মুখোশের আড়ালে পর্ব-০৩

0
554

#মুখোশের_আড়ালে
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ৩
শফিক আহমেদ মেহেদীকে থা’প্পড় মে’রে বললো, পুলিশের সাথে মিথ্যা কথা বলিস তোর সাহস তো কম না। খু’ন করে মাথা নিয়ে যাচ্ছিস। আবার পুলিশকে বোকা বানাচ্ছিস

কি ভেবেছিলি তুই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে পারবি। তুই খু’ন করে মা’থা নিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাবি আর আমরা চুড়ি পরে বসে থাকবো। বল তোর সাথে আর কে কে আছে?

— স্যার বিশ্বাস করেন আমি কিছুই করি নাই। এই ব্যাগটা আমার না। আমার পাশের সিটে লোকটা এসে তার ব্যাগটা আমার কাছে রেখেছিলো। ব্যাগের ভিতর কি ছিলো আমি জানতাম না

— তোর পাশের সিটে একজন বৃদ্ধ লোক বসা ছিলো আর তার সাথে কোনো ব্যাগ ছিলো না। তার বয়স আনুমানিক ৬০/৭০ হবে হয়তো

— না স্যার। আমার পাশে যে বসা ছিলো সে কোনো বৃদ্ধ লোক ছিলো না। আমার মতই যুবক ছিলো। তার মুখে মাস্ক পরা ছিলো, মাথায় ছিলো ক্যাপ। সে ব্লাক শার্ট, প্যান্ট পড়া ছিলো

শফিক আহমেদ মেহেদীকে সিসিটিভির ফুটেজ দেখালো। ওর পাশে যে সিট কেঁটেছিলো সে একজন বৃদ্ধ লোক ছিলো তার সাথেও কোনো ব্যাগ ছিলো না

এসব দেখে মেহেদী অবাক হয়ে গেলো। কারন ওর পাশে তো অন্য একজন বসা ছিলো। কিন্তু এখানে তো দেখাচ্ছে টিকেট এই বৃদ্ধ লোকটা কাঁটছে। তাহলে ওর পাশে যে বসলো সে কি যাত্রী ছিলো না? এসব প্রশ্ন মেহেদীর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে

পুলিশ বৃদ্ধ লোকটাকে ডেকে আনলো। তাকে বললো, আপনি কি আপনার সিটে বসা ছিলেন?

— ছিলাম। কিছুখন পর আমার মনে পড়েছে আমি তো খাবার নেইনি। তাই বাস থেকে নেমেছিলাম খাবার কিনার জন্য। দোকানে আসার পর হঠাৎ আমি মা’থা ঘুরে পড়ে যাই। অনেকখন পর আমার জ্ঞান ফেরে। তারপর এসে দেখি এখানে এত ভীড়

পুলিশ সেই দোকানে গিয়ে জিগ্গেস করলো। বৃদ্ধ লোকটা সত্যি বলেছেন। তিনি অসুস্হ হয়ে পড়েছিলেন। পুলিশ বৃদ্ধ লোকাটাকে যেতে বললো

হঠাৎ শফিক আহমেদ এর মোবাইলে কল আসলো। শফিক আহমেদ নাম্বারটা দেখে চমকে গেলো। কারন সে তো নিজে কখনও কল দেয়না

— যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাউকে খু’নি বানিয়ে সাকিবের কেসটা সমাধান করে দাও

— ওই কেসের সাথে সাদৃশ্য আরও একটা কেস পেয়েছি আমরা। খুব তাড়াতাড়িই আমরা এই কেস সমাধান করে ফেলবো স্যার। আপনি একদম চিন্তা করবেন না

— তুমি যানো আমি কেনো চিন্তা করছি। আশা করি তাড়াতাড়ি এটার সমাধান করবে

— জী স্যার

শফিক আহমেদ কনস্টেবলদের বললেন মেহেদীকে থানায় নিয়ে যেতে। শফিক আহমেদ ভাবছেন, ওকে আসামী করে এই কেসটা ক্লোজ করে দিতে হবে। তার আগে এটা কার মা’থা তা খুজে বের করতে হবে

মেহেদীকে থানায় এনে শফিক আহমেদ ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

— বল এটা কার মা’থা? কেনো খু’ন করেছিস তুই?

— সত্যি বলছি স্যার আমি খু’ন করিনি। এই ব্যাগটা আমার না

— তোর না হলে এটা তোর কাছে ছিলো কেন? তোর পাশে যে বসা ছিলো সে একজন বৃদ্ধ ছিলো। তার সাথে কোনো ব্যাগ ছিলো না। তুই একের পর এক মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছিস আমাদের সাথে

পুলিশ মেহেদীর উপর অ’ত্যা’চার করতেছে সত্যিটা জানার জন্য। পুলিশ রবিকে কল দিয়ে থানায় আসতে বললো

কিছুখন পর রবি থানায় চলে আসলো

— কি হয়েছে স্যার? এত রাতে থানায় আসতে বললেন

— সাকিবকে যেভাবে খু’ন করে মা’থা নিয়ে গেছিলো ওই একিভাবে আরও একটা খু’ন হয়েছে। এই ছেলেটার কাছ থেকে মানুষের মা’থা পেয়েছি। ও সাকিবের খু’নের সাথেও জড়িত। কারন দুইটা খু’নই একিরকমভাবে করা

পুলিশ রবিকে কাঁ’টা মা’থা দেখানোর পর রবি থমকে গেলো। কাঁটা মা’থাটা ইমনের ছিলো

— কি হয়েছে কোনো সমস্যা?

— এটা ইমনের মা’থা। কিন্তু ওকে কে খু’ন করলো। ওকে সাকিবকে খুজে বের করতে পাঠিয়েছিলাম কিন্তু সাকিবের লা’শ পেলাম আর ও নিখোজ। এখন ওর কাঁ’টা মা’থা পাওয়া গেলো। ওর শরীর আর সাকিবের কাঁ’টা মা’থা কোথায় গেলো?

রবি মেহেদীকে বললো, কেনো খু’ন করেছিস ওদের?

— বিশ্বাস করেন ভাইয়া আমি কিছু করিনি। আমি তো ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিলাম ঢাকা। আমার পাশের সিটে একটা ছেলে বসা ছিলো সে এসে আমাকে ব্যাগটা দিলো

শফিক আহমেদ রবিকে বললো, অনেক মে’রেছি ওকে কোনো কাজ হয়নি। একি কথা বারবার বলে যাচ্ছে

— আর কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না। এই কেসটা ক্লোজ করে দিন

— আচ্ছা

রবি ওর সব লোকদের কল দিয়ে দেখা করতে বললো

কিছুখন পর

— কি হয়েছে? এত রাতে দেখা করতে বললি

— ইমনকে কেও সাকিবের মত করেই খু’ন করেছে। একটা ছেলের কাছ থেকে ইমনের মা’থা খুজে পেয়েছে পুলিশ

— ওই খু’ন করেছে ওদের দুজনকে

— আমাদের সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। কলেজে নতুন কাউকে আমাদের সাথে কাজ করতে আনবি না

— ভাই আপনি তো কলেজের ভিপি। পুলিশও আমাদের সাথে আছে তাহলে কলেজে আবার কিসের ভয় আমাদের?

— ভয় আছে। কেও একজন আমাদের পিছে পড়েছে

— কিন্তু ভাই খু’নি তো ধরা পড়েছে

— আমার মনে হয় এর পিছনে আরও অনেকে আছে। কারও একার পক্ষে এসব করা সম্ভব না। ওই ছেলেটা এত মা’র খাওয়ার পরও মুখ খুললো না

নতুন কাউকে আমাদের সাথে নিবি না। খুবই সাবধানে থাকবি

— ঠিক আছে ভাই

শফিক আহমেদ বাসায় আসার পর রোজিনা বললো, কি হয়েছে কোনো সমস্যা?

— একটা মানুষের কাঁ’টা মা’থা পাওয়া গেছে। একটা ছেলের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। ওকে এত মে’রেছি তাও মুখ খুলছে না

— এত চিন্তা কিসের। ছেলেটাকে আসমী করে এটার সমাধান করে ফেলো

— আমিও তাই ভাবতেছি

১দিন পর

আজকে নিখাতকে পড়ানোর জন্য নতুন টিচার আসবে। শফিক আহমেদ অপেক্ষা করতেছে

কিছুখন পর নতুন টিচার আসলো। শফিক আহমেদ ছেলেটাকে বললেন, নাম কি তোমার?

— আদি স্যার

— তোমার পরিবারে কে কে আছে?

— মা,বাবা আর এক বোন

— আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করতে ছিলাম। সময় নেই আমার। আমি বের হবো। আশা করি তুমি ওকে ভালোভাবেই পড়াবে

— জী স্যার

রহিম মিয়া রিকশা নিয়ে বের হচ্ছিলেন তখন রাহেলা বেগম বললেন, সবাই বলাবলি করছে একটা ছেলে নাকি ২জনকে জ’গ’ন্যভাবে খু’ন করেছে। পুলিশ নাকি ছেলেটাকে গ্রেফটার করেছে। সবাই বলছে, ছেলেটার সাথে নাকি আরও অনেকে জড়িত। কিন্তু পুলিশ এখনও তাদের গ্রেফটার করতে পারেনি। বেশি রাত করবেন না। তাড়াতাড়ি বাসায় আসবেন

— অযথাই চিন্তা করছো। আমাদের মত গরিবদের কিসের ভয়। আমরা নিজেদের বাঁচাতে প্রতিদিন যু’দ্ধ করি। আমাদের মে’রে কার কি লাভ হবে

— এত কথা বইলেন না তো। আমার অনেক ভয় করছে। আপনি এখন থেকে তাড়াতাড়ি আসবেন

****

— সবকিছু আমাদের প্লান মতই হচ্ছে। কিন্তু আমার ভয় করছে ওকে নিয়ে। ও খুবই ভ’য়ংকর। ও নিজের জন্য সবাইকে মে’রে ফেলতে পারে। ওর কাছে যদি ধরা পড়ে যাই তাহলে খুবই ভ’য়ংকর মৃ’ত্যু হবে

— এখন এত ভয় পাচ্ছো কেনো? কাজটা করার সময় মনে ছিলো না। ভয় পেলে কিছু হবে না। তোমাকে যা বলছি সেভাবে কাজ করো। তোমার টাকা তুমি পেয়ে যাবে

— আমার ভয় করছে। ও আমাকে সন্দেহ করতে পারে। ও আমাকে কিছুই বলবে না। হঠাৎ আমার সামনে এসে ভ’য়ংকর মৃ’ত্যু দিবে। আমি পালানোর সুযোগটাও পাবো না। ও খুবই ভ’য়ংকর। ও পারে না এমন কোনো কাজ নেই। নিজের স্বার্থের জন্য সবকিছু করতে পারে

— ভয় পেয়ো না। কিছু হবে না। ও কিছু বুঝার আগেই ওকে মে’রে ফেলবো

— ও একটা জা’নোয়ার। কি করবে তা কাউকে বলেনা

সকালে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করছিলেন। হঠাৎ তারা একটা প্যাকেট দেখতে পায়। তার উপরে লেখা, সাবধান ভিতরে বো’ম আছে

এরকম লেখা দেখে তারা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। একজন বলে, আরে কেও ইচ্ছা করেই এটা লিখছে। ভিতরে কিছুই নেই

আর একজন বললো, যদি বো’ম থেকে থাকে তাহলে। কেও ময়লার ভিতর কেনো এটা রেখে গেছে। এমনভাবে লিখছে মনে হয় সে জানতো এটা কেও খুজে পাবে। আমাদের পুলিশকে জানানো উচিত

পুলিশকে বলার কিছুখন পরই পুলিশ চলে আসলো। বো’ম স্কোয়াড এর লোকেরাও চলে এসেছে। এর ভিতরে মানুষের ভিড় হয়ে গেছে। সাংবাদিক রা ছবি তুলতে ব্যাস্ত। টিভিতে লাইভ দেখানো হচ্ছে। পুলিশ মানুষদের দূরে পাঠাতে ব্যাস্ত।

বো’ম স্কোয়াড এসে ভালোভাবে দেখে বললো, এটার ভিতরে বোম নেই। অন্য কিছু আছে। সেটা ভারী কিছু হবে।

পুলিশ প্যাকেটটা খুলার সিদ্ধান্ত নিলো। না খুলে উপায় নেই। সবাই লাইভ দেখছে। সবাই উৎসুক হয়ে তাকিয়ে আছে প্যাকেটার ভিতরে কি আছে সেটা দেখার জন্য

প্যাকেটটা খুলে যা দেখলো তাতে সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। পুলিশ, সাংবাদিক, মানুষ, যারা এটা লাইভ দেখছে সবাই থমকে গেলো।

প্যাকেটার ভিতরে মা’নুষের হা’ত- পা, মা’থা সবই ২/৩ টু’করা করা

চলবে—-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে