বিষয়ে হয়তো ভুল আবারও ভাবতে পারে।

ফারাজ মৌয়ের নাম্বারে আবার কল দিবে তখনই মৌয়ের নম্বর থেকে তার ফোনে কল আসে। সে তাড়াতাড়ি কলটা রিসিভ করে। বলে, ” তাড়াতাড়ি নিচে চলে আয় আমি কখন থেকে বাইরে বসে আছি। ফোন ধরিস না কেন?”

মৌ আমতা আমতা করে বলে, ” ভাইয়া, ফোনটা সাইলেন্ট ছিল আমি টের পাইনি। ”
” ফোন সাইলেন্ট থাকতে হবে কেন? তোকে কেউ নিশ্চয়ই অযথা কল দিবে না। আমি এখানে দশ মিনিট যাবত বসে আছি আর তুই কল ধরছিস না। জলদি নিচে চলে আয় আমি ওয়েট করছি। ”

” আচ্ছা আসছি।” বলেই মৌ বেলাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে আসে৷

ফারাজ সামনের দিকে তাকাতেই দুজনকে দেখতে পায়৷ একজন বউ সাজে এগিয়ে আসছে তার একটু পিছনেই একজন হালকা সাজে এগিয়ে আসছে।

বোনের দিকে নজর যায় তার। কী সুন্দর লাগছে তার ছোটোবোনকে৷ আজই হয়তো বাবার পর বোনের ওপর তার যে অধিকার ছিল সেটা হারাবে। বিয়ের আগে একটা মেয়ে বাবার পরে ভাইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয় বেশি। যেকোনো বিপদে বাবা আগে এগিয়ে যেতে না পারলেও ভাই ঠিকই ছুটে যায়। বাহিরের খারাপ পরিবেশ থেকে সবসময় বাঁচিয়ে রাখে৷ বোনের দিকে কেউ খারাপ নজরে তাকানোর আগেই যেন ভাইয়ের হাত চলা শুরু হয়ে যায়। সেই বোন বিয়ের পর সব সম্পর্ক ছেড়ে একটা মানুষের কাছে চলে যায়৷ ওই একটা মানুষ কখনো কখনো সেই মেয়েটাকে কোনোসময় তার ফেলে আসা পরিবারের অভাব পূরণ করে দেয় আবার কেউ কেউ বারবার মনে করিয়ে দেয় এটা তোমার বাড়ি না, মেয়েদের কোনো বাড়ি হয় না, মেয়েরা যখন যা ইচ্ছে তা করতে পারে না।

বেলা আর মৌ গাড়ির দরজা খুলে নিজেদের সিটে এসে বসে। মৌ উচ্ছ্বসিত হয়ে ভাইকে জিজ্ঞেস করে,” আমাকে কেমন লাগছে, ভাইয়া?”

ফারাজ গাড়ি স্টার্ট করে বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে সামনে থাকা গ্লাসে একবার মৌকে দেখে নেয়। মুখের হাসিটা লুকিয়ে বলে,” তোকে এতো সাজতে বলেছে কে? কত কেজি ময়দা মেখেছিস খেয়াল আছে? কম সাজতে পারিসনি একটু? ভূত ভূত লাগছে। তোকে দেখে তোর বর পালিয়ে না গেলে হয়েছে। ”

ফারাজের কথা শুনে মুখ গোমড়া করে ফেলে মৌ। মৌ নরমস্বরে ফারাজকে আবার বলে,” আসলেই সাজ বেশি হয়ে গেছে?”

ফারাজ কিছু না বলে মুচকি হাসতে থাকে। বেলা পাশে থেকে মৌকে জড়িয়ে ধরে বলে,” মানুষের কথায় একদম কান দেবে না। তোমাকে দারুণ লাগছে। দেখছ না তোমাকে খারাপ লাগছে বলে কেমন হাসছে!”

কথাটা বলামাত্র বেলা এক প্রকার জিহ্বায় কামড় দেয়। ফারাজ বেলার দিকে তাকাতেই গাড়ির গ্লাসে ফারাজের তাকানো দেখে চোখ নামিয়ে নেয় সে।

বেলা বাড়ির কাছাকাছি আসতেই ফারাজকে উদ্দেশ্য করে বলে,” সামনে নামিয়ে দিয়েন তো।”

মৌ পাশে থেকে বলে ওঠে,” তুমি আমার সাথে যাবে না?”
” আমি তোমার ননদ হই। বিয়েতে বরের সাথে যাব। তুমি চলে যাও আমরা একটু পরেই চলে আসব।”

ফারাজ বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামিয়ে দেয়। বেলা মৌয়ের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়। বেলা চলে যাওয়ার সাথে ফারাজ আবার গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করে। মৌকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে ফারাজ মৃদু হাসে।

মৌকে বলে,” আমার বোনকে আজ অপ্সরা লাগছে সেটা কি আমার বোন জানে?”
” সত্যিই সুন্দর লাগছে! ”
_______

বেলা বাসায় কলিংবেল বাজাতেই ওয়াহাজ এসে দরজা খুলে দেয়। বেলাকে দেখে এক পলকে তাকিয়ে থাকে। মৃদু হেসে বলে,” আমার বোনকে বিয়ের দিন হয়তো আরও বেশি সুন্দর লাগবে তাই না?”

বেলা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,” কী যে বলো না ভাইয়া! আমার নাকি আবার বিয়ে হবে।”

বেলা নিজের ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে খেয়ে নেয়।

ওয়াহাজ তিনটা পাঞ্জাবি নিয়ে এসে বলে,” দেখো তো কোনটা পরব?”

বেলা পাঞ্জাবি তিনটা দেখে বলে,” তোমার শেরওয়ানি কোথায়? আজকে শেরওয়ানি পরবে। পাঞ্জাবি পরার অনেক সময় পাবে। ”
” আমার ওটা পরতে ইচ্ছে করছে না।”
” ভাইয়া..। তোমাকে আজ আমি রেডি করে দেব চলো। তুমি তোমার জন্য কেনা পোশাক পরে নাও আগে আমি আসছি।”
” ছেলে মানুষের আবার কী রেডি হতে হবে? শেরওয়ানি আর পাজামা পরে বের হবো।”
” মোটেও না। তুমি যাও আমি আসছি।”বেলা বাসায় কলিংবেল বাজাতেই ওয়াহাজ এসে দরজা খুলে দেয়। বেলাকে দেখে এক পলকে তাকিয়ে থাকে। মৃদু হেসে বলে,” আমার বোনকে বিয়ের দিন হয়তো আরও বেশি সুন্দর লাগবে তাই না?”

বেলা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,” কী যে বলো না ভাইয়া! আমার নাকি আবার বিয়ে হবে।”

বেলা নিজের ব্যাগটা সোফার ওপর রেখে ফ্রিজ থেকে পানির বোতল বের করে খেয়ে নেয়।

ওয়াহাজ তিনটা পাঞ্জাবি নিয়ে এসে বলে,” দেখো তো কোনটা পরব?”

বেলা পাঞ্জাবি তিনটা দেখে বলে,” তোমার শেরওয়ানি কোথায়? আজকে শেরওয়ানি পরবে। পাঞ্জাবি পরার অনেক সময় পাবে। ”
” আমার ওটা পরতে ইচ্ছে করছে না।”
” ভাইয়া..। তোমাকে আজ আমি রেডি করে দেব চলো। তুমি তোমার জন্য কেনা পোশাক পরে নাও আগে আমি আসছি।”
” ছেলে মানুষের আবার কী রেডি হতে হবে? শেরওয়ানি আর পাজামা পরে বের হবো।”
” মোটেও না। তুমি যাও আমি আসছি।”

ওয়াহাজ রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। বেলা রুমে এসে ড্রয়ার থেকে সুরমা, আতর, বরের টুপি প্রয়োজনীয় সবকিছু দিয়ে ওয়াহাজকে রেডি করে দেয়। সম্পূর্ণ রেডি হওয়া হলে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

পাশে দাঁড়িয়ে বলে,” দেখো তো বরকে কেমন লাগছে?”
” দারুণ লাগছে। আমি এতো সুন্দর জানতামই না তো।”

বেলা ফিক করে হেসে ফেলে। হাসি থামিয়ে বলে,” আমার ভাইয়া সুন্দর না হলে কি ভাবি এমনি এমনি প্রেমে পড়েছে নাকি?”

বেলা একটু থেমে আবার বলে,” ভাবিকে আজ দারুণ লাগছে। দেখবে? না থাক বিয়ে বাড়িতে গিয়েই বউকে দেখবে। ”

ওয়াহাজের ফোন বেজে ওঠে। ফারাজ কল করেছে। ওয়াহাজ কল রিসিভ করলে ফারাজ ওপাশ থেকে বলে ওঠে,” ভাইয়া, আমি কি আসব আপনাদের নিতে?”
” কোনোদিন দেখেছ বরকে নিতে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে মানুষ আসে? কখন আসতে হবে সেটা বলো শুধু।”
” ভাইয়া, ওদের পার্লার থেকে আসতে এমনি লেট হয়ে গেছে। আপনি যদি পারেন আধাঘণ্টার মধ্যে চলে আসেন।”
” ঠিক আছে।”
” তাহলে কি গেইটে ব্যবস্থা করতে বলব সবকিছুর?”
” হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”
” ঠিক আছে ভাইয়া। রাখছি তাহলে।”
” ঠিক আছে।”

ওয়াহাজ কল রেখে বেলাকে বলে,” আধাঘণ্টার মধ্যে যেতে বলেছে। আমাদের যেতে লাগবে পনেরো মিনিট। মানে আমাদের হাতে আরও পনেরো মিনিট আছে। ”
” কী করব আমরা এখন?”
” এক্ষুনি বের হবো। এদিক ওদিক একটু ঘুরে তারপর ওখানে যাব।”
” বিয়ে করতে যাওয়ার আগে ঘুরবে? অদ্ভুত।”
” অবিবাহিত অবস্থায় শেষ বেড়ানো। চলো চলো সময় নষ্ট করা যাবে না।”

ভাইয়ের কথায় মুচকি হাসে বেলা। এই মানুষটাই কিছুদিন আগে কী গম্ভীরই না ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে এসে মানুষ আসলেই বদলে যায়। কিছু বদলানো হয় কষ্টের আর কিছু বদলানো হয় সুখকর। তার ভাইয়ের এই বদলে যাওয়াটা নতুন ভাবির জন্য অবশ্যই সুখকর।

#চলবে……..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে