মেঘের ভেলায় চড়ে পর্ব-০৯

0
921

#মেঘের_ভেলায়_চড়ে
#Part_09
#Ariyana_Nur

ফাহাদ একটা রহস‍্যময়ী হাসি দিয়ে শিস বাজাতেই দু’জন লোক সেন্সহীন,রক্তাত্ব একজন কে টানতে টানতে বাসার ভিতরে প্রবেশ করল।লোকটার রক্তাত্ব চেহারা দেখে রাই শকড হয়ে দাড়িয়ে রইল।রাই এর চোখ দিয়ে আপনা আপনি জল গড়িয়ে পরল।অস্ফুট সুরে বলে উঠল,

—ত-তীব্র!

রাই,তীব্রর দিকে পা বাড়াতে নিলেই ফাহাদ এসে রাই এর পথ আটকে দাড়ায়।কিছুক্ষন রাই এর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রাই এর গাল চেপে ধরে চেচিয়ে বলল,

—বলেছিলাম না তোর মুখে যেন কোন ছেলের নাম না শুনি।কোন সাহসে তুই অন‍্য ছেলের নাম নিচ্ছিস?

ফাহাদ এর কাজে রাই ছটফট করতে লাগলো।রাই,ফাহাদ এর হাত থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করতেই ফাহাদ আরো জোরে রাই এর গাল চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল,

—ফরফর করছো?যত খুশি করে নাও।একটু পর ফরফর তো দূর সোজা হয়ে দাড়ানোর ও শক্তি পাবে না।

ফাহাদ কথাগুলো বলে তীব্রর দিকে এক পলক তাকিয়ে বাকা হেসে রাই এর গাল ছেড়ে দিল।ফাহাদ এর হাত থেকে ছাড়া পেতেই রাই,ফাহাদ এর সামনে হাত জোড় করে বলল,

—প্লিজ ওনাকে ছেড়ে দিন।আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনবো।যেখানে যেতে বলবেন সেখানেই যাব।যেভাবে চলতে বলবেন সেভাবেই চলবো একটুও টু-শব্দ করবো না।তার পরেও অনার কোন ক্ষতি করবেন না।প্লিজ ওনাকে ছেড়ে দিন।

রাই কে অন‍্য ছেলের জন‍্য কান্না করতে দেখে ফাহাদ এর মাথায় রক্ত উঠে গেলো।কিছুক্ষন দু’হাতে নিজের চুল টেনে সাইকোদের মত করে ঘাড় এদিক সেদিক ঘুড়িয়ে ঘাড় বাকা করে রাই এর দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,

—ছেলেটা কে তোর?যার জন‍্য এতো মায়া হচ্ছে?তোর চোখে আমি ছেলেটার জন‍্য মায়া,ভালোবাসা সব দেখতে পাচ্ছি।তোর সব অন‍্যায় সহ‍্য করলেও এই অন‍্যায়টা আমি সহ‍্য করতে পারছি না।তুই শুধু আমার।তোর চোখে আমার জন‍্য ডর,ভয়,মায়া, ভালোবাসা সব থাকবে।অন‍্য ছেলের জন‍্য থাকবে কেন?

শেষের কথাটা ফাহাদ চেচিয়ে বলেই দেয়ালে স্বজোরে ঘুষি মারল।ফাহাদ এর কাজে রাই সব বাকি সবাই কেপে উঠল।ফাহাদ সাপের মত ফোস ফোস করতে করতে নিজের কাছে থাকা রিভলবারটা বের করে তীব্রর দিকে তাক করে বলল,

—না থাকবে এই লোক আর না থাকবে এই লোকের জন‍্য আমার পাখির চোখে কোন মায়া,ভালোবাসা।

কথাটা বলে এক মুহূর্ত দেড়ি না করে ফাহাদ,তীব্রর বুক বরারব সুট করলো।

ফাহাদ এর কাজে রাই স্টেচু হয়ে গেলো।পলকহীন তাকিয়ে রইল তীব্রর বুকের কাছে রক্তে ভিজে যাওয়া শার্ট এর দিকে।ফাহাদ দ্বিতীয় বার সুট করতেই রাই গগন ফাটানো চিৎকার দিয়ে বলে উঠল,

—তীব্র!

সাথে সাথেই চমকে উঠল রাই।ঘুম ছুটে যেতেই রাই ধরফর করে উঠে বসল।রাই ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।বুকের ভিতর কেমন ধরফর করছে।মনে হচ্ছে এখনি হৃদপিণ্ড টা বাহিরে বের হয়ে আসবে।তীব্র কে নিয়ে এমন একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখে ভয়ে রাই এর গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।রাই সাইড টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করে গলা ভিজিয়ে নিল।রাই নিজেকে কিছুটা শান্ত করে রুমের চারোপাশে চোখ বুলিয়ে তীব্রকে খুজতে লাগলো।রুমের কোথায় তীব্র নেই।তীব্রকে এক পলক দেখার জন‍্য রাই এর মনটা ছটফট করে উঠল।কেন সেটা সে নিজেও জানে না।রাই তড়িঘড়ি বেড থেকে নেমে দরজার দিকে পা বাড়াতেই নিলেই তীব্র তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াসরুম থেকে বের হল।রাইকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তীব্র,রাই এর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলল,

—গুড মর্নিং।

রাই বড় বড় কদম ফেলে তীব্রর দিকে এগিয়ে গিয়ে ভীত কন্ঠে বলল,

—আপনি ঠিক আছেন?

রাই এর কাজে তীব্রর কপালে ভাজ পরে গেলো।রাই এর দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বলল,

—আমার আবার কি হবে?আমাকে দেখে কি তোমার অসুস্থ মনে হচ্ছে?

তীব্রর বাকা কথা শুনে রাই মাথা নিচু করে ফোস করে নিশ্বাস ফেলল।তীব্র কে নিয়ে অমন একটা বাজে স্বপ্ন দেখের কারনেই যে তীব্রকে দেখতে রাই আনমনে এমন এক প্রশ্ন করে বসেছে সেটা কিভাবে বলবে সে?

—তুমি ঠিক আছো?

তীব্রর কথা শুনে রাই মুখ তুলে তীব্রর দিকে তাকালো।রাই এর শুকনো ভীতু চেহারাটা দেখে আস্তে আস্তে তীব্রর কপাল এর ভাজ চলে গেলো।হাতে থাকা তোয়ালেটা গলায় ঝুলিয়ে রাই এর কপালে, গলায় হাত ছুইয়ে চিন্তিত সুরে বলল,

—কি হয়েছে তোমার?মুখটা এমন শুকনো দেখা যাচ্ছে কেন?জ্বর আসছে?শরীর খারাপ লাগছে?

রাই নিজের জন‍্য তীব্রকে এমন ব‍্যাস্ত হতে দেখে তার চোখ ভিজে উঠল।তার বাবা-মা মারা যাবার পর একমাএ ফাইজা তার কিছু হলে ব‍্যাস্ত হয়ে পরত।রাই কাপাকাপা গলায় বলল,

—আমি ঠিক আছি।

রাই এর কথা শুনে তীব্র ধমক দিয়ে বলল,

—বললেই হল ঠিক আছো?চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে তুমি ঠিক নেই।আবার বড় বড় কথা, আমি ঠিক আছি।

শেষের কথাটা তীব্র রাইকে ব‍্যাঙ্গ করে বলল।তীব্রর কাজে রাই এর ঠোটের কোনে হাসির রেখা ফুটে উঠল।ওড়নার কোনা দিয়ে চোখের জলটা গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিয়ে বলল,

—একটা প্রশ্ন করবো?

তীব্র কপালে ভাজ ফেলে রাই এর মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল,

—করো।

—কাউকে বাচাতে যদি কেউ কারো মনে কষ্ট দেয় তাহলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়?

রাই এর কথা শুনে তীব্র,রাই এর দিকে কোমল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

—সেটা নির্ভর করে সামনের মানুষটার উপর।সামনের মানুষটা যদি নিজের জীবন উপেক্ষা করে তোমায় আগলে রাখতে চায় তাহলে আমি বলবো তাকে কষ্ট না দেওয়াই ভালো।কেননা হতে পারে তোমার দেওয়া আঘাত নিয়ে সে জিন্দা লাশ হয়ে বেচে রয়েছে।

কথাটা বলে তীব্র চলে যেতে নিয়ে পিছন দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,

—একটা কথা মনে রাখবে,বাচা মরা আল্লাহর হাতে।যার যেভাবে মৃত্যু আছে সেভাবেই হবে।কাউকে বাচিয়ে রাখতে গিয়ে তাকে মৃত্যু যন্ত্রণা না দেওয়াই ভালো।

________

—ফাইজা!ফাইজা!কোথায় তুমি? তাড়াতাড়ি রুমে এসো।আমার ফাইলটা খুজে পাচ্ছি না।প্লিজ একটু খুজে দিয়ে যাও।

সকাল বেলা মুনিয়া বেগম আর ফাইজা মিলে কিচেনে সবার জন‍্য নাস্তা বানাচ্ছে।তিহান এর গলা ফাটানো আওয়াজের কথা শুনে ফাইজা কাদো কাদো ফেস করে মুনিয়া বেগম এর দিকে তাকালো।মুনিয়া বেগম মিষ্টি হেসে ফাইজার মাথার হাত বুলিয়ে বলল,

—যা মা আমার ছোট ছেলেটাকে একটু সব গুছিয়ে দিয়ে আয়।বুঝিস তো ছোট মানুষ নিজের কাজ নিজে করতে পারে না।

মুনিয়া বেগম এর কথা শুনে ফাইজার মুখটা ছোট হয়ে গেলো।সুযোগ পেলে তার শাশুড়ি মাও তাকে লজ্জা দেওয়া থেকে বিরত থাকে না।ফাইজা কিচেন থেকে ধুপধাপ পা ফেলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।মনে মনে তিহান কে ডিটারজেন ছাড়া ধুয়ে দেবার প্রতিজ্ঞা করল।

—র্নিলজ্জ,বেহায়া,বেশরম তোর লজ্জা করে না বাপ,মায়ের সামনে সকাল সকাল এভাবে আমায় ডাকতে?কত বার বলেছি সবার সামনে এভাবে আমায় ডাকবি না।আমায় কথা কি কানে যায় না?তোর সব দরকারি জিনিস তো আমি প্রতিদিন তোর চোখের সামনেই রেখে যাই।তার পরেও কেন প্রতিদিন এভাবে ডাকিস তুই?তোর এই ষাড়ের মত ডাকাতে তারা আমার সম্পর্কে কি ভাববে একবার ভেবে দেখেছিস?তোর লাজ-লজ্জা তো সব বেচে দিয়েছিস।তাই বলে কি আমারটাও বেচে দিয়েছি?নেক্সট টাইম যদি এভাবে চেচিয়ে আমায় ডাকিস তাহলে তোর একদিন আর আমার যেই কদিন লাগে।

ফাইজার ঝাঝালো গলার কথা শুনে তিহান অসহায় ফেস করে ফাইজার দিকে তাকিয়ে বলল,

—তুমি আমায় এভাবে বলতে পারলে?

ফাইজা তিহানের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে তিহানের কাপড়,চোপড় এর নিচ থেকে ফাইলটা বের করে দিয়ে দাতে দাত চেপে বলল,

—আরেক বার যদি কিছুর জন‍্য আমায় ডেকেছিস তাহলে তোর চোখ কানা বানিয়ে দিয়ে নিজ হাতে তোকে আমি রেডি করিয়ে দিব।

কথাটা বলেই ফাইজা গটগট করে হেটে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।তিহান ফাইজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে মাথা চুলকে বিরবির করে বলল,

—আজ কি একটু বেশিই জ্বালিয়ে ফেললাম নাকি মিটার আগের থেকেই হট ছিলো।

#চলবে,

(বানান ভূলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।রি-চেইক করা হয়নি।কেমন হয়েছে জানাতে ভূলবেন না।ধন‍্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে