#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_18
#Ariyana_Nur
ফাহাদ এর সামনে বসে অনবরত কান্না করে চলেছে দিপা বেগম।ফাহাদ কিছুক্ষন চুপচাপ তার কান্না সহ্য করলেও যখন তার ধর্য্যের বাধ ভেঙে গেলো তখন বিরক্তমাখা কন্ঠে বলল,
—কি হচ্ছে টা কি ফুপি?এভাবে মরা কান্না জুড়ে দিয়েছো কেন?আমি কি মরে গেছি নাকি?
দিপা বেগম নাক টেনে কান্নামাখা গলায় বলল,
—আমাকে তুই এভাবে পর করে দিলি বাবা।আজ দু’দিন ধরে তুই হাসপাতালে পরে রয়েছিস একবারো আমায় জানালোর প্রয়োজন মনে করলি না?তুই জানিস আমি কত টেনশনে ছিলাম।দুদিন ধরে তোর কোন খোজ খবর না পেয়ে পাগলের মত হয়ে গিয়েছিলাম।
ফাহাদ কিছু বলার আগেই অন্য একজন ফোড়ন কেটে বলে উঠল,
—তোমার আর টেনশন করতে হবে না ফুপি।তোমার ছেলের টেনশন করার জন্য আমি আছি।এখন থেকে তোমার ছেলের সব দ্বায়ীত্ব আমার।
পিছন থেকে মেয়েলি গলার কথা শুনে দিপা বেগম ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখে একটা মেয়ে লাজুক একটা হাসি দিয়ে দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।দিপা বেগম অবাক হয়ে একবার মেয়েটার দিকে তো একবার ফাহাদের দিকে তাকাচ্ছে।মেয়েটি গুটিগুটি পায়ে দিপা বেগম এর সামনে এসে মিষ্টি হেসে দিপা বেগম কে সালাম দিয়ে বলল,
—কেমন আছো ফুপি?শরীর মন ঠিক আছে তো?
দিপা বেগম মেয়েটির প্রশ্নের উওর না দিয়ে উল্টো নিজে প্রশ্ন করল,
—তুমি কে মা?তোমায় তো চিনলাম না।
মেয়েটি পূনরায় একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
—ফুপি আমার নাম স্নিগ্ধা মাহি।কেউ মাহি বলে ডাকে তো কেউ স্নিগ্ধা বলে ডাকে।আপনি চাইলে যে কোন একটা ডাকতে পারেন।
—তা না হয় ডাকলাম কিন্তু তোমার পরিচয়?
কথাটা বলতে বলতে দিপা বেগম আড় চোখে ফাহাদ এর দিকে তাকালো।
মাহি মাথা নিচু করে লাজুক কন্ঠে বলল,
—পরিচয় তো পরেও জানা যাবে ফুপি।আপাতত এতোটুকু জেনে নিন আমি আপনার ছেলের হবু বউ।
মাহির কথা শেষ হতে না হতেই ফাহাদ ধমকে বলে উঠল,
—এই মেয়ে কখন থেকে কি সব উল্টাপাল্টা কথা বলে চলেছো তুমি?এখনি এখান থেকে বের হয়ে যাও।ফুপি তুমি এই মেয়েকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে এখান থেকে বের কর।
ফাহাদ এর ধমক খেয়ে মেয়েটি ন্যাকা কান্না করে বলল,
—দেখো ফুপি দেখো!তোমার ছেলে কিভাবে আমায় ধমকাচ্ছে।হবু বউকে কেউ এভাবে ধমকায় বল?একে তুমি আচ্ছা করে বকে দাও তো?সাথে দুটো কান মলাও দিও।
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম সুকনো ঢোগ গিলে বলল,
—আ-আমি?
ফাহাদ পূনরায় ধমক দিয়ে বলে উঠল,
—এই মেয়ে তুমি যাবে।
মাহি ভেঙচি কেটে বলল,
—যাচ্ছি যাচ্ছি এতো চেচাতে হবে না। থাকতে আসি নি হু।
মাহি দিপা বেগম এর হাত ধরে বলল,
—কিছু মনে করবেন না ফুপি।ও আসলে আমাদের সম্পর্কটা এতো তাড়াতাড়ি কাউকে জানাতে চায়নি তো তাই একটু….।আসি ফুপি।এই পাগলের একটু খেয়াল রাখবেন।
মাহি কথাগুলো বলে দিপা বেগম কে জড়িয়ে ধরে ফিসফিস করে বলল,
—ফাহাদ যদি জানতে পারে তার ফুপি তার রাই পাখিকে পালাতে সাহায্য করেছে তখন কি হবে মিসেস ইসলাম?অন্যের নামে চাপিয়ে দেওয়াতেই যেই দশা করেছিলো।নিজের নাম জানতে পারলে বাচতে পারবেন তো?
মাহির কথা শুনে দিপা বেগম এর হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।মাহির দিকে বিস্ময় নয়তে তাকিয়ে রইল।মাহি দিপা বেগমকে ছেড়ে দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,
—আবার দেখা হবে।আল্লাহ হাফেজ।
মাহি দিপা বেগম এর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে সেখান থেকে চলে গেলো।দিপা বেগম নিজেকে আর দাড় করিয়ে রাখতে না পেরে ধপ করে টুলে বসে পরল।মাথার মধ্যে ঘুড়তে লাগলো নানান চিন্তা।কে এই মেয়ে?এতোকিছুই বা কি করে জানে?যদি সে সত্যিটা ফাহাদ কে বলে দেয় তখন কি হবে তার?কথাগুলো ভাবতেই সে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে ভয়ে শুকনো ঢোক গিললো।
_________
সময় নিজ গতিতে চলে যাচ্ছে।রাই নতুন পরিবারের কাছ থেকে সবার আদর ভালোবাসা পেয়ে পুরোন ক্ষতগুলো ভূলতে চলেছে।নতুন করে নতুন ভাবে বাচার আলো খুজে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু মনের মধ্যে এখনো ফাহাদ নামক এক ভয় কাজ করে বেড়ায় সব সময়।ফাহাদের কথা মনে পরতেই এক অজানা ভয় এসে মনের মাঝে ভিড় করে।বুক চিড়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে একটা কথাই বলে বের হয়ে আসে এতো সুখ কপালে সইবে তো?ঐদিকে ফাহাদ এর অবস্থা নাজেহাল।স্নিগ্ধা মাহির পাগলামোর কারনে তার অবস্থা যায় যায়।সারাদিন এটা সেটা করে ফাহাদকে রাগানোই যেন তার প্রতিদিনের কাজ হয়ে গেছে।ফাহাদকে রাগানোর কোন কৌশলই সে বাকি রাখে নি।সব ভাবেই সে প্রতিনিয়ত ফাহাদ কে জ্বালাতন করেই চলেছে।ফাহাদকে রাগিয়ে তোলার মাঝেই সে পৌচাশিক আনন্দ পায়।
________
তিহানের আজ ফাইজাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু জরুরি কাজ পরে যাওয়ায় তিহান আর অফিস থেকে বের হতে পারে নি।সে জন্যই ফাইজা তিহানের সাথে রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে রয়েছে।তিহান নানান ভাবে ফাইজার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তাকে মানাতে পারছে না।
তিহান ফাইজার পাশে বসে ফাইজার হাত ধরতে গেলে ফাইজা হাত সরিয়ে ফেলে।ফাইজা তিহানের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই তিহান অসহায় ফেস করে বলল,
—ফাইজা!কেন বুঝেও অবুঝের মত করছো তুমি?বলছি তো জরুরি কাজ পরে যাওয়ার কারনে আসতে পারিনি।আজ না গিয়েছি কাল তো বলছি নিয়ে যাবো।
তিহানের কথা শুনেও ফাইজা না শোনার ভান করে অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে রাখলো।
তিহান ফাইজাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরতেই ফাইজা তিহানের হাত সরিয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
—সরোতো এখান থেকে আর দরদ দেখাতে হবে না।কাজে বসে যে আমার কথা ভুলে যায় তার আমার কথা না ভাবলেও হবে।এতোই যখন কাজ ছিলো তাহলে একবার ফোন করে বলে দিলেই তো পারতে।তাহলে তো আর আমি রেডি হয়ে আশায় বসে থাকতাম না।দুপুর থেকে পথ চেয়ে আশায় বসে রয়েছি।ফোন দিয়েছি ফোনও ধরোনি এখন এসেছো কেন দরদ দেখাতে?যাও ভাগো তো।
তিহান অসহায় কন্ঠে বলল,
—মানছি দোষটা আমার।তার জন্য সরি বলেছি তো।আর কত বলবো?
ফাইজা কিছু না বলে গাল ফুলিয়ে বসেই রইল।তিহান বড় করে একটা নিশ্বাস ফেলে ফাইজার হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে আদুরে গলায় বলল,
—ফাইজা প্লিজ আর রাগ করে থেকো না।ঘুরতে যেতে পারিনি তো কি হয়েছে চল আমি আজ এখনি তোমায় বাহিরে নিয়ে যাব তোমার ফেভারিট আইসক্রিম খাওয়াতে।
ফাইজা তিহানের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
—ঘুষ দিচ্ছো।
তিহান মিষ্টি হেসে ফাইজার নাক টেনে দিয়ে বলল,
—না আমার ফাইজা রানীর রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছি।
_________
নিস্তব্ধ রজনীতে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে চলেছে তিহান,ফাইজা,রাই,তীব্র।ফাইজা, রাই আইসক্রিম হাতে নিয়ে আপন মনে হেটে চলেছে আর বকবক করছে।তারা এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে তারা দুজন ছাড়া আশেপাশে আর কেউ নেই।তিহান,তীব্রও তাদের মাঝে না ঠুকে চুপচাপ তাদের পিছু পিছু হাটছে।
তিহাস হতাস হয়ে বলল,
—দেখছো ভাই! আমাদের মিসেস দের কান্ড।কি সুন্দর রোমান্টিক পরিবেশ।উপরে চাদ নিচে আলো।আহা কোথায় আমাদের হাতে হাত রেখে হাটবে।তা না করে নিজেরা নিজেদের মধ্যে বকবক করে হাহা করতে করতে হেটে চলেছে।
ধূর ভালোই লাগছেনা।
তীব্র রাই এর হাস্যউজ্জল চেহারার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,
—আমার তো একটুও খারাপ লাগছে না।ওর মুখের এই হাসিটুকু দেখার জন্য যদি আরো কিছু করতে হয় তাহলে তাই করবো।
অনেকক্ষন হাটাহাটি করার পর ফাইজা পা ধরে বলল,
—আর পারবো না হাটতে খুব পা ব্যাথা করছে।
রাই ফোস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,
—আমারো।
কথাটা বলতে না বলতেই তীব্র,রাইকে কোলে তুলে নিয়ে হাটতে লাগলো।তীব্রর কাজে রাই হকচকিয়ে গেলো।নিজের অবস্থান বুঝতে পেরে নিচে নামার জন্য ছটফট করতে করতে চেচিয়ে বলল,
—কি হচ্ছে কি?কোলে তুলেছেন কেন?নামান আমায়।
—তুমিই না বললে হাটতে পারবে না তাই তো কোলে নিলাম।মাঝরাতে তো আর বউকে রাস্তায় ফেলে যেতে পারিনা বল।
রাই অবাক হয়ে বলল,
—আমি কখন বললাম হাটতে পারবো না?
—মাত্রই তো ফাইজার সাথে বললে।
—আমি কি বলেছি আর আপনি কি বুঝেছেন।আমি বলেছি…..।
তীব্র রাইকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে বিরক্তিকর কন্ঠে বলল,
—উফ এতো কথা বলো না তো।চুপচাপ গলা জড়িয়ে ধর।আর আমায় আমার কাজ করতে দাও।
রাই নামার জন্য ছটফট করে বলল,
—আপনি আমায় নামান প্লিজ।ভাইয়া,ফাইজুর সামনে….।
তীব্র চোখ রাঙিয়ে বলল,
—তুমি গলা জড়িয়ে ধরবে না ফেলে দিব।
রাই,তীব্রর কথামত কাজ না করে নামার জন্য ছটফট করতেই তীব্র হাতের বাধন একটু নরম করতে রাই ভয় পেয়ে তীব্রর গলা জড়িয়ে ধরে।তীব্র মুচকি হেসে সামনে হাটতে থাকে।
—আমার বুক খালি কবে অন্যের বুকে চিপকে রয়েছো।কাজটা কি ভালো করলে রাই পাখি?
কথাটা কানে যেতেই রাই এর শরীর কেপে উঠে।চোখ খিচে বন্ধ করে তীব্রর শার্টের কলার শক্ত করে আকড়ে ধরে।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রি-চেইক করা হয়নি।ধন্যবাদ)