#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৩
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“অবশেষে মেয়েকে বি’ক্রি করে দিলি তুই?এটা বিশ্বাস হচ্ছেনা তাহিয়া।আমার মেয়ের বিয়ে ঠিক করার তুই কে?”
“আপনার মেয়ে মায়ান?কতো বছর পর মনে হলো আমার মেয়ে?”
“সবসময় মনে ছিল।কবীরের সাথে তোশার বিয়ে হতে পারেনা কখনো না।”
তাহিয়া কথাকে একটুও পাত্তা দিলো না।বরং মাথা নিচু করে নিজ কাজ করতে লাগলো।মায়ানের ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দরুণ তাহিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুঁড়ে মা’র’লো।
“তোকে কিছু বলছি আমি।”
“আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করছিনা মায়ান।আপনি আসতে পারেন।আর তোশা শুধু আমার মেয়ে।বছরে একবার দামী গিফট দেওয়া কোনো পিতার দায়িত্ব হতে পারেনা।একটা কথা বলেন ডিভোর্সের পর কিংবা নতুন বিয়ের পর তোশাকে দেখতে একবারও বাংলাদেশে এসেছিলেন?”
“কানাডা তোর বাবার না যে যখন তখন..।”
অদ্ভূত এক শব্দ হলো।বিষয়টি এতো দ্রুত ঘটলো যে মায়ান প্রতিক্রিয়া দেখানোর ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।তাহিয়া নিশ্বাস ফেলছে ঘনঘন।ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কাজটা আমার আরো আগে করা উচিত ছিল মায়ান।কিন্তু সুদীর্ঘ তেইশ বছর পর যখন আপনার সাথে দেখা হয়েছিল তখন থেকে এই চল্লিশ বছরে এসে সাহসটা পেয়েছি।তখন যদি ভালোবাসা নয় বরং নিজ মর্জি চালাচ্ছেন সেটা বিশ্বাস করতে পারতাম তাহলে আজ আমার জীবন এমন হতো না।কখনো না মায়ান।বরং এই বয়সের অন্য মানুষ যা পায় সেরকম সবকিছু আমারও হতো।জানেন আমার ও তোশার মধ্যে পার্থক্য কী?ও যাকে পছন্দ করেছে সে একটা সুপুরুষ আর আপনি স্রেফ একটা হাওয়া যে কখনো সঠিক দিকে প্রবাহিত হয়না।এবং সবসময় সঙ্গে ঝড় নিয়ে আসে।”
মায়ান গালে হাত দিয়ে খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।এরপর ঠান্ডা সুরে বলল,
“তোর চ’ড় কে আমি কিছুই মনে করিনি তাহিয়া।কারণ শোকে মাথা গিয়েছে।শুধু মেয়ের বিয়েটাতে মত দিবি না।আমার মেয়ে ছোট।”
“ওহ তাই?কানাডার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মনজুরুল খানের ছেলের বয়স তবে কতো?২২ নাকী ৩২?”
মায়ানের মুখটা কালো হয়ে গেলো।তোশা তার সুন্দরী মেয়ে হওয়ার দরুণ বিভিন্ন যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেদের সে বাছাই করে রেখেছে।এরমধ্যে তালিকার শীর্ষে হচ্ছে বত্রিশ বছর বয়সী একজন।
“৩২ ও ৪০ তে দীর্ঘ ৮ এর পার্থক্য তাহিয়া।তাছাড়া কবীর আমার বন্ধু।”
“কী বন্ধু?সত্য হলো আপনি কখনো কবীরকে বন্ধু ভাবেননি।বরং ভেবেছেন নিজের প্রতিপক্ষ।আমাদের সম্পর্ক ভাঙার কারণ কী মনে আছে?আপনার জীবন নাকী এদেশ ও স্ত্রী,সন্তানের মধ্যে থেকে ন’ষ্ট হয়ে যাচ্ছে।কবীর নিজ সামর্থ্য দ্বারা যখুনি কোনো সাফল্য অর্জন করতো তখুনি আপনি হীনমন্যতায় ভুগতেন।আমার এই হচ্ছে ওই হচ্ছে।এই বয়সে এটা করা উচিত।বাচ্চাকে দেখার না।কেন?বিয়ে কিংবা স্ত্রীর দায়িত্ব ভো’গ করার ক্ষেত্রে মনে ছিলনা এসব?আমি পাগল তাহিয়া চুপ থেকেছি।কাওকে বলিনি।এমনকি ডিভোর্স টাও মেনে নিলাম।আবার বললেন একা থাকতে পারিনি তাই বিয়ে করেছি।সত্যি ডিভোর্সের এক বছরের মাথায় বিয়ে করেছিলেন।আপনি একটা তেঁতো মানুষ।আমার মেয়ে ভালো থাকবে কবীরের সাথে।ওকে জীবনহীন জড়বস্তু কিংবা আমার মতোন ভাগ্য পেতে দিবো না।কখনো না।আরে আপনি কী বুঝবেন স্বার্থপর।”
তাহিয়া কথাগুলো বলে অনাদরে পড়ে থাকা ফোনটি কুড়িয়ে নিয়ে বলল,
“বের হোন এখুনি।আমার অফিসে আসার সাহস এরপর কখনো করবেন না।”
মায়ান এবারও নিশ্চুপ।তবে মনের ভেতর মস্ত বড় সুরে তাহিয়া নামক মানুষটিকে দেখছে।বয়সের ছাঁপ মুখে এখনও আসেনি রমণীর। টান টান আধা পো’ড়া খাওয়া শুভ্র ত্বকে দেখতে অভিজাত্যপূর্ণ।কপালের একগোছা চিরপরিচিত চুলে মিষ্টি লাগছে ।মায়ান যতোটা আ’ক্রো’শে এসেছিল ঠিক ততোটা নরম হয়ে চলে গেলো।নি:শব্দে, গোপনে।
রুমের বায়ু হালকা হওয়ায় তাহিয়া উদাস হয়ে বসে রইলো।এই কথাগুলো কতোদিন ধরে মনে জমে ছিল।আজ অবশেষে বলতে পারলো।হুট করে আরেকটি কণ্ঠে সে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো।
“মনে হচ্ছে কেঁদে ফেলবেন আপনি।”
“কে কে?ওহ উল্লাস।এসো ভেতরে।”
“হঠাৎ এলাম দেখে কিছু মনে করবেন না।আমার প্রিয় একটা বই রেখে গিয়েছিলাম।”
“দেখো বইটা ওই সেল্ফের উপর আছে।নিয়ে নাও।”
উল্লাস বিনা বাক্য ব্যয়ে বইটি হাতে নিলো।কিছুটা দ্বিধা নিয়ে শুধালো,
“মি.মায়ান এসেছিল দেখলাম।তার মুখটা কালো ছিল।আচ্ছা আপনি কী মন বদলে ফেললেন?”
“এলেমেলো উল্লাস ভয় পাচ্ছে?শুনো তোমার কথায় বিয়েতে আমি রাজী হইনি।কিংবা কারো কথায় না।তাই মত বদলানোর প্রশ্ন আসেনা।”
“ওহো।মিস.তাহিয়া আপনি মুখের উপর অ’প’মা’ন করতে জানেন।কিন্তু মিষ্টি মানুষদের মুখে কটূ কথাও তেতো লাগেনা।”
তাহিয়া মৃদু হাসলো।এই নায়কটাকে তার ভীষণ চালাক মনে হয়।কথার জালে খুব ভালোভাবে ফাঁ’সি’য়ে দিতে জানে।
(***)
তোশাকে এখনও বুকের সাথে আগলে রেখেছে কবীর।মেয়েটির আঙুল নিয়ে খেলছে।লম্বা সরু হাতটা এখন যেন বাচ্চাভাবে মোড়ানো।কবীরের মনে প্রজাপতি উড়ে যায় তোশাকে নিয়ে।চুলে নাক ঠেকিয়ে গম্ভীর শ্বাস ফেলে বলে,
“আই লাভ ইউ তোশা।চলো এখুনি বিয়ে করে ফেলি।”
“আপনাকে মটেও আজ আসল কবীর শাহ লাগছেনা।বরং ভিন্ন কেউ মনে হচ্ছে।”
“হতে পারে আমি ভিন্ন কেউ।”
“না আপনি ভিন্ন কেউ না।আপনার মতোন ভিন্ন নামে কে ডাকতে পারবে?ও একটা কথা জানেন?সেদিন একজন আমাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে।হসপিটালের মধ্যে।”
কবীর চমকে তোশাকে সোজা করে বসালো।গালে হাত দিয়ে বলল,
“হোয়াইট?লোকটিকে তুমি চিনো?”
“নাহ।”
“দেখতে কেমন ছিল?”
“বিদেশিরা যেমন হয়।”
কপালে ভাঁজ পড়ে গেলো কবীরের। সে শক্ত কণ্ঠে বলল,
“এরপর এমন কেউ সামনে এলে দ্রুত নিজের আত্মরক্ষা করবে।যে হোয়াইট বলেছে সে সম্ভবত সেই লোক যে আমাকে স্যু’ট করেছিল।”
“আপনি সিওর কবীর শাহ?সাথে অনেকগুলো অপরিচিত মানুষ ছিল।”
“তারা আমার লোক।আমি সিওর তোশা।ভুল নেই এখানে।ফ্রান্সিসকো আমাকে চিঠি দিয়েছে আমার সুখের সময় চুরি করে নিবে বলে।”
তোশার ছোট্ট মনটা কেঁপে উঠলো।কবীরকে দুই বাহুতে টেনে আনলো।পুরুষটির বৃহৎ শরীর আঁটেনা।তবুও বৃথা চেষ্টা।
“এতো কষ্টে আমরা এক হলাম কবীর। আবারও একটা ভয় ঢুকে গেলো মনে।”
“ভয় নেই বেলাডোনা।আমাদের জীবনে এমন অস্বাভাবিক ঘটনা আরো আসবে।তাই বলে পিছিয়ে থাকবেনা কিছু।”
তোশা তবুও কবীরকে ছাড়ে না।তামাটে পুরুষটিকে আঁকড়ে ধরে তার বুকে মাথা রাখে।এবার ভয় যে চিরতরে হারিয়ে ফেলার।
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“এই বাড়ীটা তোশা ও তোর থাকার জন্য তৈরী করা কবীর?বেশ ভালো তো।”
মায়ান কথাগুলো বলার সময় মুখের ভাব কিছুটা অন্যরকম করলো।ঠিক খুশি হলো নাকী দুঃখ পেলো বোঝা মুশকিল।কবীর সুইচ সবগুলো টিপে দিলো।বাড়ীর কাজ শেষ এখন শুধু রঙ করা বাকী।শূন্য পানসে দেয়ালের দিকে তাঁকিয়ে মায়ান শুধালো,
“আমার মেয়ের জন্য অনেক বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংকে রেখেছিস।কেন?তখন তো তোদের সম্পর্ক ছিলনা।”
“কথাটা কে বলেছে তোকে?”
“সেই প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।বরং তুই বলবি কবীর নেপথ্যে কাহিনী কী আসলে।”
কবীর চিরায়ত গম্ভীর দৃষ্টিতে নিজ প্রাণপ্রিয় বন্ধুকে দেখলো।ঠোঁটে নির্বিকার হাসি।গলার টাই আলগা করতে করতে বলল,
“বাড়িটা দেখতে চেয়েছিস এজন্য আনলাম তোকে।বাহিরে কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না।”
“কেন?মনে নিশ্চয় চো”র আছে।”
“না ডা”কা”ত আছে।মায়ান তুই নিজেকে জিজ্ঞেস কর একবার।কবীর শাহ পনের বছরের বাচ্চা মেয়ের প্রেমে নিজ থেকে পড়ে যাবে?সম্ভব?পুরো ঘটনা তুই জানিস।এখানে কোনো ছলের আশ্রয় নেই।”
মাথা নাড়ালো মায়ান।পকেট থেকে হাতটা সরিয়ে বলল,
“তোর মনে আছে আগে আমরা দুজন কুস্তি লড়তাম।”
“আর তুই সবসময় হেরে যেতি।”
“হ্যাঁ।শক্তিশালী,সামর্থ্যবান ,বুদ্ধিতে ভরা কবীরের কাছে আমার হেরে যাওয়া যেন নিত্য দিনের কাজ ছিল।তবুও পরের দিন আবার তোকে রাজি করাতাম শক্তির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।আজকে চল আবার দেখি কে জিতে যায়?”
ভ্রু কুঁচকে গেলো কবীরের।মায়ানের কথাগুলো তার নিকট রহস্য।তবে সে স্বাবধানী।এবং নিজেও চতুর।কথাতে সায় দিয়ে বলল,
“ঠিক আছে চল।এবার জিতলে তোর গ্রীসের ট্যুর ফাইনাল।”
মায়ান বিদ্রুপ হেসে শুধালো,
“আমি জিতবো তোর মনে হয়?”
“ভবিষ্যত কে জানে?”
বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা কেয়ার টেকার লোকটি কৌতুহল হয়ে শুনছিলো তাদের কথা।তার মনিবের সাথে লোকটাকে নতুন লাগছে।তুই সম্বোধনে বুঝতে সক্ষম হলো বন্ধু হবে হয়তো।কিন্তু তারা এখন কুস্তি লড়বে এখানে? সে অপরিচিত কিন্তু তবুও বুঝতে পারছে আগুন্তক লোকটির মতিগতি ভালো নয়।যেভাবে হাসছে তাতে কিছু তো লুকিয়ে আছে।শুরুর আগে মায়ান কবীরকে বলল,
“তোর লোকদের বলে দে খেলার দশ মিনিটে আমাকে কোনো বাঁধা দিতে পারবেনা।”
“দিবেনা।”
“ওয়াদা।”
মায়ানের মুখে আবারও হাসি ফুঁটে উঠলো।তারা যখন লড়াই করা শুরু করলো তখন শুরুতে কবীরের পুরুষালি শক্ত হাতের কাছে সহজেই হেরে গেলো মায়ান।কিন্তু মিনিট খানেক বাদে অদ্ভূত ভাবে শরীরকে বাঁকিয়ে কবীরকে মাটিতে ফেলে দিলো মায়ান।এবং বুকের দিকটায় হাঁটু চেপে হাত দুটো বেঁধে ফেললো।বিষয়টি খুব দ্রুত হলো।মায়ান দ্রুত গতিতে শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল,
“হতে পারি খুব দূর্বল।কিন্তু জীবনে এই একটা জিনিস শিখেছি যা খুব কাজে লাগে।কবীর আজকে তুই হেরে যাবি।নির্ধারিত আর ছয় মিনিট বাদ আছে।”
মায়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইচ্ছামতোন কবীরকে আ’ঘা’ত করলো।কবীরের সাথে থাকা লোকেরা এগিয়ে আসতে গেলে নিয়মের বেড়াজালে আটকে দিলো।পুরুষদের এই এক সমস্যা।অহেতুক নিয়ম মেনে চলে।ইতিমধ্যে তরল নোনতা স্বাদ কবীরের মুখে অনুভব হয়েছে।সর্বশক্তি দিয়ে সে মায়ানকে উপর থেকে ফেলে দিলো।ঘড়িতে তখুনি নির্ধারিত সময় শেষ।
“মায়ান তুই কী পাগল?কী ভেবেছিলি মে””রে ফেলবি আমাকে?”
গলার টাই দিয়েই কবীরের হাতখানা আঁটকে ছিলো মায়ান।সেগুলো খুলে ক্ষ’ত স্থানে হাত রাখলো কবীর।মায়ান অতীব শান্ত সুরে বলল,
“আমার মেয়েকে তুই বিয়ে করবি।আঁটকাতে পারিনি।কিন্তু মনে তো একটা কষ্ট আছে।তাই তোকে ইচ্ছামতোন মে”” রে নিলাম।এখন শান্তি লাগবে অন্তত জীবনে।”
কবীর অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে মায়ানকে দেখলো।রাগ উঠে গেলো তার।বিশাল দানব শরীর নিয়ে মুহুর্তে মায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে তার শার্ট ধরে হালকা উঁচু করলো।
“আমি এখন তোকে কী করতে পারি সেটা জানিস মায়ান?আমি স্বভাবে কেমন বিষয়টি জানার কথা।”
“তুই কেমন?জানি যেমনটা দুনিয়াকে দেখাতে পছন্দ করিস আদৌও সেটা নয়।এই ধনবান হওয়া কিংবা অর্থ সবকিছু ভুলভাবে পেয়েছিস তুই।”
“এটা তোর ভুল ভাবনা।আমি নিজের সামর্থ্য দ্বারা পেয়েছি।পথ চলতে কিছু মানুষ এসেছিলো তাদের শুধু সরিয়ে দিয়েছি।তবে আজ বেঁচে গেলি শুধু আমাদের নতুন সম্পর্কের জন্য।তুই যে সারাজীবন বন্ধুর নামে শুধু ছলনা করে গিয়েছিস বেশ জানি মায়ান।কিন্তু দুঃখ নেই আমার।বরং করুণা হয়। একটা মানুষ কতোটা আমার মতোন জীবন চেয়েছিল কিন্তু পাইনি।”
ভীষণ অপমানজনক কথা।মায়ানের মুখটা থমথমে হয়ে গেলো।কবীরকে আজীবন নকল করে এসেছে এটা সে মন থেকে জানে।কিন্তু কখনো স্বীকার করা হয়না।শার্ট থেকে হাতটা সরিয়ে বাহিরে চলে গেলো মায়ান।কবীরের রাগে মাথায় কষ্ট হচ্ছে।কতোগুলো অধীনস্থ কর্মচারীর সামনে হে’ন’স্থা হতে হলো।
“কে আছো?আমার জন্য পানি নিয়ে এসো।”
কেয়ার টেকার লোকটি দৌড়ে পানি আনতে গেলো।দুই বন্ধুর মধ্যে কতোটা মুশকিল ঘটনা ঘটে গেলো।ভেবেছিল চোখের সামনে আজ খু””ন দেখতে হবে।পানি পেয়ে সর্বপ্রথম তা মাথায় ঢাললো কবীর।কিছু একটা মনে হচ্ছে তার।এজন্য দ্রুত গতিতে কাওকে ফোন করতে করতে বের হয়ে গেলো।
(***)
রাত দশটা বাজে।তাহিয়া সবেমাত্র অফিস থেকে ফিরেছে।ডায়নিং এ সকলে বসেছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য।তাছাড়া তোশার বিয়ে নিয়েও কিছু আলোচনা সেড়ে নিবে।তাহিয়ার মা,বাবা ও শিউলি বিয়েতে আপত্তি না জানালেও ভাই ও ভাবী অসন্তুষ্ট।কিন্তু তাহিয়ার তাতে দুঃখ নেই।কারণ সে চোখ বন্ধ করে মেয়ের সুখ দেখবে।হুট করে কলিং বেল বেজে উঠলো।কাজের মেয়েটি গিয়ে দরজা খুলে দিলো।একরাশ উষ্ণ বায়ুর সাথে কবীর ভেতরে প্রবেশ করলো।সাথে আরও দুজন লোক আছে।কবীরের মুখে আ”ঘা”তের চিহ্ন দেখে তাহিয়া ব্যস্ত হয়ে বলল,
“কবীর এরকম অবস্থা কেন?কে করেছে?”
“মায়ান।তোমার মেয়েকে ডাকো তাহিয়া।আমি এখুনি বিয়ে করবো।”
“মায়ান?সে কী পাগল?আর এটা কেমন কথা যে এখুনি বিয়ে করবে?সবকিছুর সময় আছে।”
“নেই তাহিয়া।এতো মানসিক অশান্তি নিতে পারবো না।হ্যাঁ তো বলেছো।তাহলে কথা কেন পাল্টে ফেলবে?তোশাকে ডাকো প্লিজ।পরে ধুমধামে হবে না হয় সব।”
তাহিয়া কিছু বলতে চাইলেও তার মা হাত ধরে ফেললো।চোখের ইশারায় সম্মতি দিতে বলল।কারণ বিষয়টা একভাবে কাগজে কলমে উঠলে ভালো হবে।কিন্তু যাকে নিয়ে আয়োজন সে বেঁকে বসলো।সে বউ না সেজে বিয়ে করবেনা।কবীরকে ব”কে কান্নাকাটি করেও লাভ হলো না।তামাটে পুরুষটির ধমক শুনে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসতে হলো।পরনে তার ছিল খরগোশের ছবি আঁকা গেঞ্জি ও প্লাজো।অদ্ভূত পোশাক।অবশ্য নতুন কনের পোশাকের ম”র্মা”ন্তি”ক দৃশ্য দেখে তোশার নানীর মায়া হলো।নিজের বিয়ের ওড়না বের করে এনে মেয়েটাকে পড়িয়ে দিলো।কবীর নিজ বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়েছে কল করে।ঠিক রাত দশটা বিশে কাঙ্ক্ষিত বিয়েটি পূর্ণ হলো।তোশা মুখটা লাল করে কবীরের উদ্দেশ্যে ফিসফিস করে বলল,
“ডা’কা’ত,স্বৈ’রা’চা’রী।এলো কথা বলল আর রাজকন্যা দখল করে নিলো।বউ সাজতেও সময় দিলো না।”
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“বউয়ের রাগ ভাঙায় কীভাবে চড়ুইপাখি?জবাব দাও।”
তোশার মুখ থেকে জবাব আসেনা।বরং নিশ্চুপ হয়ে কবীরের বুকে মাথা রাখলো।আজকে রাতে তারা দুজনে একসাথে থাকবে।বাজপাখির সঙ্গে মধুরাত?ভাবতে গিয়ে তোশা শিওরে উঠে।ক্ষণে ক্ষণে বুকে শত রঙীন প্রজাপতি উড়ে যায়।
“আমি তো জানতাম না লিটল চেরীর বউ সাজার এতো শখ।অবশ্য সব কেনা ছিল।কিন্তু নিয়ে যে আসবো সেই পরিস্থিতি বা মাথায় ছিলনা।মায়ানের উপর রাগ হয়েছিল অনেক।”
তোশা অকস্মাৎ উঠে সোজা হয়ে বসলো।কবীরের মুখমণ্ডলে থাকা র’ক্তি’ম আভাতে হাত বুলিয়ে বলল,
“ব্যা’থা অনেক তাইনা?আমি একটু অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছি।”
“ওয়েট তোশা লাগবেনা।তুমি শুধু বসো আমার কাছে।আহনাফের সাথে কথা হয়েছে?”
“হয়েছে।ও কাল দুপুরেই আসবে।আমি আর ও ঘুরতে যাবো শপিং কমপ্লেক্সে।”
“ইতিমধ্যে প্ল্যান বানানো শেষ!এইযে লিটল ডেভিল শ্বশুর বাড়ীতে যেতে হবেনা?”
“তাতে তো বিশদিন বাকী এখনও।”
কবীর তোশার হাতখানা নিজের গালে এনে ঠেকালো।উষ্ণ, নরম তালুতে পুরুষালি গালের রুক্ষতা টের পাওয়া যাচ্ছে।এইযে একত্রে থাকা কিংবা এই সময়টা।এর জন্য কতোবার কেঁদেছে তোশা?কতো শূন্যতা অনুভব করেছে।পাওয়ার আশা কতোবার নিরাশাতে রুপ নিয়েছে?এরকম হাজারও অনুভূতি অতিক্রম করে আজ নতুন অনুভূতি সে কবীর শাহ এর স্ত্রী।তার বৈধ নারী।
“তোশা,আমাকে পেয়ে তোমার মনে কোনো খারাপ লাগা নেই তো?”
“যদি হতো এতোকিছু করার সাহস থাকতো কবীর শাহ?”
“তুমি সবসময় আমার নাম পুরো বাক্যে কেন বলো?”
“ভালো লাগে।”
তোশা আবারও হাসলো।আজকে তার মুখ থেকে হাসি কেন সরে যাচ্ছে না?মুখটা উঁচু করে কবীরের গালে লাল হয়ে থাকা অংশতে অধর স্পর্শ করলো সে।যে ছোঁয়ায় মলিনতা নেই।বয়স,সময়,সম্পর্কের দূরত্ব নেই।লোকে কী বলবে ভয় নেই।ক্ষণে ক্ষণে থেকে আরো কয়েকটি ভালোবাসার স্পর্শ পেলো কবীর।এবার শব্দ করে হেসে বলল,
“এটা ভালো।বাবা কষ্ট দিবে মেয়ে মলম লাগাবে।”
তোশাকে টেনে নিজের কাছে এনে তার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বলল,
“বিয়ে হলেও সব ঝামেলা মিটে যাবেনা।এখন মানুষ নানা ধরণের কথা বলবে।সব সহ্য করে নিও।”
“আপনি নিতে পারবেন?”
“তোমার জন্য সবটা সহ্য করতে পারি তাহিয়ার কন্যা।”
ফোনের রিংটোনে তোশার পরবর্তী কথা চাপা পড়ে গেলো।উল্লাসের নামটা স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে।তোশা চট জলদি রিসিভ করে বলল,
“নায়ক আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে উল্লাস বলল,
“কবীর শাহ এর সঙ্গে এটা কীভাবে করতে পারলি সখী?এতোদূরে এসে হাল ছেড়ে দিলি?তাহিয়া তো ওয়াদা করেছিলো তোকে।”
তোশার কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ পড়লো।কবীর তাকে ইশারাতে লাউড দিতে বলল।
“কী বললি নায়ক বুঝিনি।”
“কবীর শাহ তোর হাজবেন্ডকে কী করবে এখন?আমি তোর ভবিষ্যত খারাপ দেখছি।”
“কিন্তু আমি তো ভালো দেখতে পাচ্ছি উল্লাস।”
“কবীর শাহ?”
“ইয়েস।”
“হঠাৎ কীভাবে হলো?”
“তাহিয়া তো আগে থেকে রাজী ছিল।এখন কীভাবে হলো তা গোপন থাকুক।যেমন তুমি গোপন করেছো তাহিয়া কীভাবে রাজী হলো।”
“আপনি সব জেনে যান কবীর শাহ।অভিনন্দন দুজনকে।সব বাঁধা অতিক্রম করে এক হয়েছেন।ধুমধাম করে কবে হচ্ছে সব?”
“খুব শীঘ্রই।তোমাকে ধন্যবাদ উল্লাস।তুমি অনেক সাহায্যে করেছো।”
“বস্তুতপক্ষে আমি কেউ নই কবীর শাহ।তবে আপনার সাথে আরেকটা কথা আছে আমার।ফোনটা লাউডে থাকলে অফ করুন তা।”
উল্লাস কিছু একটা বলছে কবীরকে।তোশা সেদিকে মন দিলো না।বরং রুমের লাইট অফ করে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়লো।ঘুম আসছেনা তার।এই অন্ধকারে কবীরের কণ্ঠ শিহরণ জাগাচ্ছে মনে।
(***)
একদম অল্প ঘুম হলো তোশার।অবশ্য সেটা তার নিজের মনে হলো।কিন্তু সে আসলে ঘুমিয়েছে পুরো বারো ঘন্টা।ফোনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থম মে’রে বসে রইলো।ওয়াইফাই অন থাকার দরুণ একটু পরপর নোটিফিকেশন আসছে।কৌতুহলী হয়ে সে সোশ্যাল মিডিয়াতে ঢুকে দেখলো কবীর তাকে উল্লেখ করে বিয়ের বার্তা সকলকে জানিয়েছে।তাদের নিয়ে অনেকদিন ধরে চর্চা হওয়ায় বিষয়টি টক অফ দ্য টাউন হতে সময় লাগেনি বোধহয়।এমনকি উল্লাসও নিজস্ব ব্যক্তিগত পেইজে থেকেও অভিবাদন জানিয়েছে।তোশা মন্তব্য দেখতে গেলো না।বরং বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।কবীর চলে গিয়েছে সে বুঝতে পারলো।কীভাবে বুঝে যায় মানুষটির উপস্থিতি কিংবা অনুপস্থিতি?রাতে তার মাথায় দেওয়া লাল ওড়নাটি বিছানার একপাশে অনাদরে পড়ে আছে।কুঁড়িয়ে নিলো তোশা।আচ্ছা তার নানু যখন প্রথমবার ওড়নাটি পরেছিলো তখন কেমন অনুভব করেছিলো?জিজ্ঞেস করবে।
“তোমাকে অনেক খুশি লাগছে তোশামণি।”
মায়ের কণ্ঠে চমকে গেলো তোশা।তাহিয়া হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।আশ্চর্যভাবে মায়ের চোখে অন্যরকম উজ্জ্বলতা দেখতে পেলো সে।যা কখনো দেখেনি।
“আম্মু তুমি আজ অফিসে যাওনি?”
“নাহ।মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। প্রথমদিনই অফিসে যাওয়া শোভা পায়না।”
তোশা এগিয়ে গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো,
“ধন্যবাদ আম্মু।আমি জানিনা কীভাবে খুশি বর্ণনা করবো।”
“তোমার সব আবদার পূরণ করেছি তোশা।কিন্তু এবার সবথেকে শুদ্ধ ও সঠিক আবদার করেছিলে।বুঝতে শুধু একটু সময় লেগেছিল।”
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে সে পুনরায় বলে,
“এখন পাগলামি ছাড়তে হবে।বড় হতে হবে।কবীর যতো বলুক কিন্তু তার মা ও বাবাকে সম্মান করতে হবে।”
“আম্মু তুমি আমাকে সাজিয়ে দিবে?আহনাফের সাথে ঘুরতে যাবো।”
“অবশ্যই।তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আগে।”
তোশা তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলো।এতোক্ষণে বুকের ভেতর থাকা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো তাহিয়ার।তার মেয়ে চলে যাবে।এতো জলদি?বিষয়টি মেনে নিতে কষ্টকর।আড়ালে চোখ মুছলো।ওদিকে মায়ের সামনে থেকে চট জলদি এসে পড়েছে কারণ কান্না আঁটকিয়ে রাখা খুব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো।মা কে ছেড়ে চলে গিয়ে সে ভালো থাকবেনা।একটুও না।কিন্তু সেই কথা বলবে কীভাবে?দরজা আঁটকে অনেকক্ষণ তা নিয়ে কাঁদলো তোশা।দিনশেষে তাহিয়া একা এবং শূন্য।
চলবে।
এডিট ছাড়া পর্ব।