#মুখোশের_আড়ালে
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৫ (শেষ)
রবি রুমের ভিতর দিশাকে দেখে থমকে গেলো। ও কখনও কল্পনাও করেনি দিশা এই খু’ন গুলো করেছে। তাহলে কি এই জন্যেই দিশা সেদিন মিথ্যা বলেছিলো ও সাকিবকে চিনে না
শফিক আহমেদ কখনও ভাবেননি খু’নি একজন মেয়ে হবেন। আর সেটা যে রবিরই বোন হবে তা কল্পনাও করেন নি
দিশাকে থানায় আনা হয়েছে। দিশা চুপ করে আছে কিছু বলছে না। ওর ভাইয়ের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছে না। কিভাবেই বা তাকাবে এমন জ’গন্য কাজ করে
শফিক আহমেদ বললেন, তুমি এভাবে চুপ করে আছো কেনো? তুমি চুপ করে থাকলে কিছুই হবে না। আমাদের সত্যিটা বলো। কেনো এসেছিলে তুমি? তোমাকে কি কেও আসতে বাধ্য করেছিলো?
— ইরামের জন্য এসেছিলাম
— ইরাম কে? তার জন্য এসেছো কেনো?
— ইরাম আমার বয়ফ্রেন্ড। লাস্ট কিছুদিন ধরেই ওর কোনো খোজ- খবর ছিলো না। হঠাৎ একদিন কল দিয়ে বলে আমাকে বাঁ’চাও, ও আমাকে মে’রে ফেলবে। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। আমার ভাইয়াকে সব বলি
ও আপনাকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর কারও লা’শ পায়। আমাকে ছবি দেখানোর পর আমি বলি ওইটা ইরাম না।
পরে আমার মনে হলো ইরাম হয়তো ইচ্ছা করেই আমার সাথে মজা করতেছে। কারন এর আগেও ও অনেকবার এরকম করেছিলো। ওর কেনো খোজ ই পাচ্ছিলাম না। আজকে রাত ১১টার সময় একটা অপিরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে আমার কাছে
আমি কল রিসিভ করে যা শুনলাম তাতে থমকে গেলাম। আমাকে বলা হয়েছে, যদি ইরামকে বাঁ’চাতে চাও তাহলে রাত ২টায় চলে আসো। আর তোমার ভাইয়া বা পুলিশকে যদি এ সম্পর্কে কিছু বলো তাহলে ইরামকে মেরে ফেলবো
আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। কাউকে কিছু বলিনি। বাসা থেকে বের হয়ে তাদের বলা স্থানে গেলাম। রুমটা অন্ধকার ছিলো কোনো লাইটও ছিলো না রুমের ভিতর। আমি মোবাইলের ফ্লাস অন করে দেখতে লাগলাম। কিন্তু রুমের ভিতর কাউকে দেখতে পাইনি।
হঠাৎ আমার মোবাইলে কল আসে। আমি রিসিভ করার পর বললাম ইরাম কোথায়? তোমরা যেখানে আসতে বলেছিলে আমি সেখানেই এসেছি
— তুমি আমাদের ধোঁ’কা দিয়েছো। তোমার ভাই আর পুলিশকে বলেছো। কি ভেবেছিলে আমরা বুঝতে পারবো না। এখন ইরামকে সারাজিবনের জন্য ভুলে যাও। ইরামের লা’শও খুজে পাবে না
তারপরই আপনারা চলে আসেন
শফিক আহমেদ আর রবি বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ওদের ফাঁ’দে ফেলা হয়েছে। ওদের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরানোর জন্য দিশা আর রিকশাওয়ালাকে ব্যবহার করা হয়েছে
কিন্তু রিকশাওয়ালার মেয়ে যে খু’ন হয়েছে তা তারা কিভাবে জানলো? আর দিশার বয়ফ্রেন্ডই বা এর সাথে কিভাকে জড়িত?
এর আগেও একবার দিশাকে কল দিয়ে বলেছিলো, আমাকে বাঁ’চাও ও আমাকে মে’রে ফেলবে। আবার আজকে বললো। এসব কিছু ইরাম করছে না তো
পুলিশ রহিম মিয়ার বাড়িতে এসেছেন তার মেয়ের সম্পর্কে জানার জন্য। শফিক আহমেদ রহিম মিয়াকে বললেন, আপনার মেয়ের সম্পর্কে আমাদের কিছু বলেন
— আমার মেয়ের সাথে কারও কোনো শত্রুতা ছিলো না। ও তো সবসময় নিজের লেখাপড়া নিয়েই ভাবতো। অনেক ভালো ছাত্রী ছিলো আমার মেয়ে। একদিন কলেজ থেকে বাসায় আসার সময় কেও আমার মেয়েকে কি’ডন্যাপ করে। ২/৩ দিন পর বাসায় দিয়ে যায়। ওরা আমার মেয়েটাকে ধ’র্ষন করে
এটা বলেই রহিম মিয়া কাঁদতে লাগলেন। তারপরও আমার মেয়েটা বাঁ’চতে চেয়েছিলো কিন্তু ওরা বাঁ’চতে দেইনি আমার মেয়েটাকে খু’ন করে লা’শটাকে বাসার সামনে রেখে যায়।
আমি পুলিশের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু পুলিশ কোনো প্রমান খুজে পায়নি। ১বছর হয়ে গেলো তাও খু’নিদের ধরতে পারেনি। এখন তো কেসটাকেই ক্লোজ করে দিয়েছে
আমার মেয়ের খু’নিদের শাস্তি পেতে দেখতে চেয়েছিলাম তাই আমি তাদের কথামত ২টায় রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি
— আপনার মেয়ের নাম কি ছিলো?
— অধীরা
শফিক আহমেদ বুঝতে পারছেন তাদের মনযোগ অন্যদিকে নিতেই খু’নিরা এসব করেছেন। ১দিন হয়ে গেলো এখনও নতুন কোনো লা’শ পায়নি পুলিশ।
যদি এই খু’নিদের ধরতে হয় তাহলে প্রথমে অধীরার খু’নিদের আর দিশার বয়ফ্রেন্ডকে খুজে বের করতে হবে। তাহলেই সেই সা’ইকো কি’লার পর্যন্ত পৌছাতে হবে
অধীরা নামটা শুনে রবি অবাক হয়ে গেলো। রবি একটা মেয়েকে ভালোবাসতো তার নামও ছিলো অধীরা। হঠাৎ একটা দূ’র্ঘটনায় মা’রা যায় ওর ভালোবাসার মানুষটি। ওর আফসস একটাই ওর ভালোবাসার মানুষটি কখনই ওকে ভালোবাসেনি ওকে শুধু ঘৃনাই করেছিলো।
ও অন্য কাউকে ভালোবাসতো। রবি তাকে মে’রে ফেলেছিলো শুধুমাত্র অধীরাকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু অধীরা ওকে কখনই ভালোবাসেনি। হঠাৎ একদিন একটা দূ’র্ঘটনায় অধীরা মা’রা যায়
এটা ১বছর আগের কথা। এখন অধীরা নামটি শুনে পুরোনো কথা মনে পড়ে গেলো। রবি রহিম মিয়ার কাছে তাদের মেয়ের ছবি দেখতে চাইলো। রহিম মিয়া ছবি দেখালো রবিকে। এটা ওর ভালোবাসার মানুষ অধীরা না
শফিক আহমেদ রহিম মিয়াকে বললেন, আপনার মেয়ের কোনো বন্ধু ছিলো কি?
— না। আমার মেয়ের কোনো বন্ধু ছিলো না
হঠাৎ রহিম মিয়ার ছেলে বললো, আপুর একজন ছেলে বন্ধু ছিলো। একদিন আপু আর আমি ঘুরতে গেছিলাম তখন তাকে দেখেছিলাম।
— তার নাম বলতে পারবে?
— মেহেদী
— তার ছবি আছে তোমার কাছে?
— আপুর ডায়রিতে থাকতে পারে
অধীরার ডায়রি থেকে মেহেদীর ছবি বের করলো। ছবি দেখার পর পুলিশ আর রবি দুজনেই অবাক হয়ে গেলো। কারন এটা ওই মেহেদীই ছিলো যাকে কাঁ’টা মা’থা শহ গ্রেফটার করেছে পুলিশ
থানায় এসে শফিক আহমেদ মেহেদীকে মা’রতে লাগলো। মেহেদী হাসতেছে
— হাসতেছিস কেনো?
— এত রেগে আছেন আমার উপরে তার মানে সত্যিটা জানতে পেরেছেন তাই না
— কেনো খু’ন করেছিস?
— প্রতিশোধ নিতে। ওরা আমার অধীরাকে খু’ন করেছিলো তাই প্রতিশোধ নিয়েছি। খুবই ভ’য়ংকর মৃ’ত্যু দিয়েছি ওদের।
— তুই জেলে থাকার পরও একজন খু’ন হয়েছে সেটা কি করে সম্ভব?
— হাহা, ম্যাজিক
— আর কে ছিলো তোর সাথে?
— আজ রাত ২টায়। আপনার স্ত্রী কে অনুসরন করবেন তাহলেই জানতে পারবেন
রবি মেহেদীকে বললো, দিশাকে কেনো এর ভিতরে এনেছিস?
— সাকিব তোমাকে শেষ করার জন্য তোমার বোনকে ব্যবহার করেছে। ইরাম হলো সাকিবের বেস্টফ্রেন্ড। ও ইরামকে দিয়ে তোমার বোনকে ভালোবাসার জালে ফেলে। তারপর এডিট করে ছবিগুলো তোমাকে পাঠায়
ও জানতো তোমার সবথেকে দূর্বল পয়েন্ট তোমার বোন। আমি একা প্রতিশোধ নিতে পারতাম না। কারন ওরা সবাই তোমার লোক ছিলো। তাই তোমার সব লোকদের কে ফলো করা শুরু করি। তারপর জানতে পারে সাকিব বি’শ্বাসঘাতক। তোমার সব কাছের লোকদেরকে মে’রে সাকিব তোমার জায়গা নিতে চেয়েছিলো। তাই ও আমাকে সাহায্য করে
— তাহলে সাকিবকে কে খু’ন করে?
— আমিই। কারন সাকিবও অধীরার খু’নের সাথে জড়িত ছিলো। ওরা প্রথমে আমার অধীরাকে ধ’র্ষন করে। তারপর আবার ওকে খু’ন করে। শুধু সাকিব না ইরামও ছিলো। আমি ওদেরকে ব্যবহার করেছি ওদেরই খু’ন করার জন্য
— প্রথম তো খু’ন করেনি তাহলে পরে কেনো খু’ন করেছিলো?
— ওরা অধীরাকে ব্লাকমেইল শুরু করে। অধীরা রাজি হয়না। ওদেরকে পুলিশের ভয় দেখায়। তাই ওরা অধীরাকে খু’ন করে।
এই ১বছর আমি প্রতিটা সময় তোমার লোকদের উপর নজর রেখেছি। কিভাবে খু’নগুলো করবো সব প্লান করে রেখেছিলাম।
শফিক আহমেদ বললেন, এর সাথে আমার স্ত্রী র কি সম্পর্ক?
— সেটা আজকে তাকে অনুসরন করলেই জানতে পারবেন
শফিক আহমেদ পুলিশ নিয়ে তার স্ত্রীকে অনুসরন করতে লাগলেন। রবিও তাদের সাথে আছে। রোজিনাকে এত রাতে বাইরে যেতে দেখে শফিক আহমেদ খুবই অবাক হয়েছেন।
রোজিনা শহর থেকে অনেকটা দূরে চলে আসলো। একটা পরিত্যাক্ত বাড়ির ভিতর ঢুকলো। আশেপাশেও কোন বাড়ি নেই। রোজিনা রুমের ভিতর ঢুকে হাতে একটা কু’ড়াল নিলো। বেড এর উপর একটা ছেলেকে বেঁ’ধে রাখা হয়েছে। যখনই রোজিনা তাকে খু’ন করতে যাবে তখনই পুলিশ তাকে ধরে ফেললো।
শফিক আহমেদ রোজিনাকে থা’প্পর মেরে বললো, কেনো করছো এসব?
রোজিনা হাসতে হাসতে বললো, আনন্দের জন্য
ছেলেটার মুখোশ খুলার পর রবি অবাক হয়ে গেলো। এটা ওরই লোক আয়ান ছিলো। তাহলে ওইদিন দিশা আর রিকশাওয়ালাকে ব্যবহার করে আয়ানকে কি’ডন্যাপ করেছিলো
শফিক আহমেদ বুঝতে পারলো রোজিনাই হলো সেই সা’ইকো কি’লার। রুম থেকে শরী’রের বাকি অংশগুলাও উদ্ধার করা হয়েছে
থানায় নিয়ে আসার পর রোজিনা মেহেদীকে বললো, আমার সাথে কেনো বি’শ্বাসঘাতকতা করেছিস?
— তুমি চেয়েছিলে মা’থাটা মিডিয়ার সামনে এনে নিজে আনন্দ পেতে। তাই আমাকে ধরিয়ে দিয়েছিলে। ওই কনস্টবলকে তুমিই কল দিয়ে ইনফরমেশন দিয়েছিলে
শফিক আহমেদ সেই কনস্টবলদের ডাকলেন
— স্যার আমরা ভেবেছিলাম যদি আমরা ইনফরশেশন এর কথা বলেই দেই তাহলে আমরা কোনো ক্রেডিট পাবো না। আমরা প্রমোশনের জন্য এটা লুকিয়েছিলাম
ওইদিনই বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বলিনি কারন তখনও একজন বাকি ছিলো।
নিজের হাতে কাউকে খু’ন না করেও আমার প্রতিশোধ নিয়েছি। স্যার এখন কি শাস্তি দিবেন দেন
এটা বলেই মেহেদী হাসতে লাগলো
ওর আর কিছু চাওয়ার নেই। ওর ভালোবাসার মানুষকে যারা খু’ন করেছে তাদের শাস্তি দিতে পেরেছে
রোজিনা বললো, কাউকে ছারবো না। সবাইকে খু’ন করবো। খুবই ভ’য়ংকরভাবে খু’ন করবো।
সমাপ্ত
( এক বছর পর আবার শহরের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে কি’ডন্যাপ হচ্ছে। তারপরের দিন ডাস্টবিনের ভিতরে তাদের হা’ত,পা,মা’থা পাওয়া যাচ্ছে। রোজিনা সা’ইকো কি’লার আর মেহেদী অধীরার প্র’তিশোধ নিতে খু’ন গুলো করেছে৷ এরা দুজনেই এখন জে’লে। তাহলে নতুনভাবে কে এই খু’ন গুলো করছে? কে এই সা’ইকো কি’লার?)
#মুখোশের_আড়ালে সিজন ২
#লেখকঃRabi_Al_Islam