মীরার সংসার পর্ব – ৮

0
1058

#মীরার সংসার
#তিথি সরকার
#পর্ব-৮

১৫.
মন্দির থেকে অলস পায়ে হাঁটতে হাঁটতে বাইরে বেরিয়ে আসে তারা।নিজের দিকে বেশ অনেক দোকান পাট নিয়ে গড়ে উঠেছে মহাকাল মার্কেট।এখানে পাওয়া যায় লোকাল নানান রকম শীত পোশাক, গয়না গাটি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র।মীরা ফড়িং এর মতো তিড়িংবিড়িং করতে করতে বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করতে শুরু করে। রোহন লক্ষ্য করলো আপাতদৃষ্টিতে শান্ত, চুপচাপ মেয়েটি আসলে কতোটা প্রাণবন্ত।বেড়াতে এসে যেন মীরা একটা খোলশ মুক্ত হয়েছে।কখন থেকে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বকবক করেই যাচ্ছে রোহনের সাথে। কখনো কখনো নিজে নিজেই হেসে উঠছে।বাতাসে মৃদু উড়ছে ওর মুখের দুপাশে পরে থাকা ক’গাছি চুল।রোহন মুগ্ধ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে যাচ্ছে ওর প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি। যেনো চোখ দিয়ে মেপে নিচ্ছে মীরার দুই ঠোঁটের ভাঁজ,চোখের খাঁজের গভীরত্ব বা অতিরিক্ত হাসির দমকে কেমন ছলছল করছে ওর চোখ জোড়া।
মীরা হঠাৎই রোহনের দিকে তাকিয়ে অপ্রতিভ হয়ে যায়। থতমত খেয়ে বলে,

“কী দেখছো,ওভাবে?”

রোহন ঘন হয়ে আসা আওয়াজে জবাব দেয়,

“তোমাকে। ” চোখের তারা এখনও মীরার মুখের উপরই স্থির।নিষ্পলক দৃষ্টি দিয়ে যেনো শুষে নিচ্ছে ওর অন্তরাত্মা।

মীরার অপ্রস্তুত হয়।লজ্জায় গাল গরম হয়।ফর্সা,মসৃণ ত্বক ভেদ করে লালিমা দেখা দেয় গালে।মীরা মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে বিড়বিড় করে,

“ইশশ!”

কথা প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলে মীরা,

“তোমার হাতে ওটা কি?”

“ইট’স এ সারপ্রাইজ ফর ইউ।”সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে উত্তর দেয় রোহন।
মীরা আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।ওর হাতটা আলগোছে ধরে হাটতে থাকে। তাদের পরবর্তী গন্তব্য বাতাসিয়া লুপ ও ঘুম স্টেশন।

দার্জিলিং গিয়েছেন অথচ বাতাসিয়া লুপে যাননি এরকম ভ্রমণপ্রেমীর সংখ্যা নেহায়ত খুব কম। দার্জিলিংয়ের এক নয়নাভিরাম দৃশ্য এখানে উপভোগ করা যায় যা কতটা অসাধারণ তা নিজের চোখে না দেখলে ধারণা করাটা কঠিন। দার্জিলিংয়ের বিখ্যাত টয় ট্রেনে বসে গেলে বাতাসিয়া লুপে আসতেই হবে।

হিল কার্ট রোডে অবস্থিত বাতাসিয়া লুপ দার্জিলিংয়ের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। শহর থেকে দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটারের।ট্যাক্সিতে করে সময় লাগবে মাত্র ২০মিনিট। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে দার্জিলিং শহরটি। তাই বাতাসিয়া লুপ এবং রেলস্টেশন বা রেল লাইনও অনেক উপরে। এটি ভারতীয় রেলের সর্বোচ্চ রেল স্টেশন। বাতাসিয়া অর্থ বাতাসের জায়গা। লুপ মানে বাঁক।
এখান থেকে সরাসরি কাঞ্চনজঙ্ঘা, অন্নপূর্ণা ও অন্যান্য হিমালয় শৃঙ্গের চূড়া দেখতে পাওয়া যায়।
লুপের চারপাশে নানাপ্রজাতির ফুলের সমাহার। পিন্টারেস্টমূলত পাহাড়ের শীর্ষে অবস্থিত এই কেন্দ্রটি। দেখতে অনেকটা তাই মালভূমির মতো। কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। ব্রিটিশরা দার্জিলিংকে তাদের গ্রীষ্মকালীন অবসর যাপনের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল। যার ফলস্বরূপ ১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাতাসিয়া লুপ। বাতাসিয়া লুপের প্রবেশপথে রয়েছে স্ট্রিটফুডের সম্ভার। ভেতরে বিশাল এক চত্বর। সাজানো গোছানো ছিমছাম পরিবেশ। বিশাল ফুলের বাগান।

মুগ্ধ দৃষ্টিতে মীরা চারপাশে নজর বুলিয়ে যাচ্ছে।কখন যে রোহনের থেকে একটু পিছিয়ে পরলো! আশেপাশে প্রচুর পর্যটকের ভিড়।সবাই নিজদের মতো ব্যস্ত।হঠাৎ নজর গেলে পাশে দু-তিনটে ছেলে মীরার দিকে কেমন একটা নজরে তাকিয়ে আছে। কেমন একটা বিশ্রী ইঙ্গিত করছে!মীরার গা ঘিনঘিন করে উঠলো।একছুটে এসে সে রোহনের গায়ের সাথে সংকুচিত হয়ে দাঁড়ালো। রোহন ভ্রু উঁচিয়ে মীরার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো,কি হয়েছে?

তারপর মীরার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই সেও ছেলে গুলোকে দেখতে পেলো।রোহন এক হাতে মীরার কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।আকস্মিক ঘটনায় মীরা হতভম্ব হয়ে গেলো। সাথে সাথেই রোহন মীরার কপালে একটা স্পর্শ চুমু এঁকে দিলো।মীরা বিস্মিত, নির্বাক!লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠেছে।নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ পাকিয়ে বললো,

“ইশশ,কি হচ্ছেটা কি!এতো এতো লোকের সামনে?”

“ইউ ডোন্ট নিড টু ওয়ারি এবাউট ইট।আমি সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি ইট’স মাই প্রোপার্টি!দিস টেরিটরি বিলংস টু মি!”

রোহনের চোখে মুখে তীব্র অধিকারবোধ।এর সাথেই রয়েছে মীরার প্রতি অগাধ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।মীরা তাকিয়ে দেখলো ততক্ষণে ছেলেগুলো ওর দিক থেকে নজর ফিরিয়ে খানিকটা দূরে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবুজে ছাওয়া ঘাস, পাতাবাহার-লতাবাহার ইত্যাদি। বাঁধানো পথ। চত্বরের মাঝখানে বিশাল উঁচু কালচে গোলাকার স্তম্ভ। ১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহতদের স্মরণে তৈরি হয়েছে বাতাসিয়া লুপ । বৃষ্টি থেকে রক্ষা কিংবা বিশ্রাম নেয়ার জন্য কিছু ছাউনিও রয়েছে। বাগানের একপাশে দাঁড়ালেই দেখতে পাওয়া যায় টয় ট্রেন। এই ট্রয় ট্রেনে ওঠার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর মধ্যে চেপে বাতাসিয়া লুপ পার হওয়া। ছোট্ট খেলনা রেলগাড়িটা যখন কু ঝিক ঝিক করে হুইসেল বাজিয়ে সবুজ ঘাসে মোড়া নানা রঙের ফুলের বাগানে চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এগিয়ে আসবে দাঁড়াবে আবার পাক খেয়ে চলে যাবে, তখন মন্ত্রমুগ্ধের মত চেয়ে থাকা ছাড়া উপায় নেই।

লুপের বাইরে একটু নিচের দিকে নেমেই পাওয়া গেলো নানা ধরনের রেস্টুরেন্ট।একটা রেস্টুরেন্টের ঢুকে তারা দুপুরের খাবার সেড়ে নিলো।

বাতাসিয়া লুপ এবং আশেপাশের সাইট সিইং করে যখন তারা হোটেলে ফিরে এলো তখন দুপুর তিনটা।রুমে ঢুকেই বেডে শরীর এলিয়ে দিলো মীরা।রোহন সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।দশ মিনিট পর বেরিয়ে এসে বললো,

“বেশি সময় নেই।সব প্যাকিং করে নাও।আমাদের বেরুতে হবে। ”

মীরা অবাক হয়ে বললো,

“মাত্রই তো ফিরলাম! এখন আবার কোথায় যাবো!তাও সব কিছু প্যাকিং করে! ”

রোহনের মুখে দুষ্টমি মাখানো হাসি।মীরা এবার বিভ্রান্ত হয়।
১৬.
সকালবেলায় নাম না জানা পাখিদের কলকাকলীতে ঘুম ভেঙে যায় মীরার।হালকা চোখ পিটপিট করে চাইতেই দেখে পাশে রোহন উপুর হয়ে ঘুমিয়ে আছে। আহা!মানুষটা ঘুমন্ত চেহারায় কি যেনো একটা মায়া!মীরা আলতো করে ছুঁয়ে দেয় রোহনের চোখের পাতা,ঠোঁট, চিবুক। হোমস্টের কাচের জানালা ভেদ করে এক মুঠো নরম রোদ এসে পরেছে মেঝের উপর।একটু ভালো ভাবে কান পাততেই শোনা যাচ্ছে খাদের কিনারায় ঝর্ণার কলকল ধ্বনি। মন এক অন্যরকম ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। রোহনের লোমশ বুকে মাথা ঠেকিয়ে তার শরীরের নিজস্ব গন্ধটা নাকে টেনে নেয় সে।ভেজা ঠোঁট জোড়া আলতো করে ছুঁয়ে যায় রোহনের গলার ভাঁজে। প্রতিউত্তরে তাকে জড়িয়ে ধরা হাতের বাঁধন টুকু আরেকটু শক্ত করে রোহন।সুতীব্র অধিকারবোধে, মীরার কমনীয় কোমরে রোহনের গ্রিপ যেনো আরেকটু নিবিড় হয়ে আসে।যেনো তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, এ জীবনে মীরাই তার প্রায়োরিটি।তার আগে কেউ ছিলো না,আর তার পরেও কেউ থাকবে না।রোহন কিছু সময়ের জন্য সজাগ হয়ে আবারও তলিয়ে যায় ঘুমের জগতে। নরম, উষ্ণ শয্যা ত্যাগ করে মীরা কাঠের মেঝেতে পা রাখে আর সাথে সাথে তার সারা শরীর তীব্র শীতে শিরশির করে ওঠে।আচ্ছা, এই ভোর সকালে ‘তকদা’র তাপমাত্রা কত হতে পারে? কাল রাতে ঘুমোনোর আগে দেখেছিলো ১০° সেলসিয়াস। এখন কি বেড়েছে নাকি কমেছে?
মীরা বিছানার পাশ থেকে মোটা একটা শাল জড়িয়ে নেয় শরীরে। রোহনকে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরে রেখেই সে পা টিপে টিপে বাইরে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চারদিকে তখন কেবল ভোরের সূচনা।আড়মোড়া ভেঙে জেগে উঠছে স্নিগ্ধ চা বাগান। পূর্বাকাশে সূর্যের লালিমা ছড়িয়ে পরেছে।একটু পরেই আকাশের বিশাল ক্যানভাসে মাথা তুলে দাঁড়ালো কাঞ্চনজঙ্ঘা। সূর্যের রশ্মি চূড়াতে পরতেই যেনো হীরকখণ্ডের মতো জ্বলজ্বল করে উঠো পুরো উত্তরের আকাশ জুড়ে।মেঘের উপর থেকে যেনো কাঞ্চনজঙ্ঘা মাথা বের করে রেখেছে।বারান্দার চারিপাশে এসে জমা হয়েছে খন্ড খন্ড তুলোর মতো মেঘ।মীরার গা ছুয়ে সেগুলো তাকে সিক্ত করে যাচ্ছে। একটা হিম শীতল হাওয়া এসে যেনো মীরার পুরো স্বত্বাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেলো।এতো সুন্দর কেনো হয় পাহাড়ের রুপ!ওই কাঞ্চনজঙ্ঘার পরতে পরতে কি হীরকচূর্ণ রাখা রয়েছে যার আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত হচ্ছে পুরো হিমালয়।

ঠান্ডা বাতাস মীরার শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে এই ঠান্ডাতেও তাই মীরা ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।হঠাৎ পেছন থেকে একটা অভ্যস্ত হাত মীরার শরীরটাকে চাদরের মাঝে নিজের শরীরের সাথে জড়িয়ে নিলো।একটু ওম পেয়ে মীরা ছোট আদুরে বেড়াল ছানার মতো গুটিয়ে গেলো ওই হাতের বাঁধনে।রোহন সদ্য ঘুম থেকে ওঠা ভারী গলায় বললো,

“এটা কিন্তু ঠিক হলো না,মীরু।তুমি আমাকে ছাড়াই সকালে প্রথম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে ফেললে!আমাকে ডাকলে কী হতো?”

মীরা হেঁসে রোহনের দুহাত জড়িয়ে ধরে। রোহন টুপ করে মীরার ডান গালে একটা চুমু খায়।তারপর বাম গালেও।শিরশির করে ওঠে মীরা।

‘তাকদা’ কথাটি এসেছে একটি লেপচা শব্দ ‘তুকদা’ থেকে, যার আক্ষরিক অর্থ ‘কুয়াশা’। এই নামের কারণ প্রায়ই এই সমগ্র জায়গাটি ‘কুয়াশাচ্ছন্ন’ থাকে।
দার্জিলিং থেকে ২৮কিমি দূরে, ৪০০০ ফুট উচ্চতায় এক শান্ত, সুন্দর, চা বাগান ও জঙ্গল ঘেরা জনপদ তাকদা। কুয়াশামাখা পাকদণ্ডী, পাখিদের কলতান, ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হাঁটাপথ, একাধিক পাহাড়ি ঝর্ণার অবিরত বয়ে চলার আওয়াজ তাকদার ‘USP’।
ঊনিশের দশকের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ মিলিটারি ক্যান্টনমেন্ট গড়ে ওঠে তাকদা এ। এই সময়ে বেশ কিছু সিনিয়র অফিসাররা এই জায়গা পরিদর্শনে আসতেন প্রায়শই। এরই ফলস্বরূপ এখানে প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি ব্রিটিশ বাংলো গড়ে ওঠে। এগুলির সবই অন্তর্সজ্জা একদম ব্রিটিশ ধাঁচের এবং একই রুচিসম্পন্ন। এরপর ইংরেজরা যখন এদেশ ত্যাগ করে তখন এই বাংলোগুলি নিলাম হয়, যার মধ্যে বেশির ভাগই এখন ‘হেরিটেজ বাংলো’ বা ‘হোমস্টে’ হিসেবে বহু স্থানীয় মানুষের জীবিকার্জনের উৎস। বেশ কিছু স্কুলও হয়েছে এই বাংলোগুলিতে।

এমনই একটি হোমস্টেতে উঠেছে মীরা এবং রোহন।কাল সন্ধ্যার মুখে তারা এসে উঠেছে এখানে। এটা দার্জিলিং এর অন্যতম অফ বিট ডেসটিনেশন। এখানে তেমন মানুষের আনাগোনা নেই।চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ। বিভিন্ন ঘরফেরতা পাখির কথোপকথন। আর সবচেয়ে মনে রাখার মতো সারাক্ষণ একটি অদৃশ্য ঝরণার আওয়াজ। এই ধ্বনিমূর্ছনা মাতাল করল নিমেষে।

সকাল ন’টায় তাদের রুমে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হলো।ব্রেকফাস্ট করে তারা বেরিয়ে পড়লো আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে একটু ঢু মারতে।পারতপক্ষে তকদার এদিকে প্রচুর ঘুরাঘুরির জায়গা। কিন্তু জন মানুষের নজর এড়িয়ে।
দার্জিলিং এর সবচেয়ে সুন্দর, পাহাড়ী ঢালে সুবিন্যস্ত চা বাগান রংলি-রংলিয়ট চা বাগান এখানেই। এই চা বাগানের শোভা সামনে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। মনেহয় যেন শিল্পী খুব যত্ন করে তার তুলির টানে এঁকে দিয়েছেন এই সুন্দরী পাহাড়ী রাজকন্যাকে। এছাড়া গিলে নামরিং, তিস্তা ভ্যালি প্রভৃতি চা বাগান গুলিও এখানেই। নানা পাখির ডাকে ও রূপে- গন্ধে- শোভায় সে যেন এক মায়াবী পরিবেশ।
আর এখন মার্চ মাস হওয়ায় চা-বাগানের চারিদিকে সবুজের ছড়াছড়ি। কেননা,ডিসেম্বর -মার্চ চা পাতা তোলা হয় না।

রংলি রংলিয়ট চা বাগান থেকে আরেকটু নিচের দিকে ২ কিমি নামলেই গিলে ভনজং বাজার ক্রশিং ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে দাঁড়িয়ে কালিম্পং, দুরপীন, টাইগার হিল, রাম্বি খোলা প্রভৃতি জায়গা গুলির দেখা যায়। এ দৃশ্য এক কথায় অনবদ্য। এছাড়া তাকদা বাজার থেকে ৬ মাইল যেতে রয়েছে তাকদা অর্কিড সেন্টার। রং বেরংয়ের অর্কিড দেখে মুগ্ধতার রেশ রয়ে গেলো অনেকক্ষণ ।

হোমস্টেতে ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে একটা ইউরোপীয় স্টাইল কটেজের সামনে নামলো।পাহাড়ের পাথুরে পথে রোহনের হাত ধরে সাবধানে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে মীরা।পেছন থেকে একটা কিন্নর নারী কন্ঠের ডাকে থেমে গেলো তারা।

পেছনে ফিরে দেখতে পেলো তৃষা ডাকছে ওদের। তৃষা ছিলো রোহনের ব্যাচম্যাট।এগিয়ে গিয়ে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলো রোহন,

“কিরে,কি খবর তোর?”

“আমার খবর তো ভালোই।তা হানিমুনে বুঝি?”

“হ্যাঁ,সেরকমই কিছুটা।”

এবার মেয়েটি মীরার দিকে তাকিয়ে বললো,

“হাই নীরা!তুমি আমায় চিনবে না।কিন্তু আমি কিন্তু তোমায় অনেক আগে থেকেই চিনি।আমি রোহনের ফ্রেন্ড তৃষা।”

মীরা কিছুটা ইতস্তত করে উঠলো।মেয়েটা তাকে নীরা বলে ডাকছে কেনো!

“শোনো নীরা!তোমার বিয়েতে আসতে পারিনি ঠিকই। কিন্তু তোমার প্রতি তোমার এই পতিদেবের প্রেম হাবুডুবু খাওয়ার ইতিহাস কিন্তু ঠিকই জানি। ”

বলেই জোরে জোরে হাসতে লাগলো তৃষা।রোহন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“ওর নাম নীরা নয় তৃষা!ওর নাম মীরা।”

তৃষা সন্দিহান চোখে তাকায় রোহনের দিকে। তারপর একটা ঝাড়ি মেরে বলে,

“ইয়ার্কি মারছিস নাকি! এতোদিন ধরে না জানলাম ওর নাম নীরা।এখন মীরা হয়ে গেলো কিভাবে? ”

“এটাই তো ভুল হয়ে ছিলো রে তৃষা।এই এক নামের জন্যই তো যতো গন্ডগোল! ”

মীরা বিস্ময়ের সপ্ত আসমান থেকে পরে।এসব কি বলছে ওরা!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে