#মেঘময়_চাঁদ
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
মনির যেনো কোনো ভাবেই এখান থেকে বের হতে না পারে।
ও আমার কলিজার দিকে হাত বাড়িয়েছে, ওকে জেন্তু পুতে দিতে ইচ্ছা করছে।
বস আমরা মনির কে ধরতে পারিনি, ও আমাদের ডেরা থেকে পালিয়ে গেছে।
তোমাদের কে আমি কেনো রেখেছি। বসে বসে শুধু খাবার টাই গিলছো তোমরা, কোনো কাজের কাজ কিছুই করতে পারো না।
আমার তরীর যদি কিছু হয় আমি তোমাদের কাউকেই ছারবোনা।
সবাই মাথা নিচু করে আছে।
যানে এখন কিছু বললে বস আরো রেগে যাবে।
**
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি উর্মি আর রুমি দুই জন আমার ফোন দিয়ে কারো সাথে কথা বলছে।
এই কার সাথে কথা বলছিস রে তোরা?
শুভ্র দা কে কল করেছিলাম গো আপুনি।
শুভ্র ভাইয়ের নাম শুনতেই আমার সকালের কথা গুলো মনে পড়ে গেলো। কিন্তু আমি তো কখনো ভাইয়াকে ফোন দেইনি তাহলে ওরা নাম্বার পেলো কোথায়।
এই তোরা দুটো নাম্বার পেলি কই।
কেনো আমাদের ফোনে নাম্বার আচে তো।
তাহলে নিজের ফোন থেকে কল দিতে পারলি না, আমার টা দিয়ে কেনো দিয়েছিস।
আমাদের ফোনে টাকা নাই দেখে দিয়েছি।
কিন্তু আপি তোমার ফোনে দেখি শুভ্র ভাইয়ার নাম্বার টাই নেই।
ককনো প্রয়োজন পড়েনি বুঝি।
না সেরক না, আসলে আমি তো ফোনই নিলাম মাত্র কয়েক দিন হলো। তাই কারো নাম্বার তেমন ফোনে নেই।
ধীরে ধীরে নিয়ে নিবো।
আপি তুমি তাহলে সোসাল মিডিয়ার কোনো কিছুই চালাও না।
না। এতো সময় কই?
আজকে তোমাকে ফেসবুক আইডি খুলে দিবো, তাহলে মাঝে মাঝে তোমার সাথে অন্তত কথা হবে।
আচ্ছা দিও। এখন চলো নিচে যাওয়া যাক। ফুপি নাকি মোরগ আর খিচুরি করে এনেছে আমার জন্য।
হুম মা তো তোমার আর দা ভাইয়ের জন্য অনেক কিছুই করে নিয়ে এসেছে।
বলতে না বলতেই সেলিনা এসে বলছে আফা মনিরা আয়েন আপনে গো খাওন বাইরা দিসি। বড় আম্মায় ডাকিতেছে।
তুমি যাও আমি ওদের সাথে আসছি।
এই চলো চলো, নইলে আবার বকুনি খেতে হবে।
হু চলো।
নিচে এসে দেখি ফুপি বাবা বাবাই ডাইনিং এ বসে আছে, মা আর মামনী খাবার সার্ভ করছে।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আমার জন্য বরাদ্দ করা চেয়ার টেনে বসে পড়লাম।
লাবনি কাবার তাড়াতাড়ি দাও, আমাদের দুজনেরই জরুরি মিটিং আছে পার্লামেন্টে।
আমি আস্তে করে বললাম, বাবা ধীরে সুস্খে খাবার খাও। এমনিতেই তো তোমার পেশার ফল করে আর এখন তারাহুরো করে খাবে তারপরে অসুস্থ হয়ে গেরে কেমন হবে।
বাবা আমার কথায় মুচকি হেসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
এমন সময় ফুপি বলে উঠলেন, তা ইশতিয়াক এবার তো তরীর বিয়ের কথা ভাবতে হয়। মেয়ে ভার্সিটিতে উঠলো।
ফুপির কথা শুনে আমার মুখে যেনো আধার নেমে এলো।
আহা আপা কি বলো, তরী কেবল তো প্রথম বর্ষে পড়ে আর তাছারা ছেলে তো আমাদের হাতের বাহিরে না।
তা ঠিক কিন্তু এবার অন্তত আকদ করে রাখলে হয় না। চেলে মেয়েদের মন তো বদলাতে সময় লাগে না।
আচ্ছা বাবা আর ফুপি কার কথা বলছে, সব যেনো আমার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে।
মা আমাকে খাবার নিয়ে নারাচারা করতে দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, এখনো কারাপ লাগছে তোর।
খাবার টা খেয়ে মেডিসিন গুলো খেয়ে নিস।
এবার ফুপি বলরেন আরে হ্যা এই নে তোর পছন্দের মোরগ দিয়ে খিচুরি, আমি নিজের পোষা মোরগ দিয়ে করে এনেছি, বড় ভাবি শুভ্রর জন্য করা মুরিঘন্ট টা ফ্রিজে রেখে দাও ও আসলে ওকে দিও।
আমি খাবার সময় কেউ আর কিছু বলেনি।
চুপচাপ খেযে উপড়ে চলে আসি। রুমে এসে মেডিসিন গুলো নিয়ে মন খারাপ করে শুয়ে পড়ি। ভার্সিটিতে এডমিশন নিয়েছি দুই দিন হয়নি এখনি বিয়ের কথা বলছে।
অবশ্য এতে বাবা মাই বা কি বলবে, তারা তো কিছুই বলেনি বলেছে তো ফুপি।
আমি বুঝতে পারলাম না ছেলে ঠিক করা মানে। সব কিছু কেমন যেনো মাথার উপর দিয়ে গেলো।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়ালই করিনি।
তরী আপু উঠো, আর কত ঘুমাবে।
এই রুমি যাতো বিরক্ত করিস না।
শুভ্র ভাই আর তার বন্ধুরা আসছে, তুমি এখনো পড়ে পড়েঘুমাবো আপি।
শুভ্র ভাইয়ার নাম শুনতেই আমার ঘুম গায়েব। কারন ভাইয়া যদি একবার জানতে পারে আমি এখন ঘুমাচ্ছি তাহলে তার বন্ধুদের সামনে লজ্জা দিবে।
রুমি কে রুম থেকে বের করে দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ছয়টা বাজে।
মানে আমি টানা তিন ঘন্টা কিভাবে ঘুমালাম।
তারাতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখি ফুপি আমার রুমে বসে আছে।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ ফুপির সামনে যেতেই বললেন, এখন কেমন লাগছে তরী?
জি ভালোই লাগছে ফুপি।
তাহলে তুই মা কষ্ট করে এই নুডলুস আর কফি গুলো উপড়ে দিয়ে আয়।
আমি কিছু না বলে ফুপির থেকে খাবার গুলো নিয়ে সেলিনার সাথে রওনা দিলাম সাদের উদ্দেশ্যে।
কারন শুভ,রাফসান আর আরিশ ভাইয়া এখন সাদে আড্ডা দিসে।
দুপুরে ফুপির বলা কথা মনে পড়তেই আমার আবার মন খারাপ হয়ে গেলো। তবুও নিজেকে সাভাবিক রেখে সাদে গিয়ে তিন জনকে খাবর দিয়ে চলে আসলাম।
রুমে এসে দেখি উর্মি আমার ফোন দিয়ে কিছু করছে।
উর্মি কি করছো?
আপু তোমার একটাও পিক নেই ফোনে।
না কেনো?
না কিছুনা এমনি।
আমি আর না ঘেটেই পড়তে বসে গেলাম আকাশে মেঘ করেছে হয়তো বৃষ্টি হবে।
***&
রাতে ডিনার টাইমে হঠাৎ শুভ্র ভাই বলে উঠলেন তোদের নবিন বড়নের কাজ চলছে ভার্সিটিতে, কাল তোর জন্য আমার এসাইনমেন্ট গ্যাপ পড়েছে। এখন তরী তোর কাজ হচ্ছে আমার এসাইনমেন্ট করে দিবি।
মামনি বললেন আহ্ মেয়েটার শরীর থেকে জ্বর এখনো কমেনি তুই কেন ওকে ঘাটাচ্ছস।
এবার ফুপি বলে উঠলেন, আরে এটুকুনি জ্বরেে কিছু হবেনা। আর তাছারা ও তো পর কারো কাজ করে দিচ্ছে না।
ফুপির কথার উপর তো আর কোনো কথা চলবেনা আমাদের বাড়িতে তাই আমি শুধু বললাম ভাইয়া তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিও আমি করে দিবো।
তুই আমার রুমে আসিস খাওয়া শেষে।
আচ্ছা ভাইয়া।
শুভ্র তোমার ফাইনার পরিক্ষা আর কতদিন আছে, এবার তো কাজে জয়েন করো আমার সাথে।
বাবা পরিক্ষা শেষ হলেই আমি ব্যাবসাটা ধরবো আর এখন যেহেতু আমি ছাত্র দলের লিডার তো আমার উপড় এমনিতেই চাপ একটু বেশি।
শুনলাম তুমি নাকি মীর বাড়ির ছেলের সাথে বিবাদে জড়াচ্ছো৷।
বাবা, বাবাই তোমরা দুজনেই জানো শুভ্র সিকদার কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না।
বলেই ডাইনিং ছেরে উঠে গেলেন।
শুভ্র খাবারটা শেষ করে যাও।
না বাবা আমি এখন খেতে পারবো না তুমি আমার মুড টাই নষ্ট করে দিয়েছো।
আমরা কেউই আর কথা বারাই নি। কারন জানা আছে এখন হাজার বার বললেও শুভ্র ভাই খাবেন না।
অনেক্ক্ষণ যাবত শুভ্র ভাইয়ের রুমে এসে দাড়িয়ে আছি, কিন্তু যার জন্য দাড়িয়ে আছি সেই মানবেরই দেখা নেই।
শুভ্র ভাইয়ের রুমটা ছেলে মানুষ হিসেবে অনেক পড়িপাটি আর গুছানো।
হঠাৎ দেখি তার রুমে গিটারও আছে৷ ভাইয়া যে গান গাইতে পারে এটা আজকে প্রথম জানলাম।
অবশ্য ভাইয়ার রুমেও এসেছি আজকে প্রথম। বলে মনে হচ্ছে।
কিরে ডিংগি ওভাবে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কি ভাবছিস।
পুরুষালি কন্ঠ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখি শুভ্র ভাই শুধু তাওয়াল পড়ে বের হয়েছেন। তার চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
সদ্য সাওয়ার নিয়ে বের হয়েছেন মনে হয়।
ওনার এই অবস্থা দেখে চিৎকার করতে যাবো, তার আগেই তিনি আমার মুখ চেপে ধরলেন।
হুশ,,,,, চিল্লাস কেন? দাড়া আমি চেন্জ করে নেই।
শুভ্র ভাই আমাকে ছেরে দিয়ে কাপড় পড়ে নিলেন।
আমি চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
তো মেডাম আপনার মন খারাপ কেন?
এমন ডাকে আমি চমকে তাকিয়ে দেখি সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
কই মন খারাপ ভাইয়া।
দেখ তোকে আমি ভালো করেই চিনি। বল মন খারাপ কেন। আমাকে জোর করাস না তাহলে তুই জানিষই আমি রেগে গেলে খারাপ হবে।
আসলে দুপুরে ফুপি,,,,,
চলবে,,,,,