মেঘের ছায়া পর্ব-০৮

0
815

#মেঘের_ছায়া (৮)

ডাইনিং টেবিলে নাস্তা দিচ্ছিল ফারা। খাবার খেতে খেতে আসফাক বলল, ‘রেডি হয়ে নাও ফারা। তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যেতে হবে।’

আসফাকের বাবা-মা জানতে চাইলে আসফাক শান্ত স্বরে জবাব দিল, ‘ক্লাইন্ট ইনভাইট করেছে।’

ফারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে সব শুনলো। ফারার কেমন জানি অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল।

ফারা রুমে গিয়ে দেখল আসফাক রেডি হওয়া নিয়ে তোরজোর ব্যস্ত। সে মাথা নিচু করে বলল, ‘ আমি না গেলে কি হয় না?’

আসফাক আয়নায় মুখ রেখেই জবাব দিল, ‘ তুই না গেলে তো কোন কিছু থেমে থাকবে না, তবে গেলে ভালো হয়।’

ফারা আর কিছু না বলে রেডি হতে চলে গেল। নিজের সবচেয়ে ভালো বোরখাটা পরে নিজেকে খুব ভালোভাবে ঢেকে নিল।

আসফাক ফারাকে দেখে উপর থেকে নিচে একবার তাকিয়ে বলল, ‘ তুই এমন প্যাকেট সেজেছিস কেন লোকে বলবে আমি প্যাকেট নিয়ে ঘুরছি!’

ফারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রেখে বলল, ‘ আমি এভাবেই যাব আর নয়তো যাবো না।’

আসফাক খুব ভালো করেই জানে, ছোটবেলা থেকেই এই মেয়ে যা বলে তাই করে তাই সে আর কিছুই বলল না।

গাড়ি থেকে নামতে দরজায় ফারার বোরখাটা আঁটকে যায়। আসফাক ভীষণ বিরক্ত হয়, বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল, ‘আজব পোশাক পড়েছিস, যেখানে সেখানে আঁটকে যায়। ‘

আসফাক, ফারা ভেতরে প্রবেশ করতেই সবাই যেন অবাক নজরে পারাকে দেখতে লাগলো। যেন তারা কোনো ভূ*ত দেখছে। আসফাক সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলতে চলে গেল।

এদিকে ফারা একা একা বসে আছে। ফারা চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো সব মহিলাদের পরনে খোলামেলা পোশাক। ফারা চোখের দৃষ্টি নত করে রাখল। হঠাৎ কারো উপস্থিতি টের পেয়ে ফারা তাকালো।

এই জুসটা আপনার জন্য স্যার পাঠিয়েছেন। এই বলে ওয়েটার চলে গেল। ফারা বুঝতে পারে আসফাক পাঠিয়েছে। ফারা নিকাবের ভেতর দিয়ে ই কিছুটা জুসটা পান করল। বড্ড তৃষ্ণা পেয়েছে।কিছুক্ষণ পর হুলস্থুল কান্ড ঘটলো ক্লাবে। মা*রা*মা*রি পর্যন্ত লেগে গেল। ফারা ভয় পেয়ে জড়সড় হয়ে এক কোণে দাঁড়ালো। মনে মনে আল্লাহকে ডাকলো। একজন লোক আরেকজন লোককে মা*রতে শুরু করল। পরিস্থিতি কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর ফারা বুঝতে পারল, একজন আরেকজনের স্ত্রীকে কু*প্রস্তাব দিয়েছে এবং তার শরীরের বিভিন্ন অবয়ব সম্পর্কে খা*রা*প মন্তব্য করেছে। আরেকজন পুরুষ জোর গলায় বলতে লাগলো, ‘তোর বউ ন*গ্ন হয়ে ঘুরলে আমরা তো সেই প্রস্তাবটাই দিব। আগুনের কাছে গেলে মোমবাতি যেমন গলবে ঠিক তেমনি নারীর গু*প্ত স্থান গুলো দেখলেও পুরুষের মনে কামনা বাসনা জাগবেই।’

এসব বি*শ্রীকর কথা ফারার শুনতে ভালো লাগলো না। ফারা গাড়ির সামনে একা একা দাঁড়িয়ে আছে। এমন পরিস্থিতিতে ফারা কখনোই পড়েনি। ফারার দুচোখ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। আসফাক এমন খো*লা*মেলা ক্লাবে এসে ফারাকে যেন ভুলেই গেছে।

আসফাক দৌঁড়ে ফারার কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, ‘ তুই এখানে! আর আমি তোকে খোঁজে ম*রছি। আসফাক নিঃশ্বাস টেনে আবার বলতে শুরু করল, আমি বুঝতেই পারিনি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। তুই ভালোই করেছিস বোরখা পরে নিজেকে ঢেকে রেখেছিস । আজকের পর থেকেই আমার ধারণাটাই পাল্টে গেল ফারু। আসলে মহিলাদের হিজাব নিকাব পরেই বাহিরে বের হওয়া উচিত। তা না হলে পুরুষের লো*লু*প দৃষ্টি থেকে নারীদের বাঁচানো বড্ড কঠিন।’

ফারা আর কিছু বলতে না পেরে আসফাশের শার্ট খামচে কাঁদতে লাগলো।

ফারার কান্না দেখে আসফাক হকচকিয়ে গেল। ফারার গালে আলতো হাত রেখে বললো, ‘ ভয় পেয়েছিস ফারু! সত্যি আমি বুঝতে পারিনি এমন কিছু ঘটবে আমি বুঝতে পারিনি। আজ তোকে কথা দিলাম এমন কোন পরিস্থিতিতে তোকে ফেলবো না যাতে করে তোর চোখে জল আসে।’

ফারা আসফাকের বুকে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো। প্রতিটা স্ত্রীর জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ শান্তির জায়গা হলো স্বামীর বুক। প্রিয়জনের সাথে যতই রাগ,অভিমান থাকুক না কেন, পৃথিবীর আর কোথাও যেনো এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

ঐদিনের ঘটনার পর থেকে আসফাকের সাথে ফারা খুব কম কথাই বলে। না পারতেই যে কোন কিছুর উত্তর দেয় ফারা।আসফাক অফিস চলে গেলে ফারা বাবার বাসায় চলে যায়। দুদিন বেড়াবে বলে ঠিক করে। বাবার বাসায় এসে ফারা খুব খুশি ভাইয়ের সাথে খুনসুটি দুষ্টুমিতে সে মেতে আছে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল, ঝিঁঝি পোকার দল যেন প্রতিযোগিতা করে চারদিক মুখরিত করে তুলছে। চারপাশে শীতের আয়েশ চলছে। প্রকৃতি যেনো নিজেকে আলাদা করে ব্যস্ত সাজাতে।

হঠাৎ কারো কণ্ঠ ভেসে আসতেই ফারা অবাক হলো। ফারার মুখের হাসিটা নিমিষেই ম্নান হয়ে গেল।পরিচিত কন্ঠটা ফারা ডাকতে ডাকতে এদিকে আসতে লাগলো।

আসফাক বেশ কর্কশ কণ্ঠে ফারাকে উদ্দেশ্যে করে বলল, ‘ এ বাড়ি আসবি তুই একবারও আমাকে বলা প্রয়োজন বোধ করলি না।’

-‘তাতে কি? এতে কি কারোর সমস্যা হয়ে গেছে?
ফারা তাচ্ছিল্য স্বরে বললো, ‘ সেদিন ক্লাবে তো একা ছেড়ে চলে গেছেন একটিবারও কি খবর নিয়েছেন একা একা কেমন করে আছি আমি। দায়িত্ববোধ বলতে কি কিছুই ছিল না?’

-‘মাফ চেয়েছি তো একবার, বারবার কি তোর পা ধরে মাফ চাইতে হবে!’

ফারা কিছু না বলে নিজের রুম রুমে চলে গেল। ফারা জানে এ লোকের সাথে কথা বলাটাই অনর্থক।

আসফাকের প্রতি ফারার এমন হেয়ালিপনা দেখে আসফাক ফারার হাত শক্ত করে ধরলো। কটমট চোখে তাকিয়ে বললো,

‘নিজেকে কি ভাবিস তুই মহারানী এলিজাবেথ!তোর পেছন পেছন প্রজারা ঘুরঘুর করবে মহারানী বলে বলে। আর তুই খুশিতে গদগদ করবি!’

-‘এমনকিছু হওয়ার আমার কোনো ইচ্ছেই নেই।’

-‘ তাহলে আমাকে ইগনোর করছিস কেন? ‘

-‘আমি কাউকেই ইগনোর করছি না।’

আসফাক বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো, ‘ আজ আমিও শ্বশুরবাড়ি বেড়াবো।আমার বউয়ের প্রতিও তো রাতে একটা দায়িত্ববোধ আছে না!’

এই বলে উনি বাঁকা চোখে তাকালো।

ফারা আসফাক ভাইয়ের কথা শুনে দরদরিয়ে ঘামতে লাগলো কিছু একটা ভেবে মস্ত বড় ঢোক গিললো।

চলবে–

( আফরিন ইভা)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে