মুগ্ধতার এক বিকেল পর্ব-২+৩

0
407

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (২ +৩)

কান্না গিলে বাজার করেছে সায়রা। দু হাত ভরে গেছে জিনিসপত্রে। ও একটি রিকশায় ওঠে পড়ল। তারপর ভাবতে লাগল জীবনটি নিয়ে। সে চাইলেই সাঈদের সাথে ভালো থাকতে পারে। তবে, আমিরা, তার কি হবে? জুথি তো মেয়েটিকে দু চক্ষে সহ্য করতে পারছে না। এদিকে আমিরার বাবা মেয়েটিকে লালন করতে চায় না। সব মিলিয়ে আমিরা যেন সাগরে ভাসছে। যার কোনো কূল নেই। যদি সায়রা ওকে ভরসা না দেয়, তবে আমিরার পক্ষে বেঁচে থাকা কঠিন হবে। নানান রকমের সমস্যা তো আছেই। তাছাড়া আমিরাকে ভীষণ ভালোবাসে ও। বলা চলে নিজের সন্তানের মতন মনে করে। সাঈদ কি চাইলেই পারে না বাসায় একটু জোর দিতে? সে কী সত্যিই অতটা অসহায়। নাকি সবটা একটা ভ্রম। ওদের দুজনের সম্পর্কের টানাপোড়ন তো অনেকদিনের। বাসায় জানানোর পর থেকেই তো নানান সমস্যা হচ্ছিল। আমিরা কী কেবল একটা ইস্যু মাত্র? ও আর ভাবতে পারল না। মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। চোখ বন্ধ করতেই ভেসে ওঠল আমিরার মুখটা। মেয়েটির মাঝে নিজের বোনকে দেখতে পায় ও। সায়রা ভেবে নিয়েছে। কিছুতেই বোনের মেয়েটিকে এভাবে সাগরে ফেলে দিতে পারে না। নিজের সবটুকু দিয়ে হলেও আমিরাকে আগলে রাখতে হবে। সায়রা চোখ মুখ মুছে নিল। বার বার কান্না আসছে তার!

খাবার গুলো আগের মতই পড়ে আছে। আমিরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে। এক মাস ও হয় নি মা কে হারিয়েছে সে। সায়রা এসে যখন এই অবস্থা দেখল তখন ভ্রু কুঞ্চিত করে রইল।

“আমিরা, খাবার খাস নি কেন?”

আমিরা জবাব দিচ্ছে না। ও কোথাও হারিয়ে গেছে। সায়রা ওর পাশে এসে বসল।

“এই আমিরা।”

ঘোর কাটতেই ফিরে চাইল আমিরা। তার চোখ দুটো প্রাণহীন। বুকের ভেতর দহন অনুভব করল সায়রা। মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”কী হয়েছে?”

আমিরা জবাব দিচ্ছে না। ওর মাথাটা নত করা। সায়রা যেন মন পড়ার চেষ্টা করছে। কিছু সময় পর বলল,”মন খারাপ করে থাকলে আসলে কী কোনো লাভ হবে?”

আমিরা মাথা দোলাল। সত্যিই তো মন খারাপ করে কেউ কখনো লাভ করতে পারে নি। সায়রা মেয়েটিকে কাছে টেনে নিল। আদুরে স্পর্শে বলল,”কী? তখনকার বিষয় গুলো এখনো ধরে আছিস?”

আমিরা এবার ও চুপ। সায়রা একটা হতাশার শ্বাস ফেলল।

“কী?”

এবার আমিরার দু চোখ ভে ঙে কান্না এল। সায়রাকে জাপটে ধরে কান্নায় ভে ঙে পড়ল ও। সায়রা বিস্মিত। ও বুঝতে পারছে না কেন কান্না করছে মেয়েটি।

অনেকটা সময় পর কান্না থামল আমিরার। সায়রা ওর মুখটা হাতে তুলে বলল,”কাঁদছিস কেন?”

“মামি স্কুলে ভর্তি হতে দিবে না।”

সায়রার দু ভ্রু কুঞ্চিত হলো। কিছুদিন আগেই তো ঠিক হলো আমিরা স্কুলে ভর্তি হবে। তবে এখন কেন সিদ্ধান্ত বদল করল?

রাতের খাবারের আগে সায়রা কথাটা বলল,”আমিরাকে স্কুল ভর্তি কবে করাচ্ছ?”

বোনের কথায় দিক হারিয়ে ফেলল মারুফ। দ্বিধা খেলা করছে চোখে মুখে। সায়রা এবার জোর খাটিয়ে বলল,”কী হলো ভাইয়া? কথা কেন বলছো না? স্কুলের প্রিন্সিপালের সাথে যোগাযোগ করেছ? কী বলেছে?”

মারুফ কী বলবে বুঝতে পারছে না। জুথি এবার মুখ খুলল।

“কীভাবে পড়াবে? খরচ কত দেখেছিস? মাসে মাসে তিন হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। কোচিং খরচ, টিফিন খরচ, যাওয়া আসার খরচ। এত সব কীভাবে সামলাবে?”

সায়রার মুখশ্রী শুকিয়ে এল। ও ভাইয়ের দিকে চেয়ে রইল। মারুফ নিরুত্তর। অথার্ৎ এ ব্যাপারে তার কোনো মতামত নেই। তবু যেন অনেক কষ্টে স্ত্রীর মতামত না নিয়েই বাক্যটি উচ্চারণ করল।

“আমিরাকে আশেপাশের কোনো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিব। এতে টিফিন আর যাওয়া আসার খরচ ও লাগবে না। বেতন ও কম।”

সায়রার গলাটা ধরে এল। আমিরা আরো বেশি দামি স্কুলে পড়ে এসেছে। আর এখন কী না সাধারণ নামে মাত্র একটি স্কুলে ভর্তি হবে!

আমিরার চোখে ঘুম নেই। ও নিরলসভাবে তাকিয়ে আছে। মাথার ওপর ঘুরছে ফ্যান। গোল গোল করে। কত সুন্দর সে দৃশ্য। অথচ মানুষের এই গোলাকার জীবনটা ভীষণ অসুন্দর। ছোট মেয়েটিকে দেখে সায়রার হৃদয় কম্পিত হয়। ও তাকায় বার বার। তবে কথা বলতে পারে না।

“আমিরা শুনছিস?”

আমিরা মৃদু সুরে জবাব দেয়,”হুম।”

“মন খারাপ?”

“উহু।”

কি দারুণ ভাবে উপেক্ষা করে গেল কথাটা। সায়রার বুকটা যে আরো ভারী হলো। ও চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিল।

“চিন্তা করিস না। তুই স্কুলে পড়বি। আর মাহিম আর জুঁইয়ের স্কুলেই পড়বি।”

আমিরা যেন লাফিয়ে ওঠল। সায়রাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”সত্যি মিমি?”

মেয়েটির মুখে চুল লেপ্টে আছে। সেসব ঠিক করতে করতে সায়রা বলল,”একদম। আমি কাল ই যাব কথা বলতে।”

পরেরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়ল সায়রা। সে বড়ো মেধাবী। সারাটা জীবন স্কলারশিপ পেয়ে এসেছে। বর্তমানে পাবলিক ভার্সিটিতে পড়ছে। ভার্সিটির খরচ তো তেমন নেই। তবে যাতায়াত খাওয়া দাওয়া কিংবা হাত খরচ বলতে যে টাকাটা লাগে সেটা তো ওর ই জোগাড় করতে হয়। সেটাতেও তেমন অসুবিধা হয় না। একটা টিউশনিতেই হয়ে যায়। সংসার চলে বাবার জমাকৃত টাকার লাভ দিয়ে। তাই খাবারের চিন্তাটা করতে হয় না। আর থাকার চিন্তা ও নেই। বাবা তার সারা জীবন দিয়ে একটি বাড়ি করে গিয়েছেন। একটা টিউশনি করায় সায়রা। এতে যে টাকা আসে তাতে বেশ ভালো চলে যায় ওর। তবে এখন যে আমিরার দায়িত্ব ও নিতে হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই একজন টিউশনির জন্য জোর করছিল। প্রয়োজন নেই বিধায় টিউশনিটি নেয় নি ও। কিন্তু ভাগ্য দেখো, সেই নিজে থেকে ফিরিয়ে দেওয়া মানুষের কাছেই যেতে হচ্ছে। সায়রার বুক ভেদ করে একটি দীর্ঘশ্বাস নেমে এল। ও ঠিকানা অনুযায়ী একটি বাড়িতে পৌছাল। লিফ্টের বাটনে চাপ দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল। ও মনে মনে প্রার্থনা করছে যাতে টিউশনিটা অন্য কেউ নিয়ে না থাকে। নতুবা বড়ো সমস্যায় পড়তে হবে।

লিফ্ট খুলে গেছে, অথচ সায়রার ধ্যান নেই। ও চোখ বন্ধ করে আছে। হুট করেই একটা শব্দ কানে এল ওর। ও চমকে তাকাল। দেখল একটি ছেলে দাঁড়িয়ে।

“লিফ্টে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন কেন?”

সায়রা একটু লজ্জা পেয়ে নেমে গেল। লিফ্ট চলে গেল। সায়রা ফ্ল্যাটের দরজায় নক করল। ওর বুকের ভেতর ধীম ধীম করছে।

নাশতার টেবিল থেকে শুধুমাত্র পানিটাই নিল সায়রা। সেটা নিয়ে এক নিশ্বাসে পান করে বলল,”আপু, আপনি টিউশনির কথা বলেছিলেন। তখন আমার সময় ছিল না তাই নাকোচ করেছিলাম। এখন কী……”

সায়রা ভয়ে ভয়ে কথাটা উচ্চারণ করল। রনু হেসে বলল,”এটা তো খুশির খরব। আমি আসলে একটু বুঝদার টিচার খুঁজছিলাম। যে আমার ছেলেকে ভালো করে বুঝিয়ে পড়াবে। তোমার বেশ প্রশংসা শুনেছি।”

সায়রার বুকের ভেতর থেকে পাথর যেন নেমে এল। ও খুশিতে আর কিছুই বলল না। এমনকি বেতনের কথা ও জিজ্ঞাসা করল না। যদিও ভা ঙা মাস তবু ও রনু বলল সায়রা যেন কাল থেকেই আসে। এতে আরো বেশি তৃপ্ত হলো ও। এ কদিনের টাকাটা পেলে আমিরার ভর্তিটা করাতে পারবে।

বাড়িতে ফিরে একটি ম্যাসেজের অপেক্ষা করতে লাগল সায়রা। সাঈদ কী সত্যিই তাকে ভুলে গেছে? এই যে গতকাল রেগে কথা গুলো বলেছিল, তারপর কি সাঈদের উচিত ছিল না সায়রাকে কল করা? কিংবা একটি টেক্সট দেওয়ার। ওর খুব খারাপ লাগছে। ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছে। মানুষের জীবন এমন কেন হয়? ভালোবাসার মানুষ গুলো এত দ্রুত কেন হারায়? একটা চাপা কান্নায় ভে ঙে পড়ল সায়রা। মা হারানোর পর যেই মানুষটিকে ধরে ওরা তিন ভাই বোন বেঁচে ছিল সেই মানুষটাও কিছু মাস পূর্বে এতিম করে চলে গেল। বাবার চলে যাওয়ার পর আমেনাপু ও চলে গেল। সায়রার মনে হলো এ পৃথিবীতে সে বড়ো একা। তার কেউ নেই। এই একাকিত্ব ওকে পাগল করে দিবে। ও কাঁদতে লাগল নীরবে। ঠিক সে সময়েই আমিরা ওর পাশে এসে বসল। ও ঘুমিয়ে ছিল। ঘুম ভা ঙ তেই মিমিকে খুঁজতে খুঁজতে বারান্দায় এল। সায়রা দ্রুত চোখ মুছে বলল,”ঘুমোস নি এখনো?”

“ঘুমিয়েছিলাম। ঘুম ভা ঙা র পর তোমাকে না পেয়ে এখানে এলাম। তুমি কাঁদছ কেন মিমি?”

চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

#মুগ্ধতার_এক_বিকেল (৩)

আমিরাকে কাছে টেনে বসিয়ে দিল সায়রা। গালে স্পর্শ করে বলল,”কাঁদছি না তো।”

“মিথ্যে,আমি স্পষ্ট দেখেছি।”

“ভুল দেখেছিস।”

কথাটি বলেই সায়রা মুখ ঘুরিয়ে নিল। যেন ব্যথা লুকানোর চেষ্টা। ও দুঃখের সময় কারো চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকাতে পারে না। কেঁদে ফেলে। আমিরা ও চুপ রইল। তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। ও শুনেছিল, যারা ম রে যায় তারা আকাশের তারা হয়ে যায়। এটা মা বলত। সেটি মনে পড়ে গেল হঠাৎ। আকাশে আজ অনেক বেশি তারা দেখা যাচ্ছে। ওর মনে প্রশ্ন জাগে। এত তারার মাঝে মা কোনটা? আনমনেই ভাবতে বসে গেল আমিরা। ও আসলেই বুঝতে পারছে না মা কোনটা। হুট করেই ওর মৌনতা, মুখের কালো আঁধার সায়রার নজরে এল। সায়রা ওকে জাপটে ধরে শুধাল,”কী ভাবছিস?”

“ভাবছি, মা কোনটা। এত তারার মাঝে মা কোনটা মিমি? আমি তো বুঝতে পারছি না।”

সায়রার বুক ভে ঙে আসে। ও নিজেও এই ধরনের কথায় বিশ্বাস করে। আসলে ঠিক বিশ্বাস নয়, বরং ভাবতে ভালো লাগে। মনে হয় মানুষ গুলো আসলেই সার্বক্ষণিক সঙ্গে আছে। বেশ কিছু সময় পর সায়রার থেকে জবাব এল,”শোন, আকাশের সবথেকে উজ্জ্বল যে তারা সেটাই হলো তোর মা।”

আমিরার ঠোঁটের কোণ একুটখানি প্রসারিত হলো। ওর ছোট্ট মস্তিষ্ক যেন তৃপ্ততায় মেখে আছে। এদিকে সায়রার হৃদয় ছটফট করছে। জীবন তাকে কি এক পরীক্ষায় ফেলে দিল!

টিউশনির প্রথম দিন। সায়রা নিজের পড়ানো নিয়ে সবসময় তৃপ্ত। ও নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করে। তাই কখনো চিন্তা হয় না। রনু নাশতা দিয়ে বেশ কিছু সময় পর ছেলেকে সাথে নিয়ে ফিরল। ছেলেটার স্বাস্থ্য ভালো। চোখে চশমা লাগানো। বয়সে আমিরার থেকে কিছু ছোট হবে। ক্লাসেও ছোট। থ্রি তে পড়ে। সায়রা হাত নাড়িয়ে বলল,”তোমার নাম কী বাবু?”

ছেলেটা ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। কোনো উত্তর দিল না। সায়রা পুনরায় জিজ্ঞাসা করে ও কোনো উত্তর পেল না। রনুর চোখে মুখে অস্বস্তি।

“আসলে তোমাকে বলা হয় নি, ও কিছুটা স্পেশাল চাইল্ড।”

এ কথা বলেই রনু কেমন অস্বস্তিতে ভে ঙে পড়ল। সেটা দেখে সায়রার একটু খারাপ লাগল। তবে মুহূর্তেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত করে বলল,”এটা কোনো সমস্যা না আপু। আমি চেষ্টা করব সর্বোচ্চ।”

রনুর যেন বুকের পাথর নেমে এল। স্পেশাল চাইল্ডদের জন্য স্পেশাল স্কুল আছে। টিউটর আছে। তবে রনুর হাসবেন্ডের এই ব্যাপারে ভীষণ অমত। সে জানে তার ছেলের সমস্যাটা অনেক বেশি না। ডাক্তার ও বলেছে মানুষ জনের সাথে একটু বেশি মিশলেই ঠিক হয়ে যাবে। তবে সমস্যাটি হচ্ছিল স্কুল আর টিউটর নিয়ে। বাচ্চাটি স্পেশাল চাইল্ড শুনেই অনেকে নাকোচ করে দিচ্ছিল। যারা ও পড়াতে আসে এক দুই মাস পড়িয়েই চলে যায়। সব মিলিয়ে ভীষণ চিন্তায় যাচ্ছিল। তখনই বান্ধবীর থেকে সায়রার খোঁজ মিলে। সায়রা ও তো প্রথমবার নাকোচ করে দিয়েছিল। যখন নিজ থেকে আসল তখন উত্তেজনায় কথাটি আর বলা হয় নি।

আরহামকে পড়াতে সায়রার আসলেই কষ্ট হচ্ছে। ছেলেটা কোনো কথাই বলতে চায় না। আধা ঘন্টা চেষ্টা করে ওর মুখ থেকে নামটি বলাতে পেরেছে সায়রা। সবশেষে দু একটা শব্দ বলেছে। তবে ভে ঙে ভে ঙে। বাচ্চাটির মুখেও বেশ জড়তা। এর কারণ হতে পারে মানুষের সাথে না মেশা। রনুর থেকে জেনেছে কোনো সুস্থ বাচ্চাই আরহামের সাথে মিশতে চায় না। বাচ্চার মায়েরা চোখ মুখ আঁধার করে রাখে। আড়ালে আলোচনা সমালোচনা করে। তাদের মতে একটি বাচ্চার কারণে স্কুল নষ্ট হয়ে যাবে। কি এক আশ্চর্য ভাবনা! সবটা ভাবতেই সায়রার মন খারাপ হয়ে যায়। দরজা খুলে বের হতেই একদল ছেলের দেখা মিলল। সবার হাতে মিউজিকের নানান সরঞ্জাম। এত গুলো ছেলে দেখে থেমে রইল ও। সামনে গেল না আর। তবে ছেলে গুলো সরছেই না। তারা কথা বলছে নিজেদের মাঝে। তাদের একজন কাউকে একটা কল করে বলছে,”অনুভব তুই সব সময় এমন কেন করিস? আমরা কত সময় ধরে অপেক্ষা করছি। কোথায় তুই?”

ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি কি বলল সায়রা জানে না। তবে এপাশে থাকা ছেলেটা এবার একটু নরম সুরে বলল,”প্লিজ দ্রুত আয়।”

তারপর দু মিনিটের মতন সময় পার হলো। সায়রা ঠায় দাঁড়িয়ে। ছেলে গুলো লিফ্টের সামনে এসেই ভীড় করেছে। এত গুলো ছেলের মাঝে যেতে ইচ্ছা করছে না ওর। কিংবা অস্বস্তি হচ্ছে। ও করিডোরে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। আরো কিছু সময় পর একটি কণ্ঠ শোনা গেল,”সরি দোস্ত। তোরা শুরু করে দিতেই পারতি।”

“ফর ইউর কাইন্ড ইনফর্মেশন চিলেকোঠার চাবি তুই সাথে নিয়ে গেছিস।”

কথাটা বলতেই অনুভব নামের ছেলেটা হাসল। লম্বা চুল গুলো হাতের সাহায্যে নাড়িয়ে বলল,”উফস, মনে ছিল না। এই নে।”

পকেট থেকে চাবি বের করে বন্ধুদের দিকে ছুড়ে দিল। তারপরই এপাশে তাকাল অনুভব। সায়রার সাথে চোখাচোখি হলো ওর। একটা অস্বস্তি এসে ভর করল মেয়েটিকে। অনুভবের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাল ওর বন্ধুরাও। তবে সায়রা দ্রুত সরে যাওয়ায় অনুভব ছাড়া আর কেউ ই দেখল না মেয়েটিকে।

পর পর দুটো টিউশনি শেষ করে বাসায় ফিরল সায়রা। হাতে তার জিনিসপত্র। সব জিনিসপত্র নামিয়ে জুথিকে ডাকল।

“ভাবি, এগুলো একটু রেখে দাও তো।”

জুথি এল কিছু সময় পর। জিনিসপত্র গুলো দেখতে দেখতে বলল,”হরলিক্স কেন এনেছিস? লিস্টে তো এটা ছিল না। দাম দেখি, ৬৫০ টাকা!”

“আমার টাকা দিয়েই এনেছি।”

কথাটি বলতেই জুথির মুখে কিছুটা আঁধার ছেয়ে গেল। সে একটু আলগা সুরে বলল,”তুই কথাটা অন্যভাবে নিলি। আমি শুধু এমনিই জিজ্ঞাসা করেছি।”

সায়রা জানে জুথি কোন ভাবে বলেছে। কারণ আমিরা ছাড়া আর কেউ হরলিক্স খায় না। কোথায় কি খরচ হয়,এক একটা পয়সার হিসেব রাখে জুথি। অথচ সংসার চলে বাবার টাকাতেই। সত্যি বলতে সায়রার ইচ্ছা করে না তর্ক করতে। ও বিষয়টা এড়াতে বলল,”মাহিম আর জুঁই ফিরেছে?”

“হ্যাঁ। গোসল করছে।”

“ঠিক আছে। আমি ও তাহলে গোসল করে নিই। বুয়া কে বলো তো একটু আদা চা করে রাখতে। মাথাটা ভীষণ ধরেছে।”

কথা শেষ করে নিজের ঘরে এল সায়রা। আজ সে ফোন রেখে গিয়েছিল। সে কি এক কান্ড! ও দ্রুত ফোন চেইক করল। এক আকাশ সম আশা নিয়ে। তবে দেখল কোনো ম্যাসেজ বা কল আসে নি। ও হতাশ হলো। গোসল শেষ করে মাহিম আর জুঁইকে নিয়ে বসল।

“শোন তোরা। এটা খুবই সিক্রেট। আগে থেকে কেউ যেন না জানে।”

কথাটা বলতেই জুঁই আর মাহিমের মুখের উচ্ছ্বাস ভেসে এল। পিপির সাথে এ ধরনের রোমাঞ্চকর আলোচনায় ভীষণ আগ্রহ ওদের। সায়রা আশেপাশে দেখে বলল,”পরশু আমিরার জন্মদিন। আমরা ওকে ঠিক বারোটার সময় উইশ করব। আর কেক কাটিং ও করব।”

মাহিম আর জুঁই মাথা দোলাল। সায়রা আবার বলল,”মাহিম তোর দায়িত্ব কেক নিয়ে আসা। আর জুঁই তুই সাজানোর কাজ করবি। আমি আমিরাকে ঘরে রাখার ব্যবস্থা করব।”

“ঠিক আছে পিপি।”

তারপর ওরা হিসেব করতে বসল। অল্পবিস্তর সাজিয়ে একটা কেক আনতে গেলেও দুই হাজার টাকার মতন খরচ হবে। সায়রা টাকা দিয়ে বলল,”ভাইয়া আর ভাবিকেও বলার দরকার নেই। না হলে সব সারপ্রাইজ শেষ করে দিবে।”

সায়রা আরো কিছু বলতে নিচ্ছিল তখনই ওর মোবাইলটা বেজে ওঠল। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠল যেন। সায়রা চটপট ফোন হাতে নিল। হতাশ হলো। সাঈদ কল করে নি। কল করেছে ওর বান্ধবী অর্পা। অথচ বোকা সে ভেবেছিল মানুষটা বুঝি কল করেছে।

চলবে…..
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে