#মেঘময়_চাঁদ
#সূচনা-পর্ব
#লেখনীতে_সাবীহা_সুলতানা_মহিমা
একশো তিন ডিগ্রি জ্বর নিয়ে যখন রাতের আধারে বিছানায় কাতরাচ্ছি, তখন আধো খোলা চোখে লক্ষ্য করলাম আমার রুমে বেশ লম্বাটে কেউ বালতি আর গামছা নিয়ে প্রবেশ করছে। সে এসে আমার পাশে বসে খুব যত্নের সাথে আমার মাথায় জল পট্টি দিয়ে ধীরে ধীরি পানি দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু মানুষটার মুখ আমার চেনা ঠাহর হলেও কেমন যেনো অচেনা ঠেকছে৷ জ্বরের ঘোরে ঠিক চিনে উঠতে পারছি না। খুব খৃন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম কে, সে কি উত্তর দিয়েছিলো আমার স্মরনে নেই, জ্ঞান হারিয়েছিলাম আবার।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আমার বেড সাইডের পাশে বালতি মগ আর জল পট্টি এখনো আছে, শুধু মানুষটা নেই। আচ্ছা কে এসে ছিলো?
এসবি ভাবছিলাম ঠিক তখনি আমার মা আর বড় মামনি ডুকে বললেন এখন কেমন লাগছে তরী।আমি মৃদু হেসে মামনিকে জড়িয়ে ধরে বললাম এই তো মামনি তোমার মেয়ে তোমাদের দেখে এখন একদম ভালো হয়ে গেছে।
দেখলে লাবনি মেয়ে কত পাকা পাকা কথা শিখে গেছে এখনি দুদিন হলো না ভার্সিটিতে উঠেছে আর বড়দের মতো কথা বলা শিখে নিয়েছে।
ও মামনি।
থাক আর মামনিকে ডাকতে হবে না,না খেয়ে থেকে শরিরের কি হাল করেছিস বলতো। কাল যদি ঠিক সময় শুভ্র তোর কাছে না পৌছুতে পারতো তাহলে তোর কি হতো একবার ভাব, ছেলেটা কত কষ্ট করে তোকে এই পথ দেখে নিয়ে এসেছে।
থাক ছোট ওকে বকিস না , বাবু হচ্ছে ওর বড় ভাই ছোট বোনকে যদি দেখে না রাখতে পারে তাহলে কিসের ভাই হলো বলতো।
এই সেলিনা ভিতরে আয়, খাবার গুলো দিয়ে যা।
সেলিনার নাম শুনতেই আমার একরাশ বিরক্তি চলে আসে, কারন ওর এন্টি মানেই স্বাদহীন সুপ আর সাদা যাই খেতে হবে আমার।
যেই ডাকা অমনি হাজির সে খাবার নিয়ে, এতো সময় রুমের বাহিরে দাড়িয়ে ছিলো।
নে তো মা এই সুপটুকু খেয়ে নে।
ছোট তুই তরীকে খাইয়ে ডাইনিংএ আয় আমি বরং বাবুকে ডেকে দেই, ওর আবার ওর বাবার সাথে মিটিং এ যাবে আজ।
এই যে এতো করে বলি ছেলেটাকে এ পথে নিওনা কিন্তু ওইযে সিকদার দের রক্তে তো আবার তেরামি মিশে আছে, রাজনীতি না করলে তো এদের চলে না।
এসব বলতে বলতে মামনি চলে গেলেন তার আদরের একমাত্র ছেলে, সিকদার বাড়ির বড় ছেলে শুভ্র ভাইকে ডাকতে।
যদিও মামনি এখনো আদর করে বাবু ডাকে। কিন্তু তিনি মোটেও বাচ্চাদের মতো না। এক নাম্বারে খ*বি*শ একটা ছেলে। দেখতে মাশাল্লাহ কিউট হলেও ব্যাবহারের দিক থেকে সেই লেভেলের রাগী একজন মানুষ।
কিরে তরী কি ভাবছিস? নে খেয়ে নে তোকে খাইয়ে তার পরে আমি যাবো মায়ের রুমে, মা আর বাবাকে ডাকতে। ডাইনিং এ কত কাজ পড়ে আছে, এই সেলিনা যা তো গিয়ে সকালের নাস্তাটা রেডি কর আমি তরীকে খাইয়েই আসছি।
জি আম্মাজান যাইতেছি।
সেলিনা চলে যেতেই মা আবার আমার মুখে সুপ তুলে দিতে দিতে বললো এই তর কি হয়েছে, না খেয়ে থাকিস কেন, কাল ঠিক সময় মতো শুভ্র যদি তোকে না পেতো তাহলে তুই মাঠের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে ওখানেই পড়ে থাকতি।
এই সারা পথ তোকে কোলে করে নিয়ে এসেছে শুভ্র। সেই যে জ্ঞান হারালি রাতে একবার জ্ঞান এসেছিলো তারপরে আবার বেহুঁশ, বলি এই ডিংগি মেয়ে তোর আক্কেল জ্ঞান কবে হবে। এখনো বাচ্চাদের মতো খাইয়েদিতে হয়।
আমি কি তোমাকে খাইয়ে দিতে বলেছি। সিকদার বাড়ির মেয়ে আমি না খেয়ে থাকলেও কিছু হবে না। যাও তুমি তোমার কাজে যাও আমি এই সব ছুপ খাবো না আমার জন্য নুডলস আর চিকেন বানাও যাও।
হ্যা এই সব হাবিজাবি খেয়েই তো নিজের শরিরের বারোটা বাজিয়েছিস।
মা যাও তো আমি ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসছি, এতোটাও শরির খারাপ হয়নি যে নিচে আসতে পারবো না।
আমি এখনো মুখ ধুইনি আর তুমি আমাকে খবার খেতে সাধছো, এই তোমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা। এভাবে রোগ কমবেনা বই বারবে।
আমার কথায় মা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন,
তোকে যতই বকতে চাই তোকে বকতে পারি না, আসলেই আমি খেয়াল করিনি রে, যা মুখ ধুয়ে আয় আমি খাইয়ে দেই, আমার সোনা মেয়েটা। মায়ের মনতো বুঝিসি, কাল তোকে জ্ঞানহীন দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
মায়ের কথা শুনে আমার চোখে জল চলে আসছে, তাই তারাতারি করে ওয়াশরুমে ডুকে পরলাম।
আমি খুব কম কথা বলি, আর ছেলেদের সাথে মিশিনা বললেই চলে স্কুল, কলেজ লাইফে বন্ধু ছিলোনা, কারন ছোট থেকেই গার্স স্কুল কলেজে পড়েছি, যে দুই একজন বান্ধবি ছিলো তারা সবাই নিজের প্রয়োজনে আমার সাথে কথা বলতো, কম কথা বলার দরুন সবাই আমাকে অহংকারী মনে করে, আর এরো একট্ কারন হলো আমি সব সময় টপার হয়েছি, আর আমাদের বংশের সব ছেলেরাই প্রায় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। সেই কারনে বাড়ির ছেলেদের সঙ্গও তেমন পাইনি।
যতটা পেয়েছি তা আমার মা মামনি আর ফুপিদের। আর এই কারনেই মায়ের সাথে বন্ধুর মতো কথা বলি।
আমি আমার বাবা চাচার অনেক আদরের মেয়ে যদিও তারা আমাকে তেমন একটা সময় দিতে পারে না।
কিরে তোর হলো, সেই কখন থেকে বসে আছি।
মা তুমি এই খাবার নিয়ে চলে যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
তরী রিলাক্স এতো ইন্টোভার্ট হলে চলবে না তুই এখন ভার্সিটিতে পড়িস, নিজেকে এসব বুজিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে বিছানা গোছাতে গিয়ে বালিশের পাশে একটা ভাচ করা কাগজ দেখে কিছুটা অবাক হই আমি।
আমার রুমে চিরকুঠ আসলো কই থেকে। আমার রুমে তো অনুমতি ছারা কেউ ডুকতেও সাহস পায় না।
তখনি মনে পড়লো কাল রাতে আমার রুমে কেউ এসেছিলো৷ মনের মধ্যে ভয় কাজ করছে, আচ্ছা লোকটা আবার আমার সাথে কিছু করেনিতো।
কাপা হাতে চিরকুট টা খুলে দেখি ওতে লেখা,,
নিজের খেয়াল রাখতে শিখো মেরি জান, সব সময় তো আর আমি থাকবো না। আর তোমাকে এতো ভিতু হলে চলবে না। সামন্যতেই শররীর খারাপ করলে চলবে, তাহলে আমার ভালোবাসার অত্যাচার তুমি সহ্য করবে কিভাবে।
ইতি
তোমার কাছের কেউ
চিরকুঠ পড়ে তরীর অবস্থা প্রায় বেগতিক। কারন সে তো কখনই এমন চিরকুঠ পড়েনি। কে এমন চিরকুঠ দিলো ওকে। তখনি মনে হয় কেউ সরে গেলো দরজার কাছ থেকে।
এবার আরো বেশি ভয় পায় তরী।
এখন তরীর মনে ভিষন ভাবে ভয় হানা দিয়েছে, চিরকুঠের চাইতে বেশি ভয়ংকর হবে যদি শুভ্র ভাই এই বিষয়ে জেনে যায়।
তরী চিরকুঠটাকে খন্ড খন্ড করে ময়লার ঝুরিতে ফেলে দেয়।
দ্রত ওড়না নিয়ে নিচে নামতেই দেখে বাড়ির সকলেই উপস্থিত ডাইনিং টেবিলে, এই দৃশ্যটা দেখে তরী অনেক খুশি হয়। এমন দৃশ্য এই সিকদার বাড়িতে বিরল বললেই চলে।
তরি গিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দ করা চেয়ার টেনে বসতেই বড় বাবাই আর আব্বু বললেন তরী এখন কেমন বোধ করছো,
এই তো বাবা ভালো।
হুম শুনলাম তুমি নাকি কাল ক্যাম্পাসে সেন্সলেস হয়েছিলে, শুভ্র তোমাকে দেখে বাড়িতে নিয়ে এসেছে, রাস্তা ঘাটে দেখে শুনে চলবে। তুমি ভুলে যেওনা যে কিছু হোকবা না হোক তুমি শিকদার বাড়ির মেয়ে, এখন তুমি বড় হয়েছো, আমাদের শত্রুর অভাব নেই, এভাবে শরির খারাপ করলে যে কেউ তোমার ক্ষতি করবে।
আজকে ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই রেহেনা আর লাবনির সঙ্গে গিয়ে মেডিসিন নিয়ে এসো।
আহ্ ছোট তুই মেয়েটার উপর চেচাচ্ছিস কেনো আর ওকে এখন একা ছারা উচিত, বড় হয়েছে তো।
হ্যা বাবা ওকে একা ছেরে দাও আর ও সেই সুযোগে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসুক তাইনা।
সিড়ির কাছে পরিচিত গলা শুনেই পিছনে তাকিয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় তরীর, জমের মতো ভয় পায় শুভ্র কে তরী,কিছুটা অবাকও হয়। কারন এই সময় বাড়িতে থাকার কথা নয় শুভ্রর।
একটা টাউজার আর গেন্জি পড়ে সিড়ি বেয়ে নামছে শুভ্র,
শুভ্রকে দেখেই ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়ে যায় তরীর,,,,,
চলবে,,,,,