#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“এই মেয়ে শুনো।”
“জি আমাকে বলছো?”
“হ্যাঁ।ক্যাপ্টেন তোশামণি তোমাকে ডেকেছে?”
ক্লাসে আসা নতুন মেয়েটা ভ্রু কুঁচকালো।একে তো অচেনা জায়গা।দ্বিতীয়ত একমাসেও কোনো বন্ধু হয়নি তার।এভাবে ক্লাস ক্যাপ্টেন ডাকবে বিষয়টা মাথায় আসেনি।বৃষ্টি আধ খাওয়া টিফিন ব্যাগে ভরে মেঘা নামের মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গে চলল।মাঠের এক পাশে তোশাকে ঘিরে অনেকে বসে আছে।ক্লাসের সব স্টুডেন্টের কাছে এমনকি শিক্ষকদের নিকটও বিশেষ কদর আছে তোশার।মেয়েটা সবসময় নজরকাঁড়া রেজাল্ট করে।এমনকি আঁকানোর হাতটাও বেশ।
“আমাকে ডেকেছিলে তোশা?”
সুন্দর ছিমছাম কিশোরী চুলগুলো একপাশে দুলিয়ে বলল,
“তুমি আমাদের সাথে মিশো না কেন?”
“এমনি।আমি মানুষের সঙ্গে কম মিশতে পারি।”
“বসো আমাদের পাশে।আজ থেকেও আমাদের গ্যাঙের সদস্য তুমি।মিশবে তো?”
খুব সুন্দরভাবে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলো তোশা।বৃষ্টি ইতস্তত করলো।পরবর্তীতে কিছু একটা ভেবে হাসি মুখে হাত মিলালো।
“তুমি খুব ভালো তোশা।”
“তোশামণি বলবে।আমার সব কাছের মানুষ এই নামে ডাকে।বসো টিফিন খাওয়া শেষ?”
“নাহ এখনও শেষ হয়নি।”
এহেন সময় ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের কণ্ঠ শোনা গেলো।সকলে সেদিকে তাঁকালো।বছর আটের একটা বাচ্চা ছেলেকে বড় ক্লাসের ছেলেরা দুই হাত পা ধরে উপরে উঠিয়ে দুলাচ্ছে।মুচড়াতে মুচড়াতে ছেলেটি ক্রমাগত নিজেকে ছাড়তে বলছে।বৃষ্টি তৎক্ষনাৎ সেদিকে উঠে গেলো।যেন মানুষটা খুব আপন তার নিকট।
“ছাড়ো আমাকে।ছাড়ো আমাকে।নিচে নামিয়ে দেখো একবার।সব কয়টাকে কী করি।”
ছোট বাচ্চার হুমকিত আশেপাশের ছেলেরা হো হো করে হেসে উঠলো।একজন তো বলেই উঠলো,
“ওর সাইজের থেকে মুখের কথা বড়।”
“কারণ ও শাহ বংশের ছেলে।এখুনি নামাবে তা নয় স্যারের কাছে বিচার দিবো।”
“এই তুমি আমাদের ক্লাসের নতুন মেয়েটা না?নাম তো বৃষ্টি।”
বৃষ্টি এগিয়ে এসে বলল,
“হ্যাঁ।ওকে ছেড়ে দাও।”
“ধরেছি তাই কী হয়েছে?এমনি খেলছি।”
“ও কোনো খেলনা নয় যে খেলবে।”
“দেখো বৃষ্টি।”
“আহনাফকে ছাড়ো বলছি।”
“ছাড়বো না।”
বৃষ্টি এগিয়ে এসে তৎক্ষনাৎ ছেলে গুলোর থেকে আহনাফকে টেনে ধরলো।বিষয়টা ইতিমধ্যে বড় হয়ে যাচ্ছে।নাছোড়বান্দা ছেলেগুলো শক্ত করে বাচ্চাটাকে ধরে আছে।হুট করে তাদের মধ্যে যে এতোক্ষণ কথা বলছিলো তার পিঠে দুমদাম করে কিল ঘুষি পড়তে লাগলো।তোশা রাগত সুরে বলছে,
“শ য় তা ন ছেলে।ছাড় ওকে।সারাদিন দুষ্টুমি করিস।আর পরীক্ষায় দুই পাস।দাঁড়া বলে দিবো আঙকেলকে।”
“তোশা ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
“রবীন এখন যদি তুই না যাস।তবে খবর আছে।”
“যাচ্ছি রে তোশামণি।বাচ্চাটা দেখতে কতো সুন্দর।এজন্য খেলছিলাম।গালটা ধরতেই দিলো না।তোর মতো সুন্দর।”
তোশা চোখ বড় বড় রবীনের দিকে তাঁকালো।তৎক্ষনাৎ ছেলেটা দলবেঁধে পালালো।আহনাফের সামনে হাটু গেড়ে বসে শার্ট ঠিক করে দিচ্ছে বৃষ্টি।রবীন সঠিক বলেছে ছেলেটি আসলেও অনেক সুন্দর।চোখ আর কপাল কারো সঙ্গে হুবুহু মিলে যাচ্ছে।তোশা বৃষ্টির উদ্দেশ্যে শুধালো,
“বাবুটাকে তুমি চিনো বৃষ্টি?”
“হ্যাঁ।আমার চাচাতো ভাই।”
“দেখতে অনেক সুন্দর।এতো ফর্সা কেন?”
“আমার চাচীর মতো দেখতে।আহনাফ যাও তোশামণিকে থ্যাংক ইউ বলো।”
নিজেকে বিন্যস্ত করে তোশার সামনে এসে দাঁড়ালো আহনাফ।ফোলা ফোলা গালে ধূলো লেগে আছে।তোশা হাত বাড়িয়ে তা পরিষ্কার করে দিলো।আলাদা গম্ভীর ভাব বাচ্চা ছেলের মুখটায়।যেন দুনিয়া নিয়ে সে মহা বিরক্ত।
“থ্যাংক ইউ তোশামণি।”
ধমকে উঠলো বৃষ্টি।অপ্রস্তুত ভঙিতে বলল,
“আহনাফ ও তোমার বড়।তোশামণি বলো না।”
“আরে সমস্যা নেই বৃষ্টি।বাচ্চাটা এতো কিউট।”
আহনাফ হুট করে আবদার করে বসলো।তোশার হাত দুটো আঁকড়ে ধরে বলল,
“আইসক্রিম খাবো তোশামণি।”
এরকম সহজ সরল আবদার তোশা ফিরিয়ে দিতে পারলো না।সেও পাল্টা হাত ধরে ক্যান্টিনের পথ ধরলো।পথিমধ্যে দু-জনের মধ্যে নানা প্রশ্ন-উত্তরের বিনিময় হচ্ছে।বৃষ্টি এখনও অবিশ্বাসের চোখে আহনাফকে দেখছে।এটা তার সেই চাচাতো ভাই যে দাদীর রান্না খাবার ছাড়া খায়না।জীবনেও কারো কিছু নেয়না।উল্টো দিতে গেলে নাক সিঁটকায়।সারাক্ষণ সকলের থেকে দূরে দূরে থাকে।সকালেও তো বৃষ্টির মা ব্রেডে বাটার লাগিয়ে দিলো দেখে খেলো না।নাহ এটা নিশ্চয় আহনাফ না।অন্য কেউ।কোনোভাবে বৃষ্টি নিজের মনকে বুঝাতো পারলো না।অথচ সে যদি জানতো বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে মন খারাপ করে থাকা আহনাফ অবশেষে কারো সান্নিধ্যে স্বস্তি লাভ করেছে।বরং আবদার করতেও দ্বিধা আসেনি মন থেকে।
(***)
আজ বৃহস্পতিবার।সপ্তাহের এই দিনে তোশা মায়ের অফিসে একবার হলেও আসে।কোনো বিশেষ কারণে নয়।শুধু ঘুরতে।মায়ের রুমটায় ঘুরে ঘুরে দেখছে তোশা।সব জায়গায় শাহ শাহ লেখা।সেগুলোর উপর হাত বুলিয়ে রোমাঞ্চিত হয় তোশা।সেই যে দেড় মাস আগে দেখেছিল।কবীর শাহ!নামটাও কী সুন্দর লাগে তোশার কাছে।মায়ের কাছে শুনেছে সে।কবীর চট্টগ্রামে থাকে।এজন্য নানা বাহানায় সেখানে ঘুরতে যাওয়ার কথাটি উঠিয়েছে সে।কিন্তু ফল শূন্য।হুট করে ঘাড়ে গরম কারো নিশ্বাস পেয়ে চমকে উঠলো তোশা।পিছন ফিরে দেখলো অফিসে কাজ করা সবথেকে প্রবীণ লোকটি দাঁড়িয়ে আছে।তোশা তাকে শুধালো,
“কী ফজলু আঙকেল?”
“তোমার জন্য কোকাকোলা পাঠিয়েছে ম্যাডাম।আসো খাও।”
“ওহ।”
তোশা চেয়ারে বসতে গেলে ফজলু তার আগেভাগে বসে পড়লো।মেয়েটার ভ্রুঁ কুঁচকে গেলো।ফজুল পান খাওয়া দাঁত বের করে বলল,
“তোশামণি বসার জায়গা নেই?আমার কোলে বসতে পারো।”
অল্প বয়সে তার মা তাকে জন্ম দেওয়ায় তোশা ভীষণ অসুস্থতায় ভুগতো।এই কারণে শরীরের গঠনে কিছুটা ছোট।তবে মানসিক ভাবে এসব বোঝার জন্য বড়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই বড়সড় কেউ ফজলুর কোলে বসে পড়লো।যৌবন শেষ হওয়া ফজলু আর্তনাদ করে উঠলো।কড়া পারফিউমে মুহূর্তেই রুম ভরে উঠলো।মেরুন রঙের ফর্মাল স্যুটে কবীর আনমনে ফোন দেখছে।যেন চেয়ারে বসা ফজলুকে সে দেখেনি।তোশা অভিভূত হয়ে গেলো।
“স্যার,স্যার।আমি ম রে গেলাম।”
না জানার ভান করে কবীর বলল,
“ওহ ফজলু আঙকেল।আপনি এখানে আমি তো ভেবেছিলাম চেয়ার।”
“স্যার সরেন।”
“নাহ।আপনার ভার সহ্য করার বয়স নেই।একটু পর এ মাসের বেতন নিয়ে আগামীকাল থেকে আসবেন না।”
কবীর উঠে দাঁড়ালো।ফজলু ভয় পেয়ে গেলো।কবীর স্যারের সঙ্গে এবার দিয়ে দ্বিতীয় বার দেখা তার।কিন্তু প্রথমবারের মতোন মিশুক লাগছেনা।মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বে চিল্লিয়ে বলল,
“আউট।”
ফজলু চলে গেলে ফিচেল হেসে কবীর বলল,
“কেমন আছো বেবী গার্ল?”
“অনেক অনেক ভালো।”
“এতো ভালো থাকার কারণ?”
“জানিনা।”
কবীরকে দেখে তোশার হাত পা কাঁপছে।অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে সে।লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“কেমন আছেন?অনেকদিন পর দেখলাম।”
” ভালো।কিন্তু তোমার মতো অনেক অনেক ভালো।
“আপনাকে দেখায় এতো ভালো লাগছে আমার।”
এতো সহজ সরল স্বীকারোক্তিতে কবীর আবার হতভম্ব হয়ে গেলো।মেয়েটা পাগলাটে ধরণের।কিন্তু তার কাছে ভালোই লাগে।নিজের চমকে যাওয়া ভাব আড়াল করে বলল,
” চলো।বাহিরে তাহিয়া ও তোমার মামী অপেক্ষা করছে।হাত ধরে এসো।”
কতো সহজে হাত বাড়িয়ে দিলো কবীর।তোশার মনটা কেমন করে উঠলো।সে কোনো দ্বিধা না করে হাতটা আঁকড়ে ধরলো।ফিসফিস করে বলল,
“হাতটা কখনো ছাড়বেন না কিন্তু।”
আনমনে কবীরও জবাব দিলো,
“কখনো না।”
চলবে।
#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া
“আমি আসলে ভীষণ ভালো অভিনয় করতে জানি।কীভাবে জানেন?মা চায় সবসময় যেন তার ছোট্ট মেয়ে হয়ে থাকি।এটা ওটা আবদার করি।আর মা সেগুলো দিতে হিমশিম খাবে।এমন না কিছু বুঝিনা।সবই বুঝি।আসলে ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে তো।দুনিয়াটা খুব ঝলমলে না হলেও বানিয়ে নিতে হয়।”
কবীর ভূত দেখার মতো চমকে তোশার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।মেয়েটির কথাবার্তা হুট করে ভীষণ বড়দের মতোন হয়ে গেলো না?ক্ষণপূর্বেই সে একটি কথা ভাবছিলো।তোশা দুই চোখে যা দেখছে সেটাই নিয়ে নিচ্ছে।এমনকি তার মা নিজেও খুব একটা টাকা পয়সার চিন্তা করছেনা।বরং সাজেশন দিচ্ছে এটাও ভালো লাগবে ওটাও ভালো লাগবে।বিষয়টি কবীরের কাছে মটেও ভালো লাগেনি।সে কিছু একটা বলবে ভেবেছিল।পরক্ষণে ভাবলো অনধিকার চর্চা হয়ে যাবে।কিন্তু কবীরের মন চাচ্ছে খুব করে তোশাকে শাসন করতে।এই অধিকার মনটা কেন চেয়েছিল?
“হঠাৎ একথা কেন?”
“আমি ড্রেস কিনছি আর আপনি অদ্ভূত চোখে তাঁকিয়ে আছেন।বিষয়টা বুঝি আমি।”
“বাহ!তোশামণি এতো বড় কবে হলো?”
“আমাকে চিনেন কবে থেকে?”
কবীর চিন্তা করার ভঙিতে বলল,
“হুমম।মাস খানেক আগে থেকে।তবে বুঝেছি ভালো একটা মেয়ে।”
“হুঁ?আরো কতোবার বুঝতে হবে আমাকে।তবেই সঠিক চিনতে পারবেন।”
“কতোবার?”
“গুণতে হবে বুঝলেন।”
তোশা কবীরের থেকে দূরে সরে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।একটা লাল রঙের থ্রি পিচ নিজের উপর রেখে তোশা বলল,
“মা দেখো তো কেমন লাগছে?”
“ভীষণ ভালো।এটাও নিয়ে নাও।বুধবারে যখন বান্ধুবীদের সাথে ঘুরতে যাবে তখন পরে যেও।”
“ওকে।আমি ট্রাই করে দেখে আসছি।”
তোশা চলে গেলে তাহিয়ার পাশে এসে দাঁড়ালো কবীর।মুচকি হেসে বলল,
“তোশামণি এতোটাও বাচ্চা নয় দেখছি।”
“এটা কীসের জন্য মনে হলো?”
“মনে হলো এমনিতে।যাই হোক কাল আমাকে চট্টগ্রাম যেতে হবে।তুমি কাইন্ডলি মিটিংটা সামলে নিবে?”
বিরক্ত হলো তাহিয়া।উদাস কণ্ঠে বলল,
“আমাকে খুব বিশ্বাস করছো।এতো এতো টাকার বিষয়টা কেন যে শুধু আমাকে সামাল দিতে বলছো।”
“নাহ তোমাকে বিশ্বাস করিনা।”
“একটা কথা বলো তো কবীর।আমার উপর এই চোখ বন্ধ বিশ্বাসটা মায়ান করতে বলেছে তাইনা?প্রাক্তন স্ত্রীর প্রতি এতো মায়া কিন্তু খুব একটা ভালো নয়।”
“বাদ দাও তাহিয়া।তোশা এখনও ফিরে এলো না যে।”
“তাইতো।আমি দেখছি দাঁড়াও।”
“নো।আমি দেখে আসছি।”
কবীর ট্রায়াল রুমের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।বড্ড এলেমেলো পা তার।কিন্তু একজন নারীর দর্শনে থেমে গেলো যে একমনে ড্রেস দেখছে ঘুরেঘুরে।শুস্ক হয়ে উঠলো কবীরের কণ্ঠ।কী অদ্ভূত দুটো মানুষ এতো কাছাকাছি কিন্তু দূরত্ব?সেটা তো আকাশসম।কবীর উষ্ণ শ্বাস ফেললো।য ন্ত্র ণা থেকে চোখটা সরিয়ে নিলো।তোশা এক জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।লাল রঙের ড্রেসটায় দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।ফোলা ফোলা গাল দুটো বড্ড আকর্ষণীয়।কবীরের মনটা হঠাৎ ষোল বছরের কিশোরের হতে চাচ্ছে।তোশা কান্নামাখা মুখে কবীরকে কাছে ডাকলো।
“কী হয়েছে বেবিগার্ল?”
তোশা নিচু সুরে বলল,
“একটা ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।আম্মুকে ডাকেন।”
“কী হয়েছে সেটা বলো তো।”
“আম্মুকে ডাকেন।পার্সোনাল বিষয়।”
কবীর একটা জিনিস ভেবে পেলো না পনের বছর বয়সী মেয়ের কী এমন পার্সোনাল বিষয় থাকতে পারে।কিন্তু পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে তাহিয়াকে ফোন করলো।তোশা এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
“কী হয়েছে কবীর?কল কেন করলে?”
“দেখো তো।তোশার কী সমস্যা।”
“কী হয়েছে তোশা মা?”
“আম্মু শুনো।”
“হ্যাঁ বলো।”
তাহিয়াকে টেনে ফিসফিস করে পিরিয়ড কথাটি উচ্চারণ করলো তোশা।কিন্তু ততোটা গোপন হয়নি কথাগুলো।স্বল্প দূরত্বে দাঁড়ানো কবীর স্পষ্ট শুনলো।খুবই বিব্রত হলো ব্যক্তিটা।নিশ্চয় ট্রায়াল দিতে গিয়ে এই ড্রেসটা নষ্ট করেছে।কবীর আসছি বলে তৎক্ষনাৎ কাউন্টারে গিয়ে ড্রেসটার বিল মিটিয়ে দিলো।এটা সে কেন করলো জানা নেই।অবশ্য আর ড্রেস গুলোর দাম দিলে তাহিয়া ভীষণ রাগারাগি করবে।এই নিয়ে যেন কোনো প্রকার কথা না হয় তাই তৎক্ষনাৎ বিনা বিদায়ে শপিং মল থেকে বের হয়ে গেলো কবীর।
(***)
তোশামণির খুব লজ্জা লাগছে।সত্যি বলতে খুব খুব খুউউউব।কিন্তু কাওকে এই অনুভূতিটা ব্যক্ত করতে পারছেনা।মন খারাপ হলে সে তার কল্লোল ভাইয়ের কাছে আসে।তার বিছানায় উপর হয়ে গড়াগড়ি খায়।আর পুরো সময়টিতে সবথেকে পড়াকু,ভালো,ভদ্র ছেলে কল্লোল অঙ্কে ডুবে থাকে। কঠিন ম্যাথটা শেষ হলে সে তবেই কথা বলে।আজও ব্যতিক্রম নয়।তোশাকে ক্ষণে ক্ষণে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে দেখে কল্লোল শুধালো,
“কী ব্যাপার তোশামণি।আজ এতো দুঃখ কেন?”
চিন্তিত ভঙিতে জবাব দেয় তোশা,
“আমি আজ অনেক লজ্জা পেয়েছি একজনের কাছে।”
“কীভাবে?”
“বলা যাবেনা।”
“ওহ।”
কল্লোল পুনরায় বইয়ে ডুবে থাকার জন্য অগ্রসর হলো।সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।তোশা তার পড়ায় বিঘ্ন ঘটিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“একটা না চাওয়া স্পর্শ পছন্দের মানুষ করলে কিছু হয়না।কিন্তু অপরিচিত মানুষ করলে এতো সমস্যা কেন হয়?”
“হুঁ?বুঝিনি কথাটি।”
“ধরো একজনকে আমি ভালোবাসি তাই ভুল করে সে অহেতুক স্পর্শ করে ফেললো সেটা তার খারাপ লাগেনা।কিন্তু সেম স্পর্শ সমান ভুল করে অন্য কারো থেকে পেলে কেন খারাপ লাগে?গা ঘিনঘিন করে।”
“তুমি খিচুড়ি পছন্দ করো না।কিন্তু বিরিয়ানি করো।কিন্তু দুটোই চালের তৈরী ভেজ, নন-ভেজ হয়।তাহলে একটা খারাপ লাগে আরেকটা কেন লাগেনা?”
বুঝদারের মতোন মাথা দুলায় তোশা।ফিসফিস করে বলে,
“তাহলে সে আমার পছন্দের মানুষ।হাহ, আমি তো জানতাম।অজানার ভান করছি কেন?আর লজ্জা পাচ্ছি কেন আসলে?”
নিজ ভাবনায় মশগুল তোশামণি আস্তে ধীরে উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।ভবিতব্য পূর্ণ বয়স্ক যুবক কল্লোল চশমার ফাঁকে তার প্রস্থান দেখলো।সে সম্পর্কে তোশার মামাতো ভাই।দুজনে একত্র বড় হয়েছে।এমনকি একে অপরের মিলও রয়েছে।কল্লোলের গোপন অনুভূতি হচ্ছে তোশা।কিন্তু সেই কথাটি বলার সাধ্য আপাতত তার নেই।কখনো হবে কী?
(***)
ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে দিলো কবীর।এতোক্ষণ ট্রেডমিলে দৌড়েছে সে।মাথায় পানি না দিলে ভালো লাগছিলো না।গায়ে জড়ালো গেঞ্জটি ত্বকের সঙ্গে লেপ্টে আছে।তামাটে পেশিবহুল বাহুদুটোর শিরা উপশিরা দৃশ্যমান।কবীরকে পয়ত্রিশ বছর বয়সেও ভীষণ সুন্দর দেখায়।আগে অবশ্য এমন ছিলনা।ইদানীং অর্থের শেষ নেই।তাই নিয়মিত জিম,খাদ্যভাস পালন করেই নিজের যৌবন ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে।আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো কবীর।ছোট্ট টাওয়াল দিয়ে মুখটা মুছে নিচ্ছে আর ভাবছে জীবনটা একাকিত্বে ভরে গিয়েছে তার।আপন মানুষ বলতে কেউ নেই।ঠিক এমন সময় তার ফোনে অচেনা একটা নাম্বার থেকে কল এলো।
“হ্যালো কে?”
“হ্যালো,হ্যালো শুনেন।আমি পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর মেয়ে তোশামণি বলছি।”
চলবে।