মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-১৩

0
880

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_13
#Ariyana_Nur

দেয়ালে টানানো ফাহাদের এক বিশাল বড় ছবির সামনে দাড়িয়ে রয়েছে একটি মেয়ে।মুখে রয়েছে তার রহস্যময়ী হাসি।মেয়েটি হাতে থাকা সেলফোনটি ঘুড়াতে ঘুড়াতে বিরবির করে বলল,

—কেমন দিলাম জান?তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার থেকে দূরে সরে গেছি দেখে তোমার কোন খোজ খবর রাখি না?এটা যদি ভেবে থাকো তাহলে তুমি ভূল।সম্পূর্ন ভূল।আমি সব সময় আমার কলিজার খবর রাখি।সে কি করছে না করছে সব খবরা খবরই আমার কাছে আসে।আরেকটা সিক্টের কি জানো জান?আমি শুধু তোমার না তোমার ঐ পাখির খবরও রাখি।তোমার আর তোমার পাখির উপর সব সময় আমার লোকের নজর থাকে।তোমাকে তোমার পাখি পযর্ন্ত পৌছাতে আমার লোকরাই বাধা সৃষ্টি করছে।আর এসবের বিন্দু মাত্র খবরও তুমি পাচ্ছো না।কেননা তুমি চলো ডালে ডালে আমি চলি পাতায় পাতায়।

কথাগুলো বলে মেয়েটা রুম কাপিয়ে পাগলের মত হাসতে লাগলো।

_________

বেডের এক কোনে ঝিম ধরে বসে রয়েছে রাই।তীব্রর ব‍্যপারটা কেমন তার মাথার মধ‍্যে ঘুরপাক করছে।তীব্রর এতো সহজে সব মেনে নেওয়া,এতো কেয়ার করা, হুটহাট রেগে যাওয়া,নিজের অধিকার ফলানো এসব কেমন যেন তার কাছে খটকা লাগছে।একটা মানুষ কি আসলেই এতো ভালো হতে পারে?চেনা নেই জানা নেই একটা এক্সিডেন্টলি বিয়েতে সে তাকে কোন সংকোচ ছাড়াই মেনে নিবে?একবারো তার ফ‍্যামিলি সম্পর্কে তার নিজের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইবে না?কি ভাবে সম্ভব এসব?তীব্রর আজকের করা ব‍্যবহারে রাই এর আরো বেশি খটকা লাগছে।আজকে রাই,তীব্রর চোখে যেমন রাগ দেখেছে তেমনি ভয়ও দেখেছে।তীব্রর চোখে সেটা কিসের ভয় ছিলো সেটা রাই জানে না।আচ্ছা তীব্র কি এই সব মন থেকে করছে নাকি নামের বাধা সম্পর্কের দ্বায়ীত্ব পালন করতে?দরজায় নক করার শব্দে রাই তার ভাবনা জগৎ থেকে ফিরে আসে।দরজার দিকে তাকাতেই দেখে তিহান দাড়িয়ে আছে।তিহান, রাইকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,

—ভাবি আসবো?

রাই নিজেকে সামলে নিয়ে ঠিক করে বসে বলল,

—হ‍্যা ভাইয়া দাড়িয়ে কেন?ভিতরে আসুন।

তিহান ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,

—কি করছিলে ভাবি?অসময়ে এসে ডিস্টাব করলাম নাতো?

রাই মুখের মধ‍্যে হাসির রেখা টেনে বলল,

—না না ডিস্টাব কিসের।এমনিতেই বসে ছিলাম।

তিহান রাই এর থেকে অনেকটা দূরত্ব নিয়ে বসে বলল,

—ভাইয়াকে দেখছিনা সে কোথায়?

তিহানের কথা শুনে রাই এর মুখটা একটুখানি হয়ে গেলো।কি জবাব দিবে সে তিহান কে?সে তো জানেই না তীব্র কোথায়?তখন সেই যে রাগ দেখিয়ে কোন কথা না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেছে এখন অব্দি রুমে আসেনি।রাই কে চুপ করে থাকতে দেখে তিহান চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল,

—আসলে ভূলটা আমার।ও আসতে না আসতেই ওকে সবটা জানানো ঠিক হয়নি।কেউ না জানলেও আমি তো জানি ও তোমার ব‍্যাপারে কতোটা…..।

পুরো কথা শেষ না করে তিহান থেমে গেলো।আনমনে যে ভূল যায়গায় ভূল কথা বলে বসতে নিয়েছিল সেটা বুঝতে পেরে মনেমনে নিজেকে গালমন্দ করতে লাগলো।তিহান,রাই এর দিকে তাকাতেই দেখলো রাই তিহান এর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।তিহান,রাই এর দিক থেকে চোখ সরিয়ে চাপা নিশ্বাস ফেলে বলল,

—জানো তো ভাবি?আমাদের এই পৃথিবীটাই একটা রহস‍্যময়।এই রহস‍্যময় পৃথিবীতে কোন কোন প্রশ্নের উওর আমাদের জানা থাকে আবার কোনটা আমাদের খুজে বের করতে হয়।

রাই অবাক কন্ঠে বলল,

—মানে?

তিহান কথা ঘুড়াতে বলল,

—এমনিতেও ভাইয়ার রাগটা একটু বেশি।সহজে রাগে না আর রাগলে নিজেকে কন্টল করতে পারে না।তুমি ওকে না জানিয়ে বের হওয়াতে একটু কষ্ট পেয়েছে।তাই হয়তো রুড বিহেব করে বসেছে।মিষ্টি করে একটা সরি বলে দিবে দেখবে ওর সব রাগ উধাও হয়ে গেছে।

রাই,তিহানের দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বলল,

—আমার প্রশ্নের উওর কিন্তু আমি পাইনি।

তিহান মিষ্টি হেসে বলল,

—উওরটা না হয় তুমিই খুজে বের করো।

কথাটা বলে তিহান দরজার দিকে পা বাড়ালো।কয়েক কদম বাড়ানোর পর পিছন দিকে ঘুড়ে বলল,

—তাড়াতাড়ি ভাইয়ার রাগ ভাঙানোর কাজে লেগে পরো।তা না হলে তোমারই রাগ ভাঙাতে কাঠ-খড় পোড়াতে হবে।

কথাটা বলে তিহান রাইকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলো।

রাই তিহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে তিহানের বলা কথাগুলোর মানে খুজতে লাগলো।তীব্রর কাজে আর তিহানের কথা শুনে রাই এর সন্দেহটা কেন যেন বেড়ে গেলো।হয়তো বা রাই ওই একটু বেশি ভাবছে।

_________

আকাশে আজ পূর্ন রুপে চাদ উঠেছে।চাঁদ তার রুপালি আছো ঢেলে মেলে ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর বুকে।তার সাথে পাল্লা দিয়ে তারাগুলোও তাদের টিমটিমে আলো নিয়ে আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করছে।ছাদের এক কোনে দাড়িয়ে একের পর এক সিগারেট শেষ করে চলেছে অজানা ব‍্যাক্তি।হাতে থাকা থাকা সিগারেটে শেষ টান দিয়ে সিগারেটটা নিচে ছুড়ে ফেলল।আকাশের বুকে জ্বলজ্বল করতে থাকা চাদটার দিকে মুখ করে ধূয়া গুলো ঊড়িয়ে দিয়ে বিরবির করে বলল,

—জানো চাঁদ!আকাশের বুকে তোমাকে দেখে আমার হিংসে হচ্ছে। ভীষন হিংসে হচ্ছে।তুমি তো ঠিকই তোমার ঊজ্জলতা ফিরে পেয়েছো।তাহলে আমার চাদটা কেন তার ঊজ্জলতা ফিরে পাচ্ছে না?কেন তার মিষ্টি হাসির মুখখানা মেঘের আড়ালে ঢাকা পরে রয়েছে?আচ্ছা তাকে কি কখনো আগের রুপে ফিরে পাবো না?কখনো আমার মনের সব কথা বলতে পারবো না?কখনো কি তাকে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে আটকে রাখতে পারবো না?যেখানে সে সকল ভয়-ভীতি ছাড়া শান্তিতে থাকতে পারবে?

_________

ফজরের আযানের মিস্টি সুর কানে যেতেই ঘুম ছুটে গেলো রাই এর।রাই অলসতা না করে বেড থেকে নেমে ওয়াসরুমের দিকে পা বাড়ালো।ওজু করে নামাজ আদায় করে কিছুক্ষন দোয়া দুরুদ পাঠ করে নিল।আজ আর বিছানায় পিঠ লাগাতে ইচ্ছে হল না।তাই সকাল সকাল সবার জন‍্য চা করার চিন্তা করে কিচেনে যাওয়ার জন‍্য দরজার দিকে পা বাড়াল।

ফজরের নামাজ শেষ করে কিছুক্ষন বেলকনিতে হাটাহাটি করে বেলকনিতে রাখা চেয়ারে চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে ফরিদ খান।এটা তার প্রতিদিনের রুটিন।সকালে হাওয়া গায়ে না লাগালে তার দিনটাই কেমন যেন পানসে লাগে।

রাই ট্রেতে করে চা আর হালকা নাস্তা নিয়ে ফরিদ খান এর দরজার সামনে এসে দাড়ালো।হাতে ট্রে থাকায় দরজায় নক করতে পারলো না।বেলকনি আর রুমের দরজা বরাবরি হওয়াতে বেলকনিতে বসে থাকা ফরিদ খানকে দেখতে তার অসুবিধা হল না।রাই কিছুটা ভয় আর সংকোচ নিয়ে কাপাকাপা গলায় বলল,

—বাবা আসবো?

রাই এর ডাকটা যেন ফরিদ খানের একেবারে মনে ভিতর গেথে গেলো।ফট করে চোখ খুলে ফরিদ খান পিছন দিকে তাকাতেই দেখে রাই ট্রে হাতে দরজার সামনে দাড়িয়ে রয়েছে।ফরিদ খান ছোট করে উওর দিল,

—হুম।

ফরিদ খানের অনুমতি পেয়ে রাই গুটিগুটি পায়ে ফরিদ খানের দিকে এগিয়ে গেল।ফরিদ খানের পাশে থাকা ছোট টেবিলটার উপর ট্রে টা রেখে মিনমিনে গলায় বলল,

—বাবা আপনার চা।

ফরিদ খান গম্ভীর গলায় বলল,

—তুমি নিয়ে আসলে যে?ছোট বউ মা কোথায়?

রাই মিনমিনে গলায় বলল,

—ছোট মা তো বাড়িতে নেই।তাই আমিই….।

ফরিদ খান কিছু না বলে চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিল।রাইও আর কোন কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে বের হয়ে বড় করে নিশ্বাস ফেলল।ফরিদ খানকে সে জমের মত ভয় পায়।এ বাসায় আশার পর সে তার সাথে যেচে পরে কখনোই কথা বলেনি।আজই প্রথম।তাই ভয়টা আরো বেশি ঝেকে ধরেছিলো।

_________

তীব্র আয়নার সামনে দাড়িয়ে অফিসে যাওয়ার জন‍্য রেডি হচ্ছে।রাই অনেকক্ষন
ধরে তীব্রর পিছনে কাচুমাচু করে দাড়িয়ে রয়েছে কিছু বলার জন‍্য কিন্তু বলার সাহস পাচ্ছে না।কাল রাতেও রাই সাহস করে তীব্রর সাথে কথা বলতে চেয়েছিলো।কিন্তু পারেনি।কেননা তীব্র রাগ করে আর রুমেই আসে নি।তাই তো আজ তীব্রর রাগ ভাঙতে বহু কষ্ট করে নিজেকে প্রস্তুত করেছে।যেভাবেই হোক তার তীব্রর রাগ ভাঙাতে হবে।তা না হলে ফাইজা তাকে কাচা চিবিয়ে খাবে।তীব্র রেডি হচ্ছে আর আয়নায় মাধ‍্যমে রাইকে পর্যবেক্ষণ করছে।রাই কিছুক্ষন কাচুকাচু করে হাতের মধ‍্যে ওড়নার কোনা প‍্যাচাতে প‍্যাচাতে বলল,

—সরি।

রাই এর কথা শুনে তীব্রর হাত থেমে গেলো।তীব্র,রাই এর কথা শুনেও না শোনার ভান করে পূনরায় নিজের কাজ করতে লাগলো।রাই তীব্রর মাঝে কোন হেলদুল না দেখে পূনরায় কাদো কাদো গলায় বলল,

—ও মিঃভিলেন!বললাম তো সরি।আর হবে না।

রাই এর এমন কথা শুনে তীব্রর ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল।মুহূর্তের মধ‍্যে সেটা ধামাচাপা দিয়ে রাই এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

—আর যদি হয় তখন?

রাই মাথা নিচু করে মিনমিনে গলায় বলল,

—বললাম তো আর হবে না।

তীব্র রাই এর সামনে এসে ফিসফিস করে বলল,

—নেক্সট টাইম যদি ভূল করেও আমায় না জানিয়ে বাসা থেকে বের হও তাহলে কালকে যেটা বলেছি সেটাই করবো।পা ভেঙে রুমে বসিয়ে রাখবো।

তীব্রর শান্ত গলার থ্রেড শুনে রাই ভীতু চোখে মাথা তুলে তীব্রর দিকে তাকাতেই তীব্র,রাই এর কপালে আদর দিয়ে দিল।তীব্রর কাজে রাই এর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।তীব্র,রাই এর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রাই এর নাক টেনে দিয়ে বলল,

—এভাবে দেখার কিছু নেই সুন্নত আদায় করছি।অন‍্যগুলো সাথে আরো একটা না হয় আজ থেকে যোগ করে নিলাম।

তীব্র কথাগুলো বলে মিষ্টি হেসে অফিস ব‍্যাগ হাতে করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।রাই এখনো বোকার মত সেখানেই দাড়িয়ে রইল।কপালে হাত দিয়ে তীব্রর কথাটা মনে মনে রিপিট করতে লাগলো।তীব্রর কথার মানে বুঝতে পেরে অটোমেটিক তার মুখ হা হয়ে গেলো।

__________

ফাহাদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।ফোনের রিংটনের শব্দে তার ঘুম ছুটে গেলো।ঘুমঘুম চোখে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ করে হ‍্যালো বলতেই অপর পাশ থেকে মেয়েলি ঝাঝালো কন্ঠে ভেসে এল,

—ও হিরো!আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে শান্তিতে ঘুমানো হচ্ছে না?দশ মিনিটের মধ‍্যে এসে আমার সাথে দেখা কর।নাইলে
দেখো তোমার আমি কি হাল করি।মেরে একেবারে হাড়গোড় ভেঙে হাসপাতালে বেড়ে ফেলে রাখবো।তখন বুঝবে এই আমি কি জিনিস?আমাকে ইগনোর করা কি?আর হ‍্যা আরেকটা কথা ভূলেও আশার সময় রাস্তায় কোন সুন্দরী মেয়ের দিকে নজর দিবে না।যদি দাও তাহলে তোমার চোখ উঠিয়ে আমি মারবেল খেলবো।

একবারে গরগর করে মেয়েটি কথাগুলো বলে ফট করে লাইন কেটে দিলো।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এমন সব থ্রেড শুনে ফাহাদ এর মাথা গরম হয়ে গেলো।হাতে থাকা সেলফোনটা দেওয়ালের দিকে ছুড়ে মেরে চেচিয়ে বলল,

—আমাকে হুমকি দেয়?এই ফাহাদ আহমেদ কে হুমকি দেয়?তুই যেই হোস না কেন তোকে আমি খুন করবো।যাষ্ট খুন করবো।

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।অজানা ব‍্যাক্তিটা কে🤔ধন‍্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে