#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_26
#Ariyana_Nur
দু’হাতে মাথা চেপে বসে রয়েছে ফাহাদ।মাথাটা কেমন ফাকাফাকা লাগছে তার।সামনেই পরে রয়েছে বিয়ারের খালি বোতল।আজ যেন বিয়ারেও তার নেশা হচ্ছে না।রাই এর বলা কথাগুলো শুধু বার বার মাথার মধ্যে ঘুরপাক করছে।
ফ্লাসব্যাকঃ
—তাহলে আপনি কেন আমার দিশা আপুকে ভালোবাসতে পারলেন না?
রাই এর কথা শুনে ফাহাদ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল।রাগি গলায় বলল,
—আমার জন্য কত মেয়েই তো পাগল।তারা আমায় ভালোবাসলেই কি আমায় তাদের ভালোবাসতে হবে নাকি?ভালোবাসা কি কোন সফটওয়্যার নাকি বললাম আর ডাউনলোড হয়ে গেলো।ভালোবাসার জন্য সামনের মানুষটার জন্য মন এর গভীর থেকে ফিলিং আশা প্রয়োজন।
ফাহাদ এর কথা শুনে রাই মিটমিট করে হাসতে লাগলো।রাই কে হাসতে দেখে ফাহাদ আরো রেগে গেলো।চেচিয়ে বলে উঠল,
—হাসছো কেন?আমি কি কিছু ভূল বললাম নাকি?দিশা আমার জন্য পাগল কিন্তু আমি না।ও আমার জন্য হাজার পাগলামো করে বলেই যে ওকে আমার ভালোবাসতে হবে এমন তো কোন কথা না।তাছাড়া দিশার প্রতি আমার কোন ফিলিংসই কাজ করে না।ওর ঐ সব আজাইরা পাগলামো দেখলে ভালোবাসা তো দূরে থাক আমার আরো বিরক্ত লাগে।
ফাহাদ এর কথা শেষ হতে না হতেই রাই উঠে দাড়ালো।টেবিলের উপর রাখা সাইড ব্যাগটা কাধে ঝুলিয়ে নিয়ে বলল,
—আমার মনে হয় আপনি আপনার কথার মাঝেই আপনার প্রশ্নের উওর পেয়ে গেছেন।নেক্সট টাইম এসব প্রশ্ন না করলেই খুশি হব।তীব্র অনেকক্ষন ধরে বাহিরে অপেক্ষা করছে।আসি ভালো থাকবেন।আশা রাখি আমাকেও আর বিরক্ত না করে ভালো থাকতে দিবেন।
কথাগুলো বলে রাই সামনের দিকে কদম বাড়াতেই ফাহাদ সামনে চেয়ারে একটা লাথি দিয়ে চেচিয়ে বলল,
—তীব্র!তীব্র!তীব্র।কি আছে ঐ তীব্রর মাঝে?সে কি তোমায় আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে?
ফাহাদ এর কথা শুনে রাই এর পা থেমে গেলো।রাই পিছন দিকে ঘুরে দাড়িয়ে বলল,
—কেউ কখনো কারো মত ভালোবাসতে পারে না।একেক জনের ভালোবাসার রুপ একেক রকম।সত্যি কথা বলতে কি জানেন?আমার তীব্র এখনো মুখ ফুটে আমায় বলেনি সে আমায় ভালোবাসে।কিন্তু প্রতিনিয়ত তার কথা,কাজে আমার প্রতি তার কেয়ার ছোট ছোট শাষন আমায় নিয়ে তার পাগলামোর মাঝেই সে আমার বুঝিয়ে দিয়েছে যে,সে আমায় কতটা ভালোবাসে।একটু আগে বললেন না কাউকে ভালোবাসতে হলে তার জন্য মন থেকে ফিল করতে হয়।আমার মনের ঘরের প্রতিটা অনুভূতি তীব্রতে শুরু হয় আর তীব্রতেই শেষ।না আপনার জন্য আমার মনে বিন্দু পরিমান কোন অনুভূতি ছিলো আর না কখনো হবে।আপনি আপনার যেই ভালোবাসা রুপ আমায় দেখিয়েছেন আমি কেন অমন ভালোবাসা দেখলে ঘৃণা ছাড়া কোন মেয়েই সেই ভালোবাসা মেনে নিবে না।
কথাগুলো বলেই রাই গটগট করে হেটে চলে গেলো।এদিকে রাই এর যাওয়ার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাড়িয়ে রইল ফাহাদ।ফাহাদ এর ভিতরটা জ্বলেপুড়ে যাচ্ছে। রাই এর প্রতিটা কথা যেন ফাহাদ এর বুকে তীরের মত ফুটে রক্তক্ষরন হচ্ছে।না কেউ সেই ক্ষত দেখতে পারবে আর নাই বা কেউ ক্ষতের গভীরতা মাপতে পারবে।এক তরফা ভালোবাসা গুলো বোধহয় এমনি হয়?অবহেলা আর কষ্ট ছাড়া কিছুই মিলে না।
বর্তমানঃ
ফাহাদ এর চোখ এর কোনে জমে রয়েছে নোনা জল।জল গড়িয়ে পরার আগেই ফাহাদ হাত দিয়ে জলটা মুছে নিল।বিরবির করে বলে উঠল,
— হায়রে দুনিয়া!আজব এই দুনিয়ার নিয়ম বোঝা বড় দায়।তুমি যার জন্য পাগল সে তোমায় চায়।যে তোমার জন্য পাগল তাকে তুমি চাও না।
________
মন খারাপ করে বেলকনির এক কোনে দূর আকাশের পানে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।আকাশের বুকে মেঘেরা ছুটাছুটি করছে।কালো মেঘের ছায়া কেটে আকাশের বুক সুন্দর পরিষ্কার ঝলমলে রুপ ধারন করছে।রাই আকাশের দিকে তাকিয়েই আনমনে বলে উঠল,
—জীবনটা যদি আকাশের মত হত কতই না ভালো হত।কালো মেঘ হুট করে আসতো আবার হুট করেই চলে যেত।জীবনটা এতো জটিল হওয়ার কি খুবই দরকার ছিলো?
তীব্রর রাইকে রুমে না পেয়ে রাইকে খোজ করতে বেলকনিতে এসে দেখ রাই এক মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে রয়েছে।রাই এতোটাই নিজের খেয়ালে ডুবে রয়েছিলো যে তীব্রর উপস্থিতি বুঝতে পারেনি।তীব্রকে না দেখেই রাই আনমনে কথাগুলো বলেছে।তীব্র রাই এর কথা শুনে গুটিগুটি পায়ে রাই এর সামনে এসে রেলিং এ হাত রেখে রাই এর মত দূর আকাশের পানে তাকিয়ে বলল,
—আমাদের জীবনটা আসলেই অনেক কঠিন।জীবনে কিছু পেতে হলে আমাদের অনেক কষ্ট,পরিশ্রম করে সেটা হাসিল করতে হয়।কষ্ট, পরিশ্রমের মাধ্যমেই আমরা আমাদের ঐ জিনিসটার মর্ম বুঝি।তাছাড়া কোন জিনিস যদি আমরা কষ্ট, পরিশ্রম ছাড়া এমনি এমনি লাভ করে থাকি তাহলে আমরা সেটার মর্ম সহজে বুঝি না।অবহেলার মাঝে সেটা আমরা হাড়িয়ে ফেলি।আমাদের মনের আকাশে যদি আমরা মেঘ জমতে দেই তাহলেই সেটা আস্তে আস্তে কালো মেঘে পরিনত হবে।আস্তে আস্তে মনের আকাশ পুরোটাই কালো মেঘে ছেয়ে যাবে।আর যদি মেঘ জমতে না দিয়ে সাথে সাথেই তা বর্ষন করে থাকি তাহলেই সকল মেঘ কেটে যাবে।জীবনটা আমাদের।আমাদের জীবনকে যদি আমরা সহজ ভাবে নেই তাহলেই সব সহজ।আর যদি জটিল ভাবে নেই তাহলেই সব জটিল।জীবনে চলার পথে অনেক বাধা বিপত্তি আসবেই।তাতে আমাদের থেমে থাকলে হবে না।সব বাধা বিপত্তি অবসর ঘটিয়ে,কঠিন কে সহজ করে,ভয়কে জয় করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
তীব্রর কথা শুনে রাই কিছুক্ষন তীব্রর দিকে তাকিয়ে থেকে পূনরায় আকাশের পানে তাকিয়ে রইল।মুখে কিছু না বললেও মনে মনে হাজারটা কথা বলে চাপা একটা নিশ্বাস ফেলল।
_________
দিপা বেগম নিজের রুমে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।রুমে কারো পায়ের শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকাতেই দেখে মাহি দাড়িয়ে রয়েছে।মাহিকে দেখে দিপা বেগম অবাক হয়ে গেলো।মাহিকে সে এখানে কখনোই আশা করেনি।দিপা বেগম কিছু না বলে আবাক নয়নে মাহির দিকে তাকিয়ে রইল।মাহি গুটিগুটি পায়ে হেটে দিপা বেগম এর পাশে এসে বসল।কিছুক্ষন করুন চোখে দিপা বেগম এর মুখপানে তাকিয়ে থেকে কোমল গলায় বলে উঠল,
—কেমন আছো আম্মু?
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম এর কপালে ভাজ চলে এল।সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মাহির মতিগতি বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।মাহি তার রিয়েকশন দেখে মলিন হেসে বলল,
—শুনেছি মায়েদের কাছে নাকি সুপার পাওয়ার থাকে।সেই সুপার পাওয়ার দিয়েই তারা সন্তানের কোন বিপদ-আপদ হওয়ার আগেই নাকি তাদের মন বলে দেয় তার সন্তান এর কোন অমঙ্গল হতে চলেছে।এমনকি তাদের সন্তানরা তাদের সামনে যেই রুপেই আসুক না কেন তারা তাদের কাছে থাকা সুপার পাওয়ার দিয়ে মনের টান দিয়ে নিজের সন্তানকে চিনে নেয়।এদিকে দেখো তুমি!তোমার এতো কাছে থাকার পরেও আমায় চিনছো না।একটা কথা কি জানো আম্মু!তুমি কখনো আমায় মন থেকে ভালোইবাসোনি।যদি আমায় মন থেকে ভালোবাসতে তাহলে আজ তোমার এতো কাছে থাকা সর্তেও আমায় চিনতে তোমার অসুবিধে হত না।চেহারা না হয় পাল্টেছে আম্মু আমার চোখ আমার কন্ঠস্বর তো পাল্টায়নি?চোখ দেখে কন্ঠস্বর শুনেও কি তোমার কারো কথা একটুও মনে পরছেনা?
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম এর কপালের ভাজ আরো বেড়ে গেলো।সে আরো গভীর ভাবে মাহিকে পর্যবেক্ষণ করতে।মাহির চোখ, কন্ঠস্বর এর সাথে তার পরিচিত একজনের খুব মিল পাচ্ছে।কিন্তু চেহারায় তার ছিটেফোটাও মিল খুজে পাচ্ছে না।তাই তো খুটিয়ে খুটিয়ে চেহারার মিল খুছতে ব্যাস্ত সে।দিপা বেগম কে চুপ করে থাকতে দেখে মাহি পূনরায় বলল,
—কোন মিল পাবে না আম্মু।মিন পাওয়ার জন্য মনের মিল থাকা দরকার।তোমার মনে তো আমার জন্য ছিটেফোটাও মায়া নেই।যা আছে সব তোমার ঐ আদরের ভাতিজা ফাহাদ এর জন্য।
দিপা বেগম গম্ভীর গলায় বলল,
—কে তুমি?বার বার আমায় আম্মু বলছো কেন?
দিপা বেগম এর কথা শুনে মাহি তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠল,
—এখনো জিগ্যেস করছো আমি কে আম্মু?ওহ আমি তো ভূলেই গিয়েছিলাম নিজের চোখে না দেখলে তুমি আবার কিছু বিশ্বাস কর না।ওয়েট তুমিই দেখে নাও আমি কে?
কথাটা বলেই মাহি নিজের মুখ থেকে হাইপার সিলিকন মাক্সটা খুলে ফেলল।মাহির চেহারা দেখে দিপা বেগম এর চোখে জল চলে এল।অস্পষ্ট গলায় বলে উঠল,
—দিশা!
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ।)