#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_17
#Ariyana_Nur
বেডের মধ্যে জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে রাই।হঠাৎ ঘুমের মধ্যে চোখের উপর লাইটের আলো পরতেই রাই এর ঘুম ছুটে গেলে।রাই পিট পিট করে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখলো তীব্র কাবার্ডের সামনে দাড়িয়ে কিছু একটা করছে।তীব্র কাবার্ড থেকে টিশার্ট,টাউজার বের করে কাবার্ড লাগিয়ে ঘুড়ে দাড়াতেই দেখে রাই চোখের উপর হাত রেখে কপালে ভাজ ফেলে শুয়ে রয়েছে।লাইটের কারনে যে রাই এর কাচা ঘুম ভেঙে গেছে সেটা বুঝতে তীব্রর দেড়ি হল না।
—সরি আমার কারনে তোমার কাচা ঘুমটা ভেঙে গেলে।আসলে বুঝতে পারিনি আলোতে তোমার সমস্যা হবে।আমি এখনি লাইট টা বন্ধ করে দিচ্ছি।
তীব্রর কথা শুনে রাই ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল,
—সমস্যা নেই।আপনি আপনার কাজ করুন।লাইট অফ করতে হবে না।আমি…..।
কথাটা শেষ করার আগেই তীব্রর দিকে চোখ পরতেই রাই এর চোখ থেকে ঘুম উধাও হয়ে গেলো।তড়িঘড়ি বেড থেকে নেমে তীব্রর সামনে এসে উওেজিত হয়ে বলল,
—কি হয়েছে আপনার?আপনার শার্টে এতো রক্ত কেন?আপনি ঠিক আছেন তো?
রাই কে উওেজিত হতে দেখে তীব্র সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
—রিলেক্স।উওেজিত হওয়ার কিছুই নেই।আমি ঠিক আছি।আমার কিছুই হইনি।
তীব্রর কথায় ও যেন রাই নিজেকে শান্ত করতে পারলো না।পূনরায় উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল,
—কিছু না হলে শার্টে এতো রক্ত লাগলো কিভাবে?
তীব্র নিজের শার্ট দেখিয়ে বলল,
—এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।এগুলো আমার রক্ত না।আসার সময় দেখি রাস্তায় একজন লোক এক্সিডেন্ট করে পরে রয়েছে।তাকে সাহায্য করতে গিয়েই রক্ত লেগেছে।
এক্সিডেন্টের কথা শুনে রাই এর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।নিচু কন্ঠে বলল,
—ওহ।আমি ভাবলাম আপনার কিছু….।
কথাটা সম্পূর্ণ না করে রাই চুপ হয়ে গেলো।
—আমাকে এভাবে দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলে?
তীব্রর কথা শুনে রাই,তীব্রর দিকে তাকাতেই দেখলো তীব্র ঠোটের কোনে হাসির রেখা টেনে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।রাই আমতা আমতা করে বলল,
—অনেক রাত হয়ে গেছে।আপনি ফ্রেস হয়ে আসুন।
কথাটা বলেই রাই সরে গেলো।তীব্রও কথা না বাড়িয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলে।তীব্র ফ্রেস হয়ে এসে দেখে রাই বেডের সাথে হেলান দিয়ে চোখের উপর হাত রেখে বসে রয়েছে।তীব্র কোন কথা না বলে রাই এর সামনে বসে রাই এর ওড়নার কোনা দিয়ে মাথা মুছতে লাগলো।তীব্রর কাজে রাই বিরক্ত হয়ে বলল,
—কি করছেন কি?গলায় তোয়ালে ঝুলিয়ে রেখেও আমার ওড়না দিয়ে মাথা মুছতে হবে?
তীব্র একটা ভূবন ভূলানো হাসি দিয়ে বলল,
—তোমার ওড়না দিয়ে মাথা না মুছলে মনে হয় মাথাই মোছা হয়নি।তাই তো তোয়ালে রেখে তোমার ওড়না দিয়েই তোয়ালের কাজ চালাই।
রাই দাতে দাত চেপে বলল,
—এর পর থেকে ওড়না দিয়ে নাক মুছে রাখবো।তখন দেখবো কিভাবে মাথা মুছেন।
—তো তাতে কি হয়েছে।নাকই তো মুছবে।তখন না হয় এক কাজে দু’কাজ হয়ে যাবে।মাথা মোছাও হবে সাথে জেল ও লাগানো হয়ে যাবে।কষ্ট করে আর জেল লাগা….. ।
রাই,তীব্রকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই বলল,
—ইয়াক ছি।আপনি এতো খবিশ কেন?কি সব কথা বলছেন?
—যাহ বাবা শুরু করলে তুমি আর খবিশ হয়ে গেলাম আমি?
রাই কিছু না বলে চোখ মুখ কুচকে বসে রইল।তীব্র কিছুক্ষন তীক্ষ্ম চোখে রাই কে পর্যবেক্ষণ করে রাই এর গালে হাত রেখে শীতল কন্ঠে বলল,
—কি হয়েছে তোমার?চেহারা এমন দেখা যাচ্ছে কেন?শরীর খারাপ?
হঠাৎ করে তীব্রর ঠান্ডা হাতের স্পর্স গালে পেতেই রাই কেপে উঠল।তীব্র দিকে তাকাতেই দেখে তীব্র তার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রয়েছে।রাই মিনমিনে বলল,
—কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি?
—ঠিক আছো কিনা সেটা জানতে চাইনি কি হয়েছে সেটা বল।
রাই জানে তীব্র তার পেটের কথা বের করেই ছাড়বে তাই কথা না বাড়িয়ে বলল,
—ওই একটু মাথা ব্যাথা করছে।
—মেডিসিন নিয়েছো?
—না ঘুমিয়ে ছিলাম।
তীব্র রাই এর দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল,
—ডিনার করেছো?
রাই এর মাথা ব্যাথা কারনে সে এশার এর নামাজ পরেই ঘুমিয়ে পরেছিলো।ফাইজা, মুনিয়া বেগম খাবার খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করলে সে জানায় পরে খাবে।
তীব্রর কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাই আমতা আমতা করে বলল,
—ঘুমোলেই ঠিক হয়ে যাবে।
রাই এর কথা শুনে তীব্র যা বোঝার বুঝে গেছে।তীব্র কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।একটু পর হাতে খাবারের প্লেট নিয়ে রুমে ঢুকে দেখলো রাই চোখের উপর হাত রেখে সুয়ে রয়েছে।তীব্র খাবারের প্লেটটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে রাই এর সামনে বসল।তীব্রকে নিজের পাশে বসতে দেখেই রাই সোয়া থেকে উঠে বসল।কিছু বলার আগেই তীব্র গম্ভীর কন্ঠে বলল,
—কোন কথা না।চুপচাপ খাবার টা খেয়ে মেডিসিন নিবে।
রাই যতই তীব্রর সাথে সাহস দেখাতে যাক না কেন তীব্রর গম্ভীর গলার কথা শুনলেই সে চুপসে যায়।রাই অসহায় ফেস করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইল।তীব্র সেটা উপেক্ষা করে নিজের হাতে খাবারের প্লেট তুলে নিল।রাই মিনমিনে গলায় বলল,
—আমি খাব ন…..।
কথাটা শেষ করার আগেই তীব্র চোখ রাঙিয়ে রাই এর দিকে তাকাতেই রাই চুপসে গেল।ভালো মেয়ের মত তীব্রর হাতে খেতে লাগল।রাই তীব্রর হাতে খাবার খেয়ে মেডিসিন নিয়ে তীব্রর কথা মত শুয়ে পরল।তীব্র রুমের লাইট অফ করে দিয়ে রাই এর মাথার সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
—ঘুমাও আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
তীব্র কথা মত রাই চোখ বন্ধ করতেই চোখ দিয়ে এক ফোটা জল গড়িয়ে পরল।তীব্র দেখার রাই চোখের জল মুছে নিল।তীব্রর সকল ব্যবহারেই রাই তীব্রর প্রতি মুগ্ধ।রাই এর প্রতি তীব্র অধিকার খাটানো,ছোট ছোট কেয়ার,খুনশুটি সব কিছুতেই রাই এর মাঝে আলাদা ভালোলাগা কাজ করে।
রাই আস্তে আস্তে তীব্র নামক মানুষটির প্রতি দূর্বল হয়ে যে পরছে সেটা সে বুঝেও মুখে স্বীকার করতে নারাজ।
__________
হাসপাতের সাদা ধবধবে বেডের উপর শুয়ে রয়েছে ফাহাদ।শরীরের বিভিন্ন যায়গায় রয়েছে জখমের চিহ্ন। মাথায় মোটা করে বেন্ডেজ করা।পিটপিট করে চোখ খুলতেই ফাহাদ নিজেকে বেডে আবিস্কার করল।আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিজের অবস্থান বুঝার চেষ্টা করতে লাগলো।হাত নাড়াতেই হাতে টান লাগল।হাতের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো হাতে ক্যানুলা লাগানো।ফাহাদ এর মাথাটা কেমন ভাড় ভাড় লাগছে।এখানে কিভাবে এল কিছুই তার মাথায় ডুকছে না।সে তো রাতের বেলা ড্রিস করে এটা বের হয়েছিলো।তারপরের কিছুই তার মনে নেই।
—উঠে গেছো!
একটা মিষ্টি কন্ঠের গলার আওয়াজ কানে আসতেই ফাহাদ ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই দেখতে পেলো সেদিনের সেই মেয়েটা মলিন একটা হাসি দিয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে।মেয়েটি তার সামনে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলল,
—এখন কেমন লাগছে?
মেয়েটির কথার উওর না দিয়ে ফাহাদ রক্ত চক্ষু করে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমি এখানে কেন?
—মাঝরাতে টাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ালে এখানে থাকবে না তো কোথায় থাকবে শুনি?তোমার ভাগ্য ভালো এই যাত্রায় আমার জন্য বেচে গেছো।আমি না থাকলে এতোক্ষনে…।
কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটি ফুপিয়ে কেদে উঠল।ফাহাদ ধমক দিয়ে বলল,
—এই মেয়ে!একদম এই সব ন্যাকামি আমার সামনে করতে আসবে না।ভালোয় ভালোয় বল আমি এখানে কি করে এলাম।
মেয়েটি ফাহাদের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল,
—আমার এই কান্না তোমার কাছে ন্যাকামি মনে হচ্ছে?
ফাহাদ বিরক্ত হয়ে কিছু বলার আগেই একজন নার্স দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করে বলল,
—বাচা গেলো পেশেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।ম্যাম বলেছিলাম না স্যার ঠিক হয়ে যাবে।দেখলেন তো আমার কথাই ঠিক হল।স্যার আপনি খুব লাকি আপনি ম্যাম এর মত জীবনসঙ্গী পেয়েছেন।কালকের রাত থেকে ম্যাম আপনার জন্য আমাদের অবস্থা নাজেহাল করে দিয়েছে।আপনি ঠিক আছেন কিনা আপনার কখন জ্ঞান ফিরবে এ সব জিগ্গেস করতে করতে আমাদের কান ব্যাথা করে ফেলেছে।সাথে কান্না কাটি করে নিজের কি অবস্থা করেছে দেখুন একবার।
ফাহাদ নার্সটির দিকে তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে বলল,
—গুনগানটা একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না?
ফাহাদ এর কথা শুনে নার্সটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।মেয়েটি নাক টেনে বলল,
—কি যে বলেন না সিস্টার!যার কাছে আমার ভালোবাসারই কোন দাম নেই সে আবার আমার কেয়ারের কি দাম দিবে।
মেয়েটি চোখ মুছে কন্দনরত গলায় বলল,
—ভালো থেকো জান। নিজের খেয়াল রেখ।একটা জরুরি কাজ আছে তাই যাচ্ছি।একটু পর চলে আসবো।
নার্স এর দিকে ঘুড়ে নরম সুরে বলল,
—একে দেখে রাখবেন।এর সেবায় যেন বিন্দুমাত্র ভূলক্রটি না হয়।তাহলে কিন্তু….।বুঝতেই তো পারছেন।মনে থাকবে?
মেয়েটি কথাটা নরম গলায় বললেও মেয়েটির কথা শুনে নার্স এর শরীর কাপুনি দিয়ে উঠল।মুখে কিছু বলতে না পেরে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।মেয়েটির নার্স এর দিকে তাকিয়ে বাকা হেসে সেখান থেকে চলে গেলো।
_________
অজ্ঞান অবস্থায় চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় রয়েছে একজন লোক।লোকটি হল সেই ড্রাইভার যে ফাহাদকে মাঝরাস্তায় এক্সিডেন্ট করেছিলো।তার মুখোমুখি পায়ের উপর পা তুলে বসে হাতের থাকা ছুড়িটা ঘুড়িয়ে চলেছে একজন মেয়ে।মেয়েটির ইশারা করতেই পাশের একজন লোক কার ড্রাইভারের উপর পানি ছুড়ে মারল।পানির ঝাপটা লাগাতেই লোকটার জ্ঞান ফিরে এল।চোখ মেলতেই সামনে মেয়েটাকে বসে থাকতে দেখে উওেজিত কন্ঠে বলল,
—ম্যাম আপনি এসেছেন।দেখুন না ম্যাম!আমি আমার প্যামেন্ট নিতে এসেছি আপনার লোকেরা আমার ধরে বেধে রেখেছে।
মেয়েটি হাতের ছুড়ি ঘুড়াতে ঘুড়াতে শীতল কন্ঠে বলল,
—কিসের প্যামেন্ট?
মেয়েটির কথা শুনে লোকটি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।অবাক কন্ঠে বলল,
—কিসের প্যামেন্ট মানে?আপনি ভূলে গেছেন ম্যাম?আপনার কথা মতই তো ঐ স্যারকে এক্সিডেন্ট করালাম।যার জন্য আপনি আমায় মোটা অংকের টাকা দিবেন বলেছিলেন।
—কিভাবে এক্সিডেন্ট করাতে বলেছিলাম?
মেয়েটির এমন ব্যবহারে লোকটি তরতর করে ঘামতে লাগলো।ঘাবরে যাওয়া গলায় বলল,
—বলিছেল এমন পিছন থেকে হালকার উপর ধাক্কা দিতে।বেশি আঘাত যাতে না পায়।
মেয়েটি লোকটার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে বলল,
—তাহলে ও এতো বেশি আঘাত পেল কেন? হাত পায়ে এতো জখম হল কেন?
—ম্যাম আমি তো আস্তের উপরই ধাক্কা দিয়েছিলাম স্যারকে।স্যার মাতাল ছিলো তার উপরে মাথায় চোট লাগাতে সাথে সাথেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।যেখানে পরেছে সেখানে গাড়ির কাচ ভাঙা থাকায় সেগুলো শরীরে ফুটে গেছে।আমি তো অতো কিছু খেয়ার করে তখন ধাক্কা দেই নি।
—খেয়াল করা দরকার ছিল?
লোকটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
—ভূল হয়ে গেছে ম্যাম।
মেয়েটি হাতের ছুড়িটি লোকটা দিকে ছুড়ে মারল।যা লোকটার উপর দিয়ে গিয়ে দেয়ারের সাথে বারি লেগে নিচে পরে গেল।মেয়েটি চেচিয়ে বলল,
—ভূল মাই ফুট।তোমার এই একটা ভূলের কারনে জানো আমার জান কত কষ্ট পাচ্ছে?ওর ঐ জখম ভরা শরীর দেখে আমার কতটা কষ্ট হচ্ছে?ওর ঐ ক্ষতর কারনে ও যতটা কষ্ট পাচ্ছে তোমাকে ততটা কষ্ট না দিয়ে তো আমি শান্তি পাবো না।গার্ডস(চেচিয়ে) তোমাদের স্যারের শরীরে যতগুলো ক্ষত হয়েছে এর শরীরে আমি ঠিক ততগুলো ক্ষত দেখতে চাই।
কথাগুলো বলেই মেয়েটা গটগট করে চলে গেলো।মেয়েটি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লোকটা অনমনে বলে উঠল,
—এ কোন পাগলের খপ্পরে পরলাম?নিজেই এক্সিডেন্ট করিয়ে নিজেই এখন দরদ দেখাচ্ছে?
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।ধন্যবাদ)