মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-১৫

0
868

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_15
#Ariyana_Nur

একটা সাক্ষরের কারনে যেমন মানুষ নতুন এক সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে।ঠিক তেমনি একটা সাক্ষরের কারনে আবার সেই সম্পর্কের ইতিও টানে।

তীব্রর মুখে ডিভোর্স পেপারের নাম শুনেই রাই ঝাটকা খেল।ফ‍্যালফ‍্যাল করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে রইল।না চাইতেও চোখের কোনে জমা হল নোনা জল।কিছু সময়ের জন‍্য রাই এর ব্রেন কাজ করা বন্ধ করে দিল।মনের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা সাইন এর মাধ‍্যমে গড়ে ওঠা নতুন সম্পর্কের ইতি আবার একটা সাইনের মাধ্যমেই টানলো।ভাবতেই রাই এর মনের মাঝে রক্ত ক্ষরন হতে লাগলো।কেন সেটা সে জানে না।

রাইকে ছলছল চোখে তীব্রর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে তীব্র মনে মনে হাসতে লাগলো।রাইকে আরেকটুকু বোকা বানানোর জন‍্য কাগজটা বালিশের নিচে রেখে দিয়ে গম্ভীর গলায় জিগ্যেস করল,

—তোমার কিছু বলার আছে?

রাই চোখের কোনে জমে থাকা জলটুকু গড়িয়ে পরার আগেই ওড়না দিয়ে মুছে নিল।মাথা নিচু করে ছোট করে উওর দিল,

—না।

—কিছুই বলার নেই?

রাই একটু চুপ করে থেকে নিজেকে কিছুটা সামলিয়ে বলল,

—আমি আপনার কাছে কৈফিয়ত চাইবো না যে,আপনি এটা কেন করেছেন?বরং আপনার কাজে আমি খুশি হয়েছি।আপনি আপনার মনের কথা শুনেছেন।যে সম্পর্কের কোন মানে নেই সেটা ঝুলিয়ে রেখেই বা কি লাভ বলুন?দ্বায়িত্ব, টানাপোড়া সম্পর্ক আর কতদিন?দয়া-করুনা করে একটা মেয়েকে আশ্রয় দেওয়া যায় কিন্তু তাকে নিয়ে সংসার করা যায়….।

রাই কথাটা আর পূর্ন করতে পারলো না।তার আগেই কিছু একটা ভাঙার শব্দ শুনে সে চমকে উঠল।তীব্র রাই এর কথার মাঝের বেড সাইড টেবিলের উপর রাখা জগটা নিচে ছুড়ে মেরেছে।তীব্রর দিকে তাকাতেই রাই এর কলিজা শুকিয়ে গেলো।তীব্র রাই এর দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে রয়েছে।মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই সে রাইকে ভস্ম করে দিবে।তীব্র কিছুক্ষন রাই এর দিকে রক্তচক্ষু করে তাকিয়ে থেকে কোন কথা না বলে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তীব্র রুম থেকে বের হতেই রাই হাটু গেড়ে বসে ঢুকরে কেদে উঠল।তার জীবনটা এমন কেন?জীবনটা এতো কঠিন হওয়া কি খুব দরকার ছিল?

________

ফাহাদ তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হতেই ফাহাদের ফোনটা বেজে উঠল।ফাহাদ নাম্বার খেয়াল না করে ফোন রিসিভ করে কথা বলার আগেই অপর পাস থেকে কর্কশ কন্ঠে ভেসে এল,

—কোথায় ছিলে তুমি?কোন মেয়ের সাথে এতোক্ষন ধরে টাংকি মারছিলে যার কারনে আমার ফোনটা ধরতে পারো নি?আমি আগেও বলেছি এখন আবার বলছি আমি ছাড়া যদি অন‍্য কোন মেয়ের দিকে নজর দাও তাহলে দেখো আমি কি করি?তোমার চোখ তুলে নিব আমি।তারপর সেটা দিয়ে মারবেন খেলবো।

ঘন্টা খানেক সাওয়ার এর নিচে দাড়িয়ে থেকে ফাহাদ যতটুকু মাথা ঠান্ডা করেছিলো এই মেয়ের কথায় পূনরায় তারা মাথা আবার গরম হয়ে গেলো।ফাহাদ রাগি কন্ঠে বলল,

—এই মেয়ে কে তুমি?কেনই বা বার বার কল করে আমার মাথা খাচ্ছ?

ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটি অভিমানী গলায় বলল,

—এই!এই মেয়ে এই মেয়ে কি হ‍্যা?জান, কলিজা এসব বলে ডাকতে পারো না?মাঝরাস্তায় তো ঠিকই অন‍্য মেয়েদের জড়িয়ে থাকতো পারো।আমার সাথে কথা বলতেই তোমার যত সমস‍্যা।সব সময় শুধু তেতো কথা আমার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বললে কি হয় তোমার?

মেয়েটির কথায় ফাহাদের রাগ সপ্তম আকাশে।ফাহাদ হুংকার দিয়ে বলল,

—আমাকে কি মনে হয় তোমার?আমি এতোটাই বোকা যে আমার সাথে চালাকি করে পার পেয়ে যাবে?নাকি নিজেকে বড় অভিনেত্রী মনে হয়?র্নিলজ্জর মত যে তুমিই মাঝরাস্তায় আমায় জড়িয়ে ধরে ছিলে সেটা ভেবো না আমি বুঝি নি।

মেয়েটি খুশি খুশি গলায় বলল,

—ওয়াও জান তুমি তো খুব বুদ্ধিমান।
এই জন‍্যই তো তোমায় এত্ত ভালোবাসি।

মেয়েটির প্রতিটা কথা ফাহাদ এর শরীরে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে।ফাহাদ কিছুক্ষন মেয়েটাকে বকাঝকা করে লাইন কেটে দিয়ে ফোনটা বেডে ছুড়ে মারল।অপর দিকে ফাহাদ লাইন কাটতেই মেয়েটির মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।মেয়েটি হাসতে হাসতে দেয়ালে টানানো ফাহাদ এর ছবির উপর হাত বুলিয়ে বলল,

—মিঃ সাইকো কেমন দিলাম?একটু ওয়েট কর।পাগলামো কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি সব তোমায় উদাহরন সহ কিছুদিনের মধ‍্যেই বুঝিয়ে দিব।তুমি এতোদিন তোমার সাইকোময় ভালাবাসা দেখিয়েছ।এবার আমি তোমায় আমার পাগলামো ভালোবাসা দেখেবো।সো রেডি থেকো।

________

হাটুতে মাথা গুজে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে চলেছে রাই।পাশে কারো উপস্থিতি বুঝতে পেতেই মাথা তুলে তাকালো সে।তীব্রকে পাশে হাটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি চোখের জল মুছে নড়েচড়ে ঠিক হয়ে বসল।তীব্র,রাই এর মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে নরম গলায় বলল,

—তুমি এমন কেন?আমি বললাম পেপারে সাইন করতে বিনা বাক‍্যে পেপারে সাইন করে দিলে।একবারো কি পেপারটা পড়ে দেখা তোমার উচিত ছিলো না কিসের মধ‍্যে সাইন করছো?পড়া তো দূর সাইন করার আগে মুখ ফুটে একবার জিগ্যেস ও করলে না এটা কিসের পেপার।কাজটা কি ঠিক হল বল?

তীব্রর কথার প্রতি উওরে রাই মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইল।পেপারটা না পড়ে বা কিসের পেপারে সাইন করছে সেটা না যেনে যে সাইন করা ঠিক হয়নি সেটা সেও বুঝতে পারছে।তখন সে এমনিতেই তীব্রর সামনে আসতে বিব্রত বোধ করছিলো।তাইতো তখন তীব্র পেপারে সাইন করতে বলাল সাথে সাথে অতো কিছু না ভেবে পেপারে সাইন করে দিয়েছিলো।যখন মাথায় খেয়াল এল কিসের পেপারে সাইন করল তখন এক মুহূর্তও দেড়ি না করেই তীব্রকে সে জিগ্যেস করে বসেছিলো।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তীব্র পূনরায় বলল,

—আমি জানি না তুমি আমাদের সম্পর্কটাকে কোন চোখে দেখ।আমার সম্পর্কে কি ভাবো।

কথাটা বলে তীব্র থামলো।ছোট করে একটা চাপা নিশ্বাস ফেলে পূনরায় বলল,

—সবার মত ভালোবাসা নিয়ে লেকচার দেবার সময় বা ইচ্ছে কোনটাই আমার নেই।মুখে তো সবাই নানান প্রতুশ্রুতি দেয়।কাজের বেলায় ক’জন ক’টাই বা পালন করে বল?তাই আমার মনের কথা আমার কাজে বুঝে নিও।তাহলেই বুঝতে পারবে এই হৃদয়ে কতটা জুড়ে আছো তুমি।

তীব্র কথাগুলো বলে উঠে দাড়ালো।দরজার সামনে গিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল,

—পেপারটা বালিশের নিচেই আছে।ইচ্ছে হলে দেখে নিও।

কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে সেখান থেকে চলে গেলো।তীব্রর মুখে এমন কথা শুনে রাই রিয়েক্ট করতেই ভূলে গেছে।মাথাটা কেমন হ‍্যাং মেরে রয়েছে তার।তীব্রর বলা প্রতিটা কথা বার বার তার কানে ঘুড়পাক খাচ্ছে।

________

ফাইজার সামনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছে রাই।ফাইজা তীক্ষ্ণ চোখে হাতের কাজটা একবার দেখছে তো এক বার রাই এর দিকে তাকাচ্ছে।রাই এর মুখে সব শুনতেই ফাইজার মেজাজ চড়া হয়ে রয়েছে।

—চোখের পাওয়ারের কি মাথা খাইছোস তুই?চোখে যদি ঠাওয়ার না পাস তাহলে একমে খালি চোখে ঘুড়োস কেন?পাওয়ারের চশমা লাগাইতে পারোস না গরু।তোরে গরু কইলেও গরুদের অপমান করা হইবো।পাগল,ছাগল ছেমড়ি।মনডায় চাইতাছে তোরে ড্রেনের থেকে চুবাইয়া আনি।

ফাইজার রাগি গলার কথা শুনে রাই কাদো কাদো ফেস করে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,

—তুই আমায় এভাবে বলতে পারলি ফাইজু?

ফাইজা ধমক দিয়ে বলল,

—তোরে যে আমি আস্ত রাখছি সেটার শুকরিয়া আদায় কর।বদমাইশ ছেমড়ি জীবনে ভর্তির ফরম দেখোস নাই?পড়ালেখা কি এমনে এমনেই করছোস নাকি?ডিভোর্স পেপার আর ভর্তির ফরম এর মধ‍্যে পাথর্ক‍্য চিনোস না।

রাই গাল ফুলিয়ে বলল,

—আমার কি দোষ বল?উনি সামনে থাকতেই তো আমার সব গুলিয়ে যায়।তাছাড়া সকালের কারনটার জন‍্যও তার সামনে যেতে একটু বিব্রত বোধ করছিলাম।তাই অতোকিছু না ভেবেই…..।

ফাইজা ফোস করে নিশ্বাস ফেলে বলল,

—হয়েছে আর সাফাই গাইতে হবে না।
যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।তোর ঐ ছাগল মার্কা করনেই তুই ভাইয়ার মনের খবর জানতে পারলি।এবার অতি তাড়াতাড়ি নিজের মনের খবরটাও ভাইয়াকে জানিয়ে দিস।তাহলেই সব সমাধান হয়ে যাবে।

ফাইজার কথার প্রতিউওরে রাই চুপ করে রইল।তার মাথায় ঘুরছে অন‍্য চিন্তা।নিজের কথা ভেবে এখানে এসে গা ডাকা দিতে গিয়ে এই পরিবারের লোকদের উপর বিপদ ডেকে আনছে না তো?

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন‍্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে