মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-৩৯ এবং শেষ পর্ব

0
466

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৩৯) [ সমাপ্তি পাতা ]

অনুভবের বলা কথা গুলো একেবারেই বুঝল না সায়রা। ছেলেটা হুট করেই এতটা খোলামেলা হলো কেন? এই ভাবনাটি সেদিন রাতে ঘুমাতে দিল না সায়রাকে। তবে সকাল হতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেল। জুহাদের ছোট ভাই আছে। নাম জাবেদ। ছেলেটা তুখোড় মেধাবী। আর এই মেধার পেছনেই নিজের জীবনের বত্রিশটি বছর শেষ করেছে। অথচ বিয়ের ব্যাপারে একেবারেই আগ্রহ ছিল না। কিছু দিন হলো সে ঘর মুখী হয়েছে। শুধু ঘরমুখীই নয়, একেবারে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে। আর তার পছন্দের তালিকায় সবার ওপরে সায়রার নামটি ওঠে এসেছে। সবটা বুঝে সায়রার মাথাটা খোলসা হওয়ার উপক্রম। ছেলেটা সব সময় চুপচাপ স্বভাবের ছিল। তাই ওদের তেমন কথাও হয় নি কখনো। দুজন এখন ছাদে অবস্থান করছে। জাবেদকে দেখলেই বোঝা যায় ছেলেটা কতটা নম্র স্বভাবের। এই যে এখন, সায়রার পাশে দাঁড়িয়ে। অথচ চোখ তুলে দেখছে না একবার ও। সময় অনেকটা চলে যাওয়ায় সায়রা বলল,”আপনার সাথে আমার সেভাবে পরিচয় নেই। শুধু জানতাম ভাবির ভাই। যে পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই বুঝে না।”

জাবেদ শুরুতেই উত্তর করল না। বরং কিছুটা সময় নিয়ে বলল,”ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম। নানান বাঁধা থাকা সত্ত্বেও বার বার প্রমাণ করেছি নিজেকে। পড়াশোনা শেষ করে বি সি এস দিয়েছি। প্রথম বারেই সেরাদের কাতারে ওঠে এসেছি। সব মিলিয়ে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় হয়ে ওঠে নি। তাই কখনো আমাদের সেভাবে কথা হয় নি।”

“কিন্তু আমাকেই কেন পছন্দ?”

“পছন্দের জন্য কোনো বিশেষ কারণ থাকতে হয় কি?”

এহেন প্রশ্নের কারণে থমকে যায় সায়রা। বাতাসে তার চুল গুলো ওড়ে যাচ্ছে। জাবেদ ফের বলে,”আমার বোনের ননদ আপনি। সংগত কারণেই আমাদের সেভাবে কথা বার্তা হয় নি। তাই চেনা জানা টা হয়তো কম। তবে আপনাকে আমি অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করেছি।”

“কেমন?”

“বিশেষ ভাবে নয়,তবে আপনার আচরণ গুলো খেয়াল করতাম। চালচলন দেখেছি। সেক্রিফাইজ, কথা বলার ধরন সব কিছু মনে প্রভাব রাখার মতন।”

সায়রার মাথা ব্যথা করছে। ও জাবেদের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারছে না। কথা ঘুরিয়ে বলল,”চলুন নিচে যাই। প্রচণ্ড রোদ আজ।”

সায়রা নিজ ঘরে তো ফিরল তবে শান্তি পাচ্ছে না। বাড়ির সবাই মোটামুটি রাজি। ও বাড়ি থেকেও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে। সব মিলিয়ে মাথা কাজ করছে না। কীভাবে সামাল দিবে সব এটাই বুঝতে পারছে না ও। সেদিন পুরো সকালটা নিজ ঘরে পার করল ও। দুপুরের দিকে জুথি এসে দরজায় নক করল। দরজা খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করল।

“তোর কী শরীর খারাপ লাগছে?”

মেয়েটার মাথায় হাত দিয়ে কথাটা বলল জুথি। সায়রা জবাব না দিয়ে চেয়ে রইল।

“হ্যাঁ রে সায়রা। তোর আবার কী হলো বল তো। সব ঠিক আছে বোন?”

“কিছু হয় নি ভাবি।”

“জাবেদের বিষয়ে ভেবেছিস?”

“আপাতত না।”

“কেন?”

“আমার ভালো লাগছে না কিছু।”

“তুই কি বিয়ে করবি না আর কখনো?”

“জানি না ভাবি। আমার ভালো লাগে না কিছু।”

সায়রা ধপ করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল। জুথি ওর পায়ের কাছটায় বসল।

“জাবেদ কিন্তু অন্যদের তুলনায় ভীষণ ভালো। নিজের ভাই দেখে প্রশংসা করছি এমন নয়। ওকে ভেতর থেকে চিনলে, না করতে পারবি না।”

সায়রা এবার ও জবাব দিল না। জুথিই বলতে লাগল,”ভাইটা আমার বিয়ে করে নি শুধু তোর জন্য। শুরু থেকেই ওর বিষয় গুলো বুঝতে পারতাম। তবে বলার মতন পরিস্থিতি, সাহস ছিল না। তোর ওপর দিয়ে কম ঝড় তো গেল না। আমিরার নামে প্রপার্টির অংশ থাকায় বাহাদুর ভাই যা যা করলেন…. এই অবধি বলে থামল জুথি। খেয়াল করে দেখল সায়রার তেমন একটা মনোযোগ নেই।

“এই সায়রা।”

ধাক্কা পেয়ে মনোযোগ ফিরল সায়রার। ওঠে বসল। তারপর হাঁটুতে মুখ ঠেকিয়ে বলল,”জীবন এত অসহনীয় কেন ভাবি?”

“তুই এখনো সাঈদ কে নিয়ে ভাবিস?”

সাঈদ নামটা শুনে সায়রার ভেতর থেকে কোনো উত্তেজনা এল না। ছেলেটার প্রতি ওর অনুভূতি’রা আর ডানা মেলতে চায় না। সে নিশ্চয়ই বউ, সংসার নিয়ে ভালো আছে। থাকার ই কথা। এত গুলো বছর পার হলো। সায়রার মনে এখন অন্য চিন্তা। ওর মস্তিষ্ক বড়ো দোটানায় ভুগছে। কোনটা ঠিক হবে আর কোনটা ভুল হবে,কিছুই যেন খেয়াল হচ্ছে না।

বিয়েটা সায়রার মতামতের জন্য আটকে গেল। ও সময় চেয়েছে। দেওয়া ও হয়েছে। সবাই আজ বিদায় নিবে। জাবেদের মুখটা শুকনো। চোখে ব্যথা। সায়রার বুকটা হু হু করে ওঠল। ছেলেটার দৃষ্টি অনেক কিছু বোঝাতে চাইল। তবে সায়রা সেসব বুঝেও না বোঝার ভান করে রইল। সবাই যখন চলে গেল, সায়রা এল নিজ ঘরে। এসে ঘুমিয়ে নিল। ঘুম ভাঙল একদম বিকেল চারটায়। মেজাজ তখন অনেকটাই ফুরফুরে। আমিরা এসে চা দিয়ে গেল। তারপর শুধাল,”কোথাও যাবে মিমি?”

“বইয়ের দোকানে।”

“তুমি আবার কবে থেকে বই পড়া শুরু করলে?”

জবাবে কিছুটা হাসির দেখা মিলল সায়রার অধরে। আমিরা মিমির দিকে কিছু সময় চেয়ে থেকে চলে গেল। এই নারীটিকে বোঝা তার কর্ম নয়।

অনুভব তখন নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। বিষণ্নতা মেখে আছে মুখশ্রীতে। ক্ষণে ক্ষণে বুকের ভেতর থেকে তপ্ততা নামছে। ও মন ভরে সমীরণ টেনে নিল। দেখল কলিং বেজে চলেছে। বাসায় আজ কেউ নেই। ও একা। দরজা খুলতেই দেখতে পেল পার্সেল এসেছে। অনুভব ভীষণ অবাক হয়ে পার্সেল রিসিভ করল। রুমে এসে কিছু সময় তাকিয়ে রইল। নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই। আগ্রহ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। অনুভব চটপট প্যাকেটটা খুলে নিল। দেখল একটি উপন্যাসের বই। আর তার থেকেও বেশি অবাক হলো চিরকুট পেয়ে। চিরকুটে লেখা,’ঋণ শোধ করতে হয় অনুভব। তাই তোমার ঋণ শোধ করতে পাঠালাম।’

অনুভবের চোয়াল ভাঙার উপক্রম। সায়রা তাকে বই পাঠিয়েছে! ঋণ শোধার করার জন্য। ওর চোখ, মুখ আঁধারে ডুবে গেল। তৎক্ষণাৎ কল করল। রিসিভ হলো এক সেকেন্ডেই।

“এ কেমন ঋণ শোধ সায়রা?”

সায়রা এক গাল হেসে বলল,”ঋণ শোধ হওয়ায় খুশি হও নি?”

অনুভব জবাব না দিয়ে চুপ করে রইল। এই মেয়েটাকে বুঝতে পারে না ও।

“এখন রাখছি অনুভব।”

“এমন ভাবে বলছ, যেন পরে আবার কল করবে।”

“কেন, পরে কল করলে খুশি হবে না?”

“তুমি বিয়েটা করে নিবে তাই না?”

পাল্টা প্রশ্ন পেয়ে সায়রা অবাক হলো না। ছেলেটার ভেতরে এখন ঝড় চলছে। সে জেনেছে জাবেদের সাথে সায়রার বিয়ের কথা চলছে।

“এত জেনে কী করবে অনুভব? তার থেকে বরং বই পড়ো। বইমেলা থেকে তুমি আমায় বই কিনে দিয়েছিল। ঋণের বোঝাটা বইতে পারছিলাম না আর।”

ঠিক তারপর ই কল টা কেটে গেল। অনুভব ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। সত্যি বলতে ওর কান্না পাচ্ছে। হাউমাউ করে কাঁদতে পারলে ভালো লাগত। এই মেয়েটা এত য ন্ত্র ণা দিল ওকে।

দুদিন পর সায়রার নাম্বার থেকে কল এল। অনুভব তখন উদাস দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। সে একেবারে দেবদাস হয়ে গেল। কলটি রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে সায়রা বলল,”তুমি একদম ই বদলাও নি অনুভব। একদম ই বদলাও নি। বইটা এখনো দেখো নি তাই না?”

অনুভব জবাব দিতে পারল না। এই বইটা দেখানোর জন্য সায়রা এমন কেন করছে? ও প্রশ্ন করতে যাচ্ছিল। তবে কলটি কেটে গেল। অনুভব দু বার কল করল। তবে সায়রা কেটে দিল। ও বুঝতে পারল, আর কল করে লাভ নেই।

তারপরের দুটো দিন অনুভবের জন্য সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জিং হলো। সে বইটা খুলেছে, দেখেছে। তবে আহামরি কিছু তো বুঝতে পারে নি। আর এই না বুঝতে পেরে ছেলেটার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেল। সে এখন কফি শপে বসে আছে। আর বই নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে সায়েম। সে গভীর মনোযোগ দিয়ে বইটি দেখে বলল,”স্যার, ম্যাডাম আর কোনো ক্লু দেয় নি?”

“না।”

“কোনো ক্লু না?”

“না সায়েম। কোনো ক্লু দেয় নি।”

“ব্যাপারটা জটিল।”

“অনেকবেশি জটিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

অনুভব মাথা চেপে ধরল। কপি আসতেই সায়েম বলল,”স্যার কফি খান। মাথা ঠান্ডা হবে।”

“হট কফিতে মাথা ঠান্ডা হয় সায়েম?”

“উফস,সরি স্যার। আমি কোল্ড কফি আনতে বলি।”

“দরকার নেই।”

অনুভব কফি কাপ তুলে নিল। এক চুমুক দিয়ে বইটার দিকে তাকাল। সায়েম হুট করেই চেচিয়ে ওঠল।

“আমার মাথায় একটা বিষয় এসেছে স্যার।”

“কী?”

“আমার মনে হয় ম্যাডাম আপনাকে তার বিয়ের দাওয়াত দিয়েছে।”

অনুভব চোখ ছোট করে চাইল। সায়েম বলতে লাগল,”আপনি তো বললেন জাবেদ নামের ছেলেটার সাথে ম্যাডামের বিয়ের কথা চলছে। ম্যাডাম তো অন্যদের থেকে আলাদা। তাই আপনাকে বিয়ের কার্ড না দিয়ে একেবারে বই পাঠিয়েছে। বইয়ের ওপরের অংশটি দেখুন, একটি ছেলে আর মেয়ে বসে আছে। আমি সিওর ম্যাডাম এভাবেই আপনাকে তার বিয়ের দাওয়াত পাঠিয়েছে।”

সায়েমের কথা শুনে অনুভবের ইচ্ছে করল ছেলেটার মাথা ফাটিয়ে দিতে। ইদানীং এত বেশি ফানি কথা বার্তা বলে!

“স্যার, আপনি বিশ্বাস করলেন না?”

“তুমি চুপ করো সায়েম। চুপ করো একটু।”

সায়েম চুপ করে রইল। অনুভব ভাবতে লাগল। একটা বই দিয়ে কি এমন বোঝানো যেতে পারে?

সপ্তাহ গেলেও বইয়ের রহস্য উন্মোচন করতে পারল না অনুভব। ছেলেটা যেন শুকাতে শুরু করেছে। তখন বিকেল বেলা। সায়রার নাম্বার থেকে কল এল। অনুভব নিজের বাসার ছাদে দাঁড়িয়ে।

“কোথায় তুমি?”

“ছাদে।”

“নিচে আসো।”

“কেন?”

“আসতে বলেছি। দরকার আছে।”

“বিয়ের দাওয়াত দিবে সায়রা? যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে প্লিজ আমায় যেতে বলো না। আমি কেঁদে ফেলতে পারি।”

সায়রার ইচ্ছে করল অনুভবের কানটা ধরে নিচে নামিয়ে নিতে। এ ছেলে, কেমন কথা বলছে! ও দাঁত চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”এখনই নিচে আসবে তুমি। আমি পাশের মাঠে আছি।”

অনুভব মাঠের কাছে আসতেই সায়রাকে দেখতে পেল। মেয়েটা সাদা রঙের পোশাক পরেছে। তাকে শুভ্র পরির মতন লাগছে। ওর খুব কান্না পেল। কেঁদে কেঁদে বলতে ইচ্ছে করল,’শুভ্র পরি কেন তুমি আমার হলে না। একটু আমার হয়েই দেখো না। প্লিজ শুভ্র পরি, একটু ভালোবাসা দাও।’ কি সব উল্টোপাল্টা ভাবছে অনুভব! ওর আসলেই মাথার ঠিক নেই। সায়রা দেখল বিড়াল পায়ে আসছে অনুভব। চেহারায় মলিনতার দেখা মিলছে। তবে ছেলেটার মধ্যে অন্য রকম সৌন্দর্য তখনো বিরাজমান। অধিক লম্বা হওয়ায় কেমন একটা ফিল হচ্ছে। সায়রা নিজ থেকেই এগিয়ে এল। একদম বরাবর এসে দাঁড়াল। এদিকে অনুভবের চোখ যেন মৃত। কেমন তার দৃষ্টি।

“বইটা দেখেছিলে?”

“কোন বই সায়রা? আমার তো কোনো বইয়ের কথা মনে আসছে না।”

“স্বাভাবিক ভাবে কথা বলো অনুভব। এমন পাগল পাগল ভাব নিও না প্লিজ।”

“আমি আর কখনো স্বাভাবিক হব না। তুমি বিয়ের কার্ড দিবে তো? দাও, নিয়ে যাই আমি। ঘরের মধ্যে বড়ো ফ্রেমে বন্দী করে রাখব।”

সায়রা সত্যিই অবাক হচ্ছে। এই অনুভবকে চিনতে পারছে না। ও ঠোঁট কামড়ে বলল,”বইটা দেখে কী বুঝলে?”

“কী বুঝব?”

“আমার মাথা।”

“সেটা তো তোমার সাথেই আছে। আমাকে তো দেও নি সায়রা। যদি দিতে তাহলে মাথায় তুলে রাখতাম। আমার মাথার থেকেও বেশি ওপরে থাকত তোমার মাথা।”

“উফ অনুভব!”

অনুভবের ভেতর থেকে হতাশা শ্বাস নেমে এল। আকাশ ডেকে ওঠেছে। সায়রা মাথা উঁচু করে তাকাল। যখন তখন বৃষ্টি হতে পারে। দৃষ্টি ফিরিয়ে অনুভবের দিকে চাইল।

“আমার দিকে তাকাও অনুভব।”

“তাকাতে পারব না সায়রা।”

“তাকাও।”

“পারব না। পারবা না তাকাতে। তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি নিশ্চিত অঘটন ঘটিয়ে ফেলব।”

সায়রা থেমে গেল। এ ছেলেকে এখন আসলেই পাগল মনে হচ্ছে। ও আর জোর করল না।

“বইটা দেখে কিছু অনুভব করো নি?”

“এই বইয়ের মধ্যে কী আছে? কেন বার বার বইয়ের কথা বলে যাচ্ছ।”

সায়রা চুপ করে রইল। তারপর কপট রাগ দেখিয়ে বলল,”তোমার সাথে আমার কোনো কথা নেই অনুভব। কোনো কথা নেই। বইয়ের নামটা দেখেও কিছু বুঝতে পারলে না।”

সায়রা সত্যি সত্যি রাগ দেখিয়ে চলে যাচ্ছে। অনুভব হতাশ। আকাশ ডেকে ওঠছে। দু এক বিন্দু জল এসে পড়ছে চোখে মুখে। বইটার নাম স্মরণ করল অনুভব। ‘হৃদয়ে রয়েছ গোপনে’। মনে মনে কয়েকবার ‘হৃদয়ে রয়েছ গোপনে’ উচ্চারণ করল ও। একবার, দু বার, তিনবার, এভাবে সাত বার উচ্চারণ করে থেমে গেল। সহসাই বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠল। ফট করে চোখ মেলল। বিকট গর্জন করে বৃষ্টি নেমে এল পৃথিবীর বুকে। আর তারপর, তারপর ভিজিয়ে দিল সমস্ত শরীর। অনুভব খেয়াল করল সায়রা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ও এক সেকেন্ড সময় নষ্ট করল না। ছুটে গেল বাতাসের গতিতে। মাত্রই মাঠ ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়েছিল সায়রা। অনুভবের পায়ের শব্দে ঘুরে তাকাল। বৃষ্টির জলে মেয়েটা ভিজে একাকার হয়ে গেছে। বিকেলের এই হঠাৎ বৃষ্টিতে সায়রার সৌন্দর্য যেন আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেজা ঠোঁট ভীষণ ভাবে টানছে। অনুভবের অধর প্রসারিত হলো। ছেলেটার এমন দৃষ্টিতে সায়রা বিস্মিত হয়ে পড়ল। এর থেকেও বেশি বিস্মিত হলো অনুভব যখন একদম শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বুকের মাঝে মিশিয়ে নিতে চাইল। স্বাভাবিক ভাবেই সায়রা তখন অনুভূতিহীন। আর অনুভব তখন চিৎকার করে বলল‍,”বইয়ের রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছি সায়রা। পেরেছি আমি। আই লাভ ইউ সায়রা, আই লাভ ইউ। এভাবেই হৃদয়ের গোপনে রেখে দিও প্লিজ। কথা দিলাম, তোমার প্রতিটা বিকেলের মুগ্ধতা হয়ে নামব আমি। বৃষ্টির মতন মিশে যাব। ভালোবাসায় ভালো রাখব। কথা দিলাম সায়রা, কথা দিলাম তোমায়।”

অনুভব ওমন করেই মেয়েটিকে জড়িয়ে রইল। এদিকে সায়রার দু চোখের জলের সাথে বৃষ্টির জল মিশে একাকার হয়। ছেলেটা কি জানে, কত যুদ্ধ করে সায়রা আজ নিজের অনুভূতির কথা জানিয়েছে?

~সমাপ্ত

কলমে ~ ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে