Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মিঠা রোদমিঠা রোদ পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

মিঠা রোদ পর্ব-৫৭+৫৮+৫৯

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৭
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“অসহায় বন্দী মানুষ যে মুক্তির পথ খু্ঁজে বেড়াচ্ছে তাকে যদি বলেন তোমার আরো কিছুদিন কারা’বাস হলো।তখন সেই মানুষটা যেমন ভেতরে শেষ হয়ে যাবে।ঠিক এমন লাগছে এখন কবীর শাহ।বলুন তো সত্যি শেষ দেখা আমাদের?”

তোশার কণ্ঠে উৎসুকভাব।কবীর ও সে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েটির উষ্ণ নিশ্বাস নিজের ত্বকে অনুভব করছে সে।নাহ তার বেলাডোনার সুগন্ধ যেকোনো ফুলের থেকেও বেশী।শক্ত হাত দিয়ে নরম গালটিতে তামাটে পুরুষটি স্পর্শ করে শুধালো,

“খুব খারাপ লেগেছে কথাটিতে?”

“হুম।”

“আমি তো এমনি বলছিলাম।”

“কখনো বলবেন না কবীর শাহ।বলেন আমাকে যে বলবেন না।ওয়াদা করেন।”

“ওকে লিটল ফ্রুট।আপনি সত্যি করে বলেন তো কীভাবে বুঝলেন আমার উপস্থিতি?”

রুমে থাকা ডিভানে গিয়ে বসলো কবীর।তোশাকেও টেনে নিজের হাঁটুর উপর বসালো।এতোটা কাছাকাছি বসা হয়নি তাদের কখনো।লাজুক তোশার ভেতরে অনুভূতির সূর্যোদয় ঘটলো যেন।রঙীন প্রজাপতি শত রঙের পাখা মেলে উড়ে যাচ্ছে।কবীরের কাঁধে হাত দিয়ে জড়িয়ে নিলো তোশা।

“ওইযে বললাম টেলিপ্যাথি।আপনি আশপাশের আছেন সেটা মন বলছিলো।আপনি কীভাবে এলেন?”

“বিষয়টা একটা ইতিহাস বেলাডোনা।তোমার নানা অযথা একটা লোহার পাইপ ঠিক এই পাশের বারান্দা বরাবর সেই শুরু থেকে রেখে দিয়েছে।আশ্চর্য যে তা এতো বছর পরেও আমার ভার বহন করতে পেরেছে।”

তোশাকে অতীতের ঘটনা গুলো বললে হো হো করে হেসে দিলো মেয়েটা।কী অনাবিল সেই হাসি।অথচ কবীর খেয়াল করলো তোশার চোখের নিচে কালি।মুখ দেখে মনে হচ্ছে খুব ক্লান্ত।তার চোয়ালে হাত রেখে কবীর বলল,

“তুমি কেমন বড় হয়ে গেলে তোশা।চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ।বাসায় সকলে স্বাভাবিক কথা বলে।কিন্তু তাদের দৃষ্টিতে কিছু একটা আছে।মা কথা বলেনা আমার সাথে।সব কবে ঠিক হবে?”

“হয়ে যাবে।আহনাফ তোমার জন্য ফুলগাছ লাগিয়েছে ছাদে।যখন তুমি ওই বাড়ীতে চলে যাবে তখন দুজন একসাথে বড় গোলাপ বাগান করবে।এসব ছেলেটির স্বপ্ন।”

তোশা কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে বাহিরে গেইট খোলার শব্দ হলো।দুজনে সতর্ক হয়ে গেলো।

“এতো রাতে কে এলো তোশা?”

“সেটাই ভাবছি।আপনার গাড়ী কোথায়?”

“দূরে ড্রাইভার সাথে আছে।”

“এক মিনিট আমি দেখে আসছি।শব্দ করবেন না।”

তোশা সতর্ক পায়ে জানালার সাইডে এলো।পর্দা সরিয়ে দেখলো চার জন মানুষ সহ একটি গাড়ী এসেছে।অবয়ব দেখেই সে অনুমান করতে পারলো এটা তার খালা শিউলি ও তার পরিবার।এতোদিন আসতে পারেনি।ভয়ে আ’ত্মা শুকিয়ে গেলো তার।কারণ খালা এলে সর্বপ্রথম তার খোঁজ করবে।

“কবীর শাহ।তাতান এসেছে।”

“মানে শিউলি?”

“হ্যাঁ।এখন কী হবে?আপনি চলে যাবেন তাও সম্ভব হবেনা কারণ দারোয়ান আঙকেল জেগে আছে।”

ভয়ে তোশার মুখটা পাংশু বর্ণ ধারণ করলো।আশ্চর্য ভাগ্যের উপর মনে মনে একচোট হেসে নিলো কবীর।যদি জীবন রঙীন না হতো তাহলে কেন এই বয়সে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হবে আর কেন বা আজকে অন্যের বাসায় বিনা অনুমতিতে ঢোকার ব্যাপারে অভিযুক্ত হবে?তোশা চট জলদি কবীরকে বাথরুমে ঢুকে অপেক্ষা করতে বলল।মেয়েটার ভয় মাখা মুখ দেখে কবীরও নিষেধ করলো না।

মিনিট পাঁচেক পর তোশার রুমের দরজাতে করাঘাত শোনা গেলো।ইচ্ছে করে মেয়েটা পাঁচ মিনিট দেরীতে দরজাটা খুললো।

“কী ব্যাপার তোশা?তোমাকে না বলেছিলাম রুমের দরজা সবসময় খোলা রাখতে।”

“আম্মু আসলে..।”

শিউলি মা মেয়ের কথার মধ্যে বিরতি দিয়ে বলল,

“থাক না আপু।তোশামণি কেমন আছো আম্মু?”

“ভালো আছি তাতান।তুমি কেমন আছো?”

তোশাকে জড়িয়ে ধরে ভেতরে প্রবেশ করলো শিউলি।বিরোধ করে বলল,

“ভালো থাকলে শরীর আরো শুকিয়ে গেলো কেন?মনে হচ্ছে এইট /নাইনে পড়ো।এক মিনিট তোমার রুমে এই অদ্ভূত ফ্রেশনারের সুগন্ধ আসছে।কোথা থেকে নিয়েছো?দারুণ তো গন্ধটা।”

একে বলে ভাগ্য সদয় না হলে কোনো কিছু ভালো হয়না।তোশা ভুলে গিয়েছিল কবীর শাহ এর পারফিউম এর কথা।যা সে প্যারিস থেকে এনে ব্যবহার।যা মানুষটা চলে গেলেও রুমে দশ মিনিট স্থায়ী হয়।শিউলি পূর্ব থেকে ঘ্রাণ সংবেদনশীল।

“তাতান এটা বাহির থেকে আসছে।”

তাহিয়া তাদের মাঝের কথা কেড়ে নিয়ে বলল,

“তাই তোশা?তাহলে তোমার রুমের ফ্লোরে জুতার ছাঁপ কেন?”

সকলের দৃষ্টি রুমের ফ্লোরের উপর পড়লো।তোশা সম্ভবত বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।শুকনো ঢোক গিলে অন্য একটা মিথ্যা বলবে কী?যা সফল হওয়া অনিশ্চিত?শিউলি সামান্য হেসে বলল,

“আমার জুতার ছাঁপ এটা আপু।দেখো স্লিপার পড়ে এসেছি।”

“তাইনা?আমাকে বোকা ভাবিস তুই শিউলি?”

“হয়তো যেমনটা তুমি আম্মু,আব্বুকে ভাবতে।”

শিউলি স্পষ্টত খোঁচা দিলো তাহিয়াকে।কিন্তু সে ওটা গায়ে মাখলো না।রুমের এই মাথা ওই মাথা খু্জতে শুরু করলো।অবশেষে চিল্লিয়ে ডাকতে লাগলো কবীরকে।

“কবীর,কবীর বের হও।এখুনি বের হবে।”

খট করে বাথরুমের দরজা খুলে গেলো।সেখান থেকে বের হয়ে এলো কবীর।তার চিরচেনা সেই কঠিন আবহ নিয়ে।দুরন্ত দৃষ্টি গুলোতে না আছে ভয় না আছে সংশয়।

“তাহিয়া?”

“আশ্চর্য কবীর।শেষে তোমাকে এখানে পাবো কখনো চিন্তা করিনি।আমার ভুল মনে রাখা উচিত ছিল।এই রুমে আগে আমি থাকতাম ও এখানে আসার গোপন রাস্তা তুমি জানো।রোজ আসো তাইনা?”

“না।আজ প্রথম।এবং হয়তোবা শেষ।”

“তুমি নিজের বয়স অনুযায়ী তো কাজ করো কবীর।এগুলো কোন ধরণের খারাপ কাজ?”

তাহিয়া যতোটা পারছে ততোটা জোরে কথা বলছে।মানুষ রেগে গেলে হয়তোবা এমন জোরে কথা বলে।বাসার অন্য সব মানুষদের রুমে চলে আসতে সময় লাগলো না।তাহিয়া দশগুণ উত্তেজিত হয়ে বলল,

“আমার তোমার সাথে কোনো কথা নেই কবীর।কোনো কথা না।সব এই মেয়ের সাথে।আমার মেয়ে। তোশা তোমাকে আমি কষ্ট করে জন্ম দিয়েছি তার প্রতিদান এসব দিয়ে দিলে?আরে এতোটা ভালোবেসেছি তোমাকে।ভুল আমার জানো এখানে হয়নি যে তুমি দৃষ্টির আড়ালে প্রেম করেছো আমার বন্ধুর সাথে।সমস্যা হয়েছে সেখানে যখন তোমার বাবা বলেছিল গর্ভে তোমাকে মে’রে ফেলতে।বা আমার মা ঔষধ এনে দিয়েছিলো যা আমি মায়া দেখিয়ে খাইনি।তখুনি মে’রে ফেলতাম আমার এতো কষ্ট হতো না।হায় আমি এটা কেন করলাম না।”

“আপু তোর মাথা খারাপ বাচ্চা মেয়েটাকে কী বলছিস?ও তোর গর্ভে নিজ থেকে আসেনি।তোরা এনেছিস। সৃষ্টিকর্তা দিয়েছে।সন্তান খারাপ করলে তাকে জন্মের কথা বলা কতোটা ঠিক?”

“সব ঠিক।”

“তাহিয়া চুপ।আমি কিছু বলছিনা তোমার ইমোশনকে খেয়াল রেখে এর মানে বলতে পারবো না তা নয়।তোশা আর আমি ভালোবাসি।দুজনে এক হতে চাই।এতে মেয়েটাকে ম’র’তে বলছো?শুনো তুমি মা হও যাই হও।কিন্তু ওর অস্তিত্ব না থাকার কাম্য করার অধিকারটুকু নেই।”

কবীরের বলিষ্ঠ কণ্ঠে কিছু একটা ছিল।কবীর শাহ আসলে কে?একজন স্বনামধন্য মানুষ।যে নিজের সম্মানকে আদুরে বিড়াল ছানার মতোন যত্নে রাখে।সে কীনা ছোট হচ্ছে বারবার পাশে দাঁড়ানো বিশ বছরের যুবতীর জন্য?তোশা অদ্ভূত দৃষ্টিতে মা কে দেখছে।কবীরের অনেক মায়া হলো।কাওকে পরোয়া না করে তোশাকে আগলে বলল,

“কষ্ট পেও না।তাহিয়া রেগে আছে।”

“কবীর শাহ আপনি চলে যান।আর কখনো আসবেন না।”

তোশা প্রয়োজনীয় জোরে কথাটি বলেছে।যা শুনে রুমের আর সকলে তাদের দিকে তাঁকালো।তোশা কবীরের মুখপানে তাঁকিয়ে বলল,

“আমি মনে হয় আপনার থেকেও মা কে বেশী ভালোবাসি।চলে যান আপনি।আম্মু যার দুনিয়া আমি সেই দুনিয়া না থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করা সবথেকে বড় কষ্টদায়ক।চলে যান কবীর শাহ।”

কবীর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তোশাকে দেখলো।মেয়েটির দৃষ্টি এসব বলছে তো।কিন্তু মানতে পারছে?

“তুমি সব শেষ করছো তোশা?এই ভয়ং’কর সময়টিতে?”

“হ্যাঁ।আমি অনেক খারাপ প্রেমিকা তাইনা?”

“নাহ বেলাডোনা।তুমি অনেক ভালো একজন মেয়ে।চলে যাচ্ছি।আমি তর্ক করে তোমাকে কষ্ট দিবো না।”

কবীর তোশার কপালের চুলগুলো এলেমেলো করে দিলো।তাহিয়া সহ রুমের সকলে নীরব।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তাহিয়ার উদ্দেশ্যে কবীর বলল,

“আমি প্রতিদানের বিনিময়ে কিছু নেইনা তাহিয়া।তা নয় একুশ বছর আগের করা উপকারের প্রতিদান দিতে গিয়ে তুমি দুনিয়া হারিয়ে ফেলতে।তবুও তুমি অনেক ভালো বন্ধু।এবং আমি তা মানি।”

কবীর রুম থেকে বের হয়ে গেলো।কল্লোল বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল।কবীরকে বলল,

“আমি আপনাকে গেট অবধি ছেড়ে দিচ্ছি।”

কল্লোল বাহিরে তো গিয়েছিল কবীরকে নিয়ে।কিন্তু ফিরলো একা।তোশা মূর্তির অনুরুপ দাঁড়িয়ে আছে একপাশে।কল্লোলকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,

“তিনি চলে গেছেন কল্লোল ভাইয়া?”

“হ্যাঁ।”

“এই বাড়ীতে নেই?”

“না।”

“কবীর শাহ কোথাও নেই।কবীর শাহ কোথাও নেই।”

সবথেকে বেদনাদায়ক কণ্ঠে চিৎকার করে উঠলো তোশা।ফর্সা মুখটা রক্তিম হয়ে উঠলো।মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।শিউলি তৎক্ষনাৎ বসে মেয়েটাকে জড়িয়ে নিলো।

” কাঁদে না তোশা।সব ঠিক হবে।”

“কিছু ঠিক হবেনা। কিছু না। কবীর শাহ চলে গেছে।আর আসবেনা কখনো।আর না।খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।মনে হচ্ছে দুনিয়ায় নিশ্বাস নেওয়ার মতো কিছু নেই।কবীর শাহ চলে গেলেন।আমি যেতে বলেছি।আমাদের আর কথা হবেনা।এতো খারাপ লাগছে কেন?আমি মনে হয় মা’রা যাচ্ছি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৮
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“মানুষ যতো রঙের কথাও বলে ততো রঙের তাইনা?বাহিরে বের হওয়া যায়না মানুষ তোশাকে নিয়ে বলে।মানসম্মান সব শেষ হয়ে গেলো।”

তাহিয়া নিজ ভাবী পাখির দিকে নির্বিকার দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।তিনবেলা সেই একই কথা তে মুখটা তেঁতো হয়ে গিয়েছে তার।

“কয়েকদিন বোরখা পরে বাহিরে বের হও ভাবী।সব ঠান্ডা হয়ে যাবে।”

“কেন?আমি কী দো’ষী নাকী?উল্টো যে মেয়েকে নিয়ে এসব সেই তো সেজেগুজে ভার্সিটিতে চলে গেলো।”

“তোশা ভার্সিটিতে গিয়েছে?”

“বাহ!মেয়ের খবর ঠিকঠাক এখনও রাখো না?এতো কিছুতেও শিক্ষা হয়নি?”

তাহিয়া জবাব দিলো না।গতকাল রাতে খাদ্য মন্ত্রীর বাড়ীতে বড় একটি ইভেন্ট ছিল।সেই অর্গানাইজ করেছিলো।সেসব গুছিয়ে আসতে আসতে সকাল দশটা বেজে গিয়েছে।তোশার খবর নেওয়া হয়নি।সোফায় বসে তৎক্ষনাৎ ফোন বের তাতে মেয়ের নাম্বারে ডায়াল করলো।

“কোথায় তুমি তোশা?ভার্সিটিতে যাবে আমাকে বলেছিলে?এখুনি বাসায় আসবে।”

তোশাকে কোনোকিছু বলতে না দিয়ে ফোন রেখে দিলো তাহিয়া।বড় ক্লান্ত শরীর তার।কিন্তু মেয়ে না ফিরে আসা অবধি জায়গা থেকে একটু ও নড়লো না।তোশা এক ঘন্টার মাথায় বাসায় ফিরে এলো।বড় ধীর পায়ে।বিশ বছরের কিশোরীর চঞ্চলতা নেই।সকালে খেয়েছে কীনা কে জানে?তাহিয়াকে দেখেও কিছু বলল না।

“রুমে যাও তোশা।আমি আসছি।”

মেয়ের পিছনে পিছনে তাহিয়া তার রুমে এলো।শক্ত কণ্ঠে বলল,

“এরপর আমার অনুমতি ছাড়া বাহিরে যাবে না তুমি।”

তোশা অবাক হয়ে শুধালো,

“কেন?”

“তোমাকে কৈফয়ত দিতে হবে কেন না করলাম?”

তোশা অনেকক্ষণ মায়ের মুখটার দিকে তাঁকিয়ে থেকে বলল,

“হ্যাঁ।দিতে হবে আম্মু।”

“মুখে বড় বড় কথা।এতোকিছুর পরেও…।”

“তোমার আসলে কবীর শাহ এর সাথে সমস্যা কী আম্মু?সে বয়সে বড় নাকী তোমাদের বন্ধু।”

“এখানে কবীর আসছে কোথা থেকে?”

“তুমি এনেছো।বলো কী নিয়ে সমস্যা।”

“দুটোই।আমি কেন আমার মেয়েকে বয়সের দুই গুণ লোকের কাছে বিয়ে দিবো?বয়স হতে গিয়ে দেখা যাবে জা’ন শে’ষ।অল্প বয়সে আমার মেয়েকে বিধবা হতে দিবো না।”

“মৃ’ত্যু মা বলা যায়?আমি যদি আগে চলে যাই?”

“এসব উদ্ভট বিতর্ক আসলে বৃথা তোশা।আর রইলো বন্ধুর কথা।হ্যাঁ সমাজ সহ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনা।শুধু শুধু তর্ক করো না।”

“না আম্মু কখনো তোমার সাথে এই বিষয় নিয়ে বলিনি।কিন্তু আজ বলবো।ছোট বেলা থেকে তুমি সব আমাকে দিয়েছো।আমি তা মানি।এবং আমি সেই সব সন্তানদের মতোন না যারা বাবা-মায়ের প্রতিদান ভুলে যায়।তবে একটা কথা বলো মনের উপর কারো জোর আছে?তুমি নিজ জীবনে যা খেতে পারো না।তা জোর করে কেউ খাওয়ালে শেষে বমি করা ছাড়া উপায় থাকবে?থাকবেনা তো।আমার সঙ্গে এখন যা করছো সেই বিষয়ের সামিল।একটা মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য জরুরি নাকী তার ভেতরের?কবীর শাহ কে বিয়ে করতে আমার ধর্ম আঁটকাবে?অনুমতি দেয়নি তা বলতে পারবে কখনো?বলবে সমাজের কথা।সেই সমাজ যাদের নিজ চরিত্রের ঠিক নেই এবং অন্যকে জাজ করে?সেই সমাজ যারা অন্যায় করতে করতে এতোটা খারাপ পরিস্থিতিতে চলে গিয়েছে যে মানুষের বেঁচে থাকা দায়।ধরো আমি সমাজের চোখে পাপী।তাহলে তোমার বড় মামা?আমি তো জানি তিনি এমন একজনকে বিয়ে করেছে যে দূর-সম্পর্কে তার ভাতিজি।এটা নিয়ে নানুরা মুখ টিপে হাসে।গ্রামে গঞ্জে সহ পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমন বিয়ে হয়।আরে সেই দিক থেকে কবীর শাহ তোমাদের র’ক্তের কেউ নেই।সমস্যা সত্যি করে হচ্ছে আমি ও কবীর শাহ ভালোবাসি দুজনকে।এবং বড়দের সম্মান করে তাদের কথা মেনে এক হতে চাই।যদি উত্তরঞ্চলের নদী ভাঙনের স্বীকার কোনো গরীব ঘরের মেয়ে হতাম।আর বাবা বড় মুখ করে বিদেশে থাকা নতুন টিনের বাড়ীর চল্লিশ বছরের কবীর শাহ এর কাছে বিয়ে দিতো যাকে আমার বাবা ভাই বলে ডাকে তখন তোমাদের মনে হতো না সব ঠিক আছে।মেয়ে সুখী বলে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে।কিন্ত না বাস্তবে তোশা হচ্ছে ঢাকার অভিজাত ধনী পরিবারের মেয়ে এবং কবীর শাহ হচ্ছে ঈগল পাখি।যার আশেপাশে যাওয়া মানে সুগার বেবী হওয়া।আজকে সমাজ,বয়স,পরিবারের দোহাই দিয়ে দুটো মানুষকে শেষ করে দাও।মে’রে ফেলো।আর কী বললে সেদিন?আমি গর্ভে ম’রে গেলে ভালো হতো?না মা এটা বলা উচিত না।বাবা-মা দুনিয়াতে আনার সিদ্ধান্ত নিবে।এরপর সেই সন্তানের কাছে জন্মের প্রতিদান চাইবে?এই বিষয় না ভেবে সে আদৌও কী চায়?মা তোমাকে আমি কখনো বলতে পারিনি তোমার সেই পছন্দের জাম ফল আমার পছন্দ না।তবুও তোমার দিকে তাঁকিয়ে খাই।নিজ হাতে খেতে আমার ভালো লাগে।কিন্তু তাও তোমার শান্তির জন্য তোমার হাতে খাই।এতো পড়াশোনা ভালো লাগেনা।তবুও বেস্ট হতে হবে আমাকে।মায়ের মতে বেস্ট হতে হবে।সারাজীবন তোমার কথা মতোন বেস্ট,গুড সবথেকে সেরা মেয়ে হয়ে এসেছি।আজ যখন নিজের জীবনের জন্য কিছু চেয়ে বসলাম।তাহলে খারাপ?বলো মা।তুমি আমার জন্য যা করেছো এজন্য প্রতিদানে বাবার কাছ থেকে ভালো কথা শুনলে না।তুমি সারাজীবন আমার জন্য যা করেছো তা কী শুধুমাত্র বাবার কাছ থেকে ভালোর সার্টিফিকেট পেতে?তাহলে মনে করে দেখো আমার নামে যতোগুলো ভালো কথা।তুমি অনেক ভালো মা।অনেক ভালো।কিন্তু আমি ভালো মেয়ে না।খুব খারাপ।”

অনেকগুলো কথা।এতো জলদি বলতে গিয়ে তোশার শ্বাস উঠে গিয়েছে।মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।তাহিয়া অবাক হয়ে মেয়েকে দেখছে।বস্তুত পক্ষে তোশাও নিজের জায়গাতে সঠিক।এবং তাহিয়া নিজেও।কেমন উইন-উইন পরিস্থিতি সবকিছুতে।

“জানো মা সেদিন রাতে এসব কেন সকলের সামনে বলিনি?কারণ আমি চাইনি সবার সামনে মা কে এসব বলতে।কবীর শাহ ও চায়না।সেই মানুষটা কীভাবে খারাপ হয়?যাকে আমি পেতে পারবো না।”

শেষের কথা বলতে গিয়ে কাঁপতে কাঁপতে মেঝেতে বসে পড়লো তোশা।শরীর জ্ব’লে যাচ্ছে তার।ভেতরটাতে চাপ দিচ্ছে।

“তোশা?তোশা তোমার কী হচ্ছে?”

তাহিয়া গিয়ে জাপটে ধরলো তোশাকে।মেয়েটির গা কেমন ঠান্ডা।শুধু দূর্বল কণ্ঠে বলতে লাগলো,

“আম্মু গত আট চল্লিশ ঘন্টা ধরে ঘুমাইনি আমি।তাই ঘুমের ঔষধ নিয়েছি তিনবেলায় দুটো করে।তাও ঘুম আসেনি।কিন্তু হঠাৎ আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আম্মু সব শেষ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়।এই কথা গুলোর বলার জন্য এতোক্ষণ সাহস ছিলো।আম্মু ওই মানুষটা আমার কোনোদিন হবেনা তাইনা?”

“তুমি পাগল তোশা?এই মেয়ে।চোখ খুলো।বাবা, বাবা।কল্লোল কে আছো?তাড়াতাড়ি এসো।তোশা কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে।”

তাহিয়ার গা কাঁপছে।গলা শুকিয়ে আসছে।তবুও মেয়েকে ডেকে চলেছে।

(***)

দরজা খোলার শব্দে তাহিয়া মাথা উঠালো।রাত এখন গভীর একটা।হসপিটালের গন্ধে মনটা কেমন ভয়ে মিশে আছে।আসিফকে এমন সময় দেখে মটেও চমকায়নি তাহিয়া।বরং শান্তভাবে শুধালো,

“আপনি তো জাপানে ছিলেন।কবে এলেন?”

আসিফের কাঠখোট্টা জবাব,

“কবে থেকে আমার খোঁজ রাখা শুরু করলে?”

বেডের কাছাকাছি এসে ঘুমন্ত তোশার মায়াময় মুখটার দিকে তাঁকালো।মেয়েটার মুখের আদল হুট করে কেমন যেন বদলে গিয়েছে।আগে মনে হতো তাহিয়ার চেহারা পাবে।কিন্তু এখন অনন্য সৌন্দর্যে মন্ডিত।যা বর্ণনা করা যায়না।আসিফ মৃদু হেসে তোশার কপালে হাত বুলিয়ে বলল,

“নিজেকে নিয়ে এতোটা ব্যস্ত ছিলে যে খেয়াল করো নি ও ঘুমের ঔষধ নিচ্ছে তবুও ঘুমাতে পারছেনা।মানুষ যখন নির্ঘুম রাত কাঁটায় তখন কতো ধরণের চিন্তা করে।ভাগ্য ভালো মেয়েটা নিজেকে শে’ষ করে দেয়নি।”

“আপনি সব জানতেন আসিফ ভাইয়া?”

“হ্যাঁ।”

“তবুও আস্কারা দিলেন?মানে বুঝেন নি কেমন খারাপ বিষয়টা?”

তাহিয়ার উপর পূর্ণ দৃষ্টি ফেললো আসিফ।বয়স তার পঞ্চাশের কাছাকাছি।চেহারার জৌলুসতা যদিও সাদা পাঞ্জাবী ও পরিপাটি গোছানো রুপের জন্য বেড়েছে।

“তাহিয়া কারো মনের উপর কখনো অন্য কেউ খবরদারি করতে পারেনা।যদি সেটা সম্ভব হতো তাহলে আজ তুমি আমার স্ত্রী এবং তোশা একমাত্র আমার সন্তান হতো।শুনো ব্রোকেন ফ্যামিলির বাচ্চাদের মাইন্ড না অনেক ক্রিটিক্যাল হয়।বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে এমন কোন সন্তান কষ্ট পায়না?তখন সেই সন্তানেরা ভিন্ন পথ খুঁজে নেয় ভালো থাকার।”

“কী বলতে চাচ্ছেন আমি তোশাকে কম ভালোবেসেছি?”

“No,I didn’t said that.But you have to admit it there is a difference between a mother’s love and a man’s love.”

“That’s not the issue.এই পুরো দুনিয়াতে তোশা সেই কবীরকে ভালোবাসার জন্য পেয়েছে?মায়ের ভালোবাসা ও পুরুষের ভালোবাসা দুটো ভিন্ন জিনিস মানলাম।ওর কবীরের সঙ্গে মিলে যাওয়া আমার জন্য কোনো বেনিফিট নিয়ে আসবে যা আবশ্যক।এবং এটা তাদের মিলনই সম্ভব। তা তো নয়।”

“কোনো ক্ষতিও তো নিয়ে আসছেনা।ও কী বলেছে যে তোমাকে ছেড়ে দিবে?কথাটা হলো আমি চিনি তাহিয়াকে।সে এটা ভেবে ভয় পাচ্ছে আসলে কবীর মায়ানের বন্ধু।এবং লোকটা নিজেও বিচ্ছেদের পর তোশাকে পেয়েছে।সত্যিটা এখানে তাহিয়া।তোমার বন্ধু ও বয়সে বড় এসব জিনিসকে তোমার মন ২০% এর বেশী তোয়াক্কা করেনা।কারণ তুমি জানো কবীর বা তোশা কেউ মৃ’ত্যু দন্ডের আসামী নয়।বরং তারা চাচ্ছে কবীরকে দেখো একজন মানুষ হিসেবে।একটা কথা বলো তাহিয়া।কবীর ক্রিমি’নাল?”

“না।”

“তাহলে এতো কেন ভাবছো?”

তাহিয়া শুকনো ঢোক গিললো।এমন না কবীরকে সে চিনেনা।একজন পার্ফেক্ট মানুষ সে।কিন্তু যদি সময় রুপ ভিন্ন হতো তাহলে?আসিফ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।গলা পরিষ্কার করে বলল,

“কবীর করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে।ভেতরে আসতে চাচ্ছে।কিন্তু তোমার অনুমতি চায়।উহু,ওকে মটেও দূর্বল ভাববেনা।কারণ জানো কবীর শাহ এসব মেনে চলতো না।যদি ওর অন্য কোনো বন্ধুর মেয়ে হতো এতোদিনে তুমি বা আমি সেজেগুজে যেতাম বিয়ের দাওয়াত খেতে।ও তোমাকে নিশ্চিতভাবে অন্য রকম সম্মান করে।তবে অনুভূতির উপর ও নিজেও কিছু করতে পারিনি।দেখা করতে দাও কবীরকে।”

তাহিয়া অপ্রস্তুত মাথা দুলালো।কিছুটা অনিশ্চিত সুরে বলল,

“আমাকে আজ তোশা নিজের মনের কথাগুলো বলেছে।আমি সেগুলো আপনাকে বলতে চাই।শুনবেন?”

“শুনবো।কিন্তু ওয়াদা করতে হবে তুমি একপাক্ষিক বা সমাজের দৃষ্টিতে নয় বরং মন থেকে দেখবে।তোশা সারাজীবন তোমার মাথা উঁচুতে রেখেছে।আজও নিচু করেনি কারণ জীবনসঙ্গী হিসেবে অসাধারণ এবং ব্যক্তিত্ববান মানুষকে বেছে নিয়েছে।এসো আমার সঙ্গে।”

তাহিয়াকে নিয়ে বের হয়ে এলো আসিফ।করিডোরের মাথায় কবীর দাঁড়িয়ে আছে।মুখ তুলে তাহিয়াকে দেখলো।আসিফ চিল্লিয়ে বলল,

“যাও কবীর।বাট তোমার কাছে অল্প সময় আছে।”

কবীর মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো।তামাটে পুরুষটির মুখের রঙ আরো যেন কয়েক ধাপ নিচে নেমে গেছে।তাহিয়ার দিকে অর্থহীন দৃষ্টি দিলো।যার অর্থ এবার তুমি কেন খেয়াল রাখলে না মেয়েটির?

কবীর দরজাটি আঁটকে ধীর পায়ে মেয়েটির কাছে এসে দাঁড়ালো।তোশা ঘুমন্ত অবস্থাতে কিছু টের পেলো যেন।নাক দিয়ে সুগন্ধ খোঁজার চেষ্টা করছে।কবীর বলে দিতে পারছে মেয়েটা স্বপ্ন আর বাস্তবের মাঝে বন্দী হয়ে আছে এখন।ধীরে ধীরে ছোট্ট বেডে তোশার পাশটা দখল করে নিলো কবীর।উষ্ণ স্পর্শ পেয়ে তোশা চোখ খুললো ধীরে ধীরে।বড় দূর্বল কণ্ঠে বলল,

“I am sorry.”

“আমি তোমাকে কখনো আজকের মুহুর্তের জন্য ক্ষমা করবো না বেলাডোনা।নিজেকে কষ্ট দিয়েছো।আর তুমি আমার।আমার মানুষকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার নেই।”

দূর্বল তবে স্বস্তিতে ফিচেল হেসে তোশা শুধালো,

“এতো ভয়ং’কর প্রেমিক হলেন কবে থেকে?”

“শুরু থেকে।তোমার দৃষ্টি তা দেখেনি এতে আমি দোষী নই।”

“আপনি দোষী।সব দো’ষ আপনার।হিটলার আপনার থেকেই অনুপ্রেরণা নিয়ে যু’দ্ধে নেমেছিল।”

“মাথা গিয়েছে?কীসব বলছো?”

“জানিনা।”

তোশা আদুরে বিড়াল ছানার মতো কবীরের বুকের ভেতরে ঢুকে গেলো।ফিসফিস করে বলল,

“কী সুন্দর স্বপ্ন।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫৯
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“স্বপ্ন দেখা তোমার অনেক প্রিয় বেলাডোনা?”

“অনেক।স্বপ্নে কোনো বাঁধা নেই।যা মন চায় তাই পাওয়া যায়।আপনাকে কতোবার পেয়েছি।আবার হারি’য়েছিলাম একবার।তখন জানেন অনেক কান্না পেতো।”

তোশার মুখের অভিব্যক্তি করুণ হতে দেখা গেলো।যেন মনের সুখ মিটে গিয়ে একরাশ দুঃখের ফুল ঝড়ে পড়ছে।কবীর মেয়েটির মুখটাতে হাত বুলিয়ে বলল,

“তোমার স্বপ্ন সম্পর্কে আমাকে বলো।শুনতে চাই আমি।কেন দেখো এতো সুন্দর স্বপ্ন?মানুষ তো দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু দেখতে পারেনা এখনকার যুগে।”

কবীরের উষ্ণতা তোশার মুখমণ্ডলে আদুরে স্পর্শ মেখে দিচ্ছে।কী দারুণ দেখতে তার ছোট্ট প্রেমিকা।তোশার এখনও সম্পূর্ণরুপে জ্ঞান নেই। বরং মৃদু সুরে কিছু বলছে।কবীর কান পেতে শুনলো তা।

“স্বপ্ন,সুন্দর, কবীর শাহ,আম্মু,আহনাফ।তর্নি, তর্নি।”

“তর্নি?সে কে তোশা?”

“জানিনা।কিন্তু তর্নি।”

বারংবার নামটি ডেকে ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গেলো তোশা।কবীর তার কপালে দীর্ঘ এক উষ্ণ চুম্বন দিলো।আরো কিছু সময় ওভাবে অতিবাহিত হয়ে গেলো।সময় জ্ঞান কী তামাটে পুরুষটির আছে?ম্যাসেজের শব্দে কবীর ফোনটা বের করলো।দেখলো আসিফ তাকে বের হতে বলছে।যে সময়টুকু ধা’রে দিয়েছিল তা শেষ।তোশাকে মনভরে দেখে নিলো কবীর।শীতের রাতে আ’গুনের উষ্ণতার মতো দৃষ্টির শূন্যতা,শুষ্কতা মিটিয়ে নিয়ে বের হয়ে এলো।তাহিয়া ও আসিফ তখনও করিডোরে বসে কথা বলছে।কবীর আজ ও পথে পা বাড়ালো না।তাহিয়ার সঙ্গে কী কথা হচ্ছে সে জানে।সেই এক বোঝাপড়া কিংবা সামাজিকতা।সেসব পুরোনো কিংবা বারংবার নতুন হয়ে ধরা দিবে।শতাব্দীর সেরা কবিতার মতোন তোশা ও কবীরের প্রেম কাহিনী।অন্ধকার রাত হওয়ায় চারিধার নির্জন হয়ে আছে।কিছুদিন পূর্বে ফ্রান্সিসকো এর হা’ম’লার পর ব’ডিগা’র্ড ছাড়া যদিও কবীর বের হয়না।কিন্তু তোশার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে একা।কাওকে না জানিয়ে।এমনিতে সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি আগুন।সেখানে মাঝরাতে হসপিটালে দেখতে আসা মানে দুটো কারণ বের করবে।
এক.এ’ বো’ র্শ’ ন
দুই.সু’ ই” সা’ ই’ ড

দুটোর একটাও যেহেতু হয়নি তো অহেতুক বিষয় রটানোর মানে হয়না।পার্কিং এড়িয়া যেন আরো নির্জন।নিজ গাড়ীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কবীর এমন সময় কোথা থেকে ছোট্ট একটা কবুতর তার গাড়ীর সামনে বসলো।চট করে তার মাথায় কেউ তরঙ্গের সৃষ্টি করলো।সময় ন’ষ্ট না করে দ্রুত গাড়ীতে বসে দরজা আঁটকে দিলো।কারণ তার স্মরণে এটা আছে ফ্রান্সিসকো কবুতর অনেক ভালোবাসতো।কাওকে ভ’য় বা চমকে দিতো হুট করে এমন কবুতর দিয়ে।এবং ঢাকা শহরে কবুতর এতোটা সহজলভ্য নয়।গাড়ী স্টার্ট করে চলে যাবে তৎক্ষনাৎ তোশা ও তাহিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো তার।সে কা’পু,’র’ষ নয় যে নিজের কথা চিন্তা করে চলে যাবে এখন।কল করে নিজ বডিগার্ডদের চলে আসতে বললো।মিনিট বিশেক সময় লাগবে তবুও গাড়ীতে বসে থাকতে পারলো না সে।ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো।তখনও কবুতরটি সেখানে বসে আছে।কবীর নরম হাতে পাখিটিকে হাতে তুলে নিলো।পাখিটির পায়ে একটা কাগজ রাখা।সেটা খুলে দেখলো সেখানে ইংরেজিতে সুন্দর করে লেখা-

“তোমার হোয়াইটকে বলবে তাকে নীল রঙে অনেক সুন্দর দেখাবে।ভয় নেই কবীর তুমি যেভাবে আমার সবথেকে সুখের সময়টা চু’রি করে নিয়েছিলে।আমিও তোমার থেকে তাই নিবো।”

কবীর বুঝতে পারলো তোশাকে হোয়াইট বলে ডেকেছে ফ্রান্সিসকো।সে যতোটা লোকটাকে চিনে কবীরের ভাগের আ’ঘা’ত তাকে করবে।তোশাকে না।তবুও স্বাবধান হতে চায় সে।ফোনের রিংটোন পুনরায় বেজে উঠলো।এতো রাতে উল্লাস কেন কল করেছে?

“হ্যালো।”

“কবীর শাহ আপনি কোথায়?”

“হসপিটালে কেন?”

“তোশা কেমন আছে?আমি কাল সকালে যাবো।”

“ভালো আছে।ঘুমাচ্ছে এখন।”

উল্লাস গলা পরিষ্কার করে বলল,

“বলতে পারেন কবীর শাহ এ’ক্স,’রা এমন হয় কেন?”

“তোমার কোন এ’ক্স আবার কী করেছে?”

“আমার না আপনার।আসলে আমি নাটকের পক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ শিওর ছিলাম।কিন্তু রিলিজ দিতে হয়েছে আপনাদের কাহিনীর উপর নির্মাণে একটা ওয়েব ফ্লিম রিলিজ হতো।যেখানে সব থাকতো অ’শ্লী’ল।ই’রো’টি’ক এবং আপনাদের বিষয়টি বা’জে’ভাবে দেখানো হতো।দুই মাস ধরে দেখবেন একটা ওয়েব ফ্লিম ‘অ’কো’ওয়ার্ড’ নামের অনেক প্রচার হতো।কিন্তু বিষয়বস্তু এক্সক্লুসিভ ছিল।সেটাই মূলত আপনাদের নিয়ে ছিল।আমরা যেদিন নাটক রিলিজ দিলাম তার চার ঘন্টা পর ওটা রিলিজ হওয়ার কথা ছিল।যদি তা হতো আপনার সম্মান ও তোশার জী’ব’ন দুটোই আজ পথের ময়লা হতো।”

কবীর খুব শান্ত মাথায় কথাগুলো শুনলো।ফ্রান্সিসকো এর ব্যাপার আবার উল্লাস এসব বলছে।অফিসে কিছু ঝা’মে’লা হচ্ছে সব মিলিয়ে কবীরের মাথায় জ্যাম ধরে যাচ্ছে।

“কে করেছে এটা?দিশা?”

“সে হালকা-পাতলা আছে।কিন্তু প্রতীক প্রায় সবটা এটার পিছনে ছিল।আমি শুনেছি আপনার কিছু শ’ত্রু এই ফ্লিমের প্রডিউসার।এবং দিশা ম্যাম স্ক্রিপ্ট দিয়েছে।সে কী চাচ্ছে আপনার কাছে?”

“ফিরে আসতে চাচ্ছে।”

“অদ্ভূত।এজন্য তোশার সম্মান নিয়ে খেলা করা উচিত হয়নি।এখন তবে আরেকটা সমস্যা আছে।তারা এই প্রজেক্টের নাম বদলে সত্য ঘটনার নাম দিয়ে রিলিজ দিবে।আমি থামাতে পারবো তাদের কিন্তু নিজের বাচ্চাদের কী সা’হ’সি’ক’তা’র গল্প শোনাবেন না?সেক্ষেত্রে কাল সকালে কিছু একটা করুন।”

কবীর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,

“আমার কী এখনও দিশাকে সম্মান করা উচিত উল্লাস?”

“উচিত নয়।কিন্তু আমি জানি আপনি করবেন।এবং নিজের স্টাইলে স’ম’স্যা’টির সমাধানও করতে পারবেন।একচুয়েলি দুনিয়া সব টাকার উপরে চলছে এখন।আপনার অর্থ কিংবা শক্তি বেশী।ততো চর্চাও বেশী আপনার।বাই দ্যা ওয়ে আজকে তোশার কাছে আপনাকে থাকতে দিলো না তাহিয়া ম্যাম?”

“নাহ।তোমার কোনো সাংবাদিক বন্ধু আছে?”

“আছে।কেন বলেন তো?”

“তাকে কল করে বলো।একটা দারুণ নিউজ আছে প্রতীকের সম্পর্কে।”

কবীর ফোনটা কেঁটে দিলো।দ্রুত তার মস্তিস্ক সঞ্চালন করে বিভিন্ন ঘটনা সাজালো একের পর এক।আশেপাশে তাঁকিয়ে কারো উপস্থিতিও আছে কীনা নিশ্চিত করে নিলো।আকাশের দিকে তাঁকালো সে।তার বৃহদকার সুগঠিত পুরুষালি দে’হ’ কে এখন লাগছে শিল্পের তৈরী সুন্দর সৃষ্টি।কবীর নিজের সঙ্গে বলে উঠলো,

“প্রেম,পায়’রা,প’য়,সা তিনটাকে সামলানোর শেষ চা’ল কবীর শাহ জানে।অদ্ভূত ফ্রান্সিসকো তুমি ভুলে গেলে আমি সেই বালক থেকে ঈগল পাখি হয়েছি।দেখা যাচ্ছে দুনিয়াতে ডি’সে’ন্ট কবীরের থেকে আড়ালে থাকা কবীরের বেশী দরকার।”

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ