#মেঘ_বিয়োগের_মৌসুম
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
#পর্ব_১৯+২০
মৌ বেলাকে খাইয়ে দিতে থাকে। খাওয়ানো যখন শেষের দিকে তখন বেলাকে নিম্নস্বরে বলে ওঠে,” ফারাজ ভাইয়া কাউকে পছন্দ করে। সে নাকি ডিভোর্সি। ভাইয়া কি তোমাকে পছন্দ করে? তোমাকে বলেছে কিছু?”
মৌয়ের কথায় যেন খাবার গলায় আটকে যায়। মৌ সাথে সাথে পানির গ্লাস এগিয়ে দেয়। বেলা তাড়াতাড়ি করে পানিটা খেয়ে নেয়। গ্লাসটা রেখে ক্ষীণগলায় বলে,” না, উনি আমায় কিছু বলেননি। আমাকে কেন পছন্দ করবেন? নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে।”
” আম্মা সন্দেহ করেছে ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে৷ এ বিষয়ে আম্মা কথা বলতে পারছিল না তাই বলল তোমার থেকে শুনতে। ”
” না, এরকম কিছুই না।”
” ভাইয়া কিছুদিন ধরে নিয়মিত থেকে অনিয়মিত হয়ে গেছে। সিগারেট বেশি খাচ্ছে, বাড়িতে থাকছেই না বলতে গেলে। আম্মার সাথে ওর গলায় গলায় ভাব অথচ তার সাথেও কথা বলছে না। খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছে না। সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে আমি সেদিন ওর রুমে গিয়েছিলাম, দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে আর চোখের পানি মুছছে। ভাইয়া খুবই ইন্ট্রোভার্ট, কাউকে কিচ্ছু বলে না।”
বেলা চুপ হয়ে যায়। একটা মানুষ তাকে ভালোবেসে এতো কষ্ট পাচ্ছে অথচ সে কিছুই করতে পারবে না। যে মানুষগুলো তাকে পছন্দ করছে তারা যখন জানবে ফারাজের পছন্দ করা মেয়েটা সে নিজেই তাহলে সম্পর্কগুলো খেই হারাবে।
বেলাকে চুপ থাকতে দেখে মৌ আবার বলে ওঠে,” তোমাকে যেহেতু বলেনি তাহলে হয়তো তুমি নও। বাহিরের কেউ হয়তো। তুমি হলে তো আমাকে অন্তত তোমার কথা বলতো। ”
বেলা মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানায়। মৌ বলে,” তুমিই বলো এটা কি আসলেই মেনে নেওয়া যায় যে, ভাইয়া এতো ভালো একটা অবস্থানে আছে আর সে কি না একটা ডিভোর্সি মেয়েকে বিয়ে করতে চাইছে!”
বেলা স্বাভাবিক গলায় বলে ওঠে,” বাদ দাও তো ওসব। তোমার ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে। এখন ওসব চিন্তা না করে বিয়েতে মন দাও। ”
দরজার বাহিরে থেকে ফাহমিদা বেগম জানান ওয়াহাজ চলে এসেছে। উনি ওয়াহাজের জন্য খাবার আলাদা করে বেড়ে রেখেছিলেন। বাসায় ফিরে যাওয়ার সময় ফাহমিদা বেগম সেটা ওয়াহাজের সাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,” এখানে তোমার জন্য খাবার আছে। ওয়াজিহা মা, খেয়েছে। এগুলো তুমি ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিও। এই কয়েকদিন তোমাদের আর রান্না করে খেতে হবে না, আমি খাবার পাঠিয়ে দেব।”
ওয়াহাজ মৃদু হেসে বলে,” না আন্টি, আপনাকে এতো কষ্ট করতে হবে না। ওয়াজিহার হাতে সমস্যা তো কী হয়েছে, আমি তো আছি। আমরা দুই ভাইবোন ঠিক কোনো ব্যবস্থা করে নেব।”
” এখানে কী সমস্যা, বাবা?”
” এখন আত্মীয়রা আসতে শুরু করবে। আমি চাই না এটা নিয়ে কোনো কথা হোক। আর আমরা কাল পরশু নতুন বাসায় শিফট হবো। আপনি এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়েকে রান্না করে খাওয়ানোর সামর্থ আমার আছে। আসছি।”
মৌ নিজের রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে ওয়াহাজের শেষ কথায় হাসতে থাকে। মাকে বলে,” আম্মা, বিয়ের পর আমার আর রান্না করে খেতে হবে না।”
____
ওয়াহাজ আজ বেলাকে রুমের দরজা খুলেই ঘুমোতে বলেছে। কখন কী বিপদ হয় বলাতো যায় না। বেলা নিজের রুমে শুয়ে ছিল। ওয়াহাজ খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেলার রুমে আসে। টেবিলের ওপর ফোন বাজতে দেখে বলে,” ফোন বাজছে টের পাওনি?”
বেলা ওয়াহাজের দিকে তাকিয়ে বলে,” কে কল দিয়েছে?”
ওয়াহাজ টেবিলের ওপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ধ্রুবর নম্বর সেখানে জ্বলজ্বল করছে। ওয়াহাজ চোয়াল শক্ত করে বলে,” ধ্রুব কেন কল করছে? তুমি সিম চেঞ্জ করোনি?”
বেলা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে,” না। ও বাড়ির কেউ কেউ কয়েকদিন পরপরই কল দেয়। ”
” তুমি রিসিভ করো?”
” একদিন করে করেছিলাম। আর করিনি।”
” আমি আজই তোমার সিম চেঞ্জ করে দেব।”
কলটা এবার ওয়াহাজ রিসিভ করে। নম্বর ধ্রুবর হলেও ওপাশ থেকে মহিলার গলা ভেসে আছে।
ওয়াহাজ চোয়াল শক্ত করে বলে,” হ্যালো, কে বলছেন?”
ওপাশ থেকে ধ্রুবর স্ত্রী বলে ওঠে,” এটা কার নম্বর, বেলার না?”
” হ্যাঁ, কেন?”
” আপনি কে? ওর ভাই? আপনার বোনকে বলে দিয়েন আমার স্বামীর সাথে যেন কোনো প্রকার কথা না বলে।”
” কাকে দেখেছেন থুথু ফেলে আবার তুলে নেয়? নিজে নিজের বরকে সাবধানে রাখুন। আমার বোনকে ঠকিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে, আপনাকে ছেড়ে অন্যকাউকে বিয়ে করতে বেশি সময় নেবে না। আমার কথা মাথায় রাখবেন আশা করি। আল্লাহ হাফেজ। ”
ওয়াহাজ লিলিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাথে কল কেটে ফোন থেকে সিমটা খুলে ফেলল। বেলাকে বলল,” তোমার বাহিরে যাওয়ার ব্যবস্থা প্রায় শেষ। অনেকটা দিন লেগে গেল এসবে। যদিও ভেবেছিলাম সবকাজ খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাবে কিন্তু সেটা হলো না। যাই হোক সামনে মাসের প্রথম দিকেই তোমার ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছি। যে কয়েকদিন এখানে আছ সেকয়েকদিনের জন্য আমার একটা সিম নিয়ে ইউজ করতে পারো। ”
বেলা সম্মতিসূচক মাথা নাড়লো। দুদিনের আগ্রহ আর দমিয়ে রাখতে পারল না সে। ভেবেছিল ওসব বিষয়ে আর কোনো কথা বলবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর সম্ভব হলো না। কঠিন প্রতিজ্ঞা তাকে ভাঙতেই হলো৷
ভাইকে নির্জীব গলায় জিজ্ঞেস করল,” ভাইয়া, ওদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি? ”
বেলার দিকে না তাকিয়েই ওয়াহাজ উলটো প্রশ্ন করল,” কাদের?”
” যারা আমার মুখে এ*সিড মার*তে চেয়েছিল।”
” তুমি তো বললে তুমি ওদের নিয়ে ভাববে না। এখন কী হলো তোমার?”
” আগ্রহ দমিয়ে রাখতে পারছি না। প্লিজ বলবে?”
মিটিমিটি হাসে ওয়াহাজ। সে জানতো তার বোন কিছুতেই চুপচাপ থাকতে পারবে না। পকেট থেকে নিজের ফোন বের করে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করল সে। অতঃপর ফোনটা বেলার হাতে দিয়ে বলল,” দেখো তো শা*স্তিটা কম হয়ে যাচ্ছে কি না? ”
বেলা উঠে বসলো। ফোনের স্ক্রিনে কিছু একটা দেখে আঁতকে উঠল সে। কাচুমাচু মুখে বলল,” তুমি ওদের ধরতে পেরেছ! কীভাবে ধরলে?”
” তোমার ভাইয়ের কলিজায় হাত দিয়েছিল ওরা। সুখের হাওয়া কী করে লাগতে দেই ওদের গায়ে? পাপ হবে তো।”
” কিন্তু কীভাবে কী করলে তুমি? একা এতোকিছু!”
” একা কখন বললাম?”
” তাহলে?”
” ছিল কেউ আমার সাথে। তুমি এসব বিষয় জানতে চেও না।”
” কিন্তু ভাইয়া.…”
” ওরা দুজন এই ভিডিয়োতে সবকিছু স্বীকার করেছে। আগামীকাল ভিডিয়োটা পাবলিক হবে। দ্যান হাজতবাস।”
ওয়াহাজ বেলার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বেরিয়ে যায়। বেলার মাথায় কিচ্ছুটি ঢুকছে না। তাদের পেলোই বা কোথায় আর তার ভাইয়ের সাথে আছেই বা কে!
_____
দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গিয়েছে। বিয়ের ঠিক তিনদিন আগে ওয়াহাজ আর বেলা নতুন বাসায় চলে এসেছে। এখানে এসে নতুন করে বেলার কোনকিছুই আর করতে হয়নি৷ বেলার হাতের জন্য ওয়াহাজ নিজেই মৌয়ের বাবাকে জানিয়ে মৌকে নিয়ে এসে বাড়ি গুছিয়েছে দুজন মিলে। বেলা আর নিজে থেকে তাদের সাথে আসেনি কারণ ওদের দুজনের ব্যক্তিগত কিছু সময় কাটানোর প্রয়োজন ছিল।
বেলার বাবা-মা বলেছিল বিয়ে পর্যন্ত ও বাড়িতেই থাকতে কিন্তু ওয়াহাজ রাজি হয়নি। বেলাকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি পেরেছে নতুন বাসায় চলে এসেছে সে।
আজ বিয়ের আগের দিন। ওয়াহাজ মৌদের বাড়িতেই আছে। বিকেলে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেলাও গিয়েছিল কিন্তু ঘণ্টাখানেক পর সে বুঝতে পারে তার অন্যদের মতো শাড়ি পরতে ইচ্ছে করছে। ভাইয়ের থেকে বাসার চাবিটা নিয়ে একাই আসতে চেয়েছিল কিন্তু ওয়াহাজ তাকে একা আসতে দেয়নি। সে নিজেই অনুষ্ঠান ছেড়ে বোনকে রেখে গিয়েছে। একেবারে সাথে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু বেলা জানায় শাড়ি পরে সাজতে অনেক দেরি হবে। নতুন বরের এখানে থাকা উচিৎ না। ও বাড়ির সবাই মন খারাপ করবে। সবদিক ভেবে দেখে ওয়াহাজ বলে গিয়েছে সে কাউকে পাঠিয়ে দেবে বা নিজেই আসবে। নিষেধ করেছে বেলা যেন একা একা বাড়ি থেকে না বের হয়৷ বেলাকে নিয়ে ওয়াহাজের এত কিসের চিন্তা কিছুতেই বুঝে আসে না বেলার।
বেলার পাঁচ বছর যেহেতু সংসার করেছে সে হিসেবে শাড়ি পরতে পারাটা স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। মেয়েরা বিয়ের পর অনেককিছুই শিখে যায়। বিয়ের আগে যে মেয়েরা নিজেরাই শাড়ি পরতে পারে তারা এক কথা গুণবতী। বেলাও বিয়ের আগে থেকেই শাড়ি পরতে জানতো। কেউ তাকে শেখায়নি, একা একাই পারতো।
বেলা রেডি হয়ে ভাইকে কল দিল। ওয়াহাজ জানালো এখন সে আসতে পারবে না তাই ফারাজকে পাঠিয়ে দেবে। ফারাজ আসবে শুনে বুকের ভেতরটা কেমন একটা করতে থাকে। যে মানুষটার কাছে থেকে সে দূরে থাকতে চায় সেই মানুষটাই কেন ঘটনাপ্রবাহে তার সন্নিকটে চলে আসে বারবার! তার ভাই-ই বা কীভাবে পারল ফারাজকে পাঠানোর কথা ভাবতে? তানিয়া মাহি. সে কী জানে না মানুষের কাছে থেকে অনুভূতি লুকিয়ে রাখা কঠিন কাজ! বেলা মনে মনে বিলাপ করতে থাকে ভাই ঠিক করেনি, একদম ঠিক করেনি।
বেলা রেডি হয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ছিল। কলিংবেল বাজতেই দুরুদুরু বুকে উঠে দাঁড়ায় সে। বসে থাকায় কুচি কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে বলে হালকা নিচু হয়ে কুচিগুলো ঠিক করে নেই। চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।
দরজা খুলেই দেখে ফারাজ বাহিরে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে। মাথার দিকে তাকিয়ে বেলা বুঝতে পারল বাহিরে হয়তো বৃষ্টি নেমেছে।
ফারাজকে ভেতরে আসতে বলে বেলা নিজে ভেতরের দিকে যেতে লাগলে ফারাজ পিছন থেকে বলে,” দেরি করব না বেশি। ওখানে সবাই অপেক্ষা করছে। আপনি শুধু আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়াবেন।”
” ঠিক আছে। আপনি বসুন, আমি পানি দিচ্ছি।”
ফারাজের জন্য বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে এ কথাটা ডাহা মিথ্যা কথা। তার জন্য কেউ অপেক্ষা করছে না। সবাই নিজের মতো আনন্দ করছে। ফারাজের মতো অন্তর্মুখী মানুষগুলো যেমন সবার সাথে মিশতে পারে না সেরকম তাদের জন্য কেউ কোনোকিছু ভিন্ন অর্থ না থাকলে আটকেও রাখে না।
সে মূলত বেলার সাথে একা সময় কাটাতে ভয় পাচ্ছে। তার অনুভূতিগুলো যে মাঝেমাঝে মরাকান্না শুরু করে। এতো করে চাওয়া মানুষটা তার হবে না ভাবলে দম আটকে আসে তার। বেলাকে সামনে পেলেই অনুভূতিগুলো ছুটোছুটি শুরে করে, বেরিয়ে আসতে চায়।
বেলা পানি নিয়ে এসে ফারাজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,” নিন। পানিটুকু খেয়ে নিন।”
বেলার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে ফারাজ। বেলার হাত থেকে গ্লাসটা নিতে নিতে বলে,” হাত কেমন এখন?”
” ঠিক হয়ে গেছে তো।”
ফারাজ গ্লাসটা রেখে বলে, ” চলুন তবে। বাসায় গিয়ে খেতে হবে, ক্ষুধা পেয়েছে।”
” বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে? দেরি করে যেতে পারেন। ”
” কই না তো! বৃষ্টি কোথায় দেখলেন আপনি?”
” আপনার চুল ভেজা যে।”
” আমার শরীর তো ভিজেনি। আমি হাসপাতাল থেকে এসে গোসল দিয়েছি তখনই আপনার ভাই বলল আপনাকে নিয়ে যেতে। চলুন।”
” আমি বাসায় এসে নুডলস রান্না করেছিলাম। খেতে পারেন কিন্তু। খুব একটা খারাপ হয়নি।”
প্রথমবারের মতো বেলাকে আপাদমস্তক একবার দেখে নেয় সে। সবুজ হলুদের সংমিশ্রণে একটা শাড়ি পরেছে সে। হালকা সাজে তাকে অপ্সরা লাগছে। মনে মনে প্রশ্ন জাগে অপ্সরা দেখতে কেমন!
চোখ নামিয়ে নেয় ফারাজ। মৃদু হেসে বলে,” বাসায় গিয়েই খাব চলুন।”
” আপনাকে খাওয়ার ব্যাপারে জোর করা কি সমীচীন দেখাবে? দেখালে জোর করতাম।”
” সমীচীন দেখালেও আমার খেতে ইচ্ছে করছে না। বাঙালী বলে কথা। সারাদিন পর একটু ভাত খেতে পারলে ভালো লাগবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে চলুন।”
ফারাজ বেলাকে রুমের দিকে যেতে দেখে আনমনে বলে ওঠে,” আপনি চাইলেই আমাকে সারাজীবন রান্না করে খাওয়াতে পারতেন।”
বেলা থেমে যায়। পিছন ফিরে বলে,” সারাজীবন আমার রান্না করতে ভালো লাগবে না জন্যই তো পালাচ্ছি।”
” যেখানে যাচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশের মতো কাজের বুয়া পাবেন না। হাত পু*ড়িয়ে রান্না করেই খেতে হবে।”
” হুম।”
” আপনি দেশ ছাড়লে একটা হৃদয় সারাক্ষণ পুড়*তে থাকবে। ”
” এমন কোনো সম্পর্কে আমি অবগত নই।”
” আর কীভাবে জানালে, জানবেন?”
” আমি আসলে জানতেই চাই না।”
” একবার সুযোগ দিয়ে দেখলে পারতেন না?”
” শেষে ফলাফল আগের মতো হলে পুরো জীবনটাই নাট্যমঞ্চে মনে হবে। আমার মনে হয় সম্পর্ক তৈরিই হয় কোনো একসময় শেষ হতে। যেটার শুরু আছে সেটার শেষও আছে।”
” আপনি একবার রেখেই দেখুন না। জীবন শেষ হলে তবেই সম্পর্ক শেষ হবে তার আগে নয়। আপনাকে কাছে না পাওয়ার যন্ত্রণা আমাকে পুড়ি*য়ে মারছে।”
বেলার বলার স্পৃহা জাগে- আমিও কারো সাথে আজীবন ভালো থাকতে চাই। আমিও চাই আপনিই সেই মানুষটা হন যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন। আপনার উপস্থিতি আমার বুকে বারবার ঝড় তুলছে। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বাস করে ঘর বাধতে মন চাইছে।
বেলা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বলে,” যেটা হওয়ার নয় সেটা নিয়ে কথা বলবেন না প্লিজ। বারবার আপনাকে ফিরিয়ে দিতে ইচ্ছে করে না আমার।”
উঠে দাঁড়ায় ফারাজ। বেলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,” একবার জড়িয়ে ধরবেন আমায়? অন্তত মরুর বুকে একটু জল পরতো।”
” অন্যা*য় আবদার করবেন না ফারাজ। আপনি বাহিরে গিয়ে দাঁড়ান, আমি আসছি।”
” আপনি এতো কঠোর কেন? একটু নরম হতে পারেন না৷ একজন আপনাকে পেতে মরিয়া হয়ে আছে সেটা বুঝতে পারছেন না? বারবার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইতে আমারও ইচ্ছে করে না। বেহায়া হয়ে যাচ্ছি আমি।”
” ভালোবাসায় সম্মান হারানো উচিৎ না। নিজেকে সম্মান করুন।”
” ফিরিয়ে দিচ্ছেন?”
” একদম। শেষবারের মতো। আশা করছি এসব নিয়ে আর ভাববেন না। বাড়িতে এসব নিয়ে কিছু বলবেন না। ভাবি আমাকে আপনার ব্যাপারে সন্দেহ করেছে। আমি আগপিছ কোনো সম্পর্কে জড়াবো না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি, আর নড়চড় হবে না।”
ফারাজ নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বেলার চোখে চোখ রেখে বলে,” অলরাইট। শেষ একটা আবদার রাখবেন?”
” শুনি?”
” দেশে ফিরবেন কবে?”
” জানা নেই। হয়তো না-ও ফিরতে পারি। ”
” ফিরবেন আপনি। ”
” কেন?”
” আমার জন্য।”
” এটা কোনো সিনেমা না ফারাজ।”
” আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করব। আপনি যেমন একজনের কাছে ঠকে পুরুষজাতিকে নিষিদ্ধ করেছেন ঠিক তেমন আমি আপনাকে কথা দিলাম আপনি ছাড়া সব নারী আমার জন্য নিষিদ্ধ। ”
” এটা কোনো ছেলেখেলা নয় ফারাজ।”
” আপনি সম্পর্কে আমার বেয়াইন হলেও আমি আপনার সাথে মজা করছি না।”
” ফারাজ……”
” ২১ জুন দিনটা আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই। না পেলাম আপনাকে, আপনার কাছে এই দিনটা চাই।”
” ২১ জুন! এটা অনেক দেরি আর তাছাড়া আমি সামনে মাসেই চলে যাচ্ছি।”
বুকে চিনচিন ব্যাথা করে ওঠে ফারাজের। প্রিয় মানুষের অনুপস্থিতির দিনগুলো এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে!
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে সে। বলে ওঠে,” আপনি ২১ জুন আমার জন্য রেখে দিবেন। বেঁচে থাকলে পুরোটা দিন আমি আপনার সাথে কাটাবো। সেটা যে বছরেই হোক না কেন।”
” ২১ জুন কেন?”
” ২১ জুন পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘতম একটা দিন। শুধুমাত্র এই দীর্ঘতম দিনটা আপনি আমাকে দিবেন। পৃথিবীর দীর্ঘতম দিনটা আমি আপনার সাথে কাটাতে চাই, ওয়াজিহা।”
” বাচ্চামি ছাড়েন।”
” চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আপনার ভাইয়ের আবার চিন্তা হবে।”
#চলবে….