মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-২১

0
913

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_21
#Ariyana_Nur

বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে রাই।একটু আগেই তার জ্ঞান ফিরেছে।ডাঃ এসে চেকআপ করে যাবার পর একে একে সবাই রাইকে দেখতে এসেছে।কিন্তু যার আসার কথা সেই এখনো আসে নি।রাই এর অবাধ‍্য চোখ শুধু তাকেই খুজে চলেছে।কিন্তু কাউকে যে সে তার কথা জিগ্যেস করবে লজ্জায় সেটাও জিগ্যেস করতে পারতে পারছে না।ফাইজা অনেকক্ষন ধরে খেয়াল করছে রাই বার বার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কাউকে খুজে চলেছে।ফাইজার আর বুঝতে বাকি নেই রাই এর চোখ কাকে খুজছে।কিন্তু ফরিদ খান আর ফারুক খান সামনে থাকার কারনে ফাইজাও মুখ ফুটে কিছু বলছে না।রাই এর সাথে ফাইজার চোখাচোখি হতেই ফাইজা ইশারায় বলল,ভাইয়া পাশের কেবিনে আছে।

ফাইজার ইশারা বুঝতে পেরে রাই এর চেহারায় ভয়ের ছাপ চলে এল।মুহূর্তেই মাথার মধ‍্যে নানান প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো। তীব্র ঠিক আছে তো? তার কিছু হয়নি তো?রাই এর যতটুকু খেয়াল আছে সে চোখ বন্ধ করার আগেইও তীব্র ঠিক ছিলো।তাহলে কি তার চোখ বন্ধ করার পরেই তীব্র…।আর ভাবতে পারলো না রাই।রাই তীব্রর কথা জিগ্যেস করার আগেই ধরফরিয়ে তীব্র কেবিনে প্রবেশ করল।তীব্রকে দেখেই রাই এর চোখ তীব্রতে আটকে যায়।রাই খুটিয়ে খুটিয়ে তীব্রকে দেখতে লাগলো।আজ যেন সে এক অন‍্য তীব্রকে দেখছে।উস্কখুস্ক চুল চেহারা কেমন ফ‍্যাকাসে হয়ে গেছে।তীব্রর ফোলা ফোলা চোখ গুলো বলে দিচ্ছে তার কান্নার কথা।কেবিনে ঢুকে রাইকে বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে তীব্রর পা থেমে গেলো।এতোক্ষন আটকে থাকা প্রান পাখিটা মনে হল ছাড়া পেল।তীব্র রাই এর দিকে পলকহীন তাকিয়ে রাই এর দিকে এক পা দু পা করে বাড়াতে লাগলো।তীব্র কে দেখে এক এক করে সবাই কেবিন থেকে বের গেলো।

—ইডিয়েট,স্টুপিট মেয়ে!মেরে ফেলতে চাও আমায়?এতোটা সার্থপর কি করে হলে তুমি?কে বলেছিলো আমার ধাক্কা দিতে?গুলি খাওয়ার খুব শখ জেগেছিলো তাই না।গুলি লাগলে আমার শরীরে লাগতো।কেন তুমি আমায় বাচাতে গিয়ে নিজের ক্ষতি করলে?আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত তাহলে আমি….।

বাকি কথা তীব্র আর সম্পূর্ণ করতে পারনো না।তীব্রর গলা ধরে আসছে।তীব্র ছলছল চোখে রাই এর দিকে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো।তীব্র কাজে ও ধমক খেয়ে রাই বোকা বনে গেলো।কোথায় সে ভেবেছিলো তীব্র এসে সবার মত তার অবস্থা জিগ্যেস করবে তা না করে তীব্র যে এমন কিছু বলবে সে ভাবতেও পারেনি।

রাই গাল ফুলিয়ে বিরবির করে বলল,

—মিঃ ভিলেন কি আর সাধে বলি।কথায় কোন রসকস নেই।

তীব্র চলে যেতেই ফাইজা কেবিনে প্রবেশ করল।

—কি হয়েছে রাইজু?ভাইয়া ওভাবে চলে গেলো কেন?

ফাইজার কথা শুনে রাই গাল ফুলিয়ে বলল,

—আমি কি জানি তাকে গিয়েই জিগ্যেস কর না।

ফাইজা রাই এর দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,

—সত‍্যি করে বলতো কি হয়েছে?তুই আবার ভাইয়াকে উল্টাপাল্টা কিছু বলে দিসনি তো?

—সে আমাকে কিছু বলতে দিয়েছে যে আমি বলবো।এসেই তো ইচ্ছে মত ঝেড়ে চলে গেলো।

ফাইজা অবাক হয়ে বলল,

—কি!সত‍্যি ভাইয়া তোকে বকেছে?

রাই ফাইজার দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,

—না আদর করেছে।

ফাইজার কিছুক্ষন রাই এর দিকে তাকিয়ে রইল।রাই যে রেগে গেছে সেটা বুঝতে পেরে মিটমিট করে হেসে বলল,

—ছি রাইজু ছি।জানিস না এসব কথা বলতে নেই।যতই আমি তো বেষ্টু হই না কেন ভাইয়াকে তো আমার বড় ভাই মানি বল।ছোট বোনের কাছে বড় ভাইয়ের ব‍্যাপারে….।বুঝতেই তো পারছিস।

ফাইজার কথা শুনে রাই রাগি লুকে ফাইজার দিকে তাকিয়ে রইল।ইচ্ছে করছে ফাইজাকে উওম মধ‍্যম লাগাতে।অসুস্থ বিধায় তাই কিছু না বলে চুপ করে বসে রইল।ফাইজা রাই এর রাগি মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মলিন হাসলো।রাই এর পাশে বসে রাই এর হাত ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে ধরা গলায় বলল,

—আই এম সরি রাইজু।আজ আমার জন‍্যই তোর এই হাল।যদি কালকে আমি তোকে বাহিরে যাওয়ার জন‍্য জোর না করতাম তাহলে এসব কিছুই হত না।

—ঠাটিয়ে লাগাবো একটা বেয়াদব মেয়ে।তুই কি ইচ্ছে করে করেছিস এসব।আরেকবার উল্টাপাল্টা কথা বললে দেখিস আমি কি করি।

_________

ফাইজার মুখে তীব্রর সব গুনকির্তন শোনার পর থেকে রাই থ’মেরে বসে রয়েছে।তাকে নিয়ে কত কিছু হয়ে গেলো আর সে কিছুই জানে না।তীব্র যে তার জন‍্য এমন কিছু করবে সে ভাবতেও পারেনি।তীব্রর করা পাগলামোর কথা ভাবতেই লজ্জাও লাগছে আবার মনের মধ‍্যে এক ভালোলাগা কাজও করছে।কিন্তু তার একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক করছে এই কয়দিনের সম্পর্কে কি কেউ কারো জন‍্য এতো পাগল হতে পারে নাকি তীব্র তাকে আগের থেকেই চিনে?

___________

—ম‍্যাম একটা খবর আছে।রাই ম‍্যাম বেচে আছে।

কলের অপর পাশের লোকটার কথা শুনে মাহি বিরক্ত হয়ে বলল,

—এটা কোন খবর হল?সে যে মরবে না সেটা আমিও জানি।কেননা আমিই শুট টাই এমন ভাবে করেছি যাতে সে না মরে।বুঝতে হবে তো ব‍্যপারটা।এসব না বলে কাজের কথা বল তো।তোমাদের স‍্যার হস্পিটালে তার পাখিকে দেখতে গিয়েছিলো কি না।

(সব কিছুর মুলে রয়েছে মাহি।মাহিই ফাহাদকে রাই এর খবর জানিয়ে দিয়ে ফাহাদ এর পিছু করে।ফাহাদ যখন তীব্রর দিকে রিভলবার তাক করে তখন রাই সেটা দেখে তীব্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই মাহি আড়াল থেকে রাইকে শুট করে।ফাহাদ রাই এর ঐ অবস্থা দেখে নিজের হিতাহিত জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে।নিজে রিভলবার যে সে চালায়নি সেই জ্ঞানটুকুও ছিলো না।আর চালালেই বা কি।মাহি তো আগেই ফাহাদ এর রিভলবার থেকে গুলি বের করে খালি রিভলবার রেখে দিয়েছে।)

—না ম‍্যাম স‍্যারকে এখানে দেখিনি।স‍্যার আসলে আপনাকে খবর দিব।

—ওকে।

কথাটা বলেই মাহি ফোন রেখে দিয়ে হাতে থাকা ফোনটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,

—মনে হচ্ছে সব বিফলে গেলো।এতটুকুতে কিছুই হবে না বড় কিছু ধামাকা করতে হবে।

_________

সকাল গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো।তীব্র সেই যে রাগ করে রাই এর কেবিন থেকে বের হয়েছে আর কেবিনে ভিতরে আসেনি।বাহিরের থেকে রাইকে দেখেছে।ফাইজা রাই এর পাশে বসে বকবক করছে।রাই প্রতি উওরে হু হা করে চলেছে।ফাইজার কথা শোনার প্রতি তার মন নেই।মন থাকবেই বা কি করে সেটা তো অন‍্য কোথাও পরে রয়েছে।

—রাইজু নিজের জীবনের মায়া না করে কেন এমন একটা কাজ করলি তুই?

ফাইজার কথা শুনে রাই মুচকি হেসে বলল,

—কেন এমন করেছি সেটা তো তোর অজানা নয় ফাইজু।তাহলে কেন জিগ্যেস করছিস?

—ভাইয়াকে ভালোবাসিস?

—ভালোবাসাসি কি না জানি না।শুধু এতোটুকু বলতে পারবো আমি তীব্রর তীব্র মায়ায় জড়িয়ে পরেছি।যে মায়া সারাজীবনেও কাটানো যাবে না।আর না আমি সেই মায়া কাটিয়ে উঠতে চাই।

________

কয়েক দিন পর……

ফ্লাটে ডাকাত পরার চিৎকার চেচামেচির শব্দ শুনে মাহি তড়িঘড়ি মুখে কিছু একটা লাগিয়ে রুম থেকে বের হল।রুম থেকে বের হতে না হতেই ঠাস ঠাস চড় পরল মাহির গালে।চড় এতোই জোরে লেগেছে যে মাহির মনে হচ্ছে তার গাল আর গালের যায়গায় নেই। মাহি গালে হাত দিয়ে সামনে তাকাতেই ফাহাদ কে তার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার গাল থেকে হাত সরে গেলো।মাহি কিছু বলার আগেই ফাহাদ মাহির চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে মাহির মুখটা অনেকটা তার মুখের সামনে নিয়ে এসে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।ফাহাদ এর এই রুপ দেখে মাহি ভয় কিছু বলতে পারছে না।মাহি কিছু বুঝার আগেই ফাহাদ মাহির গালে ছুড়ি চালিয়ে দিল।কিন্তু তাতে কোন রক্ত বের হল না।ফাহাদ এর কাজে মাহি ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে ভীত গলায় বলল,

—কি করছেন আপনি?

ফাহাদ মাহির কথা শুনে বাকা হেসে মাহির মুখ থেকে কিছু একটা টেনে উঠাতে লাগল।মাহি বাধা দিয়েও ফাহাদ এর সাথে পারলো না।ফাহাদ মাহির মুখ থেকে হাইপার সিলিকন মাক্সটা টেনে খোলার পর মাহির চেহারা দেখে ফাহাদ দু ‘কদম পিছিয়ে গেল।অবাক কন্ঠে বলে উঠল,

—তুই?

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে