মিঠা রোদ পর্ব-৬০+৬১+৬২

0
745

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমি তোমাকে বিগত কয়েকদিন এতো দেখা করতে বললাম করলে না।কিন্তু আজ হুট করে চলে এলে যে?এতো সুন্দর সারপ্রাইজ।”

দিশার মুখ বিবরের উজ্জ্বলতা পুরো রুমে ছড়িয়ে পড়লো।কবীরের দৃষ্টিতে তা লুকালো না।সে মৃদু হেসে বলল,

“কতোদিন পর তোমাদের বাড়ীতে এলাম।আঙকেল বা আন্টি কোথায়?”

“আঙকেল-আন্টি?”

“তোমার মা-বাবা।”

“কিন্তু তুমি তো তাদের মা-বাবা বলে ডাকতে।”

“যুগের সঙ্গে আপডেট হওয়া আধুনিকতার ধর্ম নাকী পিছিয়ে থাকা?যা চলে গিয়েছে সেটা নিয়ে আফসোস বা পুরোনো সম্পর্ক ধরে রাখে বোকারা।”

“কিছু সম্পর্ককে সম্মান করতে হয়।যা শেষ হওয়ার পরেও।এটাকে আধুনিকতা বলে।সম্বোধন বদলে ফেলা উচিত নয়।”

“দিশা তুমি এখনও সেই অতীতে আছো।মুভ অন করছো না কেন?”

রেগে গেলো দিশা।হালকা উষ্ণ কণ্ঠে বলল,

“আমাকে তুমি এসব বলতে এসেছো?ফিরে যেতে চাওয়া দোষের কিছু নয়।বরং এতোদিন পর এটা করতে চাচ্ছি সেটা বুদ্ধিমানের কাজ।”

“ডিরেক্টরকে স্ক্রিপ্ট কেন দিয়েছো?”

কবীরের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো দিশা।কপালে কিঞ্চিত ঘাম জমে গেলো তার।প্রাক্তন স্বামীর নিকট সে অনেক ব্যক্তিত্ববান নারী।সেখানে এমন কিছুর জবাবদিহিতা নিশ্চয় কাম্য নয়।দিশা ব্যাপারটিকে ঘুরানোর নিমিত্তে বলল,

“আমি তো ক্রিপ্ট রাইটার নই যে কাওকে স্ক্রিপ্ট দিবো।শুধু ঘটনা বলতে পারি যা ঘটে।সেটা যদি কেউ নিজ কাজে লাগায় সেক্ষেত্রে আমি নির্দোষ।”

“নির্দোষ?”

কবীরের কণ্ঠে কেমন কৌতুকের আভাস পাওয়া গেলো।

“শুনো দিশা তুমি আমার স্ত্রী ছিলে।এক সময় দুনিয়াতে সবথেকে কাছের মানুষ ছিলে।দুজনে এক সাথে খেয়েছি,ঘুমিয়েছি ইভেন এক বালিশও শেয়ার করেছি।তাকে তুমি যদি বলো আমি আপেলের মতোন মিষ্টি।বস্তুতপক্ষে তা কমলার মতোন টক।সে কী বিশ্বাস করবে?তোশা আমার বাগদত্তা পরে সে কী একজন মেয়ে নয়?আমাকে ফ্লিমটি দেখাও। নিশ্চয় কপি আছে তোমার কাছে।”

“নেই।”

“তুমি কী চাও কবীর শাহ কঠোর হোক?বিনিময়ে ভীষণ খারাপ হবে তোমার সাথে।”

প্রায় ধমকে কথাগুলো উচ্চারণ করলো কবীর।দিশা অনেকক্ষণ শক্ত হয়ে সোফায় বসে রইলো।পরবর্তীতে নাছোড়বান্দা কবীরের শা’ণি’ত দৃষ্টির সামনে হার মানতে হলো।উপরে রুমে গিয়ে একটা পেইনড্রাইভ এনে তাকে দিলো।

“এখানে আছে।আমি আবারও বলছি এমন মুভি হবে সেটা শুরুতে জানা ছিলনা।”

“তুমি প্রতীককে কীভাবে চিনো?”

“তোমার এই বিষয়ে কোনো মাথা ব্যাথা থাকার কথা নয়।”

“একচুয়েলি তুমি আমার মাথার পেইন হয়ে দাঁড়িয়েছো এখন।আশা করা যায় আজকেই শেষ হবে সবকিছুর।”

“মানে?”

দিশার কথাকে তোয়াক্কা না করে গাড়ী থেকে ল্যাপটপ নিয়ে এলো কবীর।তাতে পেইনড্রাইভ ঢুকিয়ে মুভিটা অন করলো।উল্লাস সঠিক ছিল।ভীষণ ই’রো’টি’ক করে তুলেছে দৃশ্যগুলো।সবথেকে অদ্ভূত কবীরের এটা দেখে লেগেছে তোশার ক্যারেক্টারে কয়েকটি পুরুষের প্রতি আ’স’ক্ত থাকাকে দেখিয়েছে।চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো কবীরের।মন চাচ্ছে এই কাজের সঙ্গে জড়িত সকলের উপর থেকে নিচে আ’ল’গা করে দিতে পারলে ভালো হতো।

“দিশা তুমি একটা…..।”

কবীর অতীব ভ’য়া’ব’হ ভাষা উচ্চারণ করলো দিশার উদ্দেশ্যে।কানে হাত রেখে দিশা প্রতিবাদ করে বলল,

“কবীর।তুমি এরকম কথা বলতে পারলে?”

“আমি তোমাকে শেষ বিন্দু অবধি সম্মান করেছি টগর।কিন্তু সেই সবকিছুর যোগ্য তুমি নও।এখন বলো শা’স্তি হিসেবে কী চাও?”

“আমাকে শা’স্তি দেবার তুমি কে?”

“রাইট।আমি কেউ না আসলে।”

কবীর ধীরে উঠে দাঁড়ালো।সে আজকে গ্রে রঙের স্যুট পরেছে।কেমন মনকাড়া দেখাচ্ছে।দিশার সামনে দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে এলো।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে দিশা।তবে তুমি বললে আমি আসলে কেউ না।কিন্তু আজ থেকে আমাকে ছাড়া তুমি কাওকে ভাবতে পারবেনা।”

ভ্রু কুঁচকে দিশা জবাব দিলো,

“মানে?”

কবীরের ঠোঁটে অদ্ভূত হাসি ফুটে উঠলো।দিশার গালে হাত বুলিয়ে বলল,

“কবীর শাহ আজকের এই জায়গায় এমনি এমনি আসেনি।শূন্য থেকে বড় হয়েছে সে।তোমাকে যদি হ্যান্ডেল না করতে পারি তাহলে সেটা আমার নিজ স্বত্তায় কষ্টের আ’ঘা’ত দিবে।”

“কবীর সরো।তোমাকে অদ্ভূত লাগছে।”

কবীর স্মিত হেসে সরে দাঁড়ালো।কোনো প্রকার উচ্চবাচ্য না করে সোজা বের হয়ে গেলো।দিশার মনটা কেমন শুষ্ক হয়ে উঠেছিল যখন মানুষটা তার সামনে ওভাবে ছিল।যেন চিরপরিচিত কবীর নয়।অন্য একটা মানুষ।সামনে টেবিলে রাখা পানির গ্লাসটিকে উঠিয়ে নিলো সে।জিহবাতে তরলের স্পর্শ পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেললো।তার মনে হলো স্বাদটি ভিন্ন।কিন্তু এইমাত্র তো কবীরের জন্য পানিটা এনেছিল।পুনরায় পান করে দেখলো সব স্বাভাবিক।হঠাৎ এমন মনের ভুল কেন হলো?

(***)

তোশা হসপিটালের বারান্দায় পায়চারি করছে।একে তো বিলাসবহুল প্রাইভেট হসপিটাল।দ্বিতীয়ত ভিআইপি সেবা পাচ্ছে সে। দীর্ঘ ঘুমের পর তাকে একটু হাঁটাহাঁটির পরামর্শ দিয়েছে ডাক্তার।সঙ্গে নার্স রয়েছে।করিডোরের এমাথা থেকে ওমাথা হেঁটে যাচ্ছে।যদিও বাড়ীতে যাওয়ার জন্য মনটা উদগ্রীব।তোশা আড়চোখে আশেপাশে কয়েকজনকে দেখলো।যাদের মিলিটারির মতোন লাগে।সকাল থেকে তার আশেপাশে এমন অনেকজনকে দেখেছে।বিষয়টি কেমন ভাবাচ্ছে তাকে।বেখেয়ালিভাবে একটি বৃদ্ধ লোকের সাথে ধাক্কা লেগে গেলো তোশার।

“সরি সরি।”

“ডোন্ট বি সরি ডিয়ার।আই এম ওকে।”

তোশা খেয়াল করলো লোকটা বিদেশি।চেহারাতে নেটিভ ব্রিটিশদের মতোন হাবভাব।মুখ তুলে লোকটা বিনয়ী হেসে বলল,

“দিস ইজ ফর ইউ হোয়াইট।”

“হোয়াইট?”

“এ কমপ্লিমেন্ট ফর ইউ বিউটিফুল গার্ল।”

লোকটি হাত এগিয়ে একটি সাদা গোলাপ দিলো তাকে।তোশা বিনয়ী ভাবে তা গ্রহণ করলো।লোকটি হেসে তৎক্ষনাৎ চলে গেলো সেখান থেকে।তোশা একবার ভেবেছিল ডেকে আলাপ করবে।পরক্ষণে সেই চিন্তা বাদ দিয়ে কেবিনে ঢুকলো।মিনিট পাঁচেক পর চিরচেনা পারফিউম পেলো তোশা।আশ্চর্য কাল স্বপ্নেও এমন পেয়েছিল।নিজের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে ভেবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো।একটু পর উষ্ণতার আভাস পেলো ত্বকে।

“কী ব্যাপার লিটল চেরী?যখুনি দেখা করতে আসি তখুনি ঘুম?দ্যাটস নট ফেয়ার।”

তোশা চট করে চোখ খুলে ফেললো।না সে স্বপ্নে দেখছেনা।উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,

“আপনি?কেউ এসে পড়বে সেদিনের মতোন।”

“কেন সেই গান শুনো নি?যা পেয়্যার কিয়্যা তো ডারনা কিয়্যা।আমিও আর ভয় পাইনা বেলাডোনা।”

তোশার চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে গেলো।কবীর এমন নিশ্চিন্ত মুডে খুব কম থাকে।

“আপনাকে খুশি লাগছে কেন কবীর শাহ?আমার থেকে পিছু ছেড়ে গিয়েছে এজন্য?”

“তোমার থেকে?ইহজীবনে আমার পিছন ছাড়বেনা তুমি।কীযে দুষ্ট তুমি।”

“সব তো শেষ হয়ে গিয়েছে সেদিন।আর কী আছে?”

তোশার কণ্ঠে অভিমান জমা আছে।তবে এক্ষেত্রে সে কার উপর ক্ষি’প্ত নিজ ব্যতীত?কবীর তার পাশটায় গিয়ে বসলো।গায়ের ব্লেজার খুলতে খুলতে বলল,

“আমার মাথায় ব্যাথা হয়ে ছিল কিছু জিনিস।আজ সবকিছু শেষ করে এসেছি।কোথায় আমাকে ফুলের পাপড়ি দিয়ে বরণ করে নিবে তা নয়। ”

“কী এমন কাজ করলেন শুনি।”

“বলা যাবেনা।তবে…।”

“তবে?”

কবীর টেনে তোশাকে নিজের কাছটায় আনলো।হকচকিয়ে উঠলো মেয়েটি।তোশার নরম গালে শক্ত আ’ঙু’ল দিয়ে চেপে বলল,

“তবে যদি আর কোনোদিন অবাধ্য হও আমার সেক্ষেত্রে কথা আছে।এই সুন্দর ঠোঁট দিয়ে যেন আর কখনো অভিনয় করবো এটা বের না হয়।”

তোশা ছিটকে সরে গিয়ে উচ্চারণ করলো আম্মু।কবীর তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালো।দেখলো দরজাতে কেউ নেই।

“দরজাতে কেউ নেই কবীর শাহ।আমি আপনার অদ্ভূত কথায় ভয় পেয়ে মা কে ডেকেছি।কিন্তু আপনি আম্মুকে ভয় পান?”

কবীর বিরক্ত হয়ে বলল,

“মটেও না।বরং আবার সেই একটা কথা শুরু হতো।সেসবকে ভয় পাই।”

কবীর ক্লা’ন্তিতে পুনরায় বেডে শুয়ে পড়লো। তার পা দুটো মেঝেতে স্পর্শ করে আছে।এতো বড় শক্তিশালী একজন মানুষকে ক্লান্ত হতে খুব কম দেখা যায়।কিন্তু মনভরে তাকে দেখলো তোশা।এই মানুষটাকে সে আর কী কখনো পাবেনা?

“এদিকে এসো তোশা।”

ধ্যান ভাঙলো তোশার।তবুও নিজ জায়গা থেকে নড়লো না।

“কী বলছেন?”

“তোমার হাতে আমার দেওয়া আঙটি কোথায়?”

“মায়ের কাছে।”

চোখ খুলে ফেললো কবীর।একটু কঠিন কণ্ঠে বলল,

“এতো সহজে দিয়ে দিলে?তুমি কী সত্যি আমার উপর মায়া করো?”

“বলতে পারলেন এভাবে?”

“তো দিলে কেন?”

“মা জোর করে নিয়েছে।আমি, আমি আসলে।”

তোশা ঠোঁট কাঁ’ম’ড়ে কেঁদে ফেলার ভঙিতে বলল।

“তুমি অনেক ছিঁচকাঁদুনে হয়ে গিয়েছো বেলাডোনা।”

কবীর উঠে তোশাকে নিজের কাছে এনে বসালো।আগলে নিয়ে বলল,

“তুমি অল্প বয়সের আবেগে আমাকে পছন্দ করেছিলে।তখন কী ভেবেছিলে এসব হবে?”

“নাহ।কিন্তু আপনি জানতেন।”

“কিছুটা আন্দাজ তো করতে পেরেছিলাম।এখন এতো অসুস্থতা কেন তোশা?শক্ত হতে শিখো।তোমার জীবনে এক পুরুষ থাকবে।সেটা আমি।বাকীটা ম্যানেজ করে নিবো।”

“হ্যাঁ দেখতো পাচ্ছি।আপনার ম্যানেজ করতে গেলে আমি বুড়ি হয়ে যাবো।”

“আমি তোমার থেকে বিশ বছরের বড়।নিজে বুড়ো হওয়ার চিন্তা করিনি আর তুমি কীনা?অদ্ভূত লিটল টমেটো।”

তোশা রে’গে নিজের হাতটা উঁচু করে দিয়ে বলল,

“ধরেন নেন আমাকে লবণ, মরিচ দিয়ে খে’য়ে ফেলেন।কখনো লিটল ফ্রুট,কখনো টমেটো,কখনো চেরি।দুনিয়ায় সব খাবার আমি।যতোসব মন ভোলানো কথা।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

প্রিয়জনের সঙ্গে অতিবাহিত সময় দ্রুত চলে যায়।এইতো তোশার সঙ্গে মৃদু ঝ’গ’ড়া কিংবা দুঃখের গল্প বলতে বলতে প্রায় ঘন্টা দুয়েক অতিক্রম হয়ে গিয়েছে।এখন মেয়েটা খুব আরামে কবীরের হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।যেন নাবিক বহুকাল ধরে সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছিল।দিক খুঁজে পেতে গিয়ে ক্লান্ত।তোশার নরম লাবণ্যময় গালে কবীর আঙুলের ছোঁয়া দিলো।শিহরিত হয় তার মন।এই মেয়েটা এতোটা ভালোবাসে কেন তাকে?কতোভাবে পিছন ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কবীর।কিন্তু ফল বৃথা।সে এটাও জানে নিজ মাকে যতো বলুক সে তার ভালোবাসা ভুলে যাবে।কিন্তু মন শান্ত হলে ঠিক আবার কবীরের আশেপাশে মৌমাছি হয়ে ঘুরবে।তবে যে সে মৌমাছি নয়।বরং সর্বপেক্ষা শক্তিশালী রাণী।কবীর আস্তে করে ডাকলো,

“বেলাডোনা।তুমি কী জেগে আছো?”

“হুঁ।”

কবীরের ধারণা ঠিক।মেয়েটাকে ঘুমে ডাকলে সাড়াশব্দ করে।কিন্তু পরে সব ভুলে যায়।আলতো করে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।এমন সময় দরজা খোলার শব্দ হলো।কবীর না দেখে অনুমান করলো তাহিয়া এসেছে।কিন্তু আজ কোনো লুকোচুরি নেই।ভয় নেই।বাঁধা নেই।হুট করে কবীর এতো চঞ্চল কীভাবে হলো?এখন তার মনটাকে ত্রিশ বছরের সেই শক্ত মন মনে হচ্ছে।যে প্রেমিকার জন্য সব করতে পারে।

তাহিয়া হাতের ব্যাগটা এক সাইডে রেখে তোশার কাছে এলো।মেয়েটা পরম শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।নিরবতায় কেঁটে গেলো আরো কয়েক মুহুর্ত।ক্লান্ত তাহিয়া আজকে শান্ত।কবীরের পাশে খালি জায়গায় বসলো।নীরবতায় আরো কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তাহিয়া বলল,

“এক সময় তুমি অনেক ভালো গান করতে কবীর।এখন তোমাকে গান গাইতে দেখা যায়না।মনে আছে কলেজের মাঠে তুমি সিনিয়রদের উদ্দেশ্যে গিটার নিয়ে গান গাইতে।সেই দিন গুলো কতো প্রাণবন্ত ছিল।”

“দিন এখনও প্রাণবন্ত তাহিয়া।কিন্তু আমাদের সকলের এক হওয়ার উপলক্ষ নেই।”

“হলেও আগের সেই সুন্দর মন কারো নেই।তবে তোমার একটা কথা আমার খুব করে মনে আছে।তুমি সালমান খানের একটা গান আছেনা যাতে কলেজে পারফর্ম করেছিলে।”

“‘স্বপ্ন ম্যে রোজ আয়ে’ এটা?”

“হ্যাঁ।তখন তুমি স্টেজে দাঁড়িয়ে বলেছিলে জীবনে তোমার একজন স্বপ্নকন্যা আছে।যার হাসি বুঝতে পারো, যার দুঃখ, কষ্ট সব বুঝতে পারো।আমরা বুঝেছিলাম সেটা দিশাকে ভেবে বলেছিলে।”

“বাস্তবের কাওকে ভেবে বলিনি।তখন ছিল না।”

“এখন আছে?আর সে আমার মেয়ে তোশা?টেল মি কবীর শাহ।আমার মেয়েকে কেন ভালোবাসো তুমি।দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে।”

কবীর মৃদু হাসলো।তাহিয়া বেশ চালাক একজন মানুষ।যদিও অতীতের সিদ্ধান্তে বোকা বলা চলে।

“দুনিয়াতে এতো মেয়ে থাকতে কেন এই দুষ্ট মেয়েটাকে পছন্দ করি সেই ব্যাখা আমার নেই তাহিয়া।তোশাকে প্রথমবার আমি দেখেছিলাম তোমার দেওয়া ছবিতে।তখন নেহাৎ ছোট বাচ্চা।সাধারণ দুটো চোখে কিছু খুঁজে পাইনি।এরপর সামনে থেকে প্রথম দেখলাম যেদিন ও হারিয়ে গিয়েছিল।এরপর ঘটনা বিচ্ছিন্ন।কখনো মনে হতো ও পা’গ’লা’মি করছে।আবার কখনো রাগ হতো।কিন্তু একদিন ওকে স্বপ্নে দেখেছিলাম আমার রাখা বিশেষ শাড়ীতে।নিজেকে ছোটও করেছি এজন্য মনে মনে।কিন্তু বুঝে গিয়েছিলাম তাকে আমি ভালোবাসি।আমি তোশাকে ছাড়া থাকতে পারবো না৷কখনো না।সে আমাকে যে যাই বলুক।”

“আমার অর্ধেক কথার জবাব দিলেনা।একটা কথা বলো তো আমার মেয়ে বারো বছরের এক সন্তান ডিজার্ভ করে এখন?”

“তাহিয়া হয়তোবা এসব কথা দুজনের মধ্যে মেটার করেনা।আমি ভালোবাসি তোশাকে।এটা কী যথেষ্ট নয়?”

“যথেষ্ট।”

তাহিয়ার ছোট এই উত্তরে চমকে গেলো কবীর।মুখে দ্বিধা ভাব তুলে বলল,

“যথেষ্ট তাহলে আমাদের ব্যাপারে মেনে নাও।আমি আমি সারাজীবন তোমার উপকার স্বীকার করবো।”

“মেয়েটা আমার কবীর।উপকারের প্রশ্ন আসেনা।কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে।”

তাহিয়া অতি শান্ত কণ্ঠে বলল।যেন পাশে ভয়া’বহ রা’ক্ষ’স আছে।সব শুনে ফেলবে।

“আমার একটা মেয়ে কবীর।যদি তোমাদের সম্পর্ক না চলে।”

“যারা এতো যুদ্ধ করতে পারে তারা কখনো আলাদা হওয়ার নয়।”

তাহিয়া দীর্ঘ শ্বাস ফেলে নিশ্চুপ হয়ে রইলো।কবীর দ্বিধা নিয়ে বলল,

“তুমি কী রাজী তাহিয়া?”

“হ্যাঁ।কেন কীভাবে রাজী হলাম সেসব জিজ্ঞেস করবেনা দয়া করে।”

“মায়ানের পারমিশন?”

“তুমিই তো বলেছিলে যে লাগবেনা।”

কবীর আসলে কী রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছেনা।তবে বারবার ঢোক গিলছে।আশ্চর্য তাহিয়া মেনে নিলো।তাও এতো জলদি?কবীর আস্তে ধীরে পুনরায় শুধালো,

“মানুষ নাটক দেখে সব জেনে গেছে।ঠিক এই কারণে তুমি রাজী হলে?”

“নাহ।সমাজের মানুষকে ওতোটা ভাবলে চলেনা।বরং ভালো হয়েছে।কারো কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।এবং জবাবদিহিও করতে হবেনা।কিন্তু বাসার অন্য সকল মানুষের মতামত নিবো আমি।তুমি কী খুশি নও কবীর?”

কবীর হেসে বলল,

“তাহিয়া তোমাকে বোঝাতে পারবো না কিছু এখন।আমি তোশাকে ডেকে বিষয়টি বলি?”

“নাহ।আমিই বলবো।কিন্তু আমাকে ওয়াদা করতে হবে।দিনশেষে আমার মেয়ের কোনো কষ্ট হবেনা।”

“হবেনা।ওয়াদা করলাম।”

(***)

তোশা যখন ঘুম থেকে উঠলো তখন মনে হতো লাগলো খুব সুন্দর কিছু ঘটে গিয়েছে।কিন্তু কী তা সে জানেনা।পরক্ষণে ভাবলো কবীরের হসপিটালে এসে তার সঙ্গে দেখা করা হলো সুন্দর জিনিস।এরকম মুহুর্ত খুব দূর্বল।কিন্তু মানুষটি বিদায় না নিয়ে কেন চলে গেলো?অভিমান হলো তোশার।মেয়েকে বিছানাতে গোমড়া হয়ে বসে থাকতে দেখে তাহিয়া শুধালো,

“কী ব্যাপার তোশামণি।শরীর খারাপ লাগছে?”

মায়ের এমন নরম কণ্ঠ অনেক দিন শুনেনি তোশা।আস্তে করে বলল,

“কেবল ঘুম থেকে উঠলাম।”

“কবীরকে খুঁজছো?ও দশ মিনিট আগে চলে গিয়েছে।”

“আসলে আম্মু তাকে আমি ডেকেছিলাম দেখে এসেছিল।ভুল বুঝো না।”

“কথা বানাতে হবেনা তোশামণি।ফ্রেশ হয়ে এসো।”

তাহিয়া মেয়ের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলো।কবীর কিছুক্ষণ আগে বলেছে সে নিজে এসেছিল।কিন্তু তোশা ভাবছে রাগারাগি করবে মা।এই কারণে কথা ঘুরাচ্ছে।তোশা ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছাকাছি এসে বসলো।

“তোমার মামা-মামী,নানু বা বাড়ীর কাওকে আসতে নিষেধ করেছি আমি।কারণ তারা এলে মানসিক অশান্তি পাবে।তাছাড়া নিজেকে প্রস্তুত করো।মেয়ের বিয়ে আমি অনুষ্ঠান করে দিবো।তখন নানান লোকে নানান কথা বলবে কিন্তু।”

“মেয়ের বিয়ে?কার সাথে আম্মু।”

“কবীর শাহ।”

তোশা চিল্লিয়ে উঠলো হঠাৎ। তাহিয়া চমকে বলল,

“কী হয়েছে?”

“সত্যি আম্মু?”

“হ্যাঁ।”

“আম্মু আম্মু থ্যাংক ইউ।থ্যাংক ইউ।”

বলতে বলতে মা কে জড়িয়ে ধরলো তোশা।প্রায় কেঁদে ফেলেছে সে।তাহিয়া মেয়েকে জড়িয়ে রইলো অনেকক্ষণ।সামাজিকতা ও লৌকিকতার গন্ডিতে কখনো সে বাঁধেনি তোশাকে।তো এই বেলায় কীভাবে এতো বড় কষ্ট দিবে মেয়েকে।তোশাকে সোজা করে চোখের পানিটা মুছে বলল,

“তুমি সুখে থাকবে।কখনো ভে’ঙে পড়বেনা।এই ওয়াদা দিতে রাজী তো?”

“হ্যাঁ।জানো কতো খুশি লাগছে।আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি।”

“কিছু স্বপ্ন সত্যি হয় তোশা।তোমার ক্ষেত্রে হয়ে গেলো।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৬২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“চল্লিশ বছরের পুরুষ হয়ে মায়ের পিছন পিছন বিয়ে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে।আমার লজ্জা করেনা আম্মু?”

কবীরকে নির্বিকার দৃষ্টিতে দেখে নিজ কাজে মনোযোগ দিলো সেতু।আজ সারাদিন তার ছেলে পিছন পিছন ঘুরেছে তোশাকে বিয়ে করার জন্য।সে এখনও মত দেয়নি।কেন দিবে?সব কথা একদিকে আর তোশার বয়স আরেক দিকে।সেতুর সোনার সংসার।বড় ছেলেটা পঙ্গু বয়স বাড়ছে।এছাড়া বাপের বাড়ীর দিকে অনেকের ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে রেখেছে সে।সব দিক বিবেচনায় যখন তার স্বামী আর সে চোখ বন্ধ করবে তখন আদৌ কী কবীরের স্ত্রী রুপে থাকা তোশা সব সামলাতে পারবে?কবীর পুনরায় জবাবের আশায় বলল,

“মা তুমি কিছু তো বলো।”

“কী বলবো?তুমি চাও আমি যেন হ্যাঁ বলি।কিন্তু আমার মনে আছে না উত্তর।সেটা তো মানবেনা।”

“তোশা ভালো মেয়ে।এসব ভাবনা বাদ দাও।”

“দিলাম।কিন্তু বউ পেয়ে দুদিন পর আমার আহনাফকে যে ভুলে যাবে।সেটা কীভাবে বাদ দেই?”

কবীর আহত সুরে বলল,

“তোমার মনে হয় আমি এমন বাবা?”

“বউ পেলে সবাই বদলে যায়।”

ড্রয়িং রুমে বসে থাকা সেলিম গলার সুর উঁচু করে বলল,

“তোমার মা ঠিক বলেছে কবীর।বউ পেলে সকলে বদলে যায়।আমার শ্বশুর মশাই তো বদলে গিয়েছিলেন।তাই তোমার মায়ের ভয়।”

সেতু শুষ্ক চাহনি ও বিতৃষ্ণাতে জর্জরিত হয়ে শুধালো,

“আপনি জানেন যে আমার বাবা বদলে গিয়েছিল?ভুলভাল কথা বলবেন না।বরং আমার নতুন মা নিজেও আমাকে আর ভাইকে আগলে রেখেছিলেন।তাদের শিক্ষা ও ব্যক্তিত্ব ছিল এমন।”

“তাহিয়ার মেয়েরও ব্যক্তিত্ব ঠিক এমন সেতু।তুমি জানো না কিন্তু একদিন ও বিশদভাবে আমার সাথে আলোচনা করেছিলো এই সম্পর্ক নিয়ে।ওই মেয়ের ভেতর কোনো তিল পরিমাণ অন্য ভাবনা নেই।বিয়েটা তো হচ্ছে।কিন্তু যদি আহনাফের বি’রু’দ্ধে উল্টোপাল্টা মনোভব নিজে ডেকে আনো সেক্ষেত্রে কারো কিছু করার নেই।কবীর আমি তাহিয়ার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছি।তাই চিন্তা ছাড়া অফিসে যাও।”

“কিন্তু আব্বু চিন্তা আছে।এই মানুষটা আমার মা।তার অনুমতি ছাড়া কিছু কীভাবে করি?”

ব্যস এতোটুকু ছিল সেতুর মনের শীতল বরফ খন্ডকে মাতৃ উষ্ণতায় মুড়িয়ে গলিয়ে দেওয়ার জন্য।কবীর মা কে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,

“বয়স কম হোক।তোমার তো পুত্রবধূ হবে।মে” রে তুমি কাজ শেখানো বা ভদ্রতা শেখানো জানো না।কিন্তু আমি জানি তুমি কয়লা থেকে হীরা বের করতে পারো মা।প্লিজ রাজী হয়ে যাও।আহনাফকে তোশা অনেক ভালোবাসে।”

সেতু কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকলো।এখন বৃদ্ধ বয়স তার।নতুন করে পুত্রবধূকে শিখিয়ে পড়িয়ে নেওয়ার মতোন শক্তি শরীরে নেই।কিন্তু তবুও আস্তে করে মাথা নাড়ালো।ছেলের কষ্ট সে চায়না।কবীর তৃপ্তিদায়ক হেসে মা কে ধন্যবাদ জানালো।

“আম্মু ধন্যবাদ আমাকে বোঝার জন্য।মামাদের হ্যান্ডেল করে নিও প্লিজ।”

“তা করবো।কিন্তু শর্ত আছে।”

“সেটা কী?”

“দিশার সঙ্গে যোগাযোগ আমি বন্ধ করবো না।মেয়েটা অসুস্থ।উল্টোপাল্টা জিনিস দেখে সারাদিন।ওর মৃ’ত দাদাকেও দেখে।সে বলে এসে কথা বলে রোজ ওর সঙ্গে।”

“পারভেজকে দেখাচ্ছে না কেন?যেহেতু মানসিক সমস্যা।”

“জানিনা।এই কারণে একটা বয়সের পর একা থাকতে হয়না।”

সেতু আরো নানান কথা বলতে লাগলো দিশার সমন্ধে।সবগুলো ওর অসুস্থতা নিয়ে।কবীর বাহিরের মনোভাব সাধারণ হলেও ভেতরের মনে সবকিছুর হিসেব মিলাচ্ছে।হয়তো আর কিছুদিন।এরপর দিশা পুরোপুরি মানসিক ভাবে পাগল হয়ে যাবে।যদিও দুই তিন বছরে সুস্থ হয়ে পড়বে।কিন্তু নিজ কাজের শাস্তি পেয়ে।কতোটা অদ্ভূত।যাকে একসময় ভালোবাসার কথা বলেছে আজ তার সঙ্গে কবীরের এমনটা করতে হলো।

(***)

কবীরের একমাত্র সিংহাসনে বসে আছে তোশা।তবে এখানে আসনটি সোনায় মোড়ানো না হলেও দামী কালো রঙের কাঠে তৈরি।এই অফিস রুমের এক পাশে বিশাল কাঁচের জানালা আছে।যা দিয়ে মিঠা রোদ আসে।সুন্দর আকাশ দেখা যায়।খোলাচুলে সাদা রঙের পোশাক ও অধরযুগলে মিষ্টি হাসি ঝুলিয়ে চেয়ারে গাল ঠেকিয়ে বাহিরে তাঁকিয়ে আছে তোশা।এতো উঁচু হওয়া স্বত্ত্বেও আকাশে কোনো পাখি নেই।শুধু শরতের খন্ড খন্ড মেঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে।তোশা নিজে থেকে চিন্তা করে নিলো।সুবিশাল আকাশে রঙীন ঘুড়ি উড়ছে।পাশে এক ঈগল ও চড়ুই একই সাথে ডানা ঝাপটে চলছে।কতো অসম্ভব জিনিস।কিন্তু তোশার ভালো লাগছে ভাবতে।যদিও বাজপাখির সঙ্গে চড়ুই পেরে উঠছেনা।

“তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে মেয়ে।”

মীরার কণ্ঠে ধ্যান ভাঙলো তোশার।মিষ্টি সুরে বলল,

“কেমন আছো আন্টি?”

“ভালো।বেশ ভালো।কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।কিন্তু শুনেছি প্রায় এক মাসের মতোন অসুস্থতায় ভুগলে।হসপিটালে ছিলে।”

“এক মাস নয়।বিশ দিন হসপিটালে ছিলাম।গত পরশু রিলিজ পেয়েছি।”

“অবশ্য এতো অসুস্থ থাকার কথা।কারণ যা গেলো উপর দিয়ে।আমি কিন্তু শুরু থেকে তোমাদের সাপোর্টে ছিলাম।স্যার তোমাকে এখানে বসতে বলেছে?”

“নাহ এটা তার জন্য সারপ্রাইজ।”

তোশা লাজুক হাসলো।আশ্চর্য তার মধ্যে এখন লজ্জা কাজ করে।যা কয়েক মাস পূর্বেও ছিলনা।বেশী অবাক লাগে যখন মনে পড়ে অল্প দূরত্বে আছে নববধূ হওয়ার।নিজ খেয়াল থেকে বের হয়ে তোশা মীরার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো।উল্লাসের চেহারার সঙ্গে শুধু নাকটায় মিল আছে।একটু বিব্রত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো,

“আন্টি একদিন তুমি উল্লাসের কথা আমাকে বলেছিলে তাইনা?ও তোমার ছেলে।”

মীরা উষ্ণ শ্বাস ফেলে বলল,

“হ্যাঁ।”

“ওর সাথে কবীর শাহ এর এতো ভালো সম্পর্ক কীভাবে?”

“ব্যাপারটা আমিও জানিনা।কিন্তু দুজনে একে অপরের ক্রা”ই”ম পার্টনার বলতে পারো।আচ্ছা পরে কথা হবে।এই ফাইলগুলো রাখতে এসেছিলাম।”

মীরা অনেকটা জলদিতে বের হয়ে গেলো।যেন কথাটিতে সে বিব্রত।তোশা সেদিক থেকে মনটা সরিয়ে পুনরায় আকাশ দেখতে লাগলো।ভাবনায় বুঁদ মেয়েটিকে হঠাৎ উষ্ণতায় জড়িয়ে নিলো।কবীর নিজ শক্ত হাত দ্বারা তাকে শূন্যে নিজ কোলে তুলে নিলো।তোশা ভয় না পেয়ে বরং তামাটে পুরুষটির গলা জড়িয়ে ধরলো।এক সময় ছিল যখন এতোটা কাছাকাছি আসতে ভয় লাগতো দুজনের।কিন্তু আজকে কোনো বাঁধা নেই।যেন বালির বাঁধের মতোন সব মলিনতা ভেঙে গিয়েছে। তোশাকে কোলে নিয়ে নিজেই চেয়ারে বসলো কবীর।

“আপনি কখন এলেন বেলাডোনা?সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম।”

“এসেছি অনেকক্ষণ হলো।কী হলো বাড়ীতে?”

“মা মেনেছে।”

“সত্যি?”

তোশার নাকের সঙ্গে নিজের নাকটি ঘষে জবাব দিলো।

“সত্যি লিটল চেরী।শেষমেশ আমাকে পাওয়ার লড়াইতে জিতে গেলেন।”

“উহু আমরা জিতে গেলাম।বিয়ের ডেট কবে দিবেন?”

কবীরকে একটু অশান্ত দেখা গেলো।তোশার মাথাটা বুকে রেখে বলল,

“মায়ান এখনও হ্যাঁ বলেনি।যতোকিছু বলো না কেন?সে তোমার বাবা।মতামত জরুরি।”

“হুঁ।”

“বাই দ্য ওয়ে তর্নি কে তোশা?আমি তোমার মুখে শুনেছি নামটা।”

কবীরের মুখে প্রশ্নটি শুনে তোশার গালে লাল আভা ছড়িয়ে পড়লো।যেন সত্যি সে টমেটো।

“আমাদের মেয়ে।যে দেড় বছরের মধ্যে আমার কোলে থাকবে।কতো মজা হবে তাইনা?”

“নাহ।কারণ আপনি পড়াশোনা শেষ করবেন।এরপর বাকী বিষয়।”

“আপনার কথা মতোন?”

“জি হ্যাঁ।”

তোশা চোখ ছোট ছোট করে বলল,

“বউয়ের কথা শুনবেন না আপনি?এতো বড় সাহস।”

কবীর আরো তিনগুণ চোখ ছোট করলো।এরপর তোশার ছোট্ট নরম হাতের সঙ্গে নিজের তামাটে শক্ত হাত মিলিয়ে বলল,

“কোথাও দেখেছো সিংহকে টিয়া পাখি শা’স’ন করে?আমাদের দুজনের হাত দেখো।শক্ত এই হাতকে নরম এই হাত শা’স’ন করতে পারবে?বিষয়টি অসম্ভব।”

“শুনবেন না সত্যি আমার কথা?”

“কখনো না।বরং ভয় পাও যে তোমাকে পানি খাইয়ে মা’তা’ল করতে পারে তার সাথে সংসার জীবনে কয়বার হারবে?”

তোশা আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,

“হারবো কীনা জানিনা।কিন্তু কবীর শাহ এর প্রাণ ভোমরা তোশা পাখি।সে জানে তামাটে পুরুষকে কীভাবে বশে রাখতে হয়।”

“সত্যি?তবে ভয় পাওয়া উচিত সুন্দরী ছোট্ট শয়তান।কারণ বিয়ের পর অন্য রকম কবীরকে দেখতে পাবে তুমি।যে উত্তাল ভালোবাসাতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তার বেলাডোনাকে।”

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে