#মুখোশের_আড়ালে
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৪
প্যাকেটটা খুলার পর সবাই থমকে গেলো। প্যাকেটটার ভিতরে মা’নুষের হাত- পা, মাথা সবই ২/৩ টু’করা করা
এরকম জগন্য ভাবে কাউকে খু’ন করা হয়েছে এটা দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। আরও এসব লাইভ দেখানো হচ্ছিল তাই মানুষ আ’তংকিত হয়ে পড়েছে
পুলিশ সাংবাদিকদের ক্যামেরা বন্ধ করতে বললো। যাতে জনগন এসব দেখতে না পারে। শফিক আহমেদ বেশ বুঝতে পারছেন কেও পুলিশের সাথে খেলা খেলছে। এমন ভাবে মাথা ২/৩ টু’করা করা হয়েছে যে শনাক্ত করা সম্ভব না কে খু’ন হয়েছে।
প্রথমে সাকিবের মা’থা পাওয়া যায়নি তারপর ইমনের শরী’র আর এখন তো আর ভ’য়ংকর। ফরেনসিকরাও পরিক্ষা – নিরীক্ষা করতে ব্যাস্ত
আগের দুটোতে কে খু’ন হয়েছে তা জানা গেছে কিন্তু এটাতে তা আর সম্ভব না। পুলিশ হাত- পা, মা’থার টু’করো গুলো ফরেনসিকে পাঠিয়ে দিলো
দিশা সকালে নাস্তা না করেই বাসা থেকে বের হতে লাগলো। তখন রবি বললো, না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস?
— কলেজে যাচ্ছি
— নাস্তা করে যা
— এখন খেতে ইচ্ছা করতেছে না। বাইরে থেকে খেয়ে নিবো
— খু’ন গুলো সম্পর্কে কিছু জানতে পারলেন?
— আমরা আগের দুটো ব’ডি ভালোভাবে পরিক্ষা করেছি। এটা কোনো সা’ইকো কি’লারের কাজ হতে পারে। খু’নি নিজের আনন্দের জন্য এসব খু’নগুলো করেছে হয়তো
ডাক্তারের কথা শুনে শফিক আহমেদ অবাক হয়ে গেলো। কি বলছেন ডাক্তার?
— শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্তি। খু’নি একজন সা’ইকো। এরা মানুষকে কষ্ট পেতে দেখলে আনন্দ পায়। মানুষের র’ক্ত পান করে। এরকম ভ’য়ংকরভাবে খু’ন করতে এরা পছন্দ করে। বাচ্চার যেমন গেইম খেলে আনন্দ পায় তেমনি তাদের জন্য এটা একধরনের খেলা
এরা চায় মানুষ ভয় পাক। তাদের নিয়ে আলোচনা হউক। তারা মনে করে তারা বিখ্যাত কেও। প্রথমটা দুইটা খু’ন মিডিয়াতে তেমন ভাবে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়নি তাই সে অনেক রেগে যায়। আর তারপর কি হলো তা জানেনই
খু’নগুলো একিরকম ভাবে করে সে। হয় মা’থা রেখে দেয় না হয় ব’ডি রেখে দেয় তার কাছে। খুব তাড়াতাড়ি এই সা’ইকো কি’লারকে ধরতে হবে। তা না হলে লা’শের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে।
এখন থেকে মিডিয়াতে এসব প্রচার করবেন না। এতে সে রেগে যাবে যার ফলে কোন না কোন ভুল করবেই
হঠাৎ রবির একটা কথা মনে পড়ে গেলো। দিশাকে তো ওর বয়ফ্রেন্ডের কথা জিগ্গেস করা হয়নি। কে ওর বয়ফ্রেন্ড তাও দেখা হয়নি
এতসব ঝামেলার মধ্যে একদমই খেয়াল ছিলো না। কে করতেছে এসব। মনে হচ্ছে যেনো আমাকেই টার্গেট করছে। পুলিশ ও এখন পর্যন্ত কিছু জানতে পারেনি। আমার লোকেরাও কোনো কাজের না
প্রথমে সাকিব তারপর ইমন খু’ন হলো। কে এসব করছে? কেনো করছে? কিছুই বুঝতেছি না। তবে এটা বুঝতে পারছি এসব কারও একার পক্ষে করা সম্ভব না। তাহলে কে কে এর সাথে জড়িত?
শফিক আহমেদ রাতে শহরে পাহাড়ার জন্য আরও লোক নিয়োগ করেছেন। প্রত্যেকটা গল্লিতে পুলিশ পাহাড়ার ব্যাবস্থা করেছেন। সারারাত এভাবে পাহাড়া দিতে হবে। যে করেই হোক ওই সা’ইকো কি’লারকে খুজে বের করতেই হবে
শফিক আহমেদ বাসায় আসার পর রোজিনা বললো, এরকম ভ’য়ংকর ভাবে কেও কাউকে খু’ন করে। আমি তো দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম। খুনি একজন সা’ইকো কি’লার। ও নিজের আনন্দের জন্য খু’নগুলো করে
— এরকমটাও কি সম্ভব। কেও নিজের আনন্দের জন্য এরকম জগন্যভাবে কাউকে খু’ন করতে পারে
— সা’ইকোরা সব পারে
— নিখাত কোথায়?
— ও রুমে পড়তেছে
— টিচার আসছিলো আজকে?
— হ্যা
দিশাকে ওর বন্ধুরা বললো, তোর বয়ফ্রেন্ডের কি খবর?
— ওর সাথে কিছুদিন হলো কথা হয়না
— আবার ঝগড়া হলো নাকি?
— না। জানি না ওর কি হয়েছে। ওর কোনো খোজ- খবর নাই। ওর নাম্বারও বন্ধ। এর ভিতরে হঠাৎ একদিন ও কল দিয়ে বলে আমায় বাঁচাও ও আমাকে মে’রে ফেলবে। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। আমার ভাইয়াকে বলি।
পরে আমার মনে হলো ও আমার সাথে মজা করে এসব করতেছে। ও তো মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন করতো।
ভাইয়া নাম্বারটা ট্রেস করে সেই জাগায় পৌছায়। সেখানে গিয়ে ভাইয়া অন্য কারও লা’শ দেখতে পায়।
— কি বলিস? কে খু’ন করলো?
— সেটাই তো পুলিশ খুজে বের করতেছে
রাতে খাবারের পর দিশাকে ওর ভাইয়া বললো, তোর বয়ফ্রেন্ডের কি খবর তা তো বললি না
— ওর সাথে এখনও কোনো যোগাযোগ হয়নি
— কি বলিস? ওর আবার কিছু হলো না তো?
— বুঝতেছি না। ও মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন করতো আবার ফিরে আসতো। এবার কি হলো ওর
— তোর বয়ফ্রেন্ডের ছবি দেখাতো
দিশা ওর বয়ফ্রেন্ডের ছবি দেখানোর পর ওর ভাইয়া বললো, নাম কি ওর?
— ইরাম
রাতে খাবারের সময় শফিক আহমেদ বললো, আজকে রাতে আমি বাসায় আসবো না। পুরো শহরে আজকে পুলিশ টহল দিবে। ওই সা’ইকো খু’নিকে খুজে বের করতে হবে
— সে কেনো খু’নগুলো করছে বাবা?
— কোনো কারন ছাড়াই সে এসব করছে। ও একা না ওর সাথে আরও অনেকে আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের খুজে বের করতে হবে ওদের। তা না হলে লা’শের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে
শফিক আহমেদ রবিকেও কল দিয়ে আসতে বললেন। রবির লোকেরাও থাকবে
রবি ওর সব লোকদের কল দিয়ে আসতে বললো। সবাই এসে পড়েছে শুধু সাব্বির ছাড়া।
— আয়ান সাব্বির কোথায়? ও কেনো আসলো না?
— সকাল থেকে ওর সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। আর…
— কি হয়েছে?
— আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু ডকুমেন্ট, ভিডিও পাচ্ছিনা। ওগুলো সাব্বিরের কাছে ছিলো। ও হয়তো ওগুলো নিয়ে গেছে
— কি বলছিস তুই? ও কিভাবে আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারলো?
— জানি না। ও যদি সবকিছু মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে তাহলে আমরা শেষ হয়ে যাবো।
— তার আগে ওকে খুজে বের করতে হবে। ওর এই বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ওকে ভ’য়ংকর মৃ’ত্যু দিবো
— আয়ান, মুসফিক তোরা আমাদের সব লোকদের উপর নজর রাখবি। কোনো কিছু সন্দেহ হলেই আমাকে জানাবি
— ঠিক আছে
— এখন চল। এর পিছনে কে রয়েছে তাকে খুজে বের করতে হবে
রাতে রহিম মিয়া বাসায় আসলে তার ছেলে বলে বাবা একটা লোক এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলেছিলো
— কে দিয়েছে এটা?
— আমি চিনি না তাকে। আর তার মুখে মাস্ক পড়া ছিলো। সে শুধু বলেছে এটা তোমাকে দিতে
— আমি তো পড়তে পারি না আমাকে একটু পড়ে শুনা তো বাবা
রহিম মিয়ার ছেলে চিঠিটা পড়ে শুনাতে লাগলেন
যদি তোমার মেয়ের খু’নিদের শাস্তি দিতে চাও তাহলে রাত ২টায় রিকশা নিয়ে বৈদ্ধপাড়া এসো
এটা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো। কে এই চিঠিটা পাঠালো? সে কিভাবে তার মেয়ের কথা যানে। রহিম মিয়া ভাবতেছে যাবে কি যাবেনা
১ বছর হয়ে গেলো তার মেয়ের খু’নিদের শাস্তি দিতে পারেনি পুলিশ। রহিম মিয়ার একটাই চাওয়া তার মেয়ের খু’নিরা যাতে শাস্তি পায়
রাহেলা বেগম বললেন, তোমার যাওয়ার দরকার নেই। যদি তোমার কোনো বিপদ হয়
— আমার আবার কি বিপদ। আমাকে মে’রে কার কি লাভ হবে। আমি যাবো আমার মেয়ের জন্য যাবো। আমার মেয়ের সাথে যারা এমন করেছে তাদের শাস্তি আমি দেখতে চাই
রাত ২টা
পুলিশ পাহাড়া দিচ্ছে। হঠাৎ তারা একটা রিকশা দেখতে পেলো। তারা সবাই সতর্ক হয়ে গেলো। এটা হয়তো খু’নি হতে পারে
রিকশাটা কাছাকাছি আসার পর পুলিশ এটা থামালো। একজন বৃদ্ধ লোক। কিন্তু তিনি এত রাতে রিকশা নিয়ে রাস্তায় কেনো
শফিক আহমেদ বললেন, আপনি এত রাতে রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন কেনো?
রহিম মিয়া ভয় পেয়ে গেলেন
— সত্তিটা বলুন
— স্যার কেও একজন আমাকে একটা চিঠি দিয়েছিলো তাতে লেখা ছিলো যদি আপনার মেয়ের খু’নিদের শাস্তি দিতে চান তাহলে রাত ২টায় রিকশা নিয়ে বের হবেন।
তার কথামত আমি ২টায় বাসা থেকে বের হতে যাবো তখন আমার ছেলে এসে বলে, বাবা চিঠির ওপর পাশে আরও কিছু লেখা ছিলো
— কি লেখা ছিলো তাতে?
রহিম মিয়া ভয়ে কাঁপতেছে
— বলুন কি লেখা ছিলো?
— তাতে লেখা ছিলো, রাত ২টায় রিকশা নিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে এসব বলবেন আরও বলবেন যতই পাহাড়া দিস কেও বাঁচ’তে পারবে না।
এসব যদি বলতে পারেন তাহলে আপনার মেয়েকে যারা খু’ন করেছিলো তাদের একজনের মা’থা আপনার কাছে পাঠানো হবে। অপেক্ষা করুন
এসব শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো। হঠাৎ শফিক আহমেদ এর কাছে একটা কল আসলো, স্যার কেও একজন একটা বাসার ভিতরে ঢুকলো সে ব্লাক ড্রেস পড়া ছিলো আর মুখে মাস্ক
শফিক আহমেদ বুঝতে পারলো এটাই হয়তো সেই সা’ইকো খু’নি হবে। তারা দৌড়ে সেখানে গেলো। পুলিশ বাসাটাকে ঘিরে রেখেছে। শফিক আহমেদ, রবি আরও কিছু পুলিশ বাসার ভিতরে ঢুকলো
তারা দেখলো কেও একজন দাঁড়িয়ে কার সাথে যেনো মোবাইলে কথা বলছে। পুলিশ পিছন থেকে তাকে ধরে ফেললো
শফিক আহমেদ বললেন, কি ভেবেছিলি তুই এতগুলো খু’ন করবি আর আমরা তোকে ধরতে পারবো না
এর মুখোশ খুলো। মুখোশটা খুলার পর যা দেখলো তার জন্য কেওই প্রস্তুত ছিলো না। এটা একজন মেয়ে
রবি থমকে গেলো। কারন ওই মেয়েটা আর কেও না ওরই ছোট বোন দিশা
চলবে—