#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমার ছেলের মন ভে’ঙে মেয়েকে এতো বয়স্ক কারো কাছে বিয়ে দিচ্ছো।কল্লোল তোশাকে ভালোবাসে বিষয়টা কী কখনো বুঝতে পারো নি?”
নিজ ভাবীর কথায় তাহিয়া একটু দমে গেলো।সে জানতো না কল্লোল তোশাকে ভালোবাসে।তাছাড়া জানলেও বিশেষ কোনো উপকার বোধহয় ছিলনা।মুচকি হেসে তাই বলল,
“কল্লোলের জন্য লাল টুকটুকে বউ আনবো আমরা ভাবী।এসব বলো না।দুটো বাচ্চার এই বিয়ের অনুষ্ঠানে মন খারাপ হবে।”
“বলিনি তো কখনো।আজ ক্ষো’ভ থেকে বললাম।হ্যাঁ কবীর দেখতে সুন্দর।তোশার সাথে ভালো মানায়।কিন্তু খেয়াল করেছো দুজনের শারীরিক গঠণ কতোটা ভিন্ন?কবীরকে লাগে দৈ’ত্য আর তোশাকে ছোট বাচ্চা।”
“ভাবী আমি তোশার মা। এসব আমার সামনে বলো না।কিন্তু হয়েছে কী?”
“কল্লোল কাল কাঁদছিলো।আজ তোশার গায়ের হলুদ।কিন্তু একবারও দেখেছো রুম থেকে বের হতে?”
“দেখিনি।আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নিবো।”
“দরকার নেই।এতে আরো ছেলেটা কষ্ট পাবে।তুমি বরং নিজের মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করো।সন্তান তো আমারও আছে ভাই।তাই বলে যাই চাইবে তাই কেন দিবো?”
তাহিয়া নিস্তেজ কণ্ঠে জবাব দিলো,
“আমি তোশাকে দেখে আসছি।”
চট জলদি ভাবীর চোখের আড়ালে চলে গেলো সে।পুরো বাড়ীতে নানান ধরণের মেহমান এসেছে।সবার চোখেমুখে এক কথা হেসেখেলে বেড়াচ্ছে।তাহিয়াকে যেই একটু একা দেখছে ওমনি কথাটা বলে দিচ্ছে।বোধহয় সারাজীবন বলবে।এসব কিছু মলিন হয়ে যায় যখন হাতের কাজ ফেলে প্রত্যেকবার তোশার রুমে গিয়ে মেয়েটাকে দেখে সে।কী সুন্দর লাগছে।বিয়ের রঙ লেগেছে যে।তাহিয়ার কান্না পায়।তার এমন গায়ের হলুদ হয়েছিলো না।কিন্তু সকলে বিয়ের পর বলতো কাঁচা হলুদের রঙ ফুঁটেছিলো তার চেহারাতে।আজ তোশার বাবা হয়ে মায়ান হয়তোবা এ বাড়ীতে এসেছে।নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছে।মায়ের অবাক করা দৃষ্টিতে তোশার দৃষ্টি মিললো।সে বান্ধুবীদের মধ্যে বসে থেকে শুধালো,
“কিছু বলবে আম্মু?”
“হ্যাঁ।একদম কম সাজবে কিন্ত।আমার মেয়ে এমনি সুন্দর।”
তোশা হাসলো।সে বুঝতে পারে এটা মায়ের দৃষ্টির কথা না।তাহিয়া বিনা বাক্য ব্যয় করে মেয়ের মুখে কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে থেকে চলে গেলো।অপ্সরা দুদিন আগে থেকে তোশাদের বাড়ীতে এসেছে।সে হাঁফ ছাড়ার মতোন করে বলল,
“ভাগ্যিস তোদের বিয়ে আগে হয়েছে।তা নয় আমি এখনও সন্দেহে থাকতাম।তামাটে পুরুষটি পাছে মত বদলে ফেলে।”
“না না।সে কখনো নিজের ওয়াদা ভুলে না।”
“ভুলবে কীভাবে?একদম যুবতী পাচ্ছে।সেটা দেখতে হবে না?আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাদের খুশি দেখে।”
তোশার দূর সম্পর্কের এক খালাতো বোন কথাটি বলল।বাক্যটিতে গভীর বিদ্রুপ বিদ্যমান।তোশা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“আমাদের খুশি দারুণ না?সকলে অবাক হয়।”
“একদম খুব দারুণ।দেখছি তো।”
রুমের পরিবেশ বদলে গেলো।তোশা খেয়াল করছে তার দাদীর বাড়ী থেকে আগত মানুষের থেকে নানীর বাড়ীর লোকেরা বেশী কথা শুনিয়ে যাচ্ছে।সে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কবীর নিষেধ করে দিয়েছে।সকলের থেকে উঠে নিজের ফোনের সন্ধান করলো।কবীরের সাথে অনেকটা সময় কথা হয়না।স্ক্রিন অন করে দেখতে পেলো উল্লাস এসএমএস করেছে।সে প্যারিসে একটি ফ্যাশন শো উপলক্ষে চলে যাচ্ছে।বিয়েতে আসতে পারবেনা।তোশার আরো খারাপ লাগলো এতে।সে জানে তাহিয়া বিয়েতে রাজী হওয়ার পিছনে উল্লাসের অবদান সবচেয়ে বেশী।সে আহনাফকে নিয়ে তাহিয়ার কাছে গিয়েছিলো।এরপর কীভাবে মানিয়েছে তা কেউ বলে না।উল্লাসকে সারাজীবন মনে রাখবে তোশা।এলেমেলো উল্লাস।হয়তোবা তার ভিন্ন কাহিনী, ভিন্ন গল্প আছে।কিন্তু তোশার নিকট সে প্রাণবন্ত জীবন।
(***)
“আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
কান থেকে হেড ফোন খুলে নিলো কল্লোল।এখন সন্ধ্যার সময়।তোশাকে হলুদ দিতে কবীরের বাড়ী থেকে মানুষ এসেছে।সকলের সঙ্গতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলো দেখে কল্লোল ছাদে একা বসে ছিলো।বৃষ্টিকে এখানে দেখে কৌতুহলী হয়ে বলল,
“হ্যাঁ কী বলবে?”
“আমি আপনাকে ভালোবাসি।প্লিজ বিয়েটা আঁটকান।আমি আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।কখনো না।প্লিজ সিনিয়র।”
বৃষ্টি এগিয়ে গিয়ে কল্লোলের হাত ধরে ফেললো।আলো অন্ধকারে চোখ অশ্রুত টলমল করছে।
“হাত ছেড়ে কথা বলো বৃষ্টি।বিয়েটা আমার নয়।তোশা ও…”
সম্বোধনে আঁটকে গেলো কল্লোল।বৃষ্টি শক্ত কণ্ঠে বলল,
“কী বলে ডাকবেন?ভাই,আঙকেল?নাকী দুলাভাই?বলুন তো আপনি।জানি জবাব নেই।দেখুন তো দুটো মানুষ নিজেদের খুশির জন্য সকলের মনে কষ্ট দিলো।”
“কোথায়?প্রায় সকলে তো খুশি।”
“না।আমি না।তাদের বিয়ে হয়ে গেলে আমাদের কিছু সম্ভব না।”
“আমাদের কী কিছু হওয়ার কথা ছিল?তুমি ভালোবাসি বললে।আমি বলিনি।”
“তো কী?এরেঞ্জ ম্যারেজ হতো।তাহিয়া আন্টি আমার মা কে বলেছিলো।সব শেষ হলো ওদের জন্য।আপনি বিয়েটা আঁটকান।”
“থামো বৃষ্টি।শান্ত হও।”
বৃষ্টির নিশ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে।কল্লোল দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“আমি তোশাকে ভালোবাসি।সেটা এখন থেকে না।যেদিন থেকে মন নারীদের চিনতে শুরু করেছে।তোশা ও কবীর স্যারের সাথে সম্পর্কের কথা আমি অনেক দিন ধরে জানি।কিন্তু কখনো কাওকে বলিনি।চাইলে আমি বহু ছলের আশ্রয় নিতে পারতাম।কিন্তু এতে সুফল কী বলো?তোশা আমাকে ভাই হিসেবে মানে।আমি নিজে সুখী হতে গিয়ে ওদের যেখানে সম্পর্কের নাম আছে।দুটো মানুষ একে অপরের প্রতি লয়্যাল সেটা কেন ভা’ঙ’বো?আর তোমার আমার সম্পর্ক হতে গেলে এখনও কোনো বাঁধা নেই।কিন্তু আমি নিজে আগাবো না।”
“কেন?”
“অনুভূতি থাকতে হয় বৃষ্টি।যা নেই।তাছাড়া আমার জন্য কেন তোশা কষ্ট পাবে?ভালোবাসা পেতে হবে এটা বৃথা কথা।তবে তখুনি জোর করে পাওয়া প্রযোজ্য হয় যখন ভালোবাসার মানুষের ক্ষ” তি হয়না এতে।”
“এভাবে সরাসরি আমাকে বললেন যে পছন্দ করেন না?যদি পরিবারের দিক থেকে হয়?”
“আমি বলতে পারবো না বৃষ্টি।অথবা ভাবতে চাইনা।তুমি নিচে চলে যাও।এমন কথা অন্য কাওকে বলো না।”
বৃষ্টির পুরোপুরি মন ভে”ঙে গেলো।সে যাকে পছন্দ করে এতোদিন নিজের বাবাতুল্য চাচার কাছ থেকে অসন্তুষ্টি পেয়েছে।ভালো বন্ধুকে হে”য় করেছে সে তার কথাগুলোর দাম অবধি দিতে নারাজ?এটা কী ভীষণ খারাপ নয়।অভিমানে, দুঃখে সে দ্রুত নিচে নেমে গেলো।পিছন ফিরলে দেখতে পেতো যে কল্লোল এতোক্ষণ নিজের উদারতার কথা বলছিলো সেই ব্যক্তিরও মন ভেঙেছে।কল্লোল সিদ্ধান্ত নিয়েছে তোশাকে সে হলুদ লাগাবেনা।থাক না অনুভূতি গুলো আড়ালে।নতুন মানুষ আসবে তখন আপনা-আপনি সব ঠিক হয়ে যাবে।
(***)
অনুষ্ঠান শেষ হতে রাত হয়ে গেলো।তোশা আজ তাহিয়ার সাথে ঘুমিয়েছে।সারাদিন ক্লান্ত থাকার দরুণ তাহিয়া গভীর ঘুমে মগ্ন।ধীর পায়ে পাশ থেকে উঠে এলো তোশা।পাছে কেউ যদি জেগে যায়।সবকিছু ঠিকঠাক দেখে দ্রুত বাগানে চলে এলো।যেখানে সরু দন্ডায়মান গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবীর।অন্ধকার ছিল না পরিবেশে।তাই তোশা সব লাইট অফ করে এসেছে।কবীর ইশারাতে তোশাকে ডাকলো।
“আপনি ইদানীং খুব মুভির হিরোদের মতোন রোমান্টিক হয়ে গিয়েছেন।হলুদের দিন দেখা করতে আসতে হয়।”
“দেখো লিটল চেরী।আমি মুভির হিরো নই।বরং সাধারণ মানুষ।বউকে দেখতে মন চাইলো এসেছি।ভয় নেই আমি হলুদ সঙ্গে আনিনি।ওসব লাগাবো না।”
“তো কেন এলেন?”
“নিজেদের ব্যাচেলর লাইফের শেষ মুহুর্ত একসাথে অতিবাহিত করার জন্য।হ্যাঁ মানছি আমার দ্বিতীয় বিয়ে।কিন্তু বিশ্বাস করো ইদানীং খুব ইয়াং লাগে নিজেকে।এসো আমার কাছে।”
কবীর হাত বাড়িয়ে দিলো তোশার জন্য।যুবতী তা মুহুর্তে আঁকড়ে ধরলো।দুজনের কপাল একত্রে মিলিত হলো।চাঁদের আলো তাদের ডুবিয়ে দিচ্ছে যেন।কবীর ফিসফিস করে বলল,
“যদি তোমার আগে পৃথিবী থেকে চলে গেলে যাই। তাহলে তুমি এসব স্মৃতি, আমার সাথে বিয়ে মনে রাখবে লিটল চেরী?ভুলে যাবেনা?”
“প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য চিরকাল থেকে যান আমার নিকট কবীর শাহ।”
“আমার মনে হয় খুব বেশীদিন হবেনা একসাথে থাকা।”
“একথা কেন?আপনি সুস্থ সবল বাজপাখি।এসব ভুলে যান।”
তোশাকে বুকে আগলে রেখে আকাশ পানে তাঁকিয়ে থাকে দুজনে। গাঁদা ফুলের গন্ধে ভরে গিয়েছে পরিবেশ।শীতল সমীরণ ছুঁয়ে দিতে গিয়েও ভয় পাচ্ছে তাদের।পাছে বেলাডোনা ও তার বাজপাখির প্রেমেতে ব্যাঘাত ঘটে।
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“তোমার শরীরে তুমি গেঁথে রাখো গান
রাত্রিকে করেছো তাই ঝঙ্কারমুখর
তোমার ও সান্নিধ্যের অপরূপ ঘ্রাণ
অজান্তে জীবনে রাখো জয়ের সাক্ষর।” (সুনীল গঙ্গোপধ্যায়)
বুকে জড়িয়ে তামাটে পুরুষটি তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে প্রশংসায় ভরিয়ে তুলে।মৃদুমন্দ সমীরণে চারিধারের গাছপালা নেচে উঠছে।সমুদ্রে রৌদ্রের কিরণ পড়ায় স্মরণে হচ্ছে স্বর্ণের তৈরী পানি সেগুলো।তোশা একমনে সেদিকে দেখছে।রোদের সঙ্গে সে নিজের খুব মিল পায়।তাকে উদাসীন কিছু ভাবতে দেখে কবীর শুধালো,
“কী ভাবছো বেলাডোনা?”
তোশা স্থিমিত কণ্ঠে বলল,
“তেমন কিছু না।আপনার মনে হচ্ছে না কবীর শাহ ইদানীং আপনি খুব বেশী রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছেন?”
“রোমান্টিক?কীভাবে?”
“এইযে সব বাক্যের পর আমার প্রশংসাতে ডুবে যান।এটাকে রোমান্টিসিজম বলে জনাব।”
“স্ত্রীর প্রশংসা করা সকল পুরুষদের নিজস্ব দায়িত্ব।আর আমি এতো বয়সে এসে দারুণ সুন্দরী স্ত্রী পেয়েছি।সেক্ষেত্রে আমার প্রশংসা একটু বেশী করতে হবে।এতো বড় পাওয়া সেটা তো দারুণ ভাগ্য।”
“আমাকে পাওয়ার বিষয়টা আপনি সৌভাগ্য হিসেবে ধরে নিলেন?”
তোশা স্বীয় আঁখিতে বিস্ময় ফুটিয়ে কবীরের দিকে জবাবের আশায় তাঁকিয়ে রইলো।এমন নয় যে সে জানেনা কবীর তাকে অনেক ভালোবাসে।মানুষটাকে পেতেও তোশার খুব বেশী লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে।কিন্তু সেসব সে গ্রাহ্য করেনি।বরং তোশার মনের কোথাও একটা জায়গা বিশ্বাস করতো কবীর নেহাৎ ভালো মানুষ বিধায় সকলের থেকে এতো অপমান পাওয়ার পরেও বিয়ে করেছে তাকে।যে মানুষ এতো বিত্ত্বশালী কিংবা ক্ষমতাবান তার বিশেষ দরকার ছিলনা তার মতোন বোকা একটা মেয়েকে পছন্দ করার।সে তো বিশেষ কেউ কিন্তু তোশা বিশেষ নয়।যুবতীর করা প্রশ্নে কবীর হেসে উঠলো।কী মায়াময় ব্যক্তিটির দৃষ্টি!তোশাকে হাত বাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“তোমাকে পাওয়া আমার জন্য সৌভাগ্য তোশা।সেই ব্যাখা আজ নয় কোনো এক বিশেষ দিনে দিবো।কিন্তু আমার ভালোবাসা নিয়ে মনে কোনো সন্দেহ আছে?”
“নেই।কিন্তু আপনি ভালোবাসা প্রকাশ করেন না খুব একটা।”
“কে আমি?”
“জি খুব বেশী প্রকাশ আপনার দ্বারা হয়নি।”
“ভালোবাসা প্রকাশ করতে হলে আমার ঠিক কী করতে হবে?”
কবীরের মুখোমুখি হয়ে বসলো তোশা।একটু প্রহেলিকা করে বলল,
“আপনি দেখুন কী করতে হবে।হানিমুনে আমার কথা মতোন মরিশাস দ্বীপে আসা কিন্তু ভালোবাসা জাহির করা নয়।”
তোশাকে এতোটা খামখেয়ালি ভাবে কখনো দেখেনি কবীর।কিছুক্ষণ স্ত্রীর পানে তাঁকিয়ে সে ভাবতে লাগলো।কিন্তু এখানেও বিপদ।এতো সুন্দর মুখটাকে দেখে বারংবার সে নিজ ভাবনা থেকে সরে যাচ্ছে।ফোলা ফোলা মেদুর শুভ্র গালটাকে দেখতে সত্যি চেরির মতো লাগে।কবীরের মনে পড়ে গেলো তাদের প্রথম রাত্রীর কথা।সেদিন গাল দুটো আরো রঙিন ছিল।অজান্তে হেসে উঠলো কবীর।তোশা কী কখনো খেয়াল করেছে তার গাল দুটো আলোর সংস্পর্শে নাকী বাজপাখির ছোঁয়ায় আরো বেশী রক্তিম হয়ে উঠে।
“কী হলো কোন ভাবনায় চলে গেলেন।”
“ভালোবাসা আমি অনেক ভাবে দেখাতে সক্ষম সুন্দর মেয়ে।কিন্তু এই উপায় পছন্দ হলে বিনিময়ে কী আছে আমার জন্য?”
“সুন্দর নারীটি তো আপনার।এর বাহিরে কী আর চাওয়ার থাকতে পারে?”
কবীরের অধরযুগল প্রসারিত হলো।পুরুষটি যেন চিরযৌবনা।হাসিতে আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে শরীর।সরু শক্ত আঙুল গুলো দ্বারা যুবতীর কানের পিঠে চুল গুলো গুঁজে দিয়ে বলল,
“এটা শুধু ভালোবাসা আমার তোমার জন্য।”
লম্বা লম্বা পা ফেলে একটু দূরে সাদা ত্বকের লোকটির সামনে দাঁড়ালো কবীর।তার মনোযোগ আকর্ষণ করে বলল,
“Hey,That beautiful woman sitting there is my wife. And I love her very much.”
লোকটি কবীরের কথায় ভ্রু কুঁচকালো।বিনিময়ে কবীর হেসে সামনে অগ্রসর হয়ে অন্য আরেকজন লোককে একই কথা জানালো।এমনকি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা প্রত্যেকটি মানুষকে জানালো তোশা তার স্ত্রী এবং তাকে সে খুব ভালোবাসে।তোশা দৃষ্টিতে একরাশ অশ্রু নিয়ে পুরো জিনিসটা দেখছে।কবীরের চোখেমুখে কতোটা মুগ্ধতা খেলা করছে একই ভালোবাসার বাক্য ভিন্ন মানুষকে বলার সময়।অনেকজনকে বলে এসে তোশার কাছে থামলো কবীর।এতোক্ষণে প্রায় সকলের জানা হয়ে গেছে কবীরের ভালোবাসা কে।তোশা শুকনো ঢোক গিলে বলল,
“আরো কেউ বাদ আছে?যাকে আপনি জানাতে চান?”
” এখনো সমুদ্র ও আকাশকে বলা বাকী।”
“তাদেরও জানাবেন?কীভাবে?”
“এ জিনিসটা খুব স্পেশাল হবে।এখন রুমে চলুন ম্যাডাম।বেশী রোদে থাকলে ত্বক কালো হয়ে যাবে।”
“আপনার মতোন?”
“আমাকে কালো বলে কী শান্তি পাও?”
“ভালো লাগে।”
কবীরের একটা হাত জড়িয়ে হাঁটতে লাগলো তোশা।এক সুখী দম্পতিকে আশেপাশের মানুষ তাঁকিয়ে দেখছে।বিয়ের তিনমাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর হানিমুনে এখানে আসতে পেরেছে।তা নয় এ আত্মীয়ের বাড়ী ও আত্মীয়ের বাড়ী ঘুরতে ঘুরতে সুযোগ হয়ে উঠেনি।রিসিপশনে তাদের থামিয়ে দিলো একজন লোক।হাত বাড়িয়ে একটা ফুলের তোড়া দিলো।ইংলিশে বলল,
“আপনাদের জন্য গিফট এসেছে।”
“আমাদের জন্য?”
“জি।”
কবীর হাতে নিলো ফুলগুলো।সাদা গোলাপ দেখে মুহুর্তে স্নায়ুর কোথায় স্বয়ংক্রিয় হয়ে উঠলো।কর্মরত লোকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো কে এগুলো দিয়েছে।আগুন্তকের নাম ফ্রান্সিসকো শুনতে কপালে ভাঁজ পড়লো তার।পিছন থেকে তোশা তার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“সেই লোকটা?এখানে কেন?”
“ও আমাকে বলেছিল আমার খুশির সময়টা আমার থেকে চু”রি করে নিবে।আর এখনকার থেকে বেশী খুশি বোধহয় আমি কখনো হইনি।”
“এখন কী করবেন তাহলে?”
“আমার প্রথম কাজ তোমাকে নিরাপদ রাখা।”
“কিন্তু আপনি?”
“আমিও থাকবো।ভয় নেই আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমি পূর্ব থেকে করে রেখেছি।শুধু লোকটাকে হাতের নাগালে মিলছে না।”
কবীরের কথা তবুও তোশাকে শান্ত করতে পারলো না।সে মুখটা গোমড়া করে রইলো।
(***)
অনেকক্ষণ ঘুমালো তোশা।মেয়েটার দিকে এক ধ্যানে তাঁকিয়ে আছে কবীর।চোখ তুলে ফুলগুলোকে পুনরায় দেখলো।মাথায় অহেতুক অনেক চিন্তাভাবনা ঘুরছে।বিশেষ করে সে জানে ফ্রান্সিসকো বেশ বুদ্ধিমান।যদি তোশার বা তার পরিবারের কোনো ক্ষতি করে?এই প্রশ্নটি থেকে যায়।হুট করে সোশ্যাল মিডিয়াতে এসএমএস আসার শব্দ হলো।কবীর ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অচেনা একটি একাউন্ট থেকে এসএমএস এসেছে।সে কৌতুহল হয়ে রিপ্লাই করতে ওপাশ থেকে ফোন এলো।কবীর দ্বিধা নিয়ে রিসিভ করলো,
“হ্যালো।”
“কেমন আছো কবীর শাহ?বিবাহিত জীবন কেমন কাঁটছে?”
“ফ্রান্সিসকো?”
“আমি নয় তো আর কে?”
“কী চাও?”
“কী চাইনা সেটা বলো।তোমার সুখের সময়কে কামনা করছি।যেভাবে তুমি আমার বিয়ের পূর্বে।”
“মিথ্যা বলো না।তুমি দো’ষী না হলে আইনের কী দরকার ছিল তোমাকে হে’ন’স্তা করার?”
“আমি নি”র্দোষ কখনো বলিনি নিজেকে।তবে আমার সমস্যা ভিন্ন জায়গায়।মনে আছে এখানে আসার পর একজন তোমাকে ড্রা” গ নিয়ে ফাঁসাতে চেয়েছিলো?আমি সেদিন না থাকলে তোমার কী করুণ অবস্থা না হতো।”
“মনে আছে।”
“যদি আমার সাহায্য পেয়ে তুমি আজ এমন শক্তির অধিকারী হতে পারো তাহলে আমার কথা লুকানোতে কী সমস্যা হতো?আমি উপকারের বিনিময়ে কী কিছুই প্রাপ্য ছিলাম না?”
“এখানে কথা ভিন্ন ছিল ফ্রান্সিসকো।আমি নির্দোষ কিন্তু তুমি ছিলে শয়তান।এখন নিজের গণনা শুরু করো।একবার যদি আমি ধরতে পারি।”
“কী করবে?নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে যেভাবে বিশেষ ঔষধ দিয়ে পা’গ’ল করে রেখেছো আমাকেও তেমন করবে?”
“তুমি এটা কীভাবে জানো?”
শব্দ করে হেসে উঠলো ফ্রান্সিসকো।কবীরের বড় রাগ হলো তাতে।
“আমি কীভাবে জানি?সেকথা না হয় বাদ থাকুক।এবার চলো আমরা যু’দ্ধ করি।একটা নিরব যু’দ্ধ।যেখানে দেখবো কার হা’র হয়।আমি তোমাকে বিশেষ সময়ে আবার দেখা দিবো।কিন্তু সেটা হবে আমাদের শেষ দেখা।আমি তোমার শেষ দেখে নিবো।ভালো থাকবে কবীর শাহ।এবং হোয়াইটকে বলো ও খুব সুন্দর।”
কলটা রেখে দিলো ফ্রান্সিসকো।সে কী করতে চাচ্ছে?আদুরে বিড়াল ছানার মতোন ঘুমের মধ্যে থেকে শব্দ করে উঠলো তোশা।এতোক্ষণ মস্তিস্কে চলা ঝড়টা থেমে গেলো কবীরের।মেয়েটির পাশে আধশোয়া হয়ে শুয়ে পড়লো সে।ঘুমন্ত মুখটা কী দারুণ মায়াবী।ফিসফিস করে বলল,
“আমাদের জীবনের মিঠা রোদ কখনো শেষ হবেনা বেলাডোনা।একটি সুন্দর দিনের সূচনা হয়েছে।যা থামবার নয়।”
চলবে।