#মুখোশের_আড়ালে
#লেখকঃRabi_Al_Islam
#পর্বঃ২
রবি অবাক হয়ে দিশাকে বললো, ভালো করে দেখে বলতো। তোর হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। নাম্বারটা ট্রেস করে যেই জায়গার সন্ধান পেয়েছি সেখানে ওরই লা’শটা পেয়েছি আমরা
— ভাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে তো? কিসব বলছো উল্টা- পাল্টা? আমার বয়ফ্রেন্ডকে আমি চিনবো না এটা কেমন কথা
তুমি যার ছবি দেখিয়েছো আমি তাকে এর আগে কখনও দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। আর তুমি এতো উত্তেজিত হচ্ছো কেনো?
— না তেমন কিছু না। ওই জাগায় গিয়ে আমরা ওর লা’শ পেয়েছি তাই বললাম। আচ্ছা থাক তুই আমার একটু কাজ আছে
রবি ভেবে পাচ্ছেনা এসব কিভাবে হলো। ও তো সাকিবের সাথেই দিশাকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখেছিলো। তাহলে দিশা এখন কেনো বলছে ও সাকিবকে চিনে না। আর সাকিবকেই বা কে খু’ন করলো?
সব কিছু যেনো রহস্য মনে হচ্ছে। মনে হয় যেনো কোনো ধাঁধার মধ্যে আছি
দিশা এখনও ওর বয়ফ্রেন্ডের কোনো খোঁজ পেলো না। সাকিব মাঝে মাঝেই দিশার সাথে এমন মজা করে। অদ্ভুত সব আচরন করে। অনেক সময় বলে যদি আমি মরে যাই তাহলে কি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসবে? আবার বলে আমি মরে গেলে তুমি আমার জন্য একদম কষ্ট পেয়ো না। ভালো কোনো ছেলে দেখে বিয়ে করে নিও
অনেক সময় তো একটানা ২/৩ দিন কোনো যোগাযোগ হয় না। দিশা কিছু বললে সাকিব শুধু হাসে আর বলে দুরত্বে ভালোবাসা বাড়ে। এই যে তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকো এটাই হচ্ছে ভালোবাসা
হঠাৎ দিশার মোবাইলে কল আসলো। ওর মামা কল দিয়েছে
— কেমন আছিস মা?
— এইতো ভালোই। তোমরা কেমন আছো?
— ভালো। তোকে কতবার বললাম বেড়াতে আসতে কিন্তু তুই আসলি না
— তোমরা ভালো করেই জানো বাবা আমাকে তোমাদের কাছে যেতে দিবেনা। তোমরা নিজেদের সমস্যা কেনো মিটিয়ে নিচ্ছো না?
— সব তো জানিসই
— বাদ দেও। তোমাদের কি অবস্থা বলো?
ভাই ইমনকে যে কাজের জন্য পাঠিয়েছিলাম তার কোনো খোজ- খবর নেই। ওর মোবাইলটাও বন্ধ। তারপর আর ওর সাথে দেখা হয়নি
ওদের কথা শুনে রবির অনেক রাগ হলো। ইমনকে পাঠিয়েছিলো সাকিবকে খুজে বের করতে। কিন্তু সাকিবের লা’শ পেলাম। ইমনের কোনো খবর নেই। তাহলে কি ইমন সাকিবকে মেরে ভিডিওটা নিয়ে গেলো। হয়তো আমাকে ব্লাকমেইল করার জন্য এমন করছে
কিন্তু দিশা কেনো সাকিবকে চিনতে পারলো না। দিশা এমন কেনো করলো? কিছুই মাথায় ঢুকতেছে না। তাহলে ওর বয়ফ্রেন্ড কে? আর দিশা সাকিবকে না চিনলে ওর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় কিভাবে? এটা কিভাবে সম্ভব হতে পারে। দিশা তো অজ্ঞান ও ছিলো না
যে করেই হোক ইমনকে খুজে বের করতে হবে। ভিডিওটা হয়তো ইমনের কাছে আছে। আয়ান যত তাড়াতাড়ি পারিস ইমনকে খুজে বের কর
— আচ্ছা ভাই
রহিম মিয়া ১বছর থেকে আদালতে ঘুরতেছে। তার মেয়ের ধ’র্ষন মামালার রায় শুনতে। কিন্তু রায় শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। তার টাকাও নেই যে তা দিয়ে মামলা লড়বে।
১বছর আগে তার মেয়ে কলেজ থেকে ফিরার সময় কিছু ছেলে তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে। ২দিন আটকে রেখে ধ’র্ষন করে। তারপর গাড়িতে করে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যায়।
তার ১/২ মাস পরই তার মেয়েকে কেও খু’ন করে লা’শটা বাড়ির সামনে রেখে যায়। রহিম মিয়া মামলা করেছিলেন কিন্তু পুলিশ আজও আসমাীদের খুজে বের করতে পারেননি
আদালত থেকে বলা হয় আসামীদের খুজে বের করতে কিন্তু পুলিশ বলে তারা সন্দেহ ভাজন কাউকেই খুজে পাচ্ছেন না। আর রহিম মিয়াও কাউকে আসামী করে মামলা করতে পারেননি। পুলিশ ও কোনো প্রমান খুজে পাননি। একেবারে পারফেক্ট মা’র্ডার যাকে বলে
পুলিশও এই মামলা ধাঁমাচাপা দিয়ে দিচ্ছেন। রহিম মিয়া প্রতিদিন পুলিশ স্টেশনে আসেন কিন্তু নিরুপায় হয়ে ফিরে যান। পুলিশ তাকে বলে তারা কোনো প্রমান খুজে পাচ্ছেনা
রহিম মিয়া নিজে একজন রিকশা চালক। অনেক কষ্ট করে তার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তার মেয়ের এইরকম পরিনতি হবে তা তিনি কল্পনাও করেননি। তিনি চান তার মেয়ের খু’নিরা শাস্তি পাক
রহিম মিয়া বাড়িতে আসার পর তার স্ত্রী বললো, পুলিশকি কোনো কিছু খুজে পেয়েছে? কারা আমার মেয়েটার সাথে এমন করলো?
রহিম মিয়া চুপ করে আছে। কিছুখন পর বললো, পুলিশ কোনো প্রমান খুজে পাচ্ছেনা। তারা কেসটা বন্ধ করে দিবে। আমাদের মত গরিবদের ন্যায় বিচার পাইয়ে দেবার মত কেও নেই। আমাদের তো আর টাকা নেই যে পুলিশ আমাদের কথা শুনবে।
রহিম মিয়ার ছোট ছেলেটা কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে ফিরলো।
— বাবা আমার আপু কি খারাপ ছিলো? এলাকার অনেকে বলে আমার আপুর নাকি চরিত্র খারাপ ছিলো।
রাহেলা বেগম ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোর আপু অনেক ভালো ছিলো। একদিন দেখবি তোর আপুর সাথে যারা এমন করেছে তাদের বিচার ঠিকই হবে
এসআই শফিক আহমেদ সাকিবের খু’নের কেসের দায়িত্বে আছেন। তিনি এখনও কোনো শক্ত প্রমান খুজে পাননি। পুলিশ এখন পর্যন্ত মাথাটাও খুজে পায়নি। ওপরদিকে উপর থেকে চাপ আসছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই কেসের সমাধান করতে হবে।
কারও সাথে যদি সামান্য যোগসূত্র ও থাকে তাহলেও শফিক আহমেদ তাকে খু’নি বানিয়ে কেসটা ক্লোজ করে দিবেন
শফিক আহমেদকে চিন্তিত দেখে তার স্ত্রী রোজিনা বললো, কি হয়েছে তোমার? এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোমাকে?
— একটা খু’নের আসামীকে ধরতে হবে। উপর থেকেও অনেক চাপ আসছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব খু’নিকে ধরতে হবে
— এত চিন্তিত হয়ো না মাথা ঠান্ডা করে ভাবো। আর শুনো তোমাকে বলেছিলাম না নিখাতকে পড়ানোর জন্য একজন টিচার রাখবো। একটা ছেলেকে পেয়েছি। অনেক ভালো স্টুডেন্ট। এখনও ঠিক করিনি
কালকে আসতে বলেছি। তুমিও তো বাসায় থাকবে। ছেলেটার সাথে কথা বলে দেখো। আমার তো ছেলেটাকে পছন্দ হয়েছে। ছেলেটার ব্যবহারও অনেক ভালো
— তোমার পছন্দ হলে রেখে দাও
— তারপরও তুমি একবার কথা বলে দেখো
— আচ্ছা
শফিক আহমেদ খেতে বসছিলেন হঠাৎ তার মোবাইলে কল আসলো।
— স্যার আপনাকে একটু বাস স্টান্ডে আসতে হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ
শফিক আহমেদ না খেয়েই বেড়িয়ে পড়লেন। বাস স্টান্ডে যাওয়ার পর কনস্টেবল বললেন, স্যার এই ছেলেটা ব্যাগে করে মানুষের কাঁ’টা মা’থা নিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা হাতে- নাতে ধরেছি
শফিক আহমেদ ভাবলো এটা সাকিবের মা’থা নাতো। ওর মা’থাও তো বডির সাথে পাওয়া যায়নি। যদি তাই হয় তাহলে এই কেসটা ক্লোজ হয়ে যাবে। কিন্তু যখন কাঁটা মা’থাটা দেখলেন তখন হতাশ হয়ে গেলেন। এটা সাকিবের না
কিন্তু এর বডিটা কোথায়। কোনো থানায় এরকম কোনো মামলাও হয়নি। সাকিবের বডি পাওয়া গেছে কিন্তু মা’থা পাওয়া যায়নি। আর এখানে একটা কাঁ’টা মাথা। এই দুইটা খু’নের মিল রয়েছে। একটার সাথে আর একটার যোগসূত্র রয়েছে। এখন তো সব প্রমান আছে। উপর থেকে অনেক চাপ আসছিলো। এখন কিছুটা সমাধান হয়ে গেলো।
শফিক আহমেদ কল দিয়ে আরও পুলিশ আসতে বললেন। প্রত্যেকটা গাড়ির যাত্রীকে লিস্ট দেখে চেক করতে বললেন।
ছেলেটা শফিক আহমেদ এর পা জড়িয়ে ধরে বললেন, স্যার বিশ্বাস করেন আমি কিছুই জানি না। এই ব্যাগ ও আমার না।
কনস্টেবল বললো, স্যার ব্যাগ আমরা ওর কাছ থেকেই পেয়েছি
— স্যার আমার পাশের সিটে একজন বসা ছিলো সে আমাকে বললো, আমার ব্যাগটা একটু দেখবেন আমি খাবার নিয়ে আসতেছি।
অনেকখন হয়ে গেছিলো কিন্তু তিনি আসছিলেন না। আর এদিকে আমার ওয়াশরুমেও যেতে হতো। তাই আমি ব্যাগ সাথে নিয়েই গাড়ি থেকে নামি। আমি জানতাম না ব্যাগের ভিতর কি ছিলো। খুলেও দেখিনি। পুলিশ যখন চেক করলো তখন জানতে পারি
— স্যার ওকে আমাদের সন্দেহভাজন মনে হচ্ছিলো। হাঁটার সময় আমাদের সাথে ধাক্কাও খেয়েছিলো। তারপর যখন আমরা এর ব্যাগ চেক করি তখন দৌড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলো
শফিক আহমেদ রেগে গিয়ে ছেলেটাকে থা’প্প’র মারলো। তুই কিছু না জানলে পালাবার চেষ্টা কেনো করেছিলি?
— স্যার ওরা বলছিলো গাড়ি এখনই ছেড়ে দিবে। তাই আমি ভয় পেয়ে দৌড় দিছিলাম। ঢাকাতে আমার কালকে সকালে ইন্টারভিউ আছে। যদি এই গাড়ি মিস করতাম তাহলে আমার ইন্টারভিউ মিস হতো। আমি অনেক গরিব স্যার। এই চাকরিটা আমার খুবই প্রয়োজন
আমি একটু নার্ভাস থাকি সবসময়। এটা আমার সমস্যা তাই আমাকে তাদের সন্দেহভাজন মনে হয়েছে। আর আমি তাদের ইচ্ছা করে ধাক্কা দেইনি। কেও একজন আমাকে ধাক্কা দিয়েছিলো
বিশ্বাস করেন স্যার আমি কিছুই জানি না। দয়া করে আমাকে যেতে দিন।
শফিক আহমেদ কনস্টেবলদের বললেন কাউন্টার থেকে ওই লোকটার নাম খুজে বের করো। আর সিসিটিভির ফুটেজ বের করো
ছেলেটাকে বললো, তোর নাম কি?
— মেহেদী স্যার
পুলিশ কাউন্টার থেকে জানতে পারলো মেহেদীর পাশে কে বসা ছিলো। তার নাম হারুন। কিন্তু পুলিশ যখন সিসিটিভিতে তাকে দেখলো তখন অবাক হয়ে গেলো কারন সে একজন বৃদ্ধ ছিলো। বয়স ৬০/৭০ হবে। আর তার সাথে কোনো ব্যাগ ও ছিলো না
চলবে—