#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_19
#Ariyana_Nur
তীব্রর হাত শক্ত করে চেপে ধরে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।ভয়ে তার হাত,পা মৃদু কাপছে।ফাইজা,তিহান, তীব্র সকলের চেহারায় রয়েছে বিস্ময়ের ছাপ।ফাহাদ যে হুট করে তাদের সামনে চলা আসবে এটা তারা ভাবতেও পারেনি। ফাহাদ তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাই এর হাতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।রাই এর হাতে জ্বলজ্বল করতে থাকা আংটি দেখে ফাহাদ এর ইচ্ছে হচ্ছে রাই এর আঙুলটাই কেটে ফেলতে।
—কি ব্যাপার ভাই কোন সমস্যা?এমন পথ আটকে দাড়িয়েছেন কেন?
ফাহাদ তীব্রর কথার উত্তর না দিয়ে রাই এর দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলল,
—কেমন আছো রাই পাখি?
ফাহাদ এর শীতল গলার কথা যেন রাই এর ভয় আরো বেড়ে গেলো।রাই কিছু না বলে ভয়ে তীব্রর হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরে তীব্রর পিছনে গিয়ে লুকালো।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে ফাহাদ পূনরায় বলল,
—কথা বলছো না কেন পাখি?বড্ড অভিমান হয়েছে আমার উপর?তোমায় আগে খুজে বের করিনি বলে?থাক আর অভিমান করতে হবে না।তাড়াতাড়ি আমার কাছে চলে আস।সব অভিমান আমি পুষিয়ে দিব।
শেষের কথাটা ফাহাদ দাতে দাত চেপে বলল।
রাই কাপাকাপা গলায় বলল,
—আমি যাব না।
রাই এর কথা শুনে ফাহাদ এর রাগ দ্বিগুণ বেড়ে গেলো।ফাহাদ রাই এর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগি গলায় বলল,
—বাহ সাহস তো দেখছি খুব ভালোই বেড়েছে।আমার মুখের উপরে কথা বলছো আবার আমার সামনে অন্য একটা ছেলের হাত ধরে দাড়িয়ে রয়েছো।এতো সাহস কোথায় পেলে পাখি?দু’দিন একটু ঊড়তে দেওয়াতে কি সাহসের ডানা গজিয়ে গেছে?
ফাহাদ কথাগুলো বলে রাগে দু’হাতে নিজের চুল টানতে লাগলো।ফাহাদ রাগে গজগজ করতে করতে পূনরায় বলল,
—রাই আমার মাথা গরম করিস না।আমি শেষ বারের মত বলছি ভালোয় ভালোয় আমার সাথে চল।তা না হলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।
—আমি যাব না।আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না।প্লিজ আমায় আমায় মত ছেড়ে দিল ফাহাদ ভাই।
কথাগুলো বলতে বলতে রাই ফুপিয়ে কেদে উঠল।
রাই এর কান্না, ফাহাদকে দেখে ভয়ে এভাবে কুকরে থাকা দেখতে যেন তীব্রর মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।তীব্র রাই এর দিকে ঘুরে রাই এর চোখের জল মুছে দিল।রাই এর গালে হাত রেখে কোমল কন্ঠে বলল,
—কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেন?
রাই তীব্রর দিকে অস্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলল,
—আমি তার সাথে যাব না।
—তোমার কি মনে হয় আমি তোমায় যেতে দিব?আমার উপর কি ভরসা নেই তোমার?
রাই তীব্রর কথার উওর না দিয়ে তীব্রর দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে তীব্রকে জরিয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠল।তীব্র রাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে রাই কে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
—এই পাগলি!এভাবে কান্না করছো কেন?আমি আছি তো নাকি।আমি থাকতে ভয় কিসের তোমার?
রাইকে এভাবে অন্য একজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে দেখে ফাহাদ এর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।ফাহাদ চোখ মুখ শক্ত চেচিয়ে বলল,
—তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি রাই?তুই আমার সামনে অন্য একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে রয়েছিস।তুই এতোটা র্নিলজ্জ কবের থেকে হলি?লজ্জা করছে না মাঝরাস্তায় পর পুরুষ এর সাথে ঢলা ঢলি করতে।বেহায়া মেয়ে।
তীব্র এতোক্ষন নিজেকে শান্ত রাখতে পারলেও ফাহাদ এর কথায় তীব্রর মাথা গরম হয়ে যায়।তীব্র রাগি গলায় বলল,
—ভদ্র ভাবে কথা বলুন মিঃ।
ফাহাদ দ্বিগুণ চেচিয়ে বলল,
—কিসের ভদ্রভাবে কথা বলল হ্যা।চোরের মায়ের বড় গলা।নিজে অভদ্রর মত একটা মেয়েকে মাঝরাস্তায় এতোগুলো লোকের সামনে জড়িয়ে ধরে রেখে আমাকে ভদ্রতা শিখাতে আসছেন।
—রাই আমার ওয়াইফ।আমার ওয়াইফকে আমি মাঝরাস্তায় জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে থাকি না অন্য কোথাও তাতে আপনার সমস্যা কোথায়?
তীব্রর কথাটা শুনে ফাহাদ অট্টহাসিতে ফেটে পরল।ফাহাদ এমন একটা ভাব করছে মনে হচ্ছে তীব্র কোন জোকস বলেছে।ফাহাদ এর কাজে তীব্র কপালে ভাজ ভেলে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে রইল।মুহূর্তেই ফাহাদ চোখ মুখ শক্ত করে রাগি গলায় বলল,
—কেন এমন করলে পাখি?কেন আমায় ধোকা দিলে?কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসার?আমি তো তোমায় পাগলের মত ভালোবেসেছিলাম তাহলে কেন তুমি আমার ভালোবাসাটা বুঝলে না?(চেচিয়ে)
ফাহাদ এর চেচানোতে রাই কিছুটা কেপে উঠল।অনেক কথাই সে ফাহাদকে শুনাতে চাচ্ছে।কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস হচ্ছে না।ফাইজা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,
—হাসালেন মিঃ ফাহাদ।আর যাই হোক আপনার মুখে ভালোবাসার কথা মানায় না।আপনি যদি রাইজু কে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসতেন তাহলে ভাইয়ার জায়গায় আজ আপনি থাকতেন।আপনার থেকে ও পালিয়ে না বেড়িয়ে আপনাকে আগলে ধরে বাচতে চাইত।দিনের পর দিন একটা মেয়েকে নির্মম ভাবে অত্যাচার করার পর তার কাছে কৈফিয়ত চাইলেন সে কেন আপনার ভালোবাসা বুঝলো না।
ভালোবাসার মানে আপনি বুঝেন তো মিঃফাহাদ?
ফাহাদ চেচিয়ে বলল,
—এনাফ।অনেক হয়েছে জ্ঞান দেওয়া।নিজের জ্ঞান নিজের কাছে রাখুন।
ফাইজাঃআপনার মত সাইকো,পাগল, মানুষিক রুগিকে জ্ঞান দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই।অতোটা মহান আমি না।
ফাহাদ ধমক দিয়ে বলল,
—চুপ একদম চুপ।কেউ কোন কথা বলবে না।রাই(চেচিয়ে) শেষ বারের মত বলছি নিজের ইচ্ছায় আমার সাথে যাবি নাকি জোর করে তুলে নিয়ে যাবো?
তীব্র মুচকি হেসে বলল,
—এতো সোজা আমায় এলাকায় এসে আমার বউকে তুলে নিয়ে যাবে?স-সম্মানের সাথে বিদেয় নিতে চাইলে কেটে পরুন।তা না হলে…।
তীব্রর কথা শেষ হবার আগেই ফাহাদ ফট করে এসে তীব্রর কলার চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল,
—আমাকে থ্রেট দিচ্ছিস এই ফাহাদকে থ্রেট দিচ্ছিস?তুই জানিস আমি কে?আমি চাইলে এখনি তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলতে পারি।
তীব্র নিজের কলারের দিকে একবার তাকিয়ে দেড়ি না করে ফাহাদ এর নাক বরাবরি ঘুষি লাগিয়ে দিল।লেগে গেলো দুজনের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।এদের মারামারি করতে দেখে ফাইজা,রাই একে অপরের হাত ধরে ভয়ে জড়সড় হয়ে দাড়িয়ে রইল।তিহান পকেট থেকে একটা চুইংগাম বের করে রাই এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
—ভাবি এটা নাও।খাও আর এ্যাকশন সিন ইন্জয় কর।
ফাইজা তিহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বলল,
—তিহান তুমি কেমন মানুষ হ্যা।ভাইয়া ফাইট করছে আর তুমি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গরুর মত জাবর কাটছো।লজ্জা করে না তোমার?যাও গিয়ে ভাইয়াকে সাহায্য কর।(ধমক দিয়ে)
তিহান বিরক্ত হয়ে বলল,
—উফ ফাইজা বিরক্ত করো না তো।চুপচাপ এ্যাকশন সিন ইন্জয় কর।আর শোন টেনশনের কোন কারন নেই কারন আমি জানি আমার ভাইয়া জিতবে।সো নো টেনশন।
তীব্রর যেন আজ নিজের মধ্যে নেই।নিজের মধ্যে এক হিংস্র রুপ এসে ভর করেছে।ফাহাদ কোন ভাবেই তীব্র সাথে পেরে উঠছে না।তীব্র নিজের সব রাগ ফাহাদ এর উপর ঝেড়ে ফাহাদ এর কলার চেপে ধরে দাতে দাত চেপে বলল,
—আজকের মত জানে বাচিয়ে রাখলাম।
এর পর যদি ভূলেও আমার জান এর দিকে নজর দিস তাহলে তোর জান কেড়ে নিব।
তীব্র ফাহাদকে থ্রেট দিয়ে রাই এর সামনে এসে রাই এর চোখের জল মুখে দিয়ে কিছু বলার আগেই রাই তীব্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।ফাহাদ পিছন থেকে তীব্রর দিকে শুট করছিলো।রাই সেটা দেখতে পেরে তীব্রর শরীরে গুলি লাগার আগেই রাই ধাক্কা দিয়ে তীব্রকে সরাতে গিয়ে গুলি তার শরীরে লাগে।মুহূর্তেই পরিবেশ পরিবর্তন হয়ে গেলো। সকলে স্তব্দ হয়ে গেলো।রাই মাটিতে লুটিয়ে পরতে নিলেই তীব্র রাইকে ধরে বসে পরল।তীব্র যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো।গলা দিয়ে কোন আওয়াজই বের হচ্ছে না।রাই কিছু বলতে চেয়েও পারলো না।রাই চোখ বন্ধ করতেই তীব্র চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,
—চাদঁ!
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)