#মেঘবদল
লেখক – এ রহমান
পর্ব ২৪
ছাদের এক কোণায় ঈশা দাড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। অস্থির ভাবে দৃষ্টি এদিক সেদিক ফেলছে। মনে মনে ভয়ে সিটিয়ে যাচ্ছে। মস্তিষ্কে একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে আশেপাশে কোথাও নদী নেই তাই বুঝি ছাদে এনেছে। ছাদ থেকে ফেলে দিতে। শুকনো ঢোক গিলে চোখ তুলে ইভান এর দিকে তাকাল। ইভান খুব শান্ত ভাবে রেলিংয়ে ভর দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা চোখ ছোট ছোট করে তাকাল তার মুখের দিকে। বোঝার চেষ্টা করলো রাগের মাত্রা কতোটুকু। কিন্তু বুঝতে পারলো না। মনেও হচ্ছে না যে ইভান রাগ করে আছে। তাহলে কেনো এখানে নিয়ে এলো। ঈশার এখন অসহ্য লাগছে। তাই সাহস সঞ্চয় করে বলল
— নিচে সবাই আছে। আর আমরা এখানে।
ইভান উত্তর দিলো না। আগের মতই স্থির দাড়িয়ে থাকলো। ঈশা ভ্রু কুচকে তাকাল। এসব কারণেই ইভান কে তার বিরক্ত লাগে। কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারেনা। ঈশা আবারও বলল
— অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।
ইভান ঘুরে তাকাল। গম্ভীর সরে বলল
— তাতে কি? বিয়ে কি তোর নাকি?
ঈশা কোন কথা বলল না। আবার মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকাল। বিরক্ত লাগছে খুব তার। নিচে পুরো মনটাই পড়ে আছে তার। কিন্তু ইভান তাকে আটকে রেখেছে এখানে। চোখ বন্ধ করে ফেললো। খানিকবাদে হালকা স্পর্শে চোখ খুলে ফেললো সে। চোখ খুলতেই ঈশা কেপে উঠলো। ইভান কাছাকাছি এসেছে তার। একটু পিছিয়ে গেলো। ইভান এগিয়ে গেলো তার দিকে। দৃষ্টি ঈশার উপরে স্থির। তার অসস্তি লাগছে। বুঝতে পারছে না ইভান কি করতে চাচ্ছে। ইভান আরো কাছাকছি আসতেই ঈশা পিছিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু ইভান কোমর ধরে ফেললো তার। ঈশা কেপে উঠলো। ইভান তার কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল
— খুব সুন্দর লাগছে জান।
ঈশা চোখ খুলে ফেললো। ইভান এর চোখের দিকে তাকাল। কিন্তু মুহূর্তেই ভেতরে এলোমেলো অনুভূতি শুরু হয়ে গেলো। ইভান মৃদু হেসে বলল
— ভালবাসিস আমাকে?
ঈশা চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইভান আবারও বলল
— যখন থেকে ভালোবাসা বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই এই মেয়েটা আমার সবটা দখল করে নিয়েছে। এই মেয়েটাকে ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারি না।
পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকাল ঈশা। ইভান এর কথা বুঝতে পারলেও মাথায় ঢুকছে না এই মুহূর্তে। ইভান আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিতেই ঈশা দূরে সরে গেলো। তার চোখ ছলছল করছে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল চোখের পানি। ঈশা কাপা কাপা কণ্ঠে বলল
— এতদিন আমি প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পেয়েছি। দম বন্ধ হয়ে আসতো আমার। মাঝে মাঝে মনে হতো তোমাকে ভালোবাসাটাই আমার জীবনের শাস্তি হয়ে গেছে। তুমি আমাকে এতদিন ইচ্ছা করে কষ্ট দিয়েছ। তোমার কাছে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য আমি দিনের পর দিন অপেক্ষা করেছি। কিন্তু তুমি আমাকে এড়িয়ে গেছো। তুমি জানতে আমি তোমাকে ভালোবাসি তবুও কিছুই বল নি।
ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
— তোর বাবা আমাদের এই সমপর্কটা ভালো ভাবে নেয়নি। মা যখন আমাদের বিয়ের কথা বলেছিল তখন সবাই সম্মতি জানালেও তোর বাবা কোন কথা বলেনি। আর সেদিন আমি রেস্টুরেন্টে তোকে ডেকেছিলাম সেটা বলতেই। কিন্তু তার আগেই তুই বলে দিয়েছিলি যে বিয়ে করতে পারবি না। সেদিন কারণটা না জানলেও পরে জানতে পারি যে তনুর কারণেই তুই বিয়েটা করতে চাস নি। আমি সে বিষয়টাকে গুরুত্ব দেইনি ঠিকই কিন্তু তোর বাবার কারণেই দূরে থাকার চেষ্টা করেছি।
ঈশা কৌতূহলী চোখে প্রশ্ন করলো
— কেনো বাবার তোমার উপরে এতো রাগ?
ইভান অপরাধীর মতো বলল
— রাগ না। তার আমার উপরে অভিমান ছিল। বাবার সাথে আমার মতের বিরোধ নিয়েই তোর বাবা আমার উপরে অসন্তুষ্ট। আমি নিজের মত ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবতে শুরু করেছিলাম সেটাই কারো ভালো লাগেনি। কারণ কেউ চায় না আমি দেশের বাইরে যাই। আর তোর বাবার বড় চিন্তার কারণ ছিল সে মেয়েকে এতো দূরে যেতে দেবে না। তাই বিয়েতে আপত্তি ছিল তার। কিন্তু যখন..।
ইভান থেমে গেলো। ঈশা বেশ মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল। থেমে যাওয়ায় ভ্রু কুঁচকে এলো তার। বলল
— যখন কি?
ইভান অমায়িক হাসলো। ঈশার চোখে চোখ রেখে বলল
— তোর বাবাকে যখন কথা দিয়েছি যে আমি সব দায়িত্ব নেবো। আর কোথাও যাবো না। তখন সব দায়িত্বের সাথে নিজের মেয়ের দায়িত্বটাও আমার হাতে তুলে দিয়েছে।
ঈশা গোল গোল চোখে তাকাল। এতো কিছু হয়ে গেলো আর সে কিছুই জানতে পারলো না। কেউ তাকে বলে নি। ইভান উল্টা দিকে ঘুরে দাড়ালো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল
— এতদিন আমি সার্থপরের মত শুধু নিজের কথা ভেবেছি। কখনো ভাবিনি বাবা অসুস্থ। এক মাত্র ছেলে হিসেবে বাবা মায়ের দেখাশোনা আমাকে করতে হবে। বাবা আমার জন্য জীবনে অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন। তোর বাবা আমাকে সবটা না বললে হয়তো আমি কোনদিন উপলব্ধি করতে পারতাম না। নিজের কথা ভেবেই এগিয়ে যেতাম। তোর বাবা আমাকে খুব ভালোভাবে বুঝে দিয়েছে আমি ভুল ছিলাম। তবে জানিস আমি ভেবে নিয়েছি বাবা এতদিন অনেক কষ্ট করেছে এখন আর বাবাকে কষ্ট করতে দেবো না। সব দায়িত্ব আমি নেবো।
ঈশা ইভান পাশে এসে দাড়ালো। ইভান পাশ ফিরে ঈশার দিকে তাকিয়ে হাসলো। হাসির কারণ বুঝতে না পেরে ঈশা সরু চোখে তাকাল। ইভান বলল
— এতো তাড়াতাড়ি ভাইয়ার বিয়েটা কেনো ঠিক করলো তুই জানিস?
ঈশা মাথা নাড়লো। সে জানে না। ইভান বলল
— তোর বাবা আর বেশিদিন তোর দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই।
ঈশা হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকাল। বলল
— মানে?
ইভান হেসে ফেললো। বলল
— তোকে খুব তাড়াতাড়ি আমার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভাইয়ার বিয়ে শেষ হলেই আমাদের বিয়েটা হবে।
ঈশা তৎক্ষণাৎ চোখ নামিয়ে ফেললো। বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেছে। তীব্র ভালোলাগা কাজ করছে।
ইভান ঈশার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে বলল
— ভালোবাসি পাখি। খুব বেশি ভালোবাসি। বউ হবি আমার?
ঈশা ইভান কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। এতদিনের সমস্ত অভিমান কষ্ট সব কিছু নিশেষ হয়ে গেলো। সব কিছুর উর্ধ্বে আজ ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।
————-
হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো বেশ রাতে। অনেক মজা করেছে সবাই মিলে। এখন খুব টায়ার্ড। ফারিয়ার মাথা ধরেছে খুব। এক কাপ চা খেলে ভালো হতো। ভাবলো চেঞ্জ করে তারপর চা বানাবে। জারিফ ওয়াশ রুমে। ফারিয়া আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে খোঁপা থেকে ফুল খোলার চেষ্টা করছে। কিন্তু চুলে আটকে গেছে। কিছুতেই খুলতে পারছে না। টানাটানি করছে। জারিফ ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখে ফারিয়া চুল ধরে টানাটানি করছে। সে এগিয়ে এসে ফারিয়ার পিছনে দাড়ালো। হাতের উপরে হাত রাখতেই ফারিয়া চমকে তাকাল আয়নায়। জারিফ ফুলগুলো খুলছে সেদিকে তাকিয়ে। ফারিয়া হাত নামিয়ে নিলো। জারিফ ফুল গুলো খুলে গলা থেকে মালাটা খুলে দিতে গেলেই তার শীতল হাতের স্পর্শ ফারিয়ার গলায় লাগতেই কেপে উঠলো। নিশ্বাস ভারী হয়ে এলো। জারিফ মালাটা খুলে পুরো খোপাটা খুলে দিলো। ফারিয়া চোখ বন্ধ করে ফেলেছে। জারিফ সেদিকে খেয়াল না করেই কানের দুল খুলতে হাত বাড়াতেই ফারিয়া চোখ মেলে তাকাল। কাপা কাপা গলায় বলল
— আমার একটা কাজ আছে। আমি আসছি।
বলে যেতে নিলেই জারিফ আটকে দিলো। হাত ধরে টেনে আবার আগের জায়গাতেই দাড় করিয়ে দিয়ে কানের দুল গুলো খুলতে খুলতে বলল
— তোমার এখন কোন কাজ নেই। শুধু শুধু মিথ্যা বলছো।
ফারিয়া কোন কথা বলতে পারলো না। এলোমেলো অনুভূতির আঘাতে সে অতিষ্ট হয়ে গেছে। জারিফ কানের দুল খুলে রেখে দিল। তারপর শাড়ির আচলের পিন খুলতে গেলে ফারিয়া হাত দিয়ে আটকে দিয়ে বলল
— আমি পারবো।
জারিফ ছেড়ে দিল। আয়নায় ফারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
— আমি জানি।
ফারিয়া একবার জারিফের দিকে তাকিয়ে পা বাড়াতেই জারিফ গম্ভীর গলায় বলল
— তুমি কি কোন কারণে আমাকে ইগনোর করছো?
ফারিয়া দাড়িয়ে গেলো। ঘুরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলল
— না না। ইগনোর করবো কেনো?
— তাহলে কি করছো একটু বুঝিয়ে বলবে? আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু বুঝতে চাই।
ফারিয়া চোখ নামিয়ে নিলো। মৃদু সরে বলল
— কিছু না।
জারিফ বিছানায় বসে পড়লো। মাথা এলিয়ে দিয়ে বলল
— আজকে একটা মেয়ে দেখেছি অনেক সুন্দরী। এখনো তার চেহারাটা চোখে ভাসছে।
ফারিয়া সরু চোখে তাকাল। বলল
— মানে?
জারিফ খুব সহজ ভাবে বলল
— বাংলায় বলেছি। একটা সুন্দরী মেয়ে দেখেছি। এখনো মনে হচ্ছে সেই মেয়েটাকেই দেখছি। অদ্ভুত সুন্দর। তুমি দেখলে তোমারও চোখ আটকে যেতো।
ফারিয়া হুট করেই রেগে গেলো। এগিয়ে এসে কোমরে হাত দিয়ে বলল
— কোথায় দেখেছো? আর কোন মেয়ে?
জারিফ ক্ষীণ হেসে বলল
— বসো পুরোটা বলছি। শুধু মেয়ে কেনো আর কি কি দেখেছি সবটা বলবো ইন ডিটেইল।
ফারিয়া রেগে গেলো। ঝাঁঝালো গলায় বলল
— তোমার লজ্জা করছে না আমাকে এসব বলতে?
জারিফ এমন ভাব করলো যেন ফারিয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। অবাক ভঙ্গিতে বলল
— তোমাকে বলতে কেনো লজ্জা করবে? তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমাকে বলবো না তো কাকে বলবো।
ফারিয়া বসে পড়লো। রাগী সরে বলল
— বেস্ট ফ্রেন্ড আগে ছিলাম এখন আমি তোমার বউ। আমাকে রেখে অন্য কাউকে দেখা টা তোমার জন্য পাপ।
জারিফ ঠোঁট চেপে হেসে বলল
— আমি কখন বললাম অন্য কাউকে দেখেছি। বলেছি মেয়ে দেখেছি। আর এমনিতেও আমার বউটাকেই জতো সুন্দর লাগছিলো। অন্য কারো দিকে দেখার সুযোগই হয়নি। পুরো প্রোগ্রামে আমার চোখ তো এক জায়গাতেই আটকে ছিলো। চোখ ফেরাতেই পারিনি।
ফারিয়া পিটপিট করে তাকালো। জারিফের কথা মাথায় ঢুকতেই সে উঠে দাড়ালো। যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জারিফ হাত ধরে টেনে কোলে বসিয়ে নিল। ফারিয়া হতভম্ভ হয়ে গেলো। জারিফ কোমর ধরে আরো কাছে টেনে নিয়ে বলল
— এতক্ষণ দুর থেকে দেখছিলাম। এবার কাছ থেকে দেখতে চাই। মন ভরে।
ফারিয়া শুকনো ঢোক গিলে উঠে দাঁড়াতে চাইলে জারিফ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অনেক টা কাছে এসে বলল
— আজ আফসোস হচ্ছে জানো নিজের জেদ বজায় রাখতে গিয়ে মনের অনুভূতি টা মনেই চেপে রেখেছিলাম। এতদিন জেদ না করলে তোমার কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো না। আমি আর দূরে থাকতে চাই না ফারিয়া। আমার তোমাকে চাই। শুধু তোমাকে। ভালোবাসি ফারিয়া।
ফারিয়া পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকাল। লজ্জা সংকোচ সব কিছু ছাপিয়ে আজ সুপ্ত ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ যেন এক সুখের মুহূর্ত। পরম পাওয়া।
————–
ওয়াশ রুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে এলো মৃন্ময়ী। পরনের হলুদ শাড়িটা খুলে অন্য কাপড় পরবে সে। আলমারি থেকে কাপড় বের করতেই ফোন বেজে উঠলো। নাহিদের নাম্বার দেখে ঘাবড়ে গেল। কাল বিয়ে আর আজ কেনো নাহিদ ফোন করছে। কোন জরুরি কাজ আছে নাকি? কাপা কাপা হাতে ফোনটা তুলতেই নাহিদ বলল
— মৃন্ময়ী একবার নিচে আসবে?
মৃন্ময়ী হতবাক হয়ে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকাল। রাত ১১ টা। এতো রাতে নিচে কেনো। আর কাল তো বিয়ে। তাহলে কেনো এখন ডাকছে। মৃন্ময়ী কে চুপ করে থাকতে দেখে নাহিদ আবার বলল
— কি হলো আসবে?
মৃন্ময়ী চোখ পিটপিট করে বলল
— আসছি।
ঘর থেকে বের হয়ে দেখলো সবাই ব্যস্ত নিজের কাজে। সবার চোখ থেকে নিজেকে আড়াল করে বের হয়ে গেলো বাইরে। বাড়ি থেকে বের হতেই দেখে নাহিদ রাস্তায় দাড়িয়ে আছে। হলুদ পাঞ্জাবী তার পরনে। গালে হলুদ এখনো লেগেই আছে। হাত মুখটাও ঠিক মত ধোয়নি। মৃন্ময়ী এগিয়ে গিয়ে কৌতূহলী কণ্ঠে বলল
— আপনি এখানে? সব ঠিক আছে তো?
নাহিদ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। বলল
— সব ঠিক আছে।
মৃন্ময়ীর মস্তিষ্ক নাহিদের কথা ধরতে পারলো না। সব ঠিক আছে তাহলে এত রাতে কেনো। নাহিদ হাত বাড়িয়ে মৃন্ময়ীর গালে হলুদ ছুঁয়ে দিয়ে বলল
— তোমাকে হলুদ ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছা করছিলো খুব। তাই ভাবলাম এখনই চলে আসি। তুমি বিরক্ত হওনি তো?
মৃন্ময়ী হেসে ফেললো। বলল
— এতো রাতে আসার দরকার ছিলো না নাহিদ সাহেব। কাল তো..।
বলেই থেমে গেলো। নাহিদ বলল
— জানি কাল বিয়ে। কিন্তু হলুদ তো আজ। কাল তো আর হলুদ ছুঁয়ে দিতে পারতাম না।
মৃন্ময়ী এবার শব্দ করে হাসলো। রাতের বেলায় তার হাসির শব্দ যেনো ঝঙ্কার তুললো। নাহিদ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়ী হাসি থামিয়ে দিল। মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেলো। নিচের দিকে তাকাল। নাহিদ বুঝতে পেরে বলল
— কি হয়েছে মৃন্ময়ী? কি নিয়ে মন খারাপ করছো?
মৃন্ময়ী ছলছল চোখে তাকাল। বলল
— আচ্ছা সেদিন যদি আমার সাথে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেত তাহলে কি আপনি আমাকে মেনে নিতেন?
নাহিদ প্রথমে অবাক হলেও পরে মৃদু হাসলো। বলল
— প্রতিটা সম্পর্কের শুরুটা বন্ধুত্ব থেকে হয় মৃন্ময়ী। তোমার বন্ধু সুলভ আচরণ আমার বেশ ভালো লেগেছে। আর সব থেকে যেটা মন কেড়েছে তোমার সততা। তুমি আমাকে যদি বলতে যে সেদিনের ঘটনায় তুমি তোমার সম্ভ্রম হারিয়েছ। তবুও আমি তোমাকেই বিয়ে করতাম। কারণ কতজন এমন নির্দ্বিধায় নিজের ক্ষতির কথা নিজ মুখে বলতে পারে। তাছাড়াও সেখানে তোমার তো কোন দোষ ছিলো না। তাহলে কেনো আমি তোমাকে অপরাধীর গড়ায় দাড় করাব।
মৃন্ময়ী কান্নায় ভেংগে পড়লো। নাহিদ তাকে বুকে আগলে নিয়ে বলল
— ভুলে যাও মৃন্ময়ী। পুরাতন সব কথা ভুলে যাও। কাল থেকে তোমার নতুন জীবনের সূচনা হতে যাচ্ছে। সেটার জন্য প্রস্তুত হও। বাকি জীবনটা তোমাকে এই নতুন পরিচয় বহন করতে হবে।
মৃন্ময়ী নাহিদের বুকে মাথা রেখেই বলল
— এই পরিচয় বহন করতে আমি প্রস্তুত। এই পরিচয় শুধু আমার অহংকার হবে না আমি এই পরিচয়ের অধিকারী হয়ে গর্বিত।
চলবে…….