#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“জি বলুন আদুরে তোশামণি।একজন অসুন্দর পুরুষ কবীর শাহ বলছি।”
ফোনের ওপাশ থেকে কোকিলের কুহুরবের অনুরুপ অস্পষ্ট এক শব্দ করলো তোশা।ফিসফিস করে বলল,
“আপনি ভীষণ সুন্দর জানেন।হুহ নিজেকে অসুন্দর বলবেন না।”
“তা বেবী গার্ল আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?তাছাড়া এতো রাতে কল করলে যে?সব ঠিক আছে তো?”
“সব ঠিক আছে।”
তোশা বিশেষ কোনো বাক্য খুঁজে পাচ্ছে না বলার জন্য।কীভাবে বলবে?আজ শপিং মলের কান্ডে সে লোকটির ব্যক্তিত্বে ভীষণ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছে।পেটের ভেতর বহু লাল নীল রঙের প্রজাপতি উড়ে বেড়াচ্ছে।শুকনো ঢোক গিলে নিজের গলা ভিজিয়ে নিলো তোশা।
“আপনাকে বলেন তো আমি কী নামে ডাকি?”
কবীর চট করে একটা সম্বোধন করতে গিয়েও থেমে গেলো।তোশা কখনো বিশেষ কিছু বলে তাকে ডাকেনি?কেন?তাছাড়া কবীর অহেতুক ওসব সম্বোধন মন থেকে হয়তো মেনে নিতেও পারবেনা।গম্ভীর সুরে বলল,
“এখনও কোনো নামে ডাকো নি।”
“ঠিক করে দেন কী নামে ডাকবো।”
“আমি তোমার মা-বাবার বন্ধু।সেই হিসেবে না হয় ডাকবে।”
“নাহ কবীর বলে ডাকবো।”
ধমকে উঠলো কবীর।ছোটো কারো মুখে নিজের নামটা শুনতে সে মটেও পছন্দ করেনা।তোশার কিছু বিষয় ভীষণ বাচ্চামো লাগছে তার কাছে।
“আমাকে নাম ধরে ডাকছো কেন?তুমি আমার ফ্রেন্ড নাকী তোমার মা?”
“এমনভাবে বলছেন কেন?নাম ধরে ডাকা যাবেনা?”
“অবশ্যই না।গুরুজন তোমার।কিছু বাচ্চামো আমি ক্ষমা করে দেই মায়ান ও তাহিয়ার জন্য।কিন্তু আজকে বেশী হয়ে গেলো না?তাহিয়া কোথায়?ওকে ফোন দাও।”
“মা ঘুমে।”
“তুমি এতো রাত জেগে কী করছো তাহলে?”
“আপনাকে থ্যাংকস জানাতে।দিনে সাহায্য করার জন্য।আপনি ছেলে মানুষ লজ্জা না পেয়েও।”
“শুনো তুমি একটা পনের বছরের বাচ্চা আমার জন্য।এছাড়া কিছুই নয়।নাম ধরে কখনো ডাকবেনা আমাকে।রাখো এখন।”
তোশা হয়তোবা কেঁদে ফেলবে এখন।প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে শুধু মামী ও নানী কথা বলে তার সঙ্গে।আর আজ কবীর বলল।একটু নাম ধরে ডেকেছে দেখে ব্যক্তিটা এমন শুনালো।নাক টানার শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেলো কবীর।মেয়েটা হয়তো ভুলে বলে ফেলেছে।সে নিজেকে সামলে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই কল কেঁটে দিলো তোশা।হুট করেই কবীরের বুকে নির্জনতা নেমে এলো।ক্লান্ত বিক্ষিপ্ত মন ও ঘামভেজা শরীরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো।তোশাকে এভাবে বলার কোনো অভিপ্রায় ছিলনা তার।কিন্তু রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।একটা বাচ্চার কাছে কী ক্ষমা চাওয়া?এই চিন্তায় ধীরে ধীরে তন্দ্রায় তলিয়ে যাচ্ছে সে।ক্ষণবাদে বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করলো।চোখ তুলে সে দেখলো লম্বা চুল ও লাল রঙের সুন্দর একটি সিল্কের শাড়ী পরনে মেয়ে তার বুকে মাথা দিয়ে আছে।কবীর আনমনে তাকে জোরালো ভাবে জাপটে ধরলো।মিষ্টি করে শুধালো,
“কোথায় ছিলে এতোদিন?আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।”
মেয়েটি জবাব দেয়না।বরং গুনগুন করে কিছু গাইতে থাকে।কবীর ব্যকুল কণ্ঠে বলল,
“কী হলো বলো কোথায় ছিলে?”
এবার মেয়েটি চট করে নিজের মাথাটি উঠালো।কবীর ঘুম ঘুম চোখে দেখলো গোলগাল অতীব সুন্দর মেয়েটি হাসছে।ভীষণ হাসছে।মেয়েটিকে পরীর মতোন দেখাচ্ছে।তবে কবীর চিনে তাকে।সমস্ত মায়া দিয়ে উচ্চারণ করলো,
“তোশামণি?”
“উহু পরী।দেখুন তো কবীর আবার ডাকলাম আপনাকে নাম ধরে।বকেন আমাকে।কী হলো কবীর?”
তোশাকে একটুও বকতে ইচ্ছে করছেনা কবীরের।এতো মায়াময় কাওকে কটূ কথা শোনানো যায়?সে হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দিতে চাচ্ছে।মেয়েটা কী সুন্দর করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা আরেকটু টেনে নিলে কী হতো?ফর্সা চিতল মাছের মতোন গলাটি দেখে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠলো কবীর।হাতটা যেই তোশাকে স্পর্শ করবে তৎক্ষনাৎ মেয়েটি তা ধরে কামড় বসিয়ে দিলো।কবীর আর্তনাদ করে উঠে বসলো।পুরো রুম জুড়ে ঈষদুষ্ণ আলোর ছড়াছড়ি।কিন্তু কোথাও উজ্জ্বল আলোর মতোন লাল শাড়ী পরিহিত কেউ নেই।কবীরের ঘুম ছুটে যেতে মিনিট দশেক সময় লাগলো।পুরোপুরি বিচার, বুদ্ধি মস্তিস্কে আগমণ করতেই নিজের উপর ঘৃ ণা য় ম রে যাচ্ছে সে।তোশা যে কীনা বিশ বছরের ছোট তার থেকে।সেই মেয়েটির উপর এমন চিন্তা?লাল রঙের বিশেষ শাড়ীটিকে সে চিনেছে।এটা নিজ স্ত্রীর জন্য কিনেছিল উনিশ বছর বয়সে।পরবর্তী একজন মালিক পেয়েছিল শাড়ীটি।কিন্তু এখন শূন্য হয়ে আলমারির এক কোণায় রয়ে গিয়েছে। প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ালো কবীর।পাশের ফ্রিজ থেকে রুট বিয়ারের ক্যান নিয়ে গলা ভিজিয়ে নিলো।এমন স্বপ্ন কখনো দেখবেনা বলে স্থির করলো সে।
(***)
“কী ব্যাপার তোশামণি?মন খারাপ তোমার?”
“না আম্মু।”
“তাহলে চোখ ফোলা কেন?এলার্জি হলো না তো?”
তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে তোশার চোখ দুটো দেখতে লাগলো।এঁটো হাত থাকার দরুণ ভালোভাবে কিছু বুঝছে না।পাশে কল্লোলের মা তটিনী দাঁড়িয়ে আছে।তাহিয়া তাকে বলল,
“ভাবী দেখো তো একটু মেয়ের চোখে কী হয়েছে?”
তটিনী থমথমে মুখে জবাব দিলো,
“কেন আমার অফিস নেই?খেতে এমনিতেই দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
“দেখতে কতোক্ষণ লাগে?”
“দেখে কী লাভটা বলো?কিছুই হয়নি চোখে।দেখো গিয়ে বেশী ঘুমানোর দরুণ।”
রাগ উঠে গেলো তাহিয়ার।মেয়ের জন্য একটু বেশীই অস্থির সে।তোশা তাকে আশ্বস্ত করে বলল,
“মা আমার কিছুই হয়নি তো।টেনশন নিওনা।”
“নিশ্চয় পানি কম খাচ্ছো।”
তটিনী মাঝখান থেকে বলে উঠলো,
“মেয়েকে নিয়ে এতো আহ্লাদ তোমার।কী দরকার ছিল পৃথিবীতে আনার।পেটের ভেতর রেখে দিতে।আমাদের অন্তত এতো ন্যাকামি দেখতে হতো না।”
মামীর কথায় তোশার খুব কান্না পাচ্ছে।কিন্তু কিছু বলতে পারবেনা।একদিন জবাব দিয়েছিল।ফলস্বরুপ নানা-নানু এখন তোশার সঙ্গে খেতে বসেনা।দুঃখে ভাত মুখে নিয়েই ব্যাগ কাঁধে স্কুলের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো সে।তাহিয়া তাড়াতাড়ি হাত ধুয়ে এসে দেখলো রাস্তার কোথাও নেই তোশা।ভয়ে হাত পা কাঁপছে তার।মেয়েকে কখনো একা ছাড়েনা সে।গাড়ী নিয়ে বের হয়ে এলো তখুনি।কিন্তু ভাগ্য খারাপ ছিল।কিছুদূর যেতেই সিগন্যালে পড়তে হলো।এরপর শুরু হলো জ্যাম।প্রায় বিশ মিনিট পর কিছু মনে হলো তাহিয়ার।তার জীবনে কবীর সব বিপদে সাহায্য করেছে।আজও ব্যতিক্রম নয়।কবীরের নাম্বার ডায়াল করলো।ওপাশ থেকে রিসিভ করলে বলল,
“শুনো কবীর।তুমি কোথায় এখন?”
“স্কুলের সামনে কেন?বাচ্চাদের দিতে এসেছিলাম।”
“একটু দেখো তোশা পৌঁছে গিয়েছে কীনা।ভাবী বাসায় কথা শুনিয়েছে তাই একা একা চলে গেলো।”
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে কবীর বলল,
“চিন্তা করো না।তোশামণি ক্লাসে ঢুকেছে।আমি দেখেছি।”
“কথা হয়েছে ওর সঙ্গে?”
“হ্যাঁ।”
“বাঁচালে।আমি যাচ্ছি স্কুলে।”
কবীর ফোনটা রেখে দিলো।তাহিয়াকে সে একটু মিথ্যা বলেছে।তোশা ও তার দেখা হয়েছে ঠিক।কিন্তু মেয়েটা কবীরের সাথে মটেও কথা বলেনি।বরং উপেক্ষা করেছে।ছোট্ট এই মেয়েটির এমন ব্যবহারে অনেক কষ্ট পাচ্ছে সে।মেয়েটির অভিমান সে মেনে নিতে পারছেনা।অথচ অনুভূতি দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্ক নয় তাদের।কবীরের মনে হলো দুনিয়ায় সবথেকে মিষ্টি মেয়ে তোশামণির সঙ্গে একটু কথা বলতে হবে তার।উহু,একটু না।সুদীর্ঘ পাঁচ মিনিট কথা বলতে হবে।তবেই ভেতরের য ন্ত্র ণা কমবে।
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“স্বপ্ন দেখা শেষ হলে বাস্তবে ফিরে আসেন।কী যেন নাম?তোশা রাইট?”
এক ধ্যানে খাতার দিকে তাঁকিয়ে ছিল তোশা।হুট করে নতুন ম্যাডামের কণ্ঠে চেতনা ফিরলো।বিব্রত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো সে।
“সরি ম্যাডাম।”
“এর মানে সত্যিই এতোক্ষণ যা বুঝিয়ে চলেছিলাম তার এক ভাগও শুনতে পাওনি?”
“না।”
এমন অকপটে সত্য বলার দরুণ দিশা অবাক হলো।জীবনে অনেক স্টুডেন্ট দেখেছে সে।কিন্তু ভুল করে সহজে স্বীকার করার মতো কাওকে দেখেনি।পরক্ষণে তোশার মা,বাবার নামটা স্মরণে এলো তার।
“ঠিক আছে বসো।আর যা পড়াচ্ছি মনোযোগ দাও।তোমার বাবা কিন্তু অনেক ব্রাইট স্টুডেন্ট ছিলেন।”
তোশা অবাক হয়ে শুধালো,
“আপনি আব্বুকে চিনেন?কীভাবে?”
“চিনি একভাবে।এখন মহাকর্ষের সূত্র গুলো মুখস্থ করো জলদি ক্লাসের আর সকলে পাঁচ মিনিট ধরে পড়ছে।”
তোশা চট জলদি গুনগুন করে মুখস্থ করতে লাগলো।যদিও পড়াটি সে বুঝেছে।এখন কয়েকবার পড়েই ভালো মতন আয়ত্ত্ব করে নিলো।চোরা চোখে সে স্কুলে আসা নতুন ম্যাডাম দিশার পানে তাঁকালো।ভদ্র মহিলা বেশ সুন্দর।টানা দুটো চোখ।ঠোঁট দুটো কী সুন্দর আকৃতিতে তৈরী।ভীষণ ফর্সা।প্রথমবার তোশার মনে হলো দিশার মতো চেহারার আকৃতিতে সে কাওকে দেখেছে।পিরিয়ড শেষ হওয়ার ঘন্টা বাজলো।দিশা সুন্দর পরিপাটি করে শাড়ী পরেছে।আঁচলটা একটু টেনে উঠে দাঁড়ালো।বৃষ্টি ঠায় বসে আছে।কিন্তু তাকে ইশারা করে বাহিরে আসতে বলল দিশা।
“কিছু বলবে চাচী।”
দিশা উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।সম্পর্ক না থাকলেও সম্বোধন রয়ে যায়।বৃষ্টিকে একটু গোপনে নিয়ে ব্যাগ থেকে বক্স বের করে দিলো।
“এটা আহনাফের জন্য।নানুর হাতের সন্দেশ ও খুব পছন্দ করে।”
“কিন্তু চাচী কোর্ট থেকে তোমার দেওয়া কিছু নেওয়া মানা।”
“বৃষ্টি জানো তো।বাঘিনী কখনো নিজ শাবকের শি কা র করেনা।রাখো আহনাফের ভালো লাগবে।আর কাইন্ডলি কবীরকে বলবেনা আমি এই স্কুলে জব নিয়েছি।”
বৃষ্টি মাথা নাড়ালো।দিশার সঙ্গে এক সময় খুব ভালো সম্পর্ক ছিল তার।সেই সুবাদে আজ দিশার ব্যাপারটা গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিলো।বক্সটা হাতে নিয়ে সে আহনাফের ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।দিশা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ভেতরটা ভীষণ জ্ব লে যায় তার।একটি সিদ্ধান্তের জন্য আজ সে ছেলের কাছে থেকেও দূরে।
(***)
আগামীকাল একটা বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে।এই কারণে শাহ কমিউনিটি সেন্টারটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে সাজানো হচ্ছে।তোশা সবুজ ঘাসের উপর বসে এক মনে গেম খেলছে।পরনে তার গোলাপি রঙের একটি ফ্রক।দেখতে মিষ্টি লাগছে।চুলগুলো তাহিয়া ভালোমতন বিনুনি করে দিয়েছে।এরকম বড় কোনো অনুষ্ঠানে সচরাচর মেয়েকে নিয়ে আসে তাহিয়া।যেন কাজের ব্যাপারে শিখতে পারে।হুট করে বড়সড় এক মূর্তিমানব তার পাশে এসে বসলো।তীব্র কড়া সুগন্ধ গা থেকে আসছে।তোশামণি আড়চোখে দেখে সেই মানুষটিকে।অভিমানে মুখটা ঘুরিয়ে নেয়।কবীর ঘামে ভেজা শরীর থেকে শার্টটি একটু টেনে নিলো।হাতে ভর দিয়ে প্রাণভরে শ্বাস নেয়।অসম বয়সী মেয়ের অভিমানে সে পুলকিত বোধ করে।মজা নেওয়ার জন্য শুধায়,
“তা তোশামণি এতো বা জে ড্রেস পরে কেন এসেছো?”
নাক কুঁচকে তোশা জবাব দেয়,
“আপনার শার্টটাও ভীষণ পঁ চা।”
“তাই?কী বলো তো।আমি দরিদ্র এক মানুষ।একটা ভালো শার্ট কিনে দিও।”
“সত্যি দিবো?”
“সত্যি দিবে।”
“মজা করছেন।”
“মজা করছিনা।”
“মিথ্যা।”
“সত্য।”
“উহুহহ।”
“হুহহহ।”
তোশামণির ছোট্ট হৃদয়ে রাগ এসে জমা হলো।গেমে হেরে যাওয়ার আশংকা থাকলেও ফোনটা রেখে দিলো।কবীরের মুখোমুখি হয়ে বলল,
“আমার কথার বিপরীত বলছেন কেন?”
“কেন?কথায় পারবেনা দেখে ভয় পাচ্ছো?”
“আমাকে হারাতে পারবেন না।”
“তাই?আহারে তুমি না রাগ করেছিলে আমার উপর।সেটিই তো এখন নেই।”
লজ্জা পেলো তোশা।একটু দূরে গিয়ে বসলো।ওদিকে পাইপের কাজ চলছে।আগামীকাল বর-বউয়ের হলুদে উপর থেকে বৃষ্টির মতোন পানি দেওয়া হবে।কবীরের মনের হাসি মুখে ফুঁটে উঠলো।সে একবার ভেবেছিল বাচ্চার রাগ ভাঙাবেনা।পরক্ষণে মনে হলো হোক না বয়সের ছোট একটা মানুষের খুশির কারণ।কবীর এগিয়ে এসে তোশার কাঁধের সঙ্গে বাহু মিলালো।যদিও তার মনে ঝড় বইছে নরম ছোঁয়ায়।কিন্তু সেটাকে তোয়াক্কা না করে বাহু দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলল,
“এই তোশামণি বলো আমাকে কবে শার্ট কিনে দিবে।”
“দিবো না।”
“মন খারাপ হলো।”
“বেশ হয়েছে।”
হুট করে জোরে একটা শব্দ হলো।কবীর দুহাত দিয়ে তোশাকে আগলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে নিলো।তাদের থেকে অনতিদূরে পানির পাইপটা জোরে শব্দ হয়ে ফেটে গেছে।সেখান থেকে হালকা পানি এসে দুটো মানুষকে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কবীরের ভেতরকার পঁয়ত্রিশ বছরের পুরুষ থমকালো।মন বলছে পনের বছরের এই মেয়েটা নেহাৎই বাচ্চা মেয়ে।কিন্তু অপর মন বলছে বয়সে কী?এই মেয়েটাও সুন্দর একজন নারী।যার দেহে উষ্ণ র ক্ত প্রবাহিত।নরম ত্বক পুরুষের ছোঁয়ায় লাল হয়।গা দিয়ে তীব্র মেয়েলি সুগন্ধ বের হয়।নিজের সঙ্গে দ্বন্ধ করেও তোশাকে জড়িয়ে ধরে রাখলো।ওদিকে মেয়েটা চোখবন্ধ করে স্বপ্ন অনুভবে ব্যস্ত।
দূর থেকে আলিঙ্গনরত এই দুজনকে দেখে কারো কপালে ভাঁজ পড়লো।নিজের সঙ্গে লোকটি বলে উঠলো,
“মায়ানের মেয়ের সাথে কবীরের এতো ঘনিষ্ঠতা যে দিনে দুপুরে এরকম জড়িয়ে ধরে আছে।বাহ, দিশাকে জানাতে হবে ব্যাপারটা।”
চলবে।