#মেঘময়_চাঁদ
#শেষ_পর্ব
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
আমি মিলি আর জুইয়ের সাথে ভার্সিটিতে চলে এসেছি। যদিও বাবা বলেছিলেন যেনো তাদের সাথেই যাই, কিন্তু আমার কাছে এটা যেনো একটা অসস্থি লাগছিলো।
যতই আমি এমপির মেয়ে হইনা কেন, আমিও তো একজন শিক্ষার্থী।
তাই ওদের সাথে সাধারন ভাবেই এসেছি।
যদিও সাথে সিকুরিটি গার্ড আছে।
শুভ্র ভাইয়াও আজ ক্যাম্পাসে কাজ করছে। সব নতুনদের দায়িত্ব তো আবার বড় ভাইদের উপড়েই পড়ে।
অনেক্ক্ষণ যাবত বসে থেকে কোমরটা ধরে এসেছে। আমার বাবা আর বাবাই দুজনেই আজকের অতিথি।
মনে মনে নিজের বাবা আর বাবাইকে বকা ছারা আমার আর এখন কোনো কাজ নেই।
নতুন নতুন আইডি খুলে দিয়েছে তাই বার বার ডুকে দেখছি। যদিওবা অতটা আকর্ষন কাজ করছেনা, কিন্তু শুভ্র ভাইয়ের প্রোফাইল লক করা রিকোয়েস্ট একসেপ্ট না করলে কিছুই তো দেখতে পারছি না।
তাই বার বার চেক দিচ্ছি।
এরি মাঝে নাম এনাউন্সমেন্ট হচ্ছে অতিথি এসে গেছে। আমরা সবাই উঠে গিয়ে তাদের কে অভিবাদন জানালাম।
এরপর এসে নিজের ছিটে বসে কিছু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে লাগলাম।
এরপরে শুরু হলো প্রধান অতিথির বক্তব্য।
এর মধ্যে এক বারো আমি শুভ্র ভাইকে দেখিনি।
সে গেলো কোথায়?
চার দিকে খুজেও তাকে পাচ্ছি না।
তার তো অনুষ্ঠানে থাকার কথা ছিলো।
****
মি শুভ্র আপনি জানেন এই দলটাকে ধরতে পারলে বেচে যাবে আমাদের দেশের অনেক অসহায় শিশু নারী।
জি স্যার।
তো ইনভেস্টিগেসন শুরু করুন।
স্যার আমি আপনার আদেশের অপেক্ষায় ছিলাম। আমি অনেক দুর এগিয়েও গেছি। অনেক গুলো ক্লু পেয়েছি ব্লু গ্যাং এর লিডার সম্পর্কে।
এখন শুধু সঠিক সময় মতো ওদের কে ধরতে হবে।
গুড জব শুভ্র।
গোয়েন্দা বিভাগ হেড এর সাথে গোপন বৈঠক শেষে বের হয়ে আসে শুভ্র। তার ঠোটের কোনায় বিজয়ের হাসি।
অপেক্ষা শুধু আর কয়েকটা দিন এর পরই ও বের করতে পারবে দেশের সবচাইতে বড় নারি শিশু পাচার দলকে।
****
শুভ্র ভাইকে না পেয়ে এগিয়ে গেলাম কমন রুমের দিকে যেখানে সবাই আছে। মানে শুভ্র ভাইয়ের বন্ধুরা।
কমন রুমেও দেখি ভাইয়ার ফেন্ডরা নেই। আচ্ছা দল ধরে সবাই গিয়েছে কোথায়।
এই মেয়ে এখানে কাকে খুজছো।
মেয়েলি কন্ঠ শুনে তাকিয়ে দেখি একটা সাদা শাড়ি পড়া মেয়ে দাড়িয়ে আছে। মুখে মাক্স পড়া।
জি আসলে আমি,,,
আসলে নকলে কি? কাকে খুজতে এসেছো, জানোনা এখানে বিনা অনুমতি তে ঢোকা বারন। ছাত্র দলের নেতা শুভ্র যদি জানতে পারে তাহলে কিন্তু তোমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
আপনি শুভ্র ভাই কে দেখেছেন?
মেয়েটা কেমন যেনো অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো।
কেনো তাকে দিয়ে তুমি কি করবে। মনে তো হচ্ছে নতুন, আজকে তোমার নবিন বরন না। অনুষ্ঠান রেখে এখানে আছো কেনো। দুদিন হয়নি এখনি পাখনা গজাতে শুরু করেছে তাই না।
আমি চুপচাপ তার কথা গুলো শুনছিলাম।
আসলে আপু তা না।
তা না তো কি। আর শুভ্রর পিছনে ঘুরে কোনো লাভ নেই। ওর ফিয়ন্সে আমাদের এখানেই আছে বুঝলে মেয়ে।
এবার আমি মুচকি হেসে তার দিকে ভালো করে তাকালাম।
কি হাসছো কেনো?
হাসবো না তো কি করবো বলেন, শুভ্র ভাইকে খুজছে তাও আবার ফাস্ট ইয়ারের একটা মেয়ে, আর আপনি এখনো বুঝলেন না। আমি কে? আমিই তার হবু বউ।
এবার যেনো মেয়েটার মুখ ভয়ে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
ছরি আপু বুঝতে পারিনি।
ওকে সমস্যা নেই আপু, আপনি কি তাকে দেখেছেন?
জি আপু চলুন আমি আপনাকে নিয়ে যাই। আমি দুঃখিত আমি আসলেই বুঝতে পারিনি।
আর শুভ্র ভাই এর বারন ছিলো যাতে কেউ এখানে না আসে। তাই আমি আপনাকে যেতে দেই নি।
আমি বুঝেছি।
আমি যেইনা মেয়েটার সাথে কমনরুম পেরিয়ে পুকুর পারের দিকে যাচ্ছি তখন পিছন থেকে একটা ছেলে মেয়েটাকে ডেকে ওঠে।
এই সুমা তুমি এখানে তোমাকে ইমন আরো সারা ক্যাম্পাসে খুজে মরছে। যাও ওখানে।
সুমা নামের মেয়েটি আমাকে বললো আপু তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি এখনি আসছি। এই রনক তুই একটু শুভ্র ভাইয়ের কাছে আপুকে নিয়ে যা তো।
আচ্ছা তুই যা আমি নিয়ে যাচ্ছি।
*****
স্ব দলবলে ধরা পড়েছে ব্লু গ্যাং এর লিডার, বাহিরের দেশে নারি পাচার করা, নেশা দ্রব্য অবৌধ ভাবে দেশে আনা নেয়া করাই ছিলো এই দলের প্রধান কাজ। নারী দের বিদেশে পাচার করে দিতো আর ছোট বাচ্চা দের কে ধরে এনে মুক্তি পন হিসেবে বাবা মায়ের থেকে নিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা। তারপরেও দেখা যেতো বাচ্চাদের কে সুস্থ ভাবে ফেরত পাওয়া যেতো না।
আজকে শুভ্র সেই দলকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। ওরা পনেরোটা মেয়েকে আজ পাকিস্তান পাঠিয়ে দিতো। আর এই সংবাদ শুভ্র জানতে পেয়েই ছুটে চলে যায় বান্দর বনে।
সেখানে গিয়ে জাহাজে অভিজান চালিয়ে পনেরোটা মেয়ে আর দশটা শিশু বাচ্চা উদ্ধার করে বাচ্চাদের অধিকাংশ দেরই হয়তো একটা চোখ নেই কারো বা আবার হাত ভাঙ্গা কারো একটা কিডনি নেই।
এই সব বাচ্চাকে তাদের বাবামা এর হাতে দিয়ে তাদের চিকিৎসা ব্যাবস্থা করতে করতে প্রায় রাত দুইটা বেজে যায়।
এতো সময় শুভ্র অন্য কোনো দিকেই নজর দিতে পারেনি।
কখন যে ফোনের ব্যাটারি ডাউন হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে খেয়ালও করেনি।
ফোন অন করতেই দেখতে পায় অসংখ্য মিস কল এলার্ট এসে রয়েছে শুভ্রর ফোনে।
ফোন ব্যাক করে যা শুনতে পায় তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না শুভ্র।
*****
চোখ মেলে নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করি আমি।
এ আমি কোথায় এসেছি।
আমি এখানে কি করছি।
আমার ভাবনার মাঝেই দরজা খুলে যায়। হঠাৎ করে চোখে আলো পড়ায় চোখ মেলে তাকাতে কষ্ট হচ্ছে।
ওরা ঠিক কি করছে বুঝার জন্য আবারো জ্ঞান হারানোর মতো পড়ে রই।
এই ইমন এখনো জ্ঞান ফেরেনি শুভ্রর কলিজার। কত ওইক মেয়ে দেখ এখনো জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছে। তারাতাড়ি জ্ঞান ফেরা বস আসার আগে ওকে তৈরি করতে হবে।
একটা মেয়ে এগিয়ে এসে আমার উপড় পানি ছিটিয়ে আমার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে, বুঝে যাই একানে অভিনয় চলবে না।
তাই চোখ মেলে তাকাই।
এই মেয়ে এই কাপড় গুলো পড়ে তৈরি হয়ে নাউ তোমাকে আমাদের বসের সামনে যেতে হবে বলেই ওরা সবাই চলে যায়।
ধীরে ধীরে আমার মনে পড়ে রনক নামের ছেলেটা আমাকে নিয়ে শুভ্র ভাইয়ের কাছে আসতে গিয়ে হঠাৎ মুখে রুমাল চেপে ধরে, একটা ঝাঝালো গন্ধ নাকে আসতেই আমার দু চোখ যেনো লেগে আসে। তারপর আমার আর কিছু মনে নেই।
****
বাবা শুভ্র তরী কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কিহ্, ও বাসায় ফেরেনি।
না বাবা আমরা সম্বাব্য সব জায়গায় খোজ করেছি কিন্তু ওর কোনো খোজ পাইনি।
শুভ্র দুনিয়াটা যেনো দুলে ওঠলো, ওর ঠোটের হাসি যেনো কালো মেঘের ন্যায় মিলিয়ে গেছে।
না না না তরী তোমার কিছু হতে পারে না। আমি আসছি, কোথায় তুমি পৃথিবীর যেখানেই যাওনা কেনো আমি তোমাকে খুজে বের করবো।
***
আজ একটা বছর পার হয়ে গেছে, শুভ্র নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে। অন্ধকার রুমে তরীর একটা ছবির সামনে সারা দিন বসে থাকে।
বাবা শুভ্র কি খাবি বাবা।
আমি কিছু খাবোনা, আমার তরী এভাবে আমাকে ছেরে যেতে পারে না।
ওমা ওকে এনে দাওনা গো, জানি পারবে না। বরেই আবার দরজা বন্ধ করে দেয় শুভ্র।
**
হ্যা তরীকে শুভ্র খুজে পেয়েছিলো ঠিকি কিন্তু বাচাতে পারে নি।
শুভ্র পোছৌতা পৌছাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো, শুভ্র বাড়িতে ফিরে জানতে পারে চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে তরী নিখোজ।
তখন সে একটা মেইল পায়। যেখানে লেখা ছিলো,,
আজ দুপুর বেলা তরীর জানাজা পড়ার জন্য তৈরি থাকিস শুভ্র। পারলি না তো তোর প্রেয়শি কে বাচাতে।
এই মেইল পেয়েই ছুটে যায় শুভ্র তার দল নিয়ে, মনির কে ধরতে পারলেও মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে থাকা তরীকে বাচাতে পারে নি শুভ্র।
প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে মনির তরীকে ছুরি দিয়ে দেহের মধ্যে আচর কাটে।
হসপিটালে সার্ভাইব করতে না পেরে তিন দিনের মাথায় সবাই কে কাদিয়ে চলে গিয়ে চিলো তরী।
শুভ্র আর তরীর ভালোবাসা যেনো এক ফালি চাঁদের মতো মেঘের নিচে ঢাকা পড়ে যায়।
ওহে কি করিলে বলো পাইবো তোমারে,
রাখিবো আখিতে আখি।।
সমাপ্ত