#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_23
#Ariyana_Nur
ঘুমের মধ্যেই রাই এর মনে হচ্ছে সে শূন্যে ভাসছে।তারপরেও চোখের মধ্যে রাজ্যের সব ঘুম ধরা দেবার কারনে চোখ মেলে আর নিজের অবস্থান দেখতে ইচ্ছে হল না।কিছুক্ষন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও যখন নিজেকে শূন্যে ভাসমান অনুভব হল তখন রাই পিটপিট করে চোখ খুলে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করল।রাই কারো কোলে অবস্থান করছে।লোকটি রাইকে কোলে তুলেই উপরের দিকে উঠছে।নিজেকে অবস্থান বুঝতে পেরেই রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।চোখ মুখে চলে এল ভয়ের ছাপ।রাই গগন ফাটানো চিৎকার দেওয়ার আগেই একটা ভাড়ি কন্ঠে ভেসে এল,
—প্রথমেই নিজের বাসায় রাত বে-রাতে ঢোকার কারনে চোর বানিয়েছো।চিৎকার করে এখন কি মার খাওয়াতে চাও?
গলার আওয়াজ শুনে তীব্রকে চিনতে রাই এর একটুও অসুবিধা হল না।বরং তীব্রর কথা শুনে রাই এর মেজার আরো চটে গেলো।রাই হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো তীব্রর কোল থেকে নামার জন্য কিন্তু তীব্রর সাথে পেরে উঠল না।তীব্র রাইকে নিয়ে ছাদে উঠে ছাদের একপাশে চলে গেলো।সিমেন্ট দিয়ে বানানো বেঞ্চে রাইকে বসিয়ে দিয়ে বড় করে একটা নিশ্বাস নিয়ে বলল,
—বাপরে তুমি এতো ভাড়ি!আমার মনে হচ্ছে তোমায় কোলে করে এতোটুকু এসেই অর্ধেক ওজন কমে গেছে।দেখতে শুটকি দেখলে কি হবে ওজনে মিনি হাতি।
তীব্রর কথা শুনে রাই চোখ রাঙিয়ে তীব্রর দিকে তাকালো।কড়া কিছু বলার ইচ্ছে থাকলেও মনের মাঝে আকাশ সমান অভিমান বাসা বাধার কারনে মুখ ফুটে আর কিছু বলল না।বসা থেকে উঠে হাটা ধরতেই তীব্র রাই এর হাত ধরে বলল,
—আরে আরে কোথায় যাচ্ছো?এতো কষ্ট করে তোমার মতো ময়দার বস্তা দেহটাকে এতোগুলো সিড়ি বেড়ে উপরে নিয়ে এসেছি কি এভাবে চলে যাওয়ার জন্য?
তীব্রর মজাকরা কথা শুনে রাই এর চোখ ছলছল করে উঠল।সে না হয় এই কয় দিন শুয়ে বসে থেকে একটু মোটা হয়ে গেছে তাই বলে তীব্র তাকে এভাবে বলবে?রাই ঝাড়া দিয়ে তীব্রর হাত ছাড়িয়ে ধুপধাপ পা ফেলে নিচে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতে লাগলো।রাই কিছু বোঝার আগে তীব্র পূনরায় রাইকে কোলে তুলে নিয়ে এসে বেঞ্চে বসিয়ে দিল।এবার আর রাইকে বসা থেকে উঠার সুযোগ না দিয়েই তীব্র রাই এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরল।তীব্রর কাজে রাই স্টেচু হয়ে গেলো।একটু পর নিজেকে স্বাভাবিক করে মুখে কিছু না বলে তীব্রকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করলো কিন্তু তীব্রর সুঠাম দেহটাকে চুল পরিমানও নাড়াতে পারলো না।রাই তীব্রর সাথে না পেরে নিজের থেকে থেমে গিয়ে চুপকরে বসে রইল।তীব্র এতোক্ষন চোখ বন্ধ করে ছিলো।রাই কে শান্ত হতে দেখে তীব্র চোখ মেলে তাকালো।রাই এর চোখের কোনে জমে থাকা জল নিজ হাতে মুছে দিয়ে কোমল গলায় বলল,
—প্রথমেই সরি বলছি ঐ মায়াবী চোখের কোনে জল আসার কারন হওয়ার জন্য।
আমার অভিমানি চাঁদ কি এই অধম বান্দার সরি একসেপ্ট করে তাকে ক্ষমা করবে?
রাই তীব্রকে দু’হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরানোর চেষ্টা করে তেজি কন্ঠে বলে উঠল,
—কিসের সরি?লাগবেনা আমার আপনার সরি।এতোদিন কষ্ট দিয়ে দূরে সরিয়ে রেখে এখন আসছে সরি বলতে।সরুন আপনি আমি রুমে যাবো।
তীব্র রাই এর দু’হাত নিজের দু’হাতের মাঝে নিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
—আমি দূরে দূরে ছিলাম বিধায় কষ্ট হয়েছে বুঝি?
তীব্রর কথা শুনে রাই এর চোখ দিয়ে বুরবুরিয়ে জল গড়িয়ে পরল।কি পাষাণ লোক নিজে দূরে সরিয়ে রেখে কষ্ট দিয়ে এখন জিগ্যেস করছে কষ্ট হয় কিনা?
রাই কিছু না বলে মুখ ঘুড়িয়ে বসে রইল।তীব্র রাই এর মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে বলল,
—আমি দূরে দূরে থাকলে তুমি কেন কষ্ট পাও?কে হই আমি তোমার?
রাই কিছুক্ষন অস্রুভেজা নয়নে তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
—তাই তো কি হন আপনি আমার?আমাদের মাঝে কোন সম্পর্ক কি আছে?শুধু মাত্র কাগজ কলমে নামের স্বামী,স্ত্রী সম্পর্ক ছাড়া।সরি আমি ভুলে গিয়েছিলাম নিজের সীমানার কথা।তাই তো ভূল করে উল্টা রিয়েক্ট করে ফেলেছি।আসলে আপনার দয়া-মায়া,করুনা পেয়ে এটা ভূলে গিয়েছিলাম যে আমি আপনার জীবনে ঊড়ে এসে জুড়ে বসে আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি।
কথাগুলো বলে রাই একটু থামলো।দু’হাতে নিজের চোখের জল মুছে তারপর আবার বলল,
—সমস্যা নেই যেমন ঊড়ে এসে আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছি তেমনি ঊড়ে চলে গিয়ে আপনাকে মুক্ত করে দিব।আপনার জীবন থেকে একেবারের জন্য চলে যাবো অন্য কো….।
তীব্র মজা করে কথাগুলো বলাতে রাই যে কথাগুলো উল্টো দিকে নিবে তা তীব্রর জানা ছিলো না।তীব্র রাই এর কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে রাই কে ধমক দিয়ে থামিতে দিয়ে রাই এর কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসল।দু’হাতে রাই এর বাহু চেপে ধরে রাগি গলায় বলল,
—কোথায় যাবে তুমি?হ্যা কোথায় যাবে?দু’লাইন বেশি না বুঝলে হয় না।ভূলেও যদি আমায় ছেড়ে যাবার কথা আরেক বার বলো তাহলে দেখো আমি কি করি?
রাই অভিমানী গলায় বলে উঠল,
—কেন থাকবো আপনার কাছে?কে হই আমি আপনার?কিছু হই না আমি আপনার।চলে যাবো আমি।থাকবো না আপনার কাছে।আপনি অনেক খারাপ।শুধু শুধু আমার সাথে রাগ করেন।আমায় বকা দেন।ইচ্ছে হলে কাছে এসে মায়া দেখান আর ইচ্ছে হলে দূরে ঠেলে দেন।
(কথাগুলো বলতে বলতে রাই ডুকরে কেদে উঠল)
তীব্র তার অভিমানী চাঁদ এর দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল।চাঁদের আলোতে তার অভিমানী চাঁদ এর কন্দনরত চেহারা দেখে তার হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হতে লাগলো।বুকের মধ্যে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো।যে ব্যাথা শুধু তার অভিমানী চাঁদই সারাতে পারবে। তীব্র আর এক মুহূর্ত সময় বিলম্ব না করে রাইকে জড়িয়ে ধরল।এমন ভাবে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আটকালো যাতে সে কখনো পালিয়ে না যেতে পারে।রাই প্রথমে তীব্রর কাছ থেকে ছোটার জন্য ছটফট করলেও পর মুহূর্তে তীব্রর বক্ষ পিঞ্জরে নিজের মাথা গোজার ঠাই পেয়ে সব অভিমান চোখ দিয়ে জল হয়ে গলে পরতে লাগলো।তীব্র রাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রাইকে শান্ত করতে লাগলো।রাই কিছুটা শান্ত হতেই তীব্র মোলায়েম গলায় বলল,
—এমন কথা আর বল না চাঁদ।তোমাকে হারানোর কথা শুনলেই আমার নিজেকে পাগল পাগল লাগে।তুমি জানোনা চাঁদ তুমি আমার জন্য কি?তুমি আমার কাছে আল্লাহ দেওয়া সেরা উপহার।আমার অসম্পূর্ণ জীবনকে সম্পূর্ন করার মাধ্যম।আমার সুস্থ ভাবে বেচে থাকার একমাত্র সম্বল।আমার আধার জীবনের এক ফালি আলো নিয়ে আশা চাঁদ।তোমাকে হাড়িয়ে হয়তো বেচে থাকবো কিন্তু সেটা মৃত ব্যাক্তির ন্যায়।আমার সুস্থ ভাবে বেচে থাকার জন্য তোমাকে চাই।আমার আধার জীবনে আলোর রশ্নির জন্য তোমাকে চাই।বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার জন্য তোমাকে চাই।পারবে না চাঁদ জীবনের শেষ নিশ্বাস পযর্ন্ত এই অসম্পূর্ণ আমিটার সাথে থেকে আমার সম্পূর্ন করতে?
তীব্রর বক্ষ পিঞ্জরে মাথা রেখে রাই এতোক্ষন তীব্রর কথা শুনছিলো।তীব্র কথা শেষ হতেই রাই তীব্রকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে হু-হু করে কেদে উঠল।রাই এর না বলা কথার মাঝেই তীব্র তার উত্তর পেয়ে গেলো।মুহুর্তেই ঠোটের কোনে ফুটে উঠল মিষ্টি হাসি।
_________
চেয়ারের সাথে হাত পা বাধা অবস্থায় বসে আছে ছন্মবেশি মাহি। ইলেকট্রিক শর্কড খেতে খেতে তার অবস্থা কাহিল।তার মুখামুখি পায়ের উপর পা তুলে আয়েশ করে চেয়ারে বসে রয়েছে ফাহাদ।মুখে রয়েছে তার বাকা হাসি।ফাহাদ মাহির ক্লান্ত মাথা মুখের দিকে তাকিয়ে ঠাট্টার শুরে বলল,
—জান!তোমায় এমন দেখা যাচ্ছে কেন?খুব তো বলেছিলে আমার সব পাগলামো তোমার ভালোবাসা দিয়ে ঠিক করে দিবে।দু’দিনেই কি আমার ভালোবাসার টর্চারে হাপিয়ে উঠেছো?
ফাহাদ এর কথা শুনে মাহি ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে ফাহাদ এর দিকে তাকালো।দূর্বল গলায় বলল,
—জীবনে যদি কোন পাপ করে থাকি তার মধ্যে সব থেকে বড় পাপ করেছি তোর মত একটা সাইকোকে ভালোবেসে। নিজের প্রতি নিজেই এখন আমার ঘৃণা হচ্ছে।কিভাবে পারলাম আমি তোর মত একটা নর পশুকে ভালোবাসতে।
মাহির কথা শুনে ফাহাদ আট্টহাসিতে ফেটে পরল।হাসতে হাসতে বলল,
—চোরের মুখে ধর্মের কাহিনী।আমি না হয় নর পশু তুই কি তাহলে?তুই তো আমার চাইতেইও নিকৃষ্ট।আমি যতই খারাপ হই না কেন যতই পাপ করি না কেন তোর মত মানুষ মারার মত পাপ আমি কখনো করিনি।
ফাহাদ এর কথা শুনে মাহি চমকে উঠল। অবিশ্বাস্য নয়নে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে রইল।ফাহাদ মাহির ভীত মুখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
—আমার জান পাখির শ্রদ্ধের শুভ্রাকাঙ্খী বলে কথা। আমায় তো খবর রাখতেই হয় বল?
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)