মিশন হার্ডডিস্ক পর্বঃ ০৬(শেষ পর্ব)
লেখকঃ আবির খান
আর সাথে সাথেই পিছন থেকে তিনটা গুলি এসে প্রিতমের গায়ে লাগে। আর প্রিতম ঠাস করে নিচে পড়ে যায়।
সালমানঃ প্রিতম….
শামিমঃ দোস্ত….
বাকিরাঃ স্যার…
প্রিতম নিথর হয়ে পড়ে আছে।
অন্যদিকে,
প্রিতমের মা আর মায়া বাসায় বসে খুব চিন্তা করছিল। অনেকটা সময় হয়েছে প্রিতমের কোন খবর নেই। প্রিতমের মা’তো সেই কবে থেকেই অস্থির হয়ে আছে৷ এদিক ওদিক করছে। হঠাৎই প্রিতমের মায়ের ফোনটা বেজে উঠে,
মাঃ হ্যালো..
সালমানঃ আন্টি আমি সালমান। (কান্না করতে করতে)
মাঃ সালমান…বাবা তুমি কাঁদতাছ কেন?? আমার প্রিতম ঠিক আছে তো?? (অস্থির হয়ে)
সালমানঃ আন্টি আপনি দ্রুত **** হাসপাতালে চলে আসুন। আমরা গাড়ি পাঠাচ্ছি। তাড়াতাড়ি…
প্রিতমের মা স্তব্ধ হয়ে যায়। তার দুনিয়া যেন মূহুর্তেই অন্ধকার হয়ে যায়। মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলে। একটা মাত্র ছেলে। তাহলে সেও কি বাবার মতো…
মাঃ প্রিতম…(চিৎকার করে)
মায়াঃ মা কি হয়েছে??মা???(চিন্তিত হয়ে)
মাঃ আমার প্রিতম হাসপাতালে…
মায়াঃ কি!!!!
এরপর প্রিতমের মা আর মায়া দ্রুত হাসপাতালে চলে আসে। দুইজনই কাঁদতে কাঁদতে অবস্থা খারাপ। তারা দেখে অনেক আর্মি একসাথে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিতমের মা কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে গিয়ে বলে,
মাঃ আমার প্রিতম কোথায়?? আমার প্রিতম??
সাথে মায়াও বলছে,
মায়াঃ উনি কোথায়?? উনার কি হয়েছে?? আপনারা বলছেন না কেন??
সালমান, শামিম এসে মায়া আর প্রিতমের মাকে শান্ত করার চেষ্টা করে।
মাঃ আমার প্রিতমের কি হয়েছে আমি জানতে চাই। আমাকে দয়া করে কেউ বলো।
সালমানঃ আন্টি ওর গায়ে তিনটা গুলি লেগেছে। খুব খারাপ অবস্থা ওর। আমরা পারিনি ওকে বাঁচাতে।
মায়াঃ কিহহ!! উনি আর বেঁচে নেই??
রায়হান সাহেবঃ বেঁচে আছে। তবে খুবই খারাপ অবস্থা। ডাক্তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
মায়া আর প্রিতমের মা হাউমাউ করে কান্না করছে। সাথে প্রিতমের বন্ধুরা আর সাথীরাও নিরবে চোখের জল ফেলছে। রায়হান সাহেবও তাদের মাঝে একজন। বাইরের দেশ থেকে বড় ডাক্তার আনানো হয়েছে।
দীর্ঘ ৪টা ঘন্টা কেটে যায়। ডাক্তার ওটি থেকে বের হয়ে আসে। মায়া আর প্রিতমের মা ডাক্তারের কাছে দৌঁড়ে যায়।
মাঃ ডাক্তার আমার ছেলেটা কেমন আছে?? ও সুস্থ আছে তো। বলুন না ডাক্তার বলুন।
ডাক্তারঃ দেখুন আমরা আমাদের কাজ করেছি। এখন বাকিটা মহান আল্লাহর হাতে। তার যদি সময় মতো জ্ঞান আসে তাহলেই হয়তো বেঁচে যাবে। তবে রোগীর অবস্থা বেশি ভালো না। তিন তিনটা গুলি খেয়ে উনি যে এখনো শ্বাস নিচ্ছে তাই অনেক। আপনারা সবাই আল্লাহকে ডাকুন।
ডাক্তারের কথা শুনে প্রিতমের মা আরো ভেঙে পড়ে। আরো কান্না শুরু করে।
মায়াঃ ডাক্তার আমি একটু উনার কাছে যেতে পারি?? শুধু একটু দেখবো। প্লিজ…
ডাক্তারঃ দেখুন এখন তো যাওয়া সম্ভব না। ওনাকে কেবিনে সিফট করলে তারপর যেতে পাড়বেন। অপেক্ষা করুন।
এরপর অনেকটা সময় পার হয়ে যায়। প্রিতমকে কেবিনে সিফট করলে মায়া প্রিতমের কাছে যায়। মায়া দেখে, প্রিতমের নিথর নীল বর্নের ফ্যাকাসে মুখটা একদম নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। মায়ার ভিতর থেকেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না আসে। মায়া চোখের জল ছেড়ে দেয়। মায়া প্রিতমের কাছে বসে ওর হাতটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
মায়াঃ আপনি উঠুন না। আর কত ঘুমাবেন?? আমাকে বিয়ে করবেন না?? আপনি না বললেন আমাকে একা রেখে কোথাও যাবেন না। তাহলে কেন আজ একা করে চলে যাচ্ছেন?? আমাকেও নিয়ে যান সাথে। কীভাবে আপনাকে ছাড়া থাকব?? আমার কথা না হয় বাদ। নিজের মায়ের কথা ভাবুন। তাকেও নিঃস্ব করে দিয়ে যাবেন?? কি নিয়ে সে বেঁচে থাকবে বলুন?? ফিরে আসুন। প্লিজ ফিরে আসুন। ফিরে আসুন না….
মায়া অঝোরে কাঁদতে থাকে। হঠাৎই মায়ার ফিল হয় প্রিতমের আঙুলগুলো নড়াচড়া করছে। মায়া মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে প্রিতম চোখ খুলেছে। চোখের ইশারায় বলছে, “আমি ঠিক আছি।” মায়া কাঁদতে কাঁদতে প্রিতমকে জড়িয়ে ধরে। বাইরে বাকিরাও ভিতরেও চলে আসে। ডাক্তার চেকআপ করে বলে,”উনি এখন ঠিক আছে। আর কোন চিন্তা নেই।”
প্রিতমকে একপাশে ওর মা আর মায়া জড়িয়ে ধরে শুধু কান্না করছে। প্রিতমের চোখের কোণা থেকেও পানি পড়ছে।
রায়হান সাহেবঃ ওয়েল ডান মাই বয়। তুমি আসলেই রিয়েল ওয়ারিয়র। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসো। আর হ্যাঁ তোমার এই মিশনটাও সাক্সেসফুল হয়েছে। শয়তানগুলো সব ধরা পড়েছে। তাই তোমাকে আমি ৪ মাসের ছুটি দিচ্ছি। সুস্থ হও৷ আর এবার বিয়েটা করে ফেল। মেয়েটা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।
প্রিতম ইশারায় আচ্ছা বলে। আর অনেক খুশীও হয়।
এরপর ধীরে ধীরে প্রিতম সুস্থ হয়ে উঠে। মায়ার পরিবারের সাথে কথা বলে মায়াকে বিয়েও করে ফেলে। মায়া প্রিতমের মতো স্বামী পেয়ে খুব খুশী।
—> ঠিক এভাবেই একজন আর্মি,পুলিশ কিংবা দেশের নিরাপত্তায় নিয়জিত ব্যাক্তিদের পরিবার সারাক্ষণ অস্থির হয়ে থাকে মানুষটার জন্য। তাই আমাদের উচিৎ এদের সম্মান করা। এদের কাজকে সম্মান করা। এবং সহযোগিতা করা। কারণ এদের জন্যই আমরা রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারি।
স্যালুট জানাই আমি এদের সবাইকে এবং তাদের পরিবারকে।
– সমাপ্ত।
#মিশন_হার্ডডিস্ক
লেখকঃ আবির খান।
পুরো গল্পটি কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। ধন্যবাদ।
khub valo hoyese