#মেঘময়_চাঁদ
#পর্ব_৬
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
ফুপি দুপুরে বললো যে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে। আবার ছেলেও নাকি ঠিক করা।
ওহ্ এই কথা।আরে পাগলি তুই নিশ্চিন্তে পড়া শোনা কর, আমি আগে সেটেল হই তার পরে বিয়ের চিন্তা মাথায় আনবি।
মানে।
কিছুনা,যা আমার খাতা গুলো নিয়ে যা, আজকে রাতের মধ্যেই শেষ করে দিবি বুঝলি।
হু যাচ্ছি, তোমরা সবাই কখন কি বলো কিছুই বুঝি না সব মাথার উপড় দিয়ে যায়।
এই তুই যাবি এখান থেকে, আমাকে রাগাবি না তো।
যাচ্ছি।
শুভ্র ভাইয়ের রুম থেকে এসে দেখি উর্মি আর রুমি আমার বিছানায় অঘোরে ঘুমিয়ে আছে। আমি আর ওদের কিছু না বলে শুভ্র ভাইয়ের দেয়া খাতা গুলো নিয়ে লিখতে বসে গেলাম।
**
ফুপি তুমি কেনো তরীর সামনে বিয়ের কথা বলেছো, তুমি বুঝোনা কেনো এখনো আমি ওকে প্রটেক্ট দেয়ার মতো অবস্থায় নেই।
কেনো রে তোদের বিয়ে তো সেই ছোট বেলায়ই ঠিক হয়ে আছে। আমি তো তোর ভালোর জন্যই বলছি। এখন বিয়েটা করে নে। দিনকাল তো ভালো না। আবার কাকে না কাকে পছন্দ করে বসবে তখন।
ফুপি তুমি একটু বেশিই ভাবছো, তরীর দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালেও আমি তার চোখ তুলে নিবো। আর তরীর কথা বলছো তো। ও কাউকে ভালো লাগলেও সেটা হবো এক মাত্র আমি।
হ্যারে আপা আমরা তরীকে চিনি, ও ওরকম কিছু করবেই না।
ইমতিয়াজ সিকদার রুমে ডুকতে ডুকতে কথাটা বললেন।
কি জানি বাপু আমার যেটা ভালো মনে হয়েছে আমি বলেছি। এখন তোরা ছেলে মেয়েরা যা ভালো বুঝিস। কিন্তু আমার মনে হয় এখন তরীকে জানানো উচিত তোদের বিয়ের কথা।
না ফুপি এতে ওর লেখা পড়ায় ক্ষতি হবে। আমার লাইফের রিক্স আছে, আমি চাই আমার অনুপস্থিতি তে ও যেনো সব দিক সামলে ও নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারে। যখন সময় হবে তখন আমিই বলবো৷
হ্যা আপা সামনে ইলেকশন, এখন কাজের অনেক চাপ একন বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলাটাও বিপদ।
বাবা আর বাবাই তোমাদের দুজনের সাথে আমি কিছু কথা মেয়ার করতে চাই, তোমাদের কি সময় হবে।
আরেহ্ শুভ্র কি বলবে বলো।
এখানে নয় এসো আমার সাথে গোপন কক্ষে, ওখানে বলবো। দেয়ারের ও কান আছে আমি চাইনা এসব বিষয় নিয়ে কোনো ঝামেলা হোক, পরিবারের কেউ সাফার করুক।
*****
বারে বতলের পর বতল শেষ করে যাচ্ছে মনির, ওর মাথায় এখন শুধু একজনই ঘুরছে, আর সে হলো শুভ্র।
শুভ্র তোকে আমি সুখে থাকতে দিবোনা, তুই আমার জীবন থেকে আমার প্রিয় চিনিষ গুলো খুব সহজ ভাবেই কেড়ে নিয়েছিস।
প্রথমে তুই সব সময় ক্লাস টপার ছিলি, যার জন্য আমি আমার মা বাবার কাছে কথা শুনেছি। তোকে আমি ভালো বন্ধু ভেবে ছিলাম কিন্তু তুই আমার কলিজার টুকরা বোনটাকেউ শান্তিতে থাকতে দিলি না।
তুই ওর ভালোবাসা কে ফিরিয়ে দিলি।যার ফল সরুপ আমি আমার পরির মতো বোন নিপা কে হারিয়েছি। ও তো তোর কাছে তেমন কিছু চেয়েছিলো না। শুধু ভালোবাসাটাই তো চেয়েছিলো। কিন্তু তুই কি করলি আমার বোনটাকেউ মেরে দিলি।
বস আর খাবেন না শরূর অসুস্থ হয়ে যাবে, চলুন এবার।
না সুমন আজকে আমি তোমাদের কারো কথাই শুনবো না।
তুমি কি বুঝবে আমার কষ্টের কথা। জানো আমি আমার বোনটাকে দেখতেও পারি নি। তখন আমি সিঙ্গাপুরে ছিলাম।
নাহ্ শুভ্র এ হতেই দিবোনা আমি, তোমার ওই প্রেয়সি তরী রানিকে আমি ছারবো না।
সব কিছু তোমার হবে এটাতো আমি মানতে পারবো না।
এসব কথা বলে আবারও একটা বতল এক দমে খেয়ে নেয় মনির।
অবস্থা খারাপ দেখে দুজন সিকোরিটি কে ডেকে সুমন ইশারায় ধরে বাড়ির দিকে নিয়ে যেতে বলে।
***
একটা গোপন মিটিং রুমে দাড়িয়ে আছে শুভ্র, ইমতিয়াজ আর ইশতিয়াক সিকদার।
তাদের মুখে চিন্তার ছাপ।
বাবা এখন বলো কি করবো আমরা, আমার গোয়েন্দা দল জানিয়েছে মির পরিবারের রোকেরাই এসব ড্রাগ আর সব কিছু পাচার করছে।
বাবা তুমি শান্ত ভাবে চিন্তা করো। তোমার টিম খুব জোরালো ভাবে কাজ করছে আমি জানি।
কিন্তু আমাদের কে এসব প্রমান সহ ধরতে হবে।
হ্যা বাবা আর এজন্যই তো আমি গোয়েন্দা হয়েছি।
ইমতিয়াজ সিকদার শুভ্রর কথায় একটু মুচকি হাসি দিলেন।
আস্তে শুভ্র তোমার এই সিক্রেট কাজের কথা আমরা তিন জন ছাড়া কেউ জানে না।
হ্যা বাবা, আমার তরী রানির স্বপ্ন পুরুষ একজন গোয়েন্দা অফিসার হবে, আর তাই তো আমি এতো কিছু বাদ দিয়ে শুধু তরীর মন জয় করার জন্য এতো রিক্স লাইফ বেছে নিয়েছি।
***
শুভ্র ভাইয়ের এসাইনমেন্ট করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা। সকালে ঘুম বেঙ্গে দেখি আমি বিছানায় শোয়া আর আমার হাতের মাঝে আজকেউ একটা কাগজ দেয়া।
আমি নিজেকে বিছানায় দেখে যতটানা অবাক হয়েছি তার চাইতে বেশি ঘাবরে গেছি। আবারো চিরকুঠ।
পড়পড় দুই দিন চিরকুট পেলাম। এমনটা কেনো হচ্ছে আমার সাথে।
কিছুনা ভেবেই কাগজটা খুলে পড়তে শুরু কররাম।
তুমি এতো কেয়াররেস কেনো জান পাখি।তোমার কিছঁ হলে যে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারবো না। কি ভাবছো কে আমি, তোমার এতো খোজ কই পাই।
সময় হলেই তোমার সামনে ধরা দিবো। আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা।
ইতি
তোমার খুব চেনা একজন।
চিরকুট পড়ছি এমন সময় রুমি এসে বলে কি পড়ছো আপি?
আমি তাড়াতাড়ি কাগজ টা লুকিয়ে ফেলি। যাতে রুমি দেখতে না পায়।
কই কিছু না তো। বলেই আমি দ্রুত ওয়াশ রুমে গিয়ে হাত মুখ ধুতে চলে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে এসে বসতেই ওরা দুজনে বলে ওঠে আপু তোমাকে একটা আইডি খুলে দিয়েছি, কিন্ত তোমার কোনো পিক নেই তাই আপরোড দিতে পারিনি।
আমি উর্মির হাত থেকে ফোন নিয়ে দেখি সত্যি ফেসবুক আইডি খোলা।
আমি আর বেশি কিছু না ভেবে নিচে চলে গেলাম খাবার কেতে, কারন আজ ভার্সিটিতে যেতে হবে।
প্রথম প্রথম গ্যাপ দিলে চলবেনা।
আমি তাড়াতাড়ি খেয়ে মিলিকে কল করে আসতে বলে উপড়ে চলে গেলাম রেডি হতে।
***
ক্যাম্পাসে পোছানোর পর সেই দিনের ওই আপু গুলোর সাথে দেখা হতেই আমরা মমাথা নিচু করে চলে যেতে নিলেই ওরা আমাদের কে দেখিয়ে বলরো এই মেয়ে দাড়াও।
আমি আর মিলি দাড়িয়ে পড়েছি।
কি দুদিন এলে না জে?
আমি নিজের সাহস এনে বললাম তাতে আপনার কি। আমি আসি বা না আসি।
বাহ্ কথার খই ফুটেছে নাকি, দু দিনে, জানো আমি কে?
আপনি কে তা দিয়ে আমি কি করবো? পড়ালেখা করতে এসেছি। কারো পরিচয় জানতে না।
এখানে কি হচ্ছে?
পেছনে পরিচিত গলা শুনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাই ার তার বন্ধুরা দাড়িয়ে আছে।
শুভ্র ভাইকে দেখেই যে মেয়েটা আমার সাথে কথা বলচিলো তার মুখে লাজুক হাসি ফুটে উঠলো।
মেয়েটি বলে উঠলো,
আসলে ওকে বোঝাচ্ছিলাম যে প্রথম কিন এসেই তোমাকে প্রপোজ করেছে, ওর কোনো যোগ্যতা আছে নাকি।
মেয়েটার কথা শুনে আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই শুভ্র ভাই আমার হাত ধরে বললেন,
প্রিয়া তুমি কার সম্পর্কে কথা বলছো তুমি নিজেও জানো না।
আমার বউ হতে চাইলেও না ওর পছন্দ হওয়া লাগবে। ইউ নো হুয়াই?
ও আমার বোন লাগে।
আর তার চাইতেও বড় কথা ও আমার হবু ওয়াইফ।
শুভ্র ভাইয়ের কথা শুনে আমি যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।
প্রিয়া নামের মেয়েটার মুখও কেমন কালো হয়ে গেলো।
আর তুমি যোগ্যতার কথা বললে তো, তুমি কি জানো ও কে?
এমপি ইশতিয়াক সিকদারের একমাত্র মেয়ে।
এবার যেনো মেয়েটা ভয় পেয়ে গেলো, আমি চুপ করে দাড়িয়ে আছি, এদিকে তেখি সৌমিক আর জুইয়ো দাঁড়িয়ে আছে।
ক্যাম্পাসে আমাদের কয়েকজন কে ঘিরে সবাই ভির করছে। শুভ্র ভাই সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে কেউ তরীর দিকে তাকালেও তার আত্না সাথে থাকবেনা।
যাও একান থেকে সবাই।
সবাই যার যার ক্লাস রুমে চলে গেলো ধীরে ধীরে।
**
কেটে গেছে প্রায় কয়েক দিন, ওই দিনের পর থেকে ামাকে ার কেউ বিরক্ত করে না।
সেইদিন ক্যাম্পাস থেকে আসার পর শুভ্র ভাই আমাকে ডেকে বলেন
,
আমি জানি তুই হয়তো আমার কথা শুনে মন খারাপ করেছিস। কিন্তু তুই যখন ক্লাস ভাইবে আমি তখন দশম শ্রনিতে পড়ি তখন আমার আর তোর নিরাপত্তার জন্য আর কিছু অযাচিত ঘটনার সূত্র ধরে তোর আর আমার বিয়ে ঠিক হয়। আমি চাইনি তুই এই বিষয়টি জেনে নিজের মধ্যে আমার চিন্তা ধারন করিস।
তাই সবাই তোর থেকে লুকিয়ে গেছে।
আমি তোর পছন্দের প্রফেসনই বেছে নিয়েছি।
হ্যারে আমি একজন গোয়েন্টা অফিসার।
আমার এই সব প্রপোজ ভালো লাগে না। তাই বলচি তুই কি আমায় তোর বর বানাবি?
আমি সেই দিন কিছু বলতে পারিনি। লজ্জায় চলে এসেছিলাম। এর পরে অবশ্য শুভ্র ভাই আমাকে কিছু বলে নি।
সময় নিজের মতো বহমান আজ কলেজে নবিন বরন অনুষ্ঠান আজ আমি অনেক সুন্দর করে সেজেছি। ফেসবুক আইডি স্কল করছিলাম এমন সময় দেখি শুভ্র ভাইয়ের আইডি।
রিকোয়েস্ট দিবো দিবনা করে দিয়েই ফেলরাম।
জানিনা কি হবে এবার আমার,,,,,
চলবে,,,