#মেঘমেদুর_মন [৮]
প্রভা আফরিন
পেলব গালের ওপর উষ্ণ হাতের ছোঁয়া পড়েছে অতি কোমলভাবে। তর্জনীর বাধাহীন বিচরণ শিহরণ জাগায় এলো চুলে ঢেকে যাওয়া কপালে, সমান্তরাল পথ ধরে নেমে আসে তেলতেলে নাকে, এরপর পেলব, পাতলা ঠোঁটের ওপর। ঘুমের রেশে মাখামাখি চোখদুটিতে চশমা না থাকায় চারপাশ ঘোলা দেখায়। কিন্তু অনুভূতি স্বচ্ছ। নিবিড় স্পর্শে প্রিয়তমার অগোছালো মুখখানিতে হাত বুলিয়েই যেন সৌন্দর্য উপভোগ করে। অন্তরে জাগে সান্নিধ্যের স্পৃহা। বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে ঘুমন্ত রূপসীকে। প্রশস্ত বুকের গাঢ় আলিঙ্গনে বেঁধে সুডৌল কাঁধে ঠোঁট ছোঁয়াতেই কেঁপে ওঠে নারীদেহ। তার ঘুমের রেশ পাতলা হয়, নাকে লাগা প্রিয় পুরুষালি গন্ধটা মস্তিষ্কে বার্তা প্রেরণ করে এ তার একান্ত আপন মানুষ। অজান্তেই হাতদুটো এগিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রিয়তমের গলা। আদুরে বিড়ালছার মতো নাক-গাল ঘষে বুকে। এ কাজটা রিমঝিমের অতি প্রিয়। জড়িয়ে ধরলেই স্বামীর বুকে নাক-গাল ঘষে ভালোবাসা প্রকাশ করে। বিপরীতে স্বামী মহাশয় তখন ভালোবাসার কলস উপুর করে দিতে সামান্যতম কার্পণ্য করে না। এখনও করল না। দুজোড়া হাতের বাধন দৃঢ় হয়। এরপর কিছু মিষ্টি মুহূর্ত। একে অপরকে অনুভব করে লম্বা একটি অধর অভিযানের মাধ্যমে। পুরুষের উদ্দীপিত, অধৈর্য, চঞ্চল চিত্ত আরো বেশি গাঢ়ত্ব কামনা কারল। রিমঝিম মোটেও আশকারা দিল না। ধাক্কা দিয়ে তাকে সরিয়ে উঠে বসল। গা থেকে চাদরটা খসে পড়ল সঙ্গে সঙ্গে। বিমূঢ় রিমঝিম বিদ্যুতের গতিতে চাদরটা আবারো গায়ে টানে। সারামুখে একরাশ লালিমা খেলে যায় সঙ্গে সঙ্গে। কল্লোলও ততক্ষণে উঠে বসে পেছন থেকে ওকে বেধে ফেলেছে। বউয়ের কানে ঠোঁট ঠেকিয়ে ঘুমঘুম স্বরে বলল,
“এই ড্রেসটায় ভীষণ সুন্দর লাগে তোমায়। চোখ তো সরেই না। আমিও সরতে পারি না।”
রিমঝিমের কান গরম হয়। পরনে তার পাতলা গোলাপি রংয়ের ট্রান্সপারেন্ট নাইট স্যুট। স্বামী মহাশয়ের ভীষণ পছন্দের। ড্রেসের চেয়েও পরিহিতা আগুনরূপী রমনীকে। রিমঝিম কল্লোলের অবাধ্যতা নিবৃত্ত করতে করতে বলল,
“চশমা ছাড়া চোখে যা দেখছো সবই তো সমান।”
“তোমাকে আমি শুধু চর্মচক্ষুতে নয়, মনের চক্ষুতেও দেখি। স্পর্শতে দেখি, জাগরণের দেখি, শয়নে-স্বপনেও দেখি। প্রত্যেকবারই তোমায় নতুন করে আবিষ্কার করি।”
“আমার বউ-বিজ্ঞানী স্বামী, এবার একটু চশমাটা চোখে লাগিয়ে ঘড়িটাও দেখুন। আপনার অফিস যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। এখন বিছানা না ছাড়লে এরপর কিন্তু না খেয়ে ছুটতে হবে। খালিপেটে কাজে মন লাগবে না। বাড়ি ফিরে প্রেমও জাগবে না।”
স্বামী মহাশয়ের তাতে হেলদোল দেখা গেল না। তিনি ক্রমাগত অক্টোপাসের মতো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলছেন অর্ধাঙ্গিনীকে।
অফিস যাওয়ার সময় কল্লোলের ব্যস্ততা দেখার মতো। হাতে একদমই সময় নেই। রিমঝিম খাটে হেলান দিয়ে বসে মিটমিট করে হাসছিল। কল্লোল কব্জিতে ঘড়ি গলিয়ে সেদিকে একবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে বলল,
“দুর্দশা দেখে মজা নেওয়া হচ্ছে!”
“আমি সতর্ক করেছিলাম।” রিমঝিম কাঁধ ঝাঁকায়।
“সিগারেটের প্যাকেট পকেটে নিয়ে ঘোরা ব্যক্তি কী প্যাকেটের সতর্কবার্তায় পাত্তা দেয়? আমারও হয়েছে সেই দশা।”
কল্লোল পায়ে মোজা পরে নিল। ঘর থেকে বেরোতেই রতনের মাকে দেখা গেল খাবার সাজাচ্ছে। কল্লোল দরজার দিকে এগোতে এগোতে বলল,
“খাওয়ার সময় নেই, চাচি। আপনার বউমাকে ঠিকমতো খাইয়ে দেবেন।”
রিমঝিম বেরিয়েছে পিছু পিছু। রতনের মা তাকে দেখে চাপা অসন্তোষের সঙ্গে বললেন,
“বউ মানুষ একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থাইকা উঠতে পারো না? গ্যাদা দেখি মাঝে মাঝেই না খাইয়া অফিস করে। জামাইর স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবা তো নাকি!”
“হ্যাঁ চাচি, মেয়েটাকে একটু স্বামী সেবা শেখান। বড্ড বেশি অবাধ্য।” কল্লোল সায় দিয়ে আড়ালে চোখ টিপল। ঠোঁটে চাপা হাসি।
রিমঝিম ঠোঁট টিপে রয়। ক্রুর চোখে চেয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। র্যাক থেকে জুতো বের করে কল্লোলের দিকে এগিয়ে দিয়ে ঠোঁট বেঁকাতেই কানের কাছে ছোটো একটা বিদায় চুম্বনের স্পর্শ পেল। সঙ্গে ফিসফিসানি যত্নবার্তা,
“জগতের সবচেয়ে পবিত্রতম, সুন্দরতম আসক্তি হচ্ছে বউ। আর আমি সেই আসক্তিতে আমরণ ডুবে থাকতে চাই। নিজের যত্ন নিয়ো, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করবে। দেখে-শুনে ভার্সিটি যাবে। আমি যেন অফিস থেকে ফিরে একটা বাধ্য বউকে দেখি।”
একরাশ মিষ্টি সুবাতাস ছড়িয়ে কল্লোল অফিসে রওনা হলো। ওদিকে রতনের মায়ের মুখ থেকে স্বামীসেবার ফিরিস্তি ছুটছে।
রিমঝিম হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙে। সর্বাঙ্গে সুখের যন্ত্রণার রেশ। ফোন হাতে নিয়ে টেক্সট করল,
“সময় করে খেয়ে নেবে। বাড়ি ফেরার পর আমিও যেন সুস্থ সবল স্বামীকে দেখি।”
এরপর রতনের মায়ের কথা থামিয়ে দিয়ে বলল,
“চাচি, একটু গরম পানি করে দিন। গোসল করা প্রয়োজন।”
রতনের মা থতমত খেয়ে মেয়েটির মুখপানে চেয়ে থাকে। যে মেয়ে স্বামীর মনে একচ্ছত্র আধিপত্য ছড়িয়ে আছে তাকে এতক্ষণ স্বামীর মন পাওয়ার মিছে জ্ঞান দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি!
রিমঝিম ও কল্লোলের বিয়েটা মাস দুই আগে ধুমধাম করে হয়েছে। দুই পরিবার আগে থেকেই রাজি ছিল। তাই কেউ দ্বিমত করেনি। তবে ঝামেলা একটা হয়েছিল বটে। মিরপুরে বাবার বিশাল বাড়ি রেখে রিমঝিম বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকবে। কল্লোলের অফিসের নিকটবর্তী স্থান জিগাতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছে ওরা, এ নিয়ে আলমগীর সাহেব অসন্তুষ্ট। কল্লোলের আত্মমর্যাদাও নেহাৎ খাটো নয়। শ্বশুরের সম্পদের প্রলোভনে একদমই পা দিল না। উত্তরাধিকার সূত্রে ভবিষ্যতে সম্পত্তির মালিক রিমঝিমই হবে, তাই বলে পায়ের ওপর পা তুলে নিজেও সেই সম্পদ ভোগ করবে এমন ইচ্ছে ওর নেই। নিজের যোগ্যতায় স্ত্রীকে রাখবে সে। যদি একান্তই রাখতে না পারে তখন শ্বশুরের কন্যাকে তার জিম্মায় ফেরত দিয়ে আসবে। কিন্তু শ্বশুরের সাহায্য বিপদে না পড়লে ও নেবে না। আল্লাহর রহমতে তার বাবারও কিছু কম নেই। একই মতামত রিমঝিমেরও।
কল্লোলের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ বলেই আলমগীর সাহেব জানেন ওকে গলানো যাবে না। সুতরাং বিয়ের পর আনাড়ি রিমঝিম একান্তে স্বামীর সঙ্গে সংসার পাতল আলাদা বাড়িতে। গৃহকর্মে রিমঝিম আহামরি পারদর্শী নয়। সারাজীবন চাওয়ামাত্র সবকিছু হাজির পেয়েছে। তাই নতুন সংসারে এসে নিজের মতো সব গোছাতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে বৈ কি৷ ওর অবস্থা বুঝতে পেরে শুরুতে খালা ও শাশুড়ি এসে পালাক্রমে থেমে নবদম্পতির সংসার গুছিয়ে দিয়েছেন। রান্না-বান্না, ধোয়া-মোছার কাজের জন্য কল্লোলের গ্রাম থেকে হতদরিদ্র রতনের মাকে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে মধুরতম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ওরা।
_______________
দিন কয়েক পরের কথা। কল্লোল অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন রতনের মা। কল্লোল ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“মুখ শুকনো কেন, চাচি?”
রতনের মা গোমড়ামুখে জবাব দিলেন,
“তোমার বউ দুপুরে খায় নাই। বিছনায় গড়াগড়ি করতাছে। বউডার এত অসুখ লাইগ্যা থাকে ক্যান?”
কল্লোলের সর্বাঙ্গে উৎকণ্ঠা ভর করে৷ রিমঝিম আসলেই কিছুদিন ধরে দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ঘনিষ্ঠতম মধুর মুহূর্তে একেবারে নাজুক হয়ে যাচ্ছে, যেটা আগে ছিল না। শেষবার তো কেঁদেই ফেলেছিল। কল্লোল ভড়কে গেছিল। হঠাৎ এমন হওয়ার কারণ ধরতে পারেনি। রিমঝিমও যেন নারীসুলভ সংকোচে নিজের ভেতরে গুটিয়ে গেছিল। এরপর থেকে কল্লোল ওর ব্যাপারে সচেতন হয়ে গেছে। আজ আবার কী হলো!
রিমঝিম বিছানায় নেতিয়ে আছে। কল্লোল হন্তদন্ত হয়ে বিছানায় গিয়ে বসে। রিমঝিমের মাথাটা বিছানা থেকে তুলে কোলে আগলে ধরে ডাকে,
“রিমঝিম, কী হয়েছে তোমার?”
রিমঝিম প্রিয় মানুষটার সান্নিধ্য পেয়ে ডুকরে কাঁদে। বলে,
“খুব ব্যথা করছে।”
“কোথায়?”
“পেটে। মনে হচ্ছে নাড়িভুড়ি সব ছিড়ে যাচ্ছে।”
“হঠাৎ কী হলো?”
রিমঝিম জবাব দিল না। চোখ বুজে ঠোঁট চিপে রইল। কল্লোল চট করে বুঝে ফেলল। গত মাসেও একটা নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েটি এমন নাজেহাল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এতটা নয়। তখন অবশ্য রিমঝিমের খালা ছিল বাড়িতে। ওরাই সামলে নিয়েছিল। এখন কল্লোল কী করে! মেয়েটার মুখ যন্ত্রণায় লাল হয়ে গেছে। কল্লোলের মাথায় যা এলো তাই বলল,
“পেইনকিলার নিয়েছিলে?”
“নিয়েছি।”
“তাতেও কাজ হলো না? আমার কিন্তু ভালো লাগছে না। চলো ডাক্তারের কাছে যাই।”
রিমঝিম রাজি হলো না। ভাবল সবুর করলে এমনিতেই সেড়ে যাবে। প্রতিবার তো এমনই হয়ে আসছে। এক-দুই দিন পর ব্যথা সেড়েও যাচ্ছে। যদিও গত কয়েক মাসে যন্ত্রণার মাত্রা সীমা অতিক্রম করে ফেলছে। সন্ধ্যা পেরোতেই রিমঝিম জ্ঞান হারাল। কল্লোল অস্থির হয়ে পড়ল। রতনের মাকে বাড়িতে থাকতে বলে রিমঝিমকে কোলে তুলে বেরিয়ে গেল হসপিটালের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে ফোন করে রিমঝিমের খালাকেও হসপিটাল আসতে বলে দিল। হসপিটালে নেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে রিমঝিমের জ্ঞান ফিরিয়ে ব্যথা কমানোর মেডিসিন দেওয়া হলো। পরদিন গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে কনসাল্ট করে কিছু টেস্ট করানো হলো ওর। মধ্যবয়সী ডক্টর সুপ্রিয়া রিপোর্ট দেখে কল্লোলকে প্রশ্ন করলেন,
“আপনাদের বেবি আছে?”
কল্লোল বিমর্ষ চোখে চেয়ে মাথা নাড়ল,
“নিউলি ম্যারিড কাপল।”
সুপ্রিয়াকে ব্যথিত দেখায়। ডক্টরের চেম্বারে বর্তমানে কল্লোল ও তাহমিনা উপস্থিত। তাহমিনা উতলা স্বরে বললেন,
“কী হয়েছে, ডক্টর? বেবির কথা আসছে কেন?”
“পেশেন্টের জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়েছে। সেজন্যই পিরিয়ডে অত্যন্ত ব্যথা ও ব্লিডিংয়ের মাত্রা বেশি। আরো কয়েকটা টেস্ট করে নিশ্চিত হতে হবে এটা শুধুই টিউমার নাকি ক্যান্সারের জীবাণুও আছে। সেক্ষেত্রে ইমিডিয়েট অপারেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যান্সার কোষ না থাকলেও অপারেশন মাস্ট। জরায়ু কেটে বাদ দিতে হতে পারে। তাই বাচ্চার কথা বলা।”
তাহমিনা আতঙ্কে নীল হয়ে গেলেন। সেদিনের বাচ্চা মেয়েটাকে নিজের হাতে বড়ো করলেন, যত্নের ত্রুটি রাখলেন না। আজ কিনা তার এমন বড়ো অসুখ ধরা পড়ল! অপারেশন করতে হবে! যাকে নখের আঁচড়টাও দেননি তার পেটে অস্ত্রোপচার করা হবে! তাহমিনা কল্লোলের দিকে তাকান। সদ্য বিয়ে হলো দুজনের। এখনই এমন একটা দুঃসংবাদ! কল্লোল শক্ত হয়ে বসে আছে। ডক্টর সুপ্রিয়ার কথার জবাবে বলল,
“পেশেন্টের সুস্থতার জন্য যা করা দরকার তাই করুন। জরায়ু বাদ দিতে হলে তাই করুন। তবুও আমার স্ত্রী যেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়, ডক্টর।”
“আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। তবে ক্যান্সারের ক্ষেত্রে দেহে একবার জীবাণু পাওয়া গেলে কয়েক বছর পর আবারো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই শুরুর পর্যায়েই যত দ্রুত ট্রিট করা সম্ভব ততই ভালো। আপনারা প্রস্তুতি নিন।”
সব টেস্টের পর রিমঝিমের জরায়ুতে সত্যি সত্যিই ক্যান্সার কোষের অস্তিত্ব পাওয়া গেল। ডক্টর সুপ্রিয়া জানালেন আরো কোনো অঙ্গ আক্রান্ত হওয়ার আগেই চিকিৎসা প্রয়োজন। এখন রিমঝিমের জরায়ু বাদ দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পন্থা নেই।
কল্লোলের হৃদয় উজার করা ভালোবাসার মানুষটি নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়। অদ্ভুত বিবর্ণতা বাড়ির আনাচে-কানাচে। তিনটে মানুষের প্রাণপ্রিয় রিমঝিম যেন নিজের সঙ্গে সঙ্গে বাবা, খালা ও স্বামীর শরীর-মনকেও অসুস্থ করে ফেলেছে। তাকানো যায় না তাদের দিকে। এখন ওরা রিমঝিমের বাবার বাড়িতেই আছে। কল্লোলকে দেখে রিমঝিম চোখ মেলে চাইল। হাত বাড়িয়ে ডাকল নিজের কাছে৷ কল্লোল নিস্তেজ পায়ে এগিয়ে এসে ওর পাশে বসে। কপালে চুমু খেতে গিয়ে চোখের কোন ছলকে উষ্ণ তরল গড়িয়ে পড়ে রিমঝিমের কপালে। রিমঝিম বলল,
“তোমরা এমন ভান করছো যেন আমার অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে৷ আমি আর বাঁচব…”
কল্লোলের বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠে। কড়া চাহনি দিয়ে রিমঝিমের ঠোঁটে আঙুল চাপল ও। কোনো কথা বলতে পারল না। রিমঝিম হাত বাড়িয়ে কল্লোলের গলা জড়িয়ে ধরে। বুকে নাক ঘষে, গাল ঘষে। কল্লোল বোঝে ওর আবদার। নির্জীব, শুষ্ক ঠোঁটে সময় নিয়ে কোমল, সিক্ত, আবেগঘন স্পর্শ করে ও। রিমঝিম কেঁদে ফেলল। ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,
“আমি মা হওয়ার ক্ষমতা হারাতে চলেছি, তাই না?”
“গা থেকে এখনো কৈশোরের গন্ধ যায়নি। আর মা হওয়ার চিন্তা করছো? জগতে মা হওয়ার চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আছে। তারজন্য সুস্থভাবে বাঁচতে হবে তোমায়।”
“তুমিও যে বাবা হতে পারবে না।”
কল্লোল শক্ত গলায় বলল,
“বাবা হতে চেয়েছি আমি? আমার মূল কর্তব্য একজন ভালো স্বামী হওয়া। সে দায়িত্বটাই ঠিকমতো পালন করতে দাও না। আমার শুধু তোমাকে চাই সোনা।”
চলবে…