#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_14
#Ariyana_Nur
হুট করেই মাঝরাস্তায় অপরিচিত একটা মেয়ে এসে জড়িয়ে ধরাতে হকচকিয়ে গেলো ফাহাদ।নিজের এতো কাছে অন্য একটা মেয়ের অবস্থান বুঝতে পেরে মুহূর্তেই কপালের রগ ফুলে উঠল।শরীরের মধ্যে মনে হয় জ্বালাপোড়া শুরু হয়ে গেলো।ফাহাদ মেয়েটাকে নিজের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে রাগি গলায় বলল,
—কি হচ্ছে কি?এটা কোন ধরনের অভদ্রতা?ছাড়ুন আমায়।
মেয়েটি হাতের বাধন আরেকটুকু টাইট করে ভীতু গলায় বলল,
—প্লিজ নড়াচড়া করবেন না।যেভাবে আছেন ঠিক সেভাবেই থাকুন।
ফাহাদ চেচিয়ে বলল,
—হোয়াট?কি সব বলছেন আপনি?আপনার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?ছাড়ুন আমায়।
মেয়েটি করুন কন্ঠে বলল,
—আমার মাথা খারাপ হয়নি।মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।কিছু বখাটে ছেলে আমার পিছু নিয়েছে।প্লিজ আমায় হেল্প করুন।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ আশেপাশে তাকিয়ে বলল,
—কোথায় বখাটে ছেলে?আমি তো রাস্তায় কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না।
—মুন্ডুটা একটু বাকা করে পিছন দিকে তাকান তাহলেই দেখতে পাবেন।
মেয়েটার কথা শুনে ফাহাদ ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছন দিকে তাকাতেই দেখলো কয়েকটা ছেলে ওদের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।নিজেদের সাথে কিছু বলে সামনের দিকে আর পা না বাড়িয়ে উল্টো পথে হাটা ধরল।ছেলেগুলো চলে যেতেই ফাহাদ গম্ভীর গলায় বলল,
—ওরা চলে গেছে এবার ছাড়ুন।
ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটির হাতের বাধন আস্তে আস্তে ছুটে গেলো।মেয়েটির হাত থেকে ছাড়া পেতেই ফাহাদ কোন কিছু না বলে মেয়েটির গালে ঠাটিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল।ফাহাদের কাজে মেয়েটি ফ্যালফ্যাল করে গালে হাত দিয়ে ফাহাদের দিকে তাকিয়ে রইল।ফাহাদ মেয়েটিকে চড় মেরেও যেন নিজের রাগ দমাতে পারছে না।ফাহাদ ধমকে বলে উঠল,
—হেই ইউ!কোন সাহসে তুমি আমার জড়িয়ে ধরেছো? র্নিলজ্জা,বেহায়া মেয়ে লজ্জা করে না অপরিচিত একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে?তোমার মত ছেছড়া মেয়ে আমি দ্বিতীয়টা দেখি নি।
ফাহাদ এর ধমক আর ঝাঝালো গলার কথা শুনে মেয়েটি ভ্যা ভ্যা করে কেদে উঠল।মেয়েটির কাজে ফাহাদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল।মুহূর্তের মধ্যে নিজের রুপে ফিরে গিয়ে ধমক দিয়ে বলল,
—এই মেয়ে বাচ্চাদের মত এভাবে কাদছো কেন?
ফাহাদ এর ধমক খেয়ে মেয়েটি কেপে উঠল।ভ্যা ভ্যা কান্না থামিয়ে ফোপাতে লাগল।ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে উঠল,
—আমি তো বাচ্চাই।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ এবার মেয়েটির দিকে ভালো করে নজর দিলো।মেয়েটির পরনে হোয়াইট টপস আর ব্ল্যাক স্কার্ট।গলায় ওড়না ঝুলানো।ফর্সা গোলগাল চেহারার অধিকারী মেয়েটার কান্নার কারনে নাকের ঢগা অনেকটা লাল হয়ে গেছে।সব মিলিয়ে মেয়েটিকে দেখতে আসলেই অনেকটা বাচ্চা লাগছে।মেয়েটাকে এভাবে কান্না করতে দেখেও ফাহাদের নিজের কাজের জন্য মনে কোনে অনুশচনা কাজ করল না।ফাহাদ রাগি গলায় বলে বলল,
—বাচ্চা যখন তখন একা রাস্তায় বের হয়েছো কেন?
মেয়েটি নাক টেনে ফাহাদের কথার উওর না দিয়ে উল্টো প্রশ্ন করল,
—আপনার কাছে রুমাল আছে?
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ মেয়েটির দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই মেয়েটি পূনরায় নাক টেনে বলল,
—কান্নার কারনে নাকে পানি চলে এসেছে।নাক মুছবো।
মেয়েটির কথা শুনে ফাহাদ বিরবির করে বলল,
—ডিসগাস্টিং।
মেয়েটি ফাহাদ কে চুপ করে থাকতে দেখে পূনরায় জিগ্যেস করল,
—আপনার কাছে রুমাল নেই?
ফাহাদ কাঠ কাঠ গলায় বলল,
—না নেই।
ফাহাদের কথা শুনে মেয়েটি নাক টেনে ফাহাদের অনেকটা সামনে চলে গেলো।ফাহাদ কিছু বুঝার আগেই ফাহাদের শার্টের কোনা দিয়ে নাক মুছে নিল।মেয়েটির কাজে ফাহাদ স্টেচু হয়ে গেলো।ব্যাপারটা যখন বুঝতে পারলো তখন বাজখাই গলায় চেচিয়ে বলল,
—ইউ! কি করলে তুমি এটা?
মেয়েটি অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
—হায় আল্লাহ!আপনি কানা নাকি দেখতে পারেন নি কি করেছি?
ফাহাদ রাগে দাত কিরমির করতে করতে বলল,
—তোমার সাহস তো কম না তুমি আমার শার্ট দিয়ে….।ইয়াক।
—হায় আল্লাহ!এতে সাহসের কি হল?আপনি কাদিয়েছেন আপনার কারনে আমার নাকে পানি এসেছে আপনার শার্ট দিয়ে মুছবো না তো কার শার্ট দিয়ে মুছবো?তাছাড়া আপনার কাছে তো রুমাল চেয়েছিই।রুমাল নেই কিছু নেই তাহলে আমি কি করবো?(অসহায় ফেস করে)
ফাহাদ রাগে নিজের চুল টেনে দাতে দাত চেপে বলল,
—আমার সামনে থেকে তাড়াতাড়ি যাও তা না হলে তোমায় যে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না।
মেয়েটা ভেঙচি কেটে বলল,
—এহ আসছে আমার সামনে থিকে যাও বলতে।রাস্তাটা কি আপনার যে আপনার কথা মত আমি এখান থেকে চলে যাবো?
ফাহাদ মেয়েটার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে বলল,
—বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
মেয়েটি কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
—বাড়াবাড়ির কি দেখেছেন।ভালোয় ভালোয় কেটে পরুন তা না হলে মানুষ জড়ো করে এমন মাইর খাওয়াবো একেবারে সোজা হয়ে যাবেন।মাইরের ঠেলায় শিখে যাবেন মেয়েদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।প্রথম থেকেই ধমকের উপর ধমক দিয়ে চলেছে।কোথায় আমার মত মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে মিষ্টি করে কথা বলবে।তা না করে শুধু ধমকাচ্ছে।
ফাহাদ মেয়েটার দিকে তেড়ে গিয়ে বলল,
—ইউ তোমাকে আমি….।
ফাহাদকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মেয়েটি ফাহাদের গাল টেনে দিয়ে মুখের মধ্যে হাসির রেখা টেনে বলল,
—ওলে আমার হিলো(হিরো) লে।বেশি লাগিয়ে(রাগিয়ে) দিলাম তোমায়?থাক আর লাগতে হবে না।আমিই চলে যাচ্ছি।নিজের খেয়াল রেখো।লাভ ইউ।
মেয়েটি হাত দিয়ে ফ্লাইং কিস ছুড়ে দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো।ফাহাদ যেন মেয়েটির কাজে কথা বলতে ভুলে গেলো।ফ্যালফ্যাল করে মেয়েটি যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
_________
রাই বেলকনিতে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে নানান কথা ভাবছে।হঠাৎ সকালের তীব্রর করা কাজের কথা মনে পরতেই আপনা আপনি নিজের হাত কপালে চলে গেলো।মুহূর্তেই মুখের মধ্যে এক রাশ লজ্জারা এসে ভীড় জমালো।
—রাইজু!এমন খাম্বার মত দাড়িয়ে কপালে হাত দিয়ে কি ভাবছিস?সেই কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না?
ফাইজার জোর গলার কথা শুনে রাই হকচকিয়ে গলো।কপাল থেকে হাত নামিয়ে থতমত খেয়ে বলল,
—কই?কিছু না তো।
ফাইজা রাই এর দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রাগি গলায় বলল,
—ঐ ছেমড়ি কিছু যদি নাই ভাবোস তাহলে এতো গুলো যে ডাক দিলাম জবাব দিলি না কেন?
রাই মিনমিনে গলায় বলল,
—শুনতে পাইনি।
ফাইজা কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
—শুনতে পাবি না কেন?কানে কি তুলা দিয়া রাখছোস?
রাই অসহায় ফেস করে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
—আরে এমন রাগ করছিস কেন?বললাম তো শুনতে পাই নি।
ফাইজা রাই এর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল,
—সকাল থেকেই তোকে অন্য রকম লাগছে।সত্যি করে বলতো কি হইছে?ভাইয়ার রাগ ভাঙছে?
ফাইজার কথার প্রতি উওরে রাই কপট রাগ দেখিয়ে ঝাঝালো গলায় বলে উঠল,
—বান্দরনী তোর মত বেষ্টু যার থাকবে তার আর শত্রুর প্রযোজন হবে না।জীবনে যা না করছি তাও আজ তোর কথা রাখার জন্য করলাম।সে রাগ করুক বা যাই করুক তাতে আমার কি?তার রাগে আমার কি আসে যায়?
রাই ভেঙচি কেটে বলল,
—হইছে আর ঢং করতে হবে না।আমার মুখ খোলাইও না।এখন যেটা জিগ্যেস করছি সেটা বল।
রাই কথা না বাড়িয়ে ছোট করে উওর দিল,
—হুম।
ফাইজা খুশি হয়ে রাই এর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
—এই না হলে আমার বেষ্টু।সরিরে দোস্ত আমার জন্য তোর ভাইয়ার বকা শুনতে হল।
রাই আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে বলল,
—ফাইজু!লোকটা এমন কেন বলতে পারিস?এর হাব-ভাব, মতি-গতি কিছুই আমি বুঝতে পারি না।মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা পুরোই পাগল।
ফাইজা মুচকি হেসে বলল,
—হ্যা তোর জন্য।
রাই কপালে ভাজ ফেলে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,
—আমার জন্য মানে?
ফাইজা কথা ঘুড়িয়ে বলল,
—তোর জন্য পাগল কখন বললাম?বললাম তোর মত পাগল।
রাই,ফাইজার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই ফাইজা,রাই এর হাত থেকে বাচার উদ্দেশ্য বলল,
—মনে হয় তিহান ডাকছে।তুই থাক আমি আসছি।
কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ফাইজা কেটে পরল।
_________
রাই গুটিগুটি পায়ে দরজার সামনে এসে উকি দিতেই দেখলো তীব্র বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে কোলের উপর ল্যাপটব নিয়ে এক মনে কাজ করছে।এর আগেও রাই কয়েকবার দরজার সামনে এসে উকি ঝুকি দিয়ে তীব্রকে পর্যবেক্ষণ করে গেছে।রাই তীব্রর দিক থেকে চোখ সরিয়ে দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ১০:৪৫ বাজে।রাই মনে মনে বলতে লাগল,এতোক্ষনে তো সে রুম থেকে বের হয়ে অন্য রুমে চলে যায় আজ এখনো বসে রয়েছে কেন?রাই এর ভাবনার মাঝেই তীব্র ল্যাপটবের দিকে চোখ রেখে বলল,
—তোমার লুকোচুরি খেলা শেষ হলে ভিতরে আসতে পারো।কথা আছে।
তীব্রর কথা শুনে রাই হকচকিয়ে গেলো।মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে গুটিগুটি পায়ে রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বেডের এক কোনে গিয়ে দাড়ালো।তীব্র এক পলক রাইকে দেখে কোল থেকে ল্যাপটবটা নামিয়ে আড়মোড়া দিয়ে রাই এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,
—এতোক্ষন কোথায় ছিলে?
তীব্রর গম্ভীর গলার কথা শুনে রাই আর মাথা তোলার সাহস পেল না।কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রইল।তীব্রর কথার কিই বা উওর দিবে সে?সে তোর তীব্রর থেকে পালিয়েই বেড়াতেই এতোক্ষন রুমে আসেনি।সকালের ঘটনাটার কারনে তীব্রর সামনে আসতে সে বিব্রত বোধ করছে।
রাই মিনমিনে গলায় বলল,
—ড্রয়িং রুমে।
—কি করছিলে?
তীব্রর প্রশ্নে রাই পূনরায় মিনমিনে গলায় উওর দিল,
—কার্টুন দেখছিলাম।
তীব্র কপালে ভাজ ফেলে বিরবির করে বলল,
—দুদিন পর বাচ্চার মা হয়ে যাবে এখনো নাকি সে বাচ্চাদের মত কার্টুন দেখে।
রাই,তীব্রর কথা শুনতে না পেরে তীব্রর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো।তীব্র রাই এর প্রশ্নবোধক দৃষ্টি উপেক্ষা করে পাশ থেকে কিছু কাগজ আর কলম রাই এর দিকে বাড়িয়ে দিল।হাত দিয়ে এক জায়গায় দেখিয়ে দিয়ে বলল,
—এখানে সাইন কর।
রাই কাগজটা ভালোমত না পড়ে না দেখে বিনা বাক্যে সাইন কর দিল।সাইন করতেই তার মাথায় এল কিসের কাগজে সে সাইন করলো সেটাই তো সে জানে না।তাই দেড়ি না করে জিগ্যেস করে বসল,
—কিসের পেপার এটা?
রাই এর প্রশ্নে তীব্র মুখের মধ্যে রহস্যময় এক হাসি ঝুলিয়ে বলল,
—ডির্ভোস পেপাপ।
#চলবে,
(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)