মিঠা রোদ পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
833

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩০
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমরা এখানে কেন এলাম আম্মু?কোনো কাজ আছে?”

বড্ড মিনমিন কণ্ঠসুরে কথাটি শুধালো তোশা।দিনের শুরুতে মা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে বেড়িয়েছে।যদিও জানতো না কোথায় যাচ্ছে তারা।কিন্তু গাড়ী থামার পর স্মরণে এলো এটা শাহ গ্রুপের প্রধান অফিস।জীবনে একবার অবশ্য তোশা এসেছিল।

“কবীরের সাথে আমার কিছু কথা আছে তোশামণি।এরপর তোমাকে নিয়ে হেয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য যাবো।এতো সুন্দর চুলগুলো কাকের বাসা বানিয়ে ফেলেছো।”

“আম্মু আগে বলবেনা।আমি বড্ড উদ্ভট পোশাকে এসে পড়েছি।তিন রঙা লাগছে।”

“সমস্যা নেই।কবীর কিছু মনে করবেনা।তুমি তো বাচ্চা।”

তোশার মন খারাপ দূর হলো না।তার মা তো জানেনা লোকটার সঙ্গে আড়ালের সম্পর্কের কথা।ভালোবাসা স্বীকার করার পর এবার দিয়ে প্রথম দেখা তাদের।যদি জানতো তোশা তবে সবথেকে সুন্দর রঙের ড্রেসটা পরে আসতো।আফসোসের অনলে ভেতর থেকে উষ্ণ শ্বাস বের হয়ে এলো কন্যাটির।

অফিসটাতে বেশ টাকা খরচ করেছে কবীর।মনের মাধুরি অনুযায়ী তৈরী করেছে যেন।গতবার এতোকিছু খেয়াল ছিলনা তোশার।আজ বেশ আয়েশ নিয়ে সবটা দেখছে।লিফট থেকে বের হওয়ার পর তাদের মধ্যবয়স্ক এক লোকের সঙ্গে দেখা হলো।

“তাহিয়া চৌধুরী।কেমন আছেন?”

হাসিমুখে তাহিয়া কোনমতে ভালো আছি বলে পাশ কাঁটাতে গিয়েও পারলো না।লোকটা থামিয়ে বলল,

“কোথায় যাচ্ছেন?মি.শাহ এখন ব্যস্ত।চলুন ক্যান্টিনে গিয়ে আলাপ করে নেই।আহা বিব্রত হচ্ছেন কেন?চলুন তো একবার যতোক্ষণ না মি.শাহ ফ্রি হচ্ছে।”

“অন্য একদিন।আমার সময় নেই আলমগীর।অন্য একদিন কথা হবে।

তোশার পানে আলমগীর তাঁকালো একবার।লোকটার চাহনি ভালো না।

” এটা নিশ্চয় আমাদের মামুনী।কেমন আছো মা?আমি তোমার মায়ের বন্ধু।”

“ভালো।”

বন্ধু শব্দে মটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ হলো না তাহিয়ার।মেয়ের নির্বিকার চাহনী থেকে বাঁচতে আলমগীরের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজী হলো।পাছে কিছু মনে করে তোশা।তবে এটা যেন ভুল ছিল তাহিয়ার।অতীতে তাকে বহুবার আকার ইঙ্গিতে অন্যরকম প্রস্তাব দিয়েছিল আলমগীর।আজ সেটা কিছুটা সরাসরি দিলো।এতোটা সাহসের কারণ অবশ্য একটু পর অনুধাবন হলো তাহিয়ার।কবীরের সঙ্গে অনেক বড় একটা প্রজেক্টে কাজ করবে সে।

“এখানে কী হচ্ছে?সুন্দর আড্ডা আমাকে ছাড়া হয়ে যাচ্ছে?”

নিজের বিশাল দেহটা নিয়ে চেয়ারে বসে পড়লো কবীর।মানুষটার চেহারা,পোশাকে যত্নের ছাঁপ ও সুবিন্যস্ত পরিপাটি অবস্থা দেখে আরেক দফা কান্না এলো তোশার।আজকেই কেন সে পাগলের মতো বের হলো।ভাগ্যিস অন্তত শ্যাম্পুটা করেছিল সে।আলমগীর তাকে দেখে সুন্দর হেসে বলল,

“এমনি কথা বলছিলাম।আপনি তো জানেন কবীর।তাহিয়াকে আমার কতোটা পছন্দ।”

“আপনার ডিভোর্সটা কী হয়েছে মি.আলমগীর?শুনলাম হবেনা।গতরাতে আপনার স্ত্রী ফোন করেছিল।হোটেল সোনারগাঁ তে ইনভাইট করলো আমাকে।কী বলেন তো আপনারা রাস্তাঘাটের সকলকে পছন্দ করেন নাকী?”

“কী আশ্চর্য!আপনারা রাস্তাঘাটের নাকী?”

“একদম না।রাস্তাঘাটের মানুষ হলো তারা যাদের..।”

হুট করে তোশার দিকে তাঁকালো কবীর।আদেশের সুরে বলল,

“দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরো।”

“কেন?”

“প্রশ্ন নয় মেয়ে।”

তোশা কথা মতোন দুহাত দিয়ে কান বন্ধ করলো। তৎক্ষনাৎ কবীরের পুরু ঠোঁট দুটো নড়ে উঠলো।মুখটা বিবর্ণ হয়ে উঠলো আলমগীরের।

“আশা করি এরপর থেকে কাওকে পছন্দের কথা দেখেশুনে বলবেন।মিটিং শেষ অনেক আগে।সময় গড়ালে অফিস থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে খুব কষ্ট হবে আপনার।”

“জি মি.কবীর।ভালো থাকবেন।”

তড়িঘড়ি করে উঠে চলে গেলো আলমগীর।যুবতী তোশা এখনও কানে হাত দিয়ে দূরে উদাস হয়ে তাঁকিয়ে আছে।যেন ইহজাগতিক বিষয়ে সে বড় নির্বিকার।কবীর আস্তে করে তোশার হাত দুটো নামিয়ে তাহিয়াকে শুধালো,

“হঠাৎ অফিসে কেন তুমি?আর কতোবার বলেছি এসব পা র্ভা ট দে র সাথে সৌজন্যেতাবশতও কথা বলবেনা।”

“কবীর, আমার ইচ্ছে ছিলনা।মেয়ের সামনে বলে আমি নাকী তার বন্ধু।তোশা যদি কিছু মনে করে।”

“তোমার মেয়ে বেশ বুদ্ধিমতী।কিছু মনে করবেনা।যাই হোক কেবিনে চলো।”

তাহিয়া আগে আগে কেবিনের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো।কবীর প্যান্টের পকেট থেকে হাতটা বের করে আস্তে করে তোশার আঙুলে চাপ দিলো।শিওরে উঠলো মেয়েটা।ধীর কণ্ঠে বলল,

“তিন রঙের পোশাক।দারুণ ফ্যাশন।সুন্দর লাগছে আকাশী মেয়ে।”

লজ্জায় চোখে পানি আসার উপক্রম।মানুষটা তবে তার পোশাকের ক্রুটি ধরতে পারলো।তবে সে দমে যাওয়ার নয়।

“ফ্যাশনটা আজকেই আবিষ্কার।”

“গুড।”

“আচ্ছা আলমগীর আঙকেলের ওয়াইফ আপনাকে কেন ইনভাইট করলো।দুনিয়া মানুষের অভাব আছে?”

“আমি সুন্দর,ব্যাচেলর।সুগঠিত পুরুষ।এই তিনটে বাহানা যথেষ্ট নয় কী?”

“হু?সেই তো কালো।”

কবীরের অধরযুগল প্রসারিত হয়ে গেলো।সকলের অগোচরে পুনরায় কন্যাটির হাতে হাত বুলিয়ে দিয়ে ধীর কণ্ঠে বলল,

“কালো, বুড়ো যাই বলো সুন্দর কন্যার নজরে শুধু আমিই আছি।”

“ভীষণ আত্নবিশ্বাস দেখা যাচ্ছে।”

মিষ্টি করে হাসলো কবীর শাহ।ব্যস, তোশামণির দিন সেরা হওয়ার জন্য যা যথেষ্ট ছিল।এইতো একটু একটু ভালোবাসার স্পর্শ,মায়াময় বাক্য এসবের জন্য কতোটা আকুলতা ছিল তার।দিনশেষে সব স্বপ্ন পূরণ হয়ে ওঠে।

(***)

ক্ষণবাদে বিশাল বড় একটি কেবিনে প্রবেশ করলো তোশা।কবীর নিজের চেয়ারে বসে শুধালো,

“তাহিয়া হঠাৎ এখানে এলে যে?”

“আমি একটা ভুল করে ফেলেছি।সেই কারণে এলাম।”

“কী ভুল?”

“তোমার কোম্পানিতে কাজ শুরু করার পর থেকে আমার যতোটা প্রোফিট ছিল এরমধ্যে বেশীরভাগ বাবার নামে দিয়েছিলাম।বাকীটা তোশার নামে।এখন তিনি চাচ্ছেন সেই টাকা তার আরো দুই সন্তান ও কল্লোলের নামেও দিবেন।আমি কিংবা তোশা একা কেন পাবো?অথচ সবটা আমার মেয়ের।নিজের চেনা পরিচিত বাবাকে চিনতে পারছিনা আমি।”

গম্ভীর সুরে কবীর শুধালো,

“আঙকেলকে জিজ্ঞেস করেছিলে ব্যাপারটা কেন তোমার টাকা বণ্টন করছেন?”

“করেছিলাম।সে বললেন টাকা তার নামে।আমার সত্যিই বড় খারাপ লাগছে।দিনশেষে সকলে ধোঁ কা দেয়।”

শুকনো ঢোক গিললো তোশা।কবীর মুখে একরাশ মেঘ জমিয়ে বলল,

“আমি একবার আঙকেলের সঙ্গে কথা বলে দেখবো?”

“লাভ হবেনা।দেখো না বাসাটাও আমাকে এমনভাবে দিয়েছে যে কখনো আমি দাবী করতে পারবো না।কোনো উপায় নেই টাকা গুলো ফেরত পাওয়ার?”

“আজ কালের মানুষ নিজের ছায়াকে বিশ্বাস করেনা সেখানে তুমি কাজটা ঠিক করো নি।টাকা যাক।বাবার সঙ্গে তো লড়তে পারবেনা এখন।”

“কিন্তু তোশা?ওর অধিকার সেসব।”

“মায়ান যেমন হোক বাবা হিসেবে সেরা না হলেও তোশাকে নিয়ে ভালো প্ল্যান আছে ওর।ভয় নেই।ভেসে যাবেনা।”

“একদম না।যে লোক এতোগুলো বছরে মেয়েকে দেখতে একবারও দেশে আসেনি সে কেমন বাবা হবে জানা আছে।”

প্রাক্তনকে নিয়ে আক্ষেপ কখনো মেয়ের সামনে করেনি তাহিয়া।কিন্তু আজ পরিস্থিতি ভিন্ন।বাবা -মা কেন যে সব সন্তানের সঙ্গে সমান হতে পারেনা।তোশা নতমুখে টেবিলের কাঁচ পানে তাঁকিয়ে আছে।

“তাহিয়া আমাকে বিশ্বাস করো?”

“করি।তুমি একজন যে কীনা স্বার্থ ছাড়া আমাকে নিরাপদ রেখেছো।”

“স্বার্থ,প্রাপ্তির বিষয় পরে।ভয় নেই আমি আছি।তোশার ক্ষেত্রে সবসময় আমাকে পাবে।”

তাহিয়া সেই কথা জানে।তবুও বাবার দেওয়া য ন্ত্র ণাগুলো বড্ড পোড়াচ্ছে।এখন কেঁদে দিবে সে বুঝতে পারছে।হুট করে উঠে দাঁড়ালো।কম্পমান কণ্ঠে বলল,

“আমি একটু আসছি।তোশা এখানেই থাকো।”

কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো তাহিয়া।কিন্তু একরাশ কষ্ট রেখে গেলো দুজন নর-নারীর মনে।কবীর চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

“কী ভাবছো তোশা?”

“নানা সত্যিই এমন করেছেন?আমি খেয়াল করেছিলাম গতকাল কিছু নিয়ে সকলের মধ্যে আলোচনা চলছে।”

কবীর এই আলোচনায় গেলো না।যতোটা টাকা তাহিয়ার চলে গিয়েছে ততোটার থেকে বেশীই বহু আগে কবীর নিজে তোশার নামে রেখেছে।কেন, কোন সম্পর্কের জোরে জানা নেই।কিন্তু মেয়েটির প্রতি অনিমন্ত্রিত দায়িত্ববোধ থেকে করেছে।

“তাহিয়া আমাকে খুব বিশ্বাস করে তোশামণি।তাকে কখনো কীভাবে জানাবো আমাদের অনুভূতির কথা?”

ভীত হয়ে উঠলো তোশা।ভেঙে যাওয়া গলায় বলল,

“আপনি কী আবার অস্বীকার করবেন সব?”

“যদি মা কে হারিয়ে ফেলো?ধরো তাহিয়া অথবা আমার মধ্যে কাওকে বেছে নিতে হলো।তবে কাকে নিবে?ভেবে বলো।”

প্রশ্নটির উত্তর তোশার জানা।নতমস্তকে ধীর কণ্ঠে বলল,

“আম্মু ছাড়া থাকতে পারবো না।”

“তাহলে তো হিসেবটা মিটে গেলো।”

হাসিখুশি মনটা মুহুর্তেই কেঁদে উঠলো।ফুঁপিয়ে তোশা পুনরায় বলল,

“কবীর শাহ কে ছাড়াও থাকতে পারবো না।দুজনকে ছাড়াই থাকতে পারবো না।”

কাছের মানুষদের কান্না ব্যস্ত করে তুলে কবীরকে।সে ভীষণ আকুলতায় যুবতীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।চট করে তাকে দাঁড়া করিয়ে পিছন দিকে থেকে আলিঙ্গন করলো।বিশাল দেহটি হালকা নিচু করে নরম ঘাড়ে চিবুকটি ঠেকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কান্না করো কেন?”

“কষ্ট হচ্ছে যে।”

“কষ্ট পাওয়ার জন্য কী আমাকে ভালোবাসনি?”

“জানিনা।”

তোশাকে আরো নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে কবীর বলল,

“কবীর শাহ এর ভালোবাসা তোশামণিকে।দিনশেষে আমার বলা শেষ বাক্যটিও এটা হবে বেলাডোনা।তুমি থাকো কিংবা না থাকো।আমি সবসময় আছি।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩১
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার নায়িকার সঙ্গে ঠিক কীরকম সম্পর্ক আপনার?সুগার গার্ল নাকী সুযোগ নেওয়া?”

“তুমি জানো প্রতীক এই প্রশ্নগুলোর জন্য তোমার অভিনয় ক্যারিয়ার শে ষ করে দিতে পারি।”

“সেটা আপনার ক্ষমতায় আছে জানি মি.শাহ।আমি তো শুধু জানতে চাচ্ছি আমার নায়িকার ব্যাপারে।”

কবীরের গম্ভীর মুখটিতে ফ্যাকাসে রঙ আরো এক ধাপ নিচে নেমে গেলো।তবুও মুখের বিনয়ী ভাব ধরে বলল,

“আমার নায়িকা সম্বোধন হয়তো তোশার ক্ষেত্রে চলে না প্রতীক।তুমি সেন্সিবল পার্সন।সম্পর্ক কী সেটা ধরতে পারবে।তবে সহজ করার জন্য বলে দিচ্ছি মেয়েটি একান্ত আমার আপনজন।”

“ধরতে পারি রিয়েল লাইফে আপনার নায়িকা।”

কবীর ধণাত্বক মাথা নাড়ালো।প্রতীক হুট করে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো।যা মটেও ভালো লাগলো না কবীরের।বিষয়টি বুঝতে পেরে স্বনামধন্য প্রযোজক মিনহাজ বড় সুন্দর কণ্ঠে বলল,

“হয়েছে কী মি.শাহ।তোশা আজ সকালে আমাদের সাথে কন্ট্রাক সাইন করে গিয়েছেন।নাটকটির বিপরীতে অভিনয় করবে প্রতীক।এজন্য আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করেছে।”

“অভিনয় করবেনা তোশা।ছোট মানুষ ভুলে কারো রায় না নিয়ে করে ফেলেছে।এখুনি কন্ট্রাকটির অস্তিত্ব মিটিয়ে ফেলবেন।”

মিনহাজ জবাব দেওয়ার পূর্বে প্রতীক মুখ ফুটে বলল,

“সম্ভব নয়।তাছাড়া অভিনয় খারাপ কিছু নয়।সাধারণ সামাজিক একটি স্ক্রিপ্ট।কিন্তু ভাবিনি এই কারণে মি.শাহ সব কাজ ফেলে আসবেন।তাহলে অসাধারণ কিছু গল্পে রাখতাম।”

“প্রতীক তুমি অল্প বয়সী যুবক।সেক্ষেত্রে যা কথা বলার প্রযোজকের সঙ্গে হবে।কী বলেন মি.মিনহাজ।আমার বিপক্ষে যাবেন?”

“না না মি.কবীর।প্রতীক তুমি কথা বলো না।আমি অন্য কোনো নায়িকার সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”

প্রতীক নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে কবীরের মুখখানির দিকে তাঁকিয়ে আছে।কঠিক এক ধাঁধার সমাধান হচ্ছে না।তোশাকে যতোটা আজ সকালে সরাসরি দেখেছে তাতে মনে হয় না তেমন খারাপ স্বভাবের কেউ।এক্ষেত্রে কবীরের ইমেজ অনেক ক্লিয়ার।বিশিষ্ট শিল্পপতী হওয়ায় গতবছর টিভিতে এক অনুষ্ঠানে দুজন একত্রে হয়েছিল।তখন যা টুকটাক পরিচয়।ক্ষমতাধর লোক হলেও বিনয়ী তবে প্রখর ব্যক্তিত্বের।সেই লোকটি কীনা অর্ধেক বয়সের মেয়ের সাথে প্রেম ভালোবাসায় জড়িয়ে আছে?বিষয়টি গলাধঃকরণ করার মতোন নয়।হালকা বাজিয়ে দেখার জন্য মিনহাজের উদ্দেশ্যে বলল,

“কন্ট্রাক এতো সহজে ভেঙে যাওয়ার সুযোগ থাকলে আমিও আপনার প্রোডাকশন হাউজের সাথে সব ধরণের চুক্তি শেষ করতে চাচ্ছি।”

‘প্রতীক!বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করো।”

মিনহাজের কথার ধারের কাছ দিয়েও গেলো না প্রতীক।উল্টো কবীরের উদ্দেশ্যে বলল,

“অল্প বয়সী মেয়েরা নানা ধরণের এডভেঞ্চার করতে পছন্দ করে।আপনি নিশ্চয় তোশা চৌধুরীর কাছে ঠিক সেরকম কেউ কবীর শাহ।চোখ বন্ধ করে দুনিয়া দেখছে তো।ব্যাপার না আমার সান্নিধ্যে একটা নাটক অভিনয় করুক।পাশা পাল্টে যাবে।”

“স্বার্থ কী তোমার প্রতীক?”

“মা বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন।তোশা সুন্দরী,বুদ্ধি কম একটা মেয়ে।বাকী কিছু না হলেও চলবে।”

কবীর ঈষৎ হেসে বলল,

“এতোটা ভুল ধারণা যে তোশা তোমার কাছাকাছি চলে এলে সব বদলে যাবে।ও আমার ফিউচার ওয়াইফ।কোনো বন্ধু নয় যে নতুন কাওকে পেয়ে আমাকে ভুলে যাবে।”

ফিউচার ওয়াইফ দুটো শব্দে কিছু একটা ছিল।মিনহাজ ও প্রতীক দুজনের কপালে কিঞ্চিত রেখার উদয় ঘটলো।

“তাহলে নাটকে অভিনয় করতে দেন।কন্ট্রাক বহাল থাকুক।প্রমাণ হয়ে যাক।”

“তোশা আমার কাছে কোনো খেলনার বস্তু নয় যে আমি তোমার সঙ্গে যুদ্ধে নামবো।সে আমার কাছে সম্মানীয় ও বিশ্বাসযোগ্য।”

“ভয় পাচ্ছেন কবীর শাহ?আমি কিন্তু আপনার মতোন কালো নই।এক ধাপ এগিয়ে আছি।”

প্রতীক ভ্রু দুটো খানিকটা উপর নিচে করলো।সামনে বসে থাকা কালো হীরাকে দ্বিধায় ফেলতে পারলে অর্ধেক কাজ হয়ে যাবে।

“ভয় সেই পায় যার কাছে হারানোর মতোন কিছু থাকে।যে মানুষ আমার সঙ্গে বিন্দু বিন্দুতে জড়িয়ে গিয়েছে সেখানে হারানোর প্রশ্ন আসেনা।আমি জানতে চাচ্ছি না কিছু।আইনী জটিলতা না থাকলে কন্ট্রাকটি বাদ যাবে।একটি নাটকের জন্যই তো।আর যদি ফিরে আসার পথ না থাকে তবে আমি যা বলবো সেভাবে কাজ করতে হবে।”

কবীর উঠে দাঁড়ালো।এমন অসাধারণ বডি স্ট্রাকচার মিনহাজকে বেশ অভিভূত করলো।চল্লিশ বছর বয়সে এমন অনেক নায়ক আছে যারা নিজেকে মেইন্টেইন করতে পারেনা।সেক্ষেত্রে একজন পুরোদস্তুর বিজনেসম্যান হয়ে কবীর নিজের যৌবনকে ধরে রেখেছে যা প্রশংসার দাবিদার।ফিরে যাওয়ার পূর্বে কবীর পুনরায় বলল,

“ভবিষ্যতে যেন আমার নায়িকা বলে সম্বোধন করতে না শুনি প্রতীক।ধূ র্ত তা কিছু মানুষের স্বভাবে জড়িত।আশা করি তুমি এই ভা ই রা স মুক্ত।এবং তোমার মা কে বলবে ভালো পাত্রীর জন্য ঘটকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।এরকম রাস্তাঘাটে যাকে দেখবে তাকে পছন্দ হলে তবে চৌদ্দ শিকের পিছনে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই।”

(***)

“কবীর শাহ ক্ষমা করে দেন।আর কখনো না বলে কিছু করবো না।এই কবীর শাহ,ফোনটা ধরেন।আমি কিন্তু তা নয় বাসায় চলে আসবো।এরপর..কী হলো?এসএমএস গুলোর জবাব দেন তো।”

ফোনটি অনবরত ভাইভ্রেট হচ্ছে।কবীর উজ্জ্বল হতে থাকা স্ক্রীনের পানে তাঁকিয়ে আনমনে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।তোশা নামক মেয়েটি গত দুদিন ধরে অনবরত ফোন, ম্যাসেজ দিয়ে যাচ্ছে।এমনকি আজ অফিস অবধিও চলে এসেছিল।কিন্তু কবীর দেখা করেনি।মিটিং এর বাহানায় দুই ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে পরবর্তীতে বাড়ী চলে যেতে বাধ্য করেছে।তোশার সঙ্গে এরকম করার কারণ খুব সাধারণ।মেয়েটি বড় বেশী বুঝে।যখন কবীর শুনলো অভিনয় করবে ঠিক তখুনি ফোনে অনেকগুলো কড়া কথা শুনিয়েছে।এবং গত দুদিন ধরে কথা বলেনা।এতে যদি মেয়েটা একটু জব্দ,একটু শুধরে যায়।বাচ্চামো করা বন্ধ করে।ঘড়িতে এখন রাত বাজে একটা।কবীর বারান্দায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো।চারিধারে অন্ধকারে ডুবে আছে।তোশা বিশ মিনিট ধরে কোনো ফোন দিচ্ছে না।কবীর ধরে নিলো মেয়েটা ঘুমে।হুট করে নিচে কোনো একটা শব্দ হলো।কবীর ল্যাপটপটা কোল থেকে সরিয়ে রেখে নিচে তাঁকিয়ে দেখতে পেলো কেউ একজন আহনাফকে ধরে গেটের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।ছোটখাটো ছিমছাম শরীরটা চাদরে আবৃত।শীতল হয়ে গেলো কবীরের শরীর।ছেলেটি তার প্রাণ।বড় বড় পা ফেলে কবীর নিচে নামছে। যেটা দূর থেকে দেখলে লাফানো মনে হবে।মাত্র দুই মিনিট পরেই অপরিচিত শরীরটির ঘাড় চেপে ছেলেকে নিজের দিকে টেনে নিলো সে।

“কে তুই?আমার ছেলের সঙ্গে কী তোর?নয়ন,নয়ন।লাইট অন করো এখানের।”

নয়ন কবীরের বাড়ীতে দারোয়ান হিসেবে থাকে।চেয়ারে বসে ঝিমিয়ে নিচ্ছিলো।চকিত হয়ে মুহুর্তেই মনিবের কথায় লাইট টিপে উজ্জ্বল করে দিলো চারিধার।কবীরের হন্তদন্ত হয়ে নিচে নামার শব্দে সকলে জাগ্রত হয়ে গেছে।অপরিচিত মানুষটি হুট করে কাঁপছে।কবীরের নাকে চেনাপরিচিত সুবাস এলো।মাথার কিছু একটা আসতেই শীতল স্রোত বয়ে গেলো শরীর জুড়ে।শক্ত মনটা বারবার বলছে শয়তান মেয়েটা যেন না হয়।কিন্তু ভুল প্রমাণ হলো কবীর।নতমুখী তোশা তার দিকে ঘাড়ে হাত দিয়ে ফিরে দাঁড়ালো।

“এখানে কী করছো দুজনে?এতো রাতে তাও?তোশা এই বাড়ীতে কীভাবে এলে?জবাব দাও।”

কবীরের এতো রাগান্বিত কণ্ঠ কখনো শুনেনি আহনাফ।সে ছোট্ট করে বলল,

“আব্বু।”

“চুপ।বাঁদর দুটো।”

ব্যস বাবার ভয়ে কেঁদে দিলো আহনাফ।এই সেই কান্না নয় বরং চিৎকার করে কান্না।নিজের প্রাণ প্রিয় আইসক্রিমের ছোঁয়ায় কান্নার বেগ আরো বেড়ে গেলো।মুহুর্তেই ফর্সা বাচ্চাটি লাল হয়ে উঠলো।কবীরের রাগ কয়েকশো গুণ বেড়ে গেলো এতে।চিল্লিয়ে বলল,

“তোশা গালের মধ্যে দশ টা চ ড় না খেতে চাইলে এখুনি বলবে এখানে কী করো?কীভাবে এলে?উত্তর মন মতো না হলে বে’তের বাড়ী পরবে পিঠে।”

কবীরের হুমকি শুনে আহনাফকে জড়িয়ে ধরে কেঁপে উঠলো তোশা।মুখ দিয়ে ‘আম্মু’ ডাকটি বের হয়ে এলো।ওদিকে বাড়ীর সকলে উপস্থিত সেখানে।ধরা পড়ে যাওয়া কিংবা ভয় পেয়ে কেঁদে দিলো তোশা।উষ্ণ শ্বাস ফেলে কবীর নিজের কপালে হাত দিলো।এদিকে দুই দস্যু একে অপরের গলা জড়িয়ে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে।দর্শক বাড়ীর সকলে।আড়চোখে নিজ বাবার দিকে তাঁকালো কবীর।যে বড় নির্বিকার হয়ে আছে।মনে মনে কবীর নিজের উদ্দেশ্যেই বলল,

“চল্লিশ বছর বয়সে বাবার কাছে কীনা শেষমেশ প্রেমিকা নিয়ে জবাবদিহি করতে হবে।এর থেকে দস্যুটার উপর রাগ না করা ভালো ছিল বোধহয়।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:৩২
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

” সুশীল সিনিয়র, এতো রাতে অন্যের বাড়ীর সামনে কী?”

পরিচিত নারী কণ্ঠ শুনে থতমত খেয়ে গেলো কল্লোল।গাঢ় অন্ধকারে একবার চারিধারে চোখ বুলিয়ে দেখলো।বড় কালো রঙের গেইট দিয়ে মাথা বের করে আছে বৃষ্টি।কল্লোলের সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময়ে মিষ্টি করে হেসে বলল,

“বাড়ীতে আসেন।চাচ্চু আপনাদের সকলের একুশটা বাজাবে।গাড়ী দারোয়ান ভেতরে নিয়ে আসবে।”

কল্লোল এগিয়ে গিয়ে শুধালো,

“তোশা ধরা পড়লো কীভাবে বৃষ্টি?”

“সেটা ওকে জিজ্ঞেস করুন সুশীল সিনিয়র।”

বৃষ্টির সম্বোধনে বিরক্ত হলো কল্লোল।সে আর মেয়েটি একই মেডিক্যালে পড়াশোনা করছে।সিনিয়র হয়েও কোনোপ্রকার য ন্ত্র ণা কিংবা ফরমাইশ না দেওয়ার দরুণ তাকে সুশীল সিনিয়র বলে ডাকে নতুনরা।যদিও সকলে নয় বৃষ্টি একটু বেশীই।

“কবীর আঙ্কেল রেগে আছে কেন?ও না হয় একটু আহনাফের রাগ ভাঙাতে এসেছিল।”

“দিনে কী আমাদের বাড়ীতে প্রবেশ নিষেধ নাকী?”

“তা নয়।আসলে তোশার সব আবদার পূরণ করি আমি।”

“কেন?”

প্রশ্নের বিনিময়ে মনকাড়া হাসলো কল্লোল।যা বৃষ্টির অন্তকরণের ভেতর প্রবেশ করলো একদম।উষ্ণ শ্বাস ফেলে তাকে ভেতরে নিয়ে গেলো মেয়েটা।সেখানে সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আহনাফ ও তোশা।পাশেই কবীর সর্বোচ্চ কঠিন কণ্ঠে শুধালো,

“কল্লোল তোমার ফুফাতো বোন যদি তোমাকে বাঘের খাঁ চা য় যেতে বলে তাহলে সেটাই করবে তুমি?”

“নাহ তেমন করবো কেন?”

“তাহলে এতো রাতে কেন নিয়ে এসেছো ওকে?রাস্তায় কতো ধরণের মানুষ আছে জানো?রাত প্রায় দেড়টা বাজে।”

“দুঃখিত আঙকেল।ওর সব চাওয়া পূরণ করা হয়।”

“তবুও..।”

হুট করে কবীরের বাবা উঠে দাঁড়ালো।গম্ভীর সুরে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,

“এখন রাত দেড়টা বাজে।কবীর সব কথা সকালে হবে।ওদের বাড়ীতে পাঠানোর দরকার নেই।তাহিয়াকে ফোন করে বলে দাও।আর শুনো কবীর।ফজরের নামাজের সময় তুমি আমার সাথে মসজিদে যাবে।”

“জি আব্বু।”

“বৃষ্টি নিজের রুমে নিয়ে যাও তোশাকে।আর কল্লোলকে গেস্ট রুমে থাকতে দাও।”

সাহেদের ইশারা বুঝে কবীরের মা আহনাফকে বুকে জাপটে ধরে নিজেরর রুমে নিয়ে গেলো।এই বাড়ীর সদস্য সংখ্যা কম।সেই কারণে জটলাও কম হয়েছিল।বৃষ্টির সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব আছে তোশার।এই কারণে মাথা নিচু করে পিছনে হাঁটতে লাগলো।কিন্তু রুমে প্রবেশ করার পূর্বে হাতে টান অনুভব হলো।

“বৃষ্টি তুমি ঘুমাও।তোশার সঙ্গে আমার কথা আছে।”

মিনমিনে সুরে তোশা বলল,

“আমি যাবো না।”

“চ ড় এখনও খাওনি দেখে মুখে মুখে তর্ক করছো।চলো আমার সাথে।”

তোশাকে লম্বা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলো কবীর।বৃষ্টি দীর্ঘ একটা হাই তুলে নিজের বিছানায় চলে গেলো।

“আপনি এমন কেন কবীর শাহ?বৃষ্টি কী ভাববে বলেন তো।”

“দিশা আর বৃষ্টির সঙ্গে কতোটা ভালো সম্পর্ক সেই আইডিয়া তোমার নেই মেয়ে।তুমি যে আমার জন্য এমন করো সেটা বহু আগে থেকে বৃষ্টি জানে।তবে ও সরাসরি আমাকে এসে জিজ্ঞেস করেছিলো।”

“আপনি কী বলেছিলেন?”

“যা সত্য।যদিও তোমাকে আমার সাথে ও একটুও মানেনা।কিন্তু কার্টেসী মেইন্টেইন করছে এই যা।”

মুখটা গোলাকৃতি করে তোশা বলল,

“ও বুঝেছি।কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

“তোমাকে শাস্তি দিতে।”

দোতালা থেকে তিনতলায় উঠে একটি অন্ধকারময় ঘরে প্রবেশ করলো দুজনে।মৃদু আলো জ্বলে উঠলো কক্ষে।সুসজ্জিত ভাবে বইগুলো বিন্যস্ত দেখে তোশা বুঝতে পারলো এটা লাইব্রেরি।ভাবনার সঙ্গে তার হাতেও টান লাগলো।সে লুটিয়ে পড়লো শক্ত দৃঢ় কঠিন বুকটায়।মেয়েটির থুতনি শক্ত করে চেপে ধরে কবীর শুধালো,

“এতো ভুল করছো কয়টার জন্য শাস্তি দিবো বলো?দেখো কালকে বাবা আমাকে কী কী বলে।আমি চাচ্ছি সাধারণভাবে দুজনের সম্পর্ক গড়ে উঠুক।কিন্তু তুমি সেটা চাওনা।কেন?”

“কে বলল চাইনা?এই কারণে তো রাগ কমানোর জন্য এসেছি।আপনিও তো অপ্সরাদের বাসায় গিয়েছিলেন।”

“ধরা পড়েছিলাম এভাবে?তোমরা যে রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করে এলে সেটা রাতে কতোটা ডেঞ্জারেস হয় জানো?”

“জানি তো।ব্যাথা পাচ্ছি।”

“কেন এতোগুলো যন্ত্র ণা দাও আমাকে?বুঝো না কেন?”

কবীর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তোশাকে।অতি নরম এই মেয়েটা তার সব ধরণের চাহিদার সীমা শেষ করে দিচ্ছে।নিশ্চুপে আস্তে করে তোশা বলল,

“কথা না বললে খুব খারাপ লাগে।অভিনয় করবো না তো।রাগ করবেন না আর।”

“সেটা সম্ভব না।কারণ যে কন্ট্রাকে গিয়েছো।ওটা বাদ যাবেনা।”

“আপনার না খুব ক্ষমতা।তাহলে?”

“চেষ্টা তো করলাম।দেখি আরো কয়েকদিন।এজন্য কিছুটা শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম তোমাকে।অথচ কী একটা কাজ করলে।আব্বু ক্লাস নিবে আমার।”

“ভালো হবে।”

“যখন তোমার কথা জিজ্ঞেস করবে তখন কী বলবো?আহনাফের রাগ ভাঙাতে আসবে সেটা মটেও বিশ্বাসযোগ্য না।”

“কবীর শাহ ভয় পাচ্ছে।”

ঈষৎ আলোয় কন্যাটির মুখ দেখে মৃদু হাসলো কবীর।লম্বা আঙুলগুলো আলতো করে গালে বুলিয়ে দিলো।হালকা উষ্ণ পরিবেশও কেঁপে উঠলো তোশা।মেদুর গালে রক্তিম আভা লেপ্টে আস্তে করে শুধালো,

“এখন আমি ট্রু লাভ’স কিসটা পেতে চলেছি তাইনা?”

“মটেও না।যতোপ্রকার দস্যু তস্করের মতোন চিন্তাভাবনা।এখনও খুব ছোট আপনি।ওয়েট।তুমি না পনের মিনিট আগেও কতো কাঁদছিলে।”

“ভয় পেয়েছিলাম।বৃষ্টি কী ভাববে বলুন তো।”

“সমস্যা কী তোমার?কখনো তো লজ্জা পাওনা।আজ এমন করছো কেন?”

তোশা খুব সন্তপর্ণে কবীরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।সে কীভাবে বলবে যে মানুষটার স্পর্শ তাকে মাদক-প্রভাবিত করে দিচ্ছে।চাওয়া পাওয়া প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাচ্ছে।কানের পিঠে চুলগুলো গুঁজে নিয়ে বলল,

“আপনার রুমটা দেখার অনেক ইচ্ছা।সেখানে নিয়ে যাবেন আমাকে?”

“কেউ দেখলে বিষয়টা খারাপ হবে।আমি কথা বলতাম না খারাপ লাগতো তাইনা?”

হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো তোশা।

“খুব খারাপ লাগতো।”

“আর কখনো এমন যোগাযোগ বন্ধ করবো না।ভুলে গিয়েছিলাম আমি তুমি তোশা।যাও এখন রুমে যাও।কাল সকালে কথা হবে।”

কবীর চলে যেতে নিলে তোশা তার টি-শার্টের কোণা ধরে আঁটকে ফেলে বলল,

“যেতে মন চাচ্ছে না।আরেকটু থাকি আপনার সাথে?”

নি:সংকোচ, ভয় বিহীন আবদার।তবে কবীরের মস্তিস্ক সায় দিচ্ছে না।সে যৌবন পুড়ে যাওয়া পুরুষ।তোশার সঙ্গে অন্যরকম অনুভব হয়।

“প্লিজ থাকি না কবীর শাহ।আমরা গল্প করবো।”

“ঠিক আছে।কিন্তু শুধু বিশ মিনিট।”

(***)

ক্ষণবাদে বৃষ্টির রুম পর্যন্ত কবীর তোশাকে এগিয়ে দিয়ে গেলো।সে ফিরে যেতেই রুমের দরজায় আস্তে করে টোকা পড়লেো।তোশা জেগে ছিল দেখে দরজাটি খুলে দিলো।ওপাশে কবীরের বাবা সাহেদ দাঁড়িয়ে আছে।নিজেকে গুছিয়ে তোশা বলল,

“কিছু বলবেন আঙকেল?”

“বের হয়ে এসো।কথা আছে।”

“কী কথা?”

চঞ্চল তোশা তৎক্ষনাৎ বের হয়ে এলো।একটু দূরে সাহেদ গিয়ে থামলো।মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,

“আমার ছেলেকে ভালোবাসো তুমি?ওর সাথে কেমন সম্পর্ক?বিয়ে হয়েছে দুজনের?”

ভয় পেয়ে গেলো তোশা।মৃদু মৃদু ঘাম জমেছে কপালে।কিন্তু সাহস করে জবাব দিলো,

“ভালোবাসা আছে দুজনের।বিয়ে এখনও হয়নি।”

“বেশ।তবে তুমি একটা কারণ দেখাও আমার ছেলের যোগ্য কীনা তুমি।ভেবো না টিপিক্যাল বাবার মতোন কথা বলছি।শুধু আমি জানতে চাই কোন সাহসে আমার একমাত্র নাতি ও ছোট ছেলেকে তোমার হাতে তুলে দিবো?তুমি নিজেই তো মায়ের হাতে ভাত খাও।বাস্তবতা বির্বজিত কিংবা সবসময় ফ্যান্টাসী জগতে ভুগতে থাকা একজন মেয়ে কী আদৌ কবীর শাহ এর মতোন মানুষের যোগ্য?ভালোবাসার কথা বলবেনা।এছাড়া যুক্তি দিয়ে বলো।তোমার সময় দুই মিনিট।”

তোশা নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে সাহেদকে দেখছে।সে খুব করে বলতে চাচ্ছে আমার পড়াশোনা ভালো,বাবা-মায়ের ভালো পরিচয় আছে।কিন্তু এসব কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।আদৌ কী এই গুণগুলো কবীর শাহকে পাওয়ার মতোন যোগ্যতা রাখে অথবা আহনাফের মা হওয়ার?

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে