মীরার সংসার পর্ব – ৫

0
1277

#মীরার সংসার
#তিথি সরকার
#পর্ব-৫

৯.
হাসপাতালের কেবিনে শুভ্র বেডে মীরা ঘুমিয়ে আছে। তার হাতে স্যালাইন চলছে।কপালের একপাশে ব্যান্ডেজ বাধা রয়েছে।চারদিক থেকে মৃদু ফিনাইলের গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে রয়েছে । মাথায় দ্রিম দ্রিম করে যেনো এখনও কোনো একটা ভারী শব্দ বেজে চলেছে।মীরার কানে হালকা যান্ত্রিক আওয়াজ প্রবেশ করছে।ভারী চোখের পাতাগুলো বহু কষ্টে খোলার চেষ্টা করলো সে।উজ্জ্বল আলো চোখে পরতেই বিরক্তিতে চোখ কুঁচকে এলো।হাতের উপর বহু পরিচিত একটা স্পর্শ টের পেলো।তার হাত ধরে আছে যেনো পরম ভরসার একটি হাত।পরম মমতায়,পরম যত্নে।
মীরা চোখ পিটপিট করে তাকালো।তবে চোখের সামনে ছাদের সাদা সিলিং ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আস্তে আস্তে চোখের সামনে একটা পরিচিত মুখশ্রী ভেসে উঠলো,রোহনের।সে ঠোঁট নেড়ে মীরাকে কিছু একটা বলছে।চোখে স্পষ্ট উদ্বেগের ছাপ।কিন্তু কি বলছে রোহন তা মীরার কানে আসছে না।সে আবার চোখ বুজে নিলো।লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিয়ে আবার চোখ মেললো।এবার রোহনের কথাগুলো শুনতে পেলো মীরা।

“মীরা,মীরা।কি হয়েছে? তোমার কোনো সমস্যা হচ্ছে? কথা বলো প্লিজ। ”

কয়েকটা ঢোক গিলে আস্তে করে বলল মীরা,

“আমি কোথায় আছি?”

“তুমি আমার কাছে আছো মীরা।আজকে কি হতে পারতো তার ধারণা আছে তোমার? গাড়ি ছাড়া একা একা কেনো বেরিয়েছিলে তুমি? ”

গলার স্বর খানিকটা উঁচু হয়ে যায় রোহনের।কিন্তু ততক্ষণে মীরা মোটামুটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল সে,

“তুমি আমায় বকছো?কি করেছি আমি এমন?আমি কি কখনও একা বেরোই না?বিয়ের আগে তো আমি একাই চলাফেরা করেছি।”

মীরার উপর আচমকা রাগ দেখানোতে রোহন নিজেই একটু অসহায় বোধ করল।মীরার গালে আদুরে হাত বুলিয়ে বলল,

“ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড, মীরু!বিয়ের আগে আর বিয়ের পর এক নয়।বিয়ের আগে তোমার লাইফে আমি ছিলাম না।এখন আমি আছি আর সাথে আছে বিপদ।”

মীরার চোখ দিয়ে এখনও টপটপ করে জল ঝরছে।খোলা জানালা দিয়ে আসা জোর বাতাসের দমকে ঈষৎ কেঁপে উঠছে চিকন ঠোঁট জোড়া। রোহন জানালা লাগিয়ে দিয়ে আবার এসে মীরার কাছে বসলো।গালে লেপ্টে থাকা ছোট ছোট চুলগুলোকে কানের পিছনে গুঁজে দিয়ে বললো,

“ডোন্ট ক্রাই।এতো কাঁদার মতোও বকি নি।”

“একটু জল খাবো।”

“সরি,মীরা।তোমার স্যালাইন চলছে।এখন তো কিছু দেওয়া যাবে না।একটু পরে খাও।”

“এখন ক’টা বাজে?”

নাক টেনে চোখের জল মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করে মীরা।

“সাড়ে বারোটা।”

“রাত?”

“না,দুপুর সাড়ে বারোটা। ”

কিছুক্ষণের জন্য হা হয়ে যায় মীরার মুখ।কোনো রকমে মুখে কথা ফুটিয়ে বলে,

“কাল দুপুরে না আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম! ”

“তুমি প্রায় দশঘন্টা সেন্সলেস ছিলে মীরা।”

বিস্ময়ে চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায় তার।কিন্তু মুখে বলে,

“আমায় একটু বসিয়ে দাও না!আর শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।”

মীরার পরনের শাড়ি আগেই হসপিটাল থেকে চেঞ্জ করে দিয়েছে।তার গায়ে সবুজ একটা ড্রেস।
রোহন খুব সাবধানে মীরাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বসায়।খুব যত্নে। পরে পেছনে বালিশ গুলো ঠিক করে দেয়।মীরা মাথা ঠেকিয়ে রাখে রোহনের বুকে। কি জোরে চলছে তার হৃদস্পন্দন!বুকের ভেতরের লাব ডাব শব্দ যেনো ছড়িয়ে পরছে মীরার শিরায় উপশিরায়।মীরা এক হাত দিয়ে জড়িয়ে নেয় রোহনের কোমর। মীরার ক্যানোলা লাগানো হাতটাকে আস্তে করে নিজের উরুর উপর রাখে রোহন।খুব সন্তর্পনে দুহাত দিয়ে মীরাকে জড়িয়ে রাখে সে।মীরার কানের কাছে খুব আস্তে করে বলে,

“আমার নিজের চেয়েও তোমার অস্তিত্ব আমার কাছে বেশি দামী।আমি তোমাকে হারানের ঝুঁকি আর নিতে চাই না।”

“কাল কি হয়েছিলো?ওই লোকটাই বা কে ছিলো?তুমি কি আমায় কিছু জানাবে?”

“এখন না মীরু!তুমি এখন ক্লান্ত,অসুস্থ । যা জানার তা পরে জানলেও চলবে।”

বিরোধাভাস করে ওঠে মীরা,

“আমি মোটেও অসুস্থ নই।বলুন না আমায়।ওই লোক নীরাকে কিডন্যাপ করেছিলো?তার মানে নীরা সত্যি কথা বলতো?”

“কাম ডাউন মীরা। এতো উত্তেজিত হতে মানা করেছে তোমায় ডক্টর।তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে। তবে ধীরে ধীরে। ”

মীরা হাল ছেড়ে দিলো।রোহন একবার যখন না করছে তো মীরা হাজার মাথা কুটলেও সে কিছু বলবে না।তাই বেশি উচ্চবাচ্য না করে রোহনের বুকের কাছে পরে রইলো সে।রোহনের হাতের আঙ্গুলগুলি অবিশ্রান্ত ভাবে মীরার চুলের ভেতরে চলছে।

হঠাৎ কেবিনের দরজায় আওয়াজ হওয়ায় খানিকটা সরে বসে রোহন।আস্তে করে মীরাকে বালিশের সাথে ঠেস দিয়ে বসিয়ে দেয়।

কেবিনের ভেতর প্রবেশ করে মীরার মা বাবা।ওর মা এসেই আগে মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে নেন।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,

“জামাই যখন ফোন করে বললো, তোকে পাওয়া যাচ্ছে না।আমার মন কু – ডেকে উঠেছিলো!মা কালীকে কতো ডেকেছি।ঠিক হয়ে যাবি,দেখিস মা।”

মাকে কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে রইলো মীরা।কতোদিন হলো মায়ের কাছে যায় না।বিয়ের পর মাত্র দুইদিনের জন্য গিয়ে বাপের বাড়ি থেকেছিলো এই ছয় মাসের মাঝে।মায়ের গা থেকে মিষ্টি ওমটা যেনো টেনে নিচ্ছে সে।মায়ের বুকে এসেই যেনো সকল দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তির অবসান।

হঠাৎ মীরার নজর গেলো বাবার পেছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নীরার দিকে। সাথে সাথে তার মুখভঙ্গি খানিকটা পাল্টে গেলো।নীরা ধীরে ধীরে হেঁটে এসে বেডের পাশে টুলটাতে বসলো।মলিন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছিস মীরা?” শরীর কি এখনও খুব খারাপ? ”

মীরা মাথা দুলিয়ে না বোঝালো।তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে নীরা,

“মা,বাবা! তোমরা একটু বাইরে যাও তো।আমার মীরার সাথে কথা আছে। ”

নীরার কথায় অসন্তুষ্ট হলো রোহন।তবে রাগটাকে দমিয়ে বললো,

“তোমার ওর সাথে কিসের কথা?আর ডক্টর ওকে বেশি কথা বলতে,ট্রেস নিতে বারণ করেছে।”

“চিন্তা করো না।শুধু মা বাবাকে বাইরে যেতে বলছি।তুমি থাকতে পারো।আর আমি এমন কিছু বলবো না যাতে মীরার ক্ষতি হয়।”

“তুমি চাইলেও আমি তোমার সাথে মীরাকে একা ছাড়তাম না।”

নীরা অল্প হাসে।তাদের মা-বাবা মীরার মুখের দিকে তাকিয়ে কেবিনের বাইরে চলে যায়। মেয় আর মেয়ে জামাইয়ের কথা তারা কিছু বুঝতে পারছেন না।

মা-বাবা বেরিয়ে যেতেই মীরার একটা হাত ধরে বলে নীরা,

“আমায় ক্ষমা করে দিস রে মীরা।বারবার আমি তোকে ভুল বুঝে গেছি। আর কষ্ট দিয়ে গেছি।”

মীরা একটা ছোট নিঃশ্বাস ফেলে বলে,

“এতে ক্ষমা চাওয়ার কি আছে? তোর জায়গায় আমি হলেও এভাবেই ভাবতাম ঘটনাটা।সত্যিই সেদিন তোকে কিডন্যাপ করা হয়েছিলো। ”

“তার জন্য নয় রে মীরা। আমি ইচ্ছে করে তোর ভালোবাসার মানুষটাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলাম।তোর সংসার ভাঙার চেষ্টা করেছিলাম।এটা কি কম লজ্জার?”

“তুই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাতেই আমি খুশি নীরা।কিন্তু ফারদার এই ঘটনা ঘটাতে যাস না কিন্তু। ”

মীরার শেষের কথায় রোহনও ভড়কে গেলো।কি তেজ রে বাবা!

এবার রোহন নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“পারলে ঋজুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিও।ছেলেটা তোমাকে খুবই ভালোবাসে।”

“আমি আমার সব ভুল বুঝতে পেরেছি, রোহন।এতো এতো অপমান আর অবহেলার পরও ঋজুর আমার প্রতি কেয়ারই বুঝিয়ে দেয়।আমার প্রতি ওর ভালোবাসা।আর আমার ভুলটাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।”

এই বলে নীরা চোখ থেকে গড়িয়ে পরা একটা ফোটা অশ্রু মুছে নেয়।

১০.
প্রমিলা দেবী চিন্তায় অস্থির হয়ে আছেন।সেই কোন সকালে রোহন ফোনে মীরার একটা খবর দিয়েছিলো।এরপর থেকে আর কোনো পাত্তাই নেই।টেনশনে তিনি পুরো ড্রইংরুমের এমাথা ওমাথা পায়চারী করে চলেছেন।দরজায় কলিং শব্দ হতেই পায় ছুটে এসে দরজা খুলে দেন তিনি। দরজা খুলতেই দেখতে পান মীরাকে পাঁজা কোলা করে রোহন দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার মাথায় ব্যান্ডেজ।একদিনে চোখ মুখ বসে গেছে।ক্লান্ত হয়ে নিশ্চয়ই এভাবে রোহনের বুকের সাথে মিশে আছে। উনার চোখে জল আসে মেয়েটার অবস্থা দেখে।সরে গিয়ে তাদের ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিলেন তিনি। মীরার অবশ্য শাশুড়ির সামনে এভাবে বরের কোলে চড়ে আসতে লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছিলো।রোহনেকে সে বার কয়েক বলেছে নামিয়ে দিতে কিন্তু এই লোক শুনলে তো।তাই লজ্জার হাত থেকে নিস্তার পেতে ঘুমের ভান ধরে রোহনের সাথে মিশে আছে এভাবে।

“ওকে নিয়ে সোজা ঘরে চলে যাও রোহন।মেয়েটার উপর দিয়ে যা ঝড় বয়ে গেলো!আর আহনাফের কি ব্যবস্থা করলে?”

“ওকে মেন্টাল এসাইলামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে মা।ডক্টরদের ধারণা,ও পুরোপুরি আউট অব মাইন্ড। ওর কথা বাদ দাও এখন।”

“হ্যাঁ,তুমি মীরাকে নিয়ে যাও আমি খাবার পাঠাচ্ছি। ”

মীরার ছাপ্পান্ন কেজির ভারী শরীরটাকে নিয়ে রোহন অবলীলায় দুতলায় এসে পৌঁছালো। মীরা ওর বুকে হালকা একটা কিল দিয়ে বললো,

“তুমি একটা নির্লজ্জ মানুষ। ”

রোহন তার ঠোঁটে চমৎকার হাসি ফুটিয়ে তোলে।প্রাণ খোলা হাসি।আর বলে,

“নিজের বউয়ের জন্য এতটুকু নির্লজ্জ হওয়াই যায়।”

রুমে এসে মীরাকে নিয়ে বিছানার কাছে যেতে চাইলে মীরা আচমকা বলে ওঠে,

“এই,এই,এখানে না,এখানে না।সোজা ওয়াশরুমে নিয়ে নামিয়ে দাও।”

রোহন এবার চোখে মুখে দুষ্টু হাসি ফুটিয়ে বলে,

“কী ব্যাপার!মাথায় চোট পেয়ে বউটা কি আমার একটু বেশি রোমান্টিক হয়ে গেলো নাকি?হুম,হুম!”

মীরা কপট রাগ দেখিয়ে বলে,

“ইশশ,তুমিও না!এবার নামাও।আর কাবার্ড থেকে জামা কাপড় গুলো দাও একটু।এইসব পাল্টে পরে বিছানায় উঠবো।গা থেকে একটা হসপিটাল হসপিটাল গন্ধ আসছে।”

“আচ্ছা ঠিকাছে। কোনো দরকার লাগলেই আমাকে বলবে,কেমন?”

মীরা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজেই এসে বিছানায় বসলো।রোহনের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এবার তো কাহিনী বলো!”

“আরে আমায় ফ্রেস তো হতে দাও।”

বলেই রোহন ঢুকে গেলো বাথরুমে। মীরা তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

রোহন বেরুতেই মীরা কিছু বলতে নিলে ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে ওঠে রোহন,

“নট নাও।আমি খাবার নিয়ে আসছি।খেতে খেতে শুনবে।”

মীরা আবারও মুখ গেজ করে বসে রইলো।একটুপর রোহন ধোঁয়া উঠা গরম ভাতের উপর ঘি ছড়িয়ে সাথে ঝরঝরে আলু ভাজা নিয়ে আসে।প্লেট নিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে সুন্দর করে ভাত মেখে যত্ন করে মীরার মুখে তুলে দেয়।মীরা ভাত চিবুতে চিবুতেই বলে,

“আরে,এবার তো বলো!”

“বলছি বাবা বলছি!আহনাফ ছিলো আমার ছোটবেলার বন্ধু। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি সবই আমরা একসাথে কাটিয়ছি।”

“ওই লোকটা তোমার বন্ধু! ” বিস্মিত হয় মীরা।

“ছিলো।ও আমার বন্ধু ছিলো মীরা।ছোট থেকে ও ভালোই ছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে কেমন যেনো পাল্টে গেলো।আমাদের চেনা আহনাফকে কেউ আমরা খুজে পেতাম না।কেমন গম্ভীর, শান্ত,একটু কিছু বললেই রেগে যেতো।আসলে তেরো বছর বয়সেই ওর মা মারা গেছিলো তো।সেই ধাক্কাটা হয়তো নিতে পারেনি।আমরা সবাই ভেবেছিলাম হয়তো ধীরে ধীরে ও ঠিক হয়ে যাবে।আমরা সবাই ওকে সময় দিতাম।কিন্তু সমস্যাগুলো সময়ের সাথে সাথে বাড়তে লাগলো।ও কেমন যেনো হিংস্র হয়ে উঠতে লাগলো।বেপরোয়া, বেহিসেবী। যা চাই ওর তা লাগবেই।আমরা ওকে বেশি ঘাটাতাম না কেউ।কিন্তু দিন দিন ওর আমার প্রতি ভাবমূর্তি পাল্টাতে লাগলো।ও আমাকে নিয়ে কম্পিটিটর ভাবতে শুরু করলো।”

কথার এই ক্ষেত্রে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস যেনো গোপন করলো রোহন।আবার বললো,

“কিন্তু বিশ্বাস করো,আমি বা আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের কেউ এখনও কোনোরকম বাজে ব্যবহার করিনি।বরং ওকে সাপোর্ট করতাম।কিন্তু আমরা ভুল ছিলাম। ওর অবস্থা ভালো না হয়ে আরও খারাপ হতে শুরু করলো।ও একটা সাইকোতে পরিণত হলো।আর ওর বাবাও ওকে সময় দিতে পারতো না।আমার মনে হয় ও খুব বাজে সিচুয়েশন দিয়ে যাচ্ছিলো।কিন্তু আহনাফ সেটা থেকে বের হতে চাইতো না।আমরা অনেক চেষ্টা করছিলাম ওকে ঠিক করার কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি।জানো,আমাদের সাথে একটা মেয়ে পড়তো নীলিমা বলে।মধ্যবিত্ত পরিবারের খুব ভালো মেয়ে।তখন আমরা সবে মাস্টার্সে পড়ি।আহনাফ পছন্দ করে বসলো ওকে।একদিন সাহস করে প্রোপোজও করে বসলো।”

“তারপর কি হলো?ওই আপুটা কি এক্সেপ্ট করেছিলো?”

জানতে চাইলো মীরা।

“না,নীলিমা ওকে রিজেক্ট করেছিলো।কারণ আমাদের ব্যাচের প্রায় সবাই জানতো ওর এই অবস্থার কথা। আর কেউ কি জেনে শুনে এমন একটা মানুষের সাথে জীবন জড়াতে চাইবে?নীলিমাও চায়নি।কিন্তু একটা রিজেকশনের দাম যে এতো বড়ো হবে তা আমরা কেউ ভাবতে পারিনি।”

“কেনো?কি হয়েছিলো?” মীরার প্রচুর কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো।ততক্ষণে ওর খাওয়া শেষ। মীরার মুখটা সযত্নে মুছিয়ে দিয়ে বললো রোহন,

“তারপর একটা এক্সিডেন্টে নীলিমা পুরো প্যারালাইসিসড হয়ে গেলো।ওর শরীরের নিচের অংশ পুরোটাই অবশ হয়ে যায়। ”

“এমন কী করে হলো!” মীরার কন্ঠে বিস্ময়।

“আহনাফ ওর গাড়ি নিয়ে নীলিমার এক্সিডেন্ট করিয়েছিলো।শুধুমাত্র রিজেকশন সহ্য করতে না পেরে।”

“একটা মানুষ এতোটা অমানবিক কি করে হতে পারে?”

“এন্ড গেস হোয়াট!আহনাফ কিন্তু নীলিমাকেই বিয়ে করেছিলো।”

“কিভাবে? ”

“আগেই বলেছি,নীলিমা মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।তাই যখন আহনাফ ওর বাবার কাছে তার পঙ্গু প্রায় মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যায় তখন নীলিমার বাবা আর না করেনি।একজন মধ্যবিত্ত বাবা আর এরচেয়ে বেশি কি চাইবে।”

“ও মাই গড!ও মাই গড!”

একটা মানুষ এতো ক্রাইম মাইন্ডেড কি করে হতে পারে।এটা ভেবেই মীরার আত্মার জল শুকিয়ে গেলো।

“আচ্ছা, সবই বুঝলাম। কিন্তু তোমার বন্ধু নীরাকে কেনো কিডন্যাপ করলো?এতে কি স্বার্থ?”

“বললাম না,ও কোনো একটা কারণে আমায় নিজের শত্রু ভাবতে শুরু করে। তাই ভাবে যে আমার হবু বউকে তুলে নিয়ে গেলে তো আর আমার বিয়ে হচ্ছে না।কি সব চিন্তা ভাবনা।কিন্তু ওর এই কাজ তো আমার জন্য শাপে বর হয়ে গেলো।যখন দেখলো নীরাকে কিডন্যাপ করে কোনো লাভাই হলো না তাই এবার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে তোমায় কিডন্যাপ করে আমায় ঘোরাতে চেয়েছিলো।এসব টেন্ডার, কোডিং এসব ফাও কথা।দেখো তো এসবের কোনো মানে হয়?”

রোহনের সব কথা শুনে মীরার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো।কি বলছে এসব জাস্ট একজন মানুষ খামখেয়ালিপনা করতে গিয়ে তাদের দুবোনকে কিডন্যাপ করে ফেললো!এটা কি ভাই!কিন্তু পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে বললো,

“সবই বুঝলাম। কিন্তু নীরাকে কিডন্যাপ করায় তোমার শাপে বর হলো মানে?আর নীরাকে যদি কিডন্যাপই করা হয়ে থাকে তো ওই চিঠি কোথা থেকে এলো?আর ঋজু দার সাথে বিয়েটাই বা হলো কিভাবে? ”

“ইয়ে,মানে,,আসলে,, ওই আরকি….

রোহন এবার আমতা আমতা করতে লাগলো।মীরা বললো,

” ইয়ে,মানে,আসলে না করে এবার বলে ফেলো।”

“আসলে,নীরাকে না আমি আর ঋজুও কিডন্যাপ করার প্ল্যান করছিলাম।”

রোহনের কথা শুনে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকে নীরা,

“মানে,নীরাকে কতোজন মিলে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলে আমায় একটু বলবে।হে ঈশ্বর! ”

” সময় হলে আরও অনেক কিছু জানবে তুমি, সোনা।”

বলেই রোহন খাবারের প্লেটটা নিয়ে উঠে চলে যায়। আর মীরা ধ্যানগ্রস্ত হয়ে বসে রইল।কি হচ্ছে এসব!

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে