Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"মিঠা রোদমিঠা রোদ পর্ব-২৪+২৫+২৬

মিঠা রোদ পর্ব-২৪+২৫+২৬

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৪
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমার মিসেস এর নাম্বার।ও খুবই ভ্রমণপিপাসু।এইতো কয়দিন পর নেপাল ঘুরতে যাবে।আপনারও উচিত একবার ভ্যাকেশনে যাওয়া।ভালো সঙ্গ দিতে পারবে আমার মিসেস।”

বাক্যগুলোর সমাপ্তিতে খুব অমায়িক এক হাসি ফুটে উঠলো লোকটির মুখে।জবাবে কবীরও হাসির বিনিময় করে নাম্বারসহ কার্ডটা হাতে নিলো।লোকটি অধরযুগল আরো বিস্তৃত করে বিদায় নিলো।তৎক্ষনাৎ কবীর কার্ডটা পাশের ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেললো।সে এরকম ভ্যাকেশনের অফার বহু পেয়েছে জীবনে।কিছু ভদ্রলোক আছেন যা দারুণভাবে নিজের স্ত্রীকে অন্যের অধীনে ছেড়ে দেন শুধুমাত্র কাজ হাসিলের জন্য।প্রথম প্রথম কবীর এসব বুঝতো না।একবার তো অফার পেয়ে সেটা নিয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে নিজ ভুল বুঝতে পেরে খুব সতর্কতার সঙ্গে বিষয়গুলো সামলে নেয়।

ঘড়িতে এখন দুপুর তিনটে বাজে।লাঞ্চের জন্য বের হতে হবে এখুনি।ল্যাপটপটা বন্ধ করে কবীর উঠতে যাবে তখুনি দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো সিয়া।মুখে গুরুগম্ভীর ভাব এঁটে আছে।কবীর মিষ্টি হেসে শুধালো,

“এখানে হঠাৎ?”

“সরিষার তেলের তেহারি করেছিলাম সকালে।তখন দিয়ে যেতে পারিনি।এখন ঠান্ডাটা নিয়ে এলাম।”

“ব্যাপার না।আমি পিয়নকে ডেকে গরম করিয়ে দিচ্ছি।তুই খেয়েছিস?”

“নাহ তোর সাথে লাঞ্চ করবো ভাবলাম।আহনাফ আজকে স্কুলে যায়নি?একটু আগে ফোন করে আমাকে বাসায় যেতে বলল।”

“না।হালকা জ্বর এসেছে।তাই মা যেতে দেয়নি।কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তুই অন্য কোনো কারণে এসেছিস।”

কবীরের এহেন সোজাসাপটা বাক্যে খানিকটা বিব্রতবোধ করলো সিয়া।ঈষৎ কেঁশে বলল,

“আমার মনে হয় তোশার মাথায় সমস্যা আছে।”

হেসে ফেললো কবীর।চোখকে চশমা থেকে মুক্তি দিয়ে বলল,

“এটা কেন মনে হলো?”

“আমার কাছে আজ এসেছে কিছু রোমান্টিক নভেলের নাম শোনার জন্য।তোকে বুঝাতে নাকী বেশ কাজে লাগবে।তুই বিশ্বাস কর আমি তব্দা খেয়ে গিয়েছিলাম।নাহ সে যদি আমার স্টুডেন্ট না হতো তখন না হয় কথা ছিল।”

“আমারও একসময় মনে হয়েছিল তোশার মানসিক কোনো সমস্যা আছে কীনা।যেমনটা ব্রোকেন ফ্যামিলির সন্তানদের হয়।পরে ভুলটা ভেঙেছে।আমার ক্ষেত্রে মেয়েটা এমন যাকে বলে ব্রেক ছাড়া।”

“বিষয়টি এঞ্জয় করিস তুই?”

“একদম না।আবার এমন বাচ্চামো দেখতে ভালো লাগে।”

পিয়ন এসে গরম করা খাবার দুজনের জন্য প্লেটে দিয়ে গেলো।সিয়া বরাবর ভালো রাঁধুনী।কবীর মুখে দিয়ে দুপাশে মাথা হেলিয়ে বলল,

“ভালো হয়েছে।ওহ একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি।আজ সকালে তোশামণি আমার সাথে কী করেছে জানিস?”

“কী করেছে?দেখা হয়েছিল দুজনের?”

কবীর সম্মতিতে মাথা দুলিয়ে সকালের ঘটনাটি ব্যাখা করলো। পুরো বিষয়টি শুনে ভ্রু কুঁচকে সিয়া শুধালো,

“তুই বলিস না যে জিনের কথাটা বিশ্বাস হয়েছে তোর।”

“এতোটাও বুড়ো হইনি।প্রথমে আমারও খটকা লেগেছিল বিষয়টি।কিন্তু পরবর্তীতে ওর ফোনের লোকেশন দেখে নিশ্চিত হয়েছি যে মেয়েটা মজা করছে।নিজের মাকে ম্যানেজ করেছে কীভাবে ও ভালো জানে।”

“কিছু বলবিনা?”

“করুক।আমি লিটল চেরীকে খুব ভালোমতন চিনি।মেয়েটা সেই যে যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পর থেকে আমাকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে।তাহিয়া মেয়ের ভালোবাসায় অন্ধ।এই কারণে যা বুঝায় তাই বুঝে।যখন আঠার হলো তখন তাহিয়াকে মিথ্যা বলে সাজেক ঘুরতে গিয়েছিল জানিস।এতো সাহস বোকাটার।ফ্রেন্ডের মামা বাড়ীতে গিয়েছে শুনে আমার তো খটকা লাগলো।খোঁজ লাগালে বের হয়ে গেলো যে কল্লোলের সাথে গিয়েছে।তখন আমার হাতে মারাত্মক কাজ জমা।তবুও ছুটলাম সাজেকের উদ্দেশ্যে।চারদিন মেয়েটার পিছন পিছন লুকিয়ে ছিলাম।ভয় ছিল বাচ্চা তো যদি কিছু হয়ে যায়।”

“এতো ভালোবাসিস মেয়েটাকে?”

খাবারের প্লেটে দৃষ্টি রেখে মলিন হাসলো কবীর।এই প্রশ্নের সম্মুখীন জীবনে কয়েকবার হয়েছে সে।তবে জবাব দিতে কখনো কার্পণ্য করেনি।

“ভালোবাসি দেখে তো দূরে আছি।”

“দেখ তুই চাইলে একত্রে থাকা সম্ভব।বয়সটা তো একটা সংখ্যামাত্র।”

“সংখ্যা নয়।এখানে গভীর অনেক কিছু যুক্ত সিয়া।আমার শরীরের চামড়া এখনও টান টান হয়ে আছে দেখে মেয়েটার এতো পছন্দ আমাকে।একটু এদিক সেদিক হোক তখন এই কালোকে পছন্দ হবেনা।তাছাড়া আমি চাইনা তাহিয়ার মনে হোক যে অন্যায় করলাম তার সঙ্গে।”

“মায়ান ভাইয়ের সাথে সব কথা খুলে বলে দেখ একবার।”

“তোশার অভিভাবক হিসেবে মায়ানকে আমি মানিনা সিয়া।বরং প্রিয় বন্ধুর নামে কথাটি বলতে খুব খারাপ লাগছে যে নিজ সন্তান, স্ত্রীর সাথে ভালো কাজ করেনি।যখন দুজনের ডিভোর্স হলো তখন একটিবারও ভাবলো না তাহিয়া সেই মেয়েটা যে কলেজে মাথা নিচু করে যেতো আর আসতো।কথা বলতে গেলে তোতলামো করতো।সম্পর্কের শুরুতে মাত্র আঠার বছর বয়সে বিয়ে করা নিয়ে আমার ঘোর আপত্তি ছিল।এরপর তোশা খুব অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাহিয়ার কাছে এলো।মেয়েটা কিন্তু নিজের কথা ভাবলো না।বিশ বছর বয়সে এক বাচ্চার মা হয়ে গেলো।এতোটা ছোট বয়সে সংসার সামলেছে,বাচ্চাটাকে দেখেছে বিনিময়ে বিচ্ছেদ কপালে জুটলো।মায়ান ছেড়ে দেওয়ার পর ভাবেনি ভাই, বাবার ঘরে কতোটা মূল্যায়ন হবে তাহিয়ার।এদিকে আমি যোগাযোগ করলে এড়িয়ে যেতে লাগলো তাহিয়া।হয়তো ভেতর থেকে মন সায় দিচ্ছিলো না।তখন উল্টো বুদ্ধি বের করে কোম্পানিটা খোলা।এতে যাই হোক সমাজে মূল্যায়ণ আছে তাহিয়ার।আমার প্রতি ও যে খুব কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এটা আমি জানি।সেই মানুষটা কীভাবে আমাকে নিজ মেয়ের ভালোবাসা হিসেবে মেনে নিবে?”

সিয়ার ভেতর থেকে দীর্ঘ এক শ্বাস বের হয়ে এলো।আসলেও অনুভূতিগুলো বড্ড বেহায়া।উচিত ছাড়া অনুচিত মানুষের উপর এসে যায়।

“শুন ভাই যে যার সাথে খুশি থাকে সেটাই মূখ্য বিষয়।আমার মনে হয়না তোকে হারিয়ে তোশা খুব ভালো থাকবে।তাছাড়া তুই নিজেও ভালো থাকতে পারছিস?ভালোবাসা সবসময় ষোল বছরে আসবে এমন নয়।তোর জীবনে না হয় পঁয়ত্রিশে এসেছে।”

“বাদ দে সিয়া।তোশামণিকে দেখে রাখিস।এমনিতে এখন রঙীন দুনিয়াতে পা রেখেছে।”

“দিলাম।তবে তুই যে তোশার সব ব্যাপারে কোনটা ভালো তা নিজে থেকে ঠিক করে দিচ্ছিস ওর জীবনসঙ্গীও কী নিজেই বাছাই করে দিবি?”

“দরকার হলে তাই দিবো।”

সিয়া হাল ছেড়ে দিলো।সে জানে তার ভাই কখনো এই বিষয়টি পারবেনা।মাথা নিচু করে খাবার খাওয়ার চেষ্টায় আছে কবীর।কিন্তু আশ্চর্যভাবে সিয়ার শেষ প্রশ্নটি শোনার পর থেকে খুদাটা শেষ হয়ে গিয়েছে তার।এমনকি শ্বাসটা নিতেও কষ্ট হচ্ছে।

(***)

দুটো বিড়াল তুমুল ঝগড়া লাগিয়েছে।তাদের ম্যাও ম্যাও কণ্ঠে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো তোশা।একে তো রাতে ঘুম হয়নি তার।দ্বিতীয়ত সকাল হতেই ক্লাস করার জন্য ছুটতে হয়েছে।তাহিয়া জানতো না যে সে সকালে বাসায় ছিলনা।বিষয়টা কল্লোল অবশ্য সামলে নিয়েছে পরে।আপাতত মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে বান্ধুবীর বাসায় কয়েকদিন থাকবে তোশা।ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলো।মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,

“অপ্সরা তোর এই টিকু এতো ঝগড়াটে কেন?এসেছি থেকে শুনছি একেকর পর এক মা রা মা রি করেই যাচ্ছে।”

অপ্সরা সবেমাত্র গোসল করে বের হয়েছে।চুলগুলো মুছতে মুছতে জবাব দিলো,

“ও এমনই।এলাকার রাণী।যাই হোক ম্যাডাম এখন উঠেন।যে বাহানায় এসেছেন সেটা কিন্ত শিখতে হবে।”

“ওটা মা কে এমনি বলেছি।”

“লাভ নেই ।আন্টি আম্মুকে ফোন করে বলেছে।এখন সে জিনিসপত্র সাজিয়ে বসে আছে।কখন তুই যাবি এরপর মিষ্টি বানানো শুরু করবে।তবে ভালোই হলো।তুই ময়রা হয়ে যা আর তোর খয়ের শাহ সেগুলো ঝুড়িতে করে নিয়ে বেঁচবে।ভালো ইনকাম হবে।আমরা তিনজন ফ্রিতে খাবো।”

“তোর নাম অপ্সরা হলে কী হবে?তুই মটেও তাদের মতো কথা বলিস না।আমার ঘুম পাচ্ছে রে।”

“লাভ নেই তোশামণি।বাকী দুইজন শুনলাম কাল আমাদের এখানে আসবে।”

“হু শুনেছি।”

“এখন উঠেন।”

তোশা পাহাড় ভাঙার সমান ক্লান্তি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো।ঘুম পাচ্ছে খুব। কিন্তু উপায় নেই কোনো।অপ্সরা তার খুব কাছের বান্ধুবী।ইন্টারে পরিচয় হয়েছিল।এছাড়া আরো দুজন বান্ধুবী আছে।যাদের সে খুব ভালোবাসে।

(***)

রাতেও ঘুমানোর জন্য খুব একটা সুযোগ হয়নি তোশার।রাত দুটোর সময় উঠে সাজতে বসেছে সে।উদ্দেশ্যে কবীর যখন জগিং এর জন্য আসবে তখন তাকে চমকে দেওয়া।মসৃণ, লম্বা চুলগুলোকে পিঠের উপর ছেড়ে দিয়ে আয়নায় আঁচল ঠিক করছে তোশা।আজকে সে সাদা রঙের সিল্কের শাড়ী পরেছে।অপ্সরা ঘুমঘুম চোখে বলল,

“শুন তোশা।আজ তোকে দেখে কবীর শাহ একদম পাগল হয়ে যাবে।”

“অন্য কথা বল।এটা বহু পুরোনো কথা।খুব ঘুম পাচ্ছে রে।”

“আচ্ছা তুই কেন এই জিনের ভয় দেখাবি লোকটাকে।এমনি বয়স চল্লিশ।পরে হার্টঅ্যাটাক করলে সব শে ষ।”

“আমার শাহ এর হার্ট এতো দূর্বল না।কিন্তু ছোট ছিলাম দেখে আমাকে পানি খাইয়ে মাতাল করেছিল।সেই প্রতিশোধ নিতে হবেনা?ভালোবাসা সেটা তো বাকীর খাতায় লেখা আপাতত।এখন চল।এতোক্ষণে চলে এসেছে।”

“দাঁড়া আগে দেখে নেই আব্বু কোথায়।”

অনেকটা সতর্কের সাথে ঘর থেকে বের হয়ে এলো দুটো মেয়ে।বুকের লাব-ডাব শব্দ হচ্ছে তোশার।এমনিতে কোনো সমস্যা নেই।কিন্তু এতো সকালে সাজগোছের জন্য যা অস্বস্থি লাগছে।মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে তারা মাঠে এসে পৌঁছে গেলো।সকালের মিষ্টি বাতাস বইছে।দূরে লুকিয়ে পড়লো অপ্সরা।তোশা একটি গাছের নিচে গিয়ে দাঁড়ালো।তাকে সত্যিই এখন রহস্যময়ী নারী মনে হচ্ছে।

সূর্যের প্রথম রশ্মির সঙ্গে তামাটে পুরুষটির আগমণ হলো।লম্বা লম্বা পা ফেলে কবীর মৃদু ছন্দে দৌড়ে আসছে।তোশার নিশ্বাস আশ্বাস আঁটকে গেলো।কবীর এমন এক ব্যক্তি যার দর্শনে তোশার পরিবেশ এলেমেলো হয়ে যায়।কিন্তু ওইযে সবসময় একটা অবহেলা করে।এতো সৌন্দর্যের বাহার নিয়ে দাঁড়ানো রমণীকে পাশ কাঁটিয়ে চলে গেলো কবীর।তোশার ধ্যান ভাঙলো।একবার রাউন্ড শেষ করে আসলে মিষ্টি হেসে কবীরের সামনে দাঁড়ালো তোশা।

“কী ব্যাপার কবীর শাহ?আমাকে দেখেও না দেখার ভান করছেন।”

গমগমে দৃঢ় কণ্ঠে জবাব দিলো কবীর,

“একটা জিনকে দেখার মতো কিছু নেই।তারা দেখতেও তো ভ য় ং ক র হয়।”

“আমি তো আপনার প্রিয় রমণীর বেশে আছি।যাকে এই রুপে সবসময় স্বপ্নে দেখেন।আজ আপনার সব স্বপ্ন বাস্তব হবে।”

কবীর মনে মনে হাসলো।তোশাকে সে এই রুপে বহুবার কল্পনা করেছে কিন্তু তা লাল রঙের শাড়ীতে।

“আচ্ছা হোক বাস্তব।আমি স্বপ্নে আর কী দেখি বেবী গার্ল।”

তোশা দ্বিধা নিয়ে কবীরের সামনে এসে দাঁড়ালো।পরক্ষণে আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো।বাহুবন্ধন ধীরে ধীরে শক্ত হচ্ছে।মোহাবিষ্ট হয়ে তোশা বলল,

“আপনি রোজ স্বপ্নে দেখেন তোশা নামক ভালো মেয়েটা আপনাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে।”

হেসে উঠলো কবীর।তোশা নামক বাচ্চাটা হয়তো কখনো তার কাছে বড় হবেনা।

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৫
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“আমাকে জড়িয়ে ধরার অধিকার ঠিক কোথা থেকে পেয়েছেন তোশামণি?”

কবীরের মুখ থেকে আপনি ডাকটা নিয়ে বিভোর হলো তোশা।সে সচারাচর জানে মানুষের রাগ উঠলে তবে সে অপর মানুষটিকে আপনি বলে সম্বোধন করে।তার প্রতি কবীরের রাগ তখুনি আসবে যখন সত্যি করে মনে করবে তোশা উপস্থিত আছে।কিন্তু এভাবে এতো সকালে কোনো রমণীকে দেখার আশা না থাকলেও সাক্ষাৎ হওয়াটা তো অপ্রত্যাশিত।এমন বহুজনকে তোশা বোকা বানিয়েছে।পরবর্তীতে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।বহুজন নয় কবীর শাহ একজন।নিষ্ঠুর মানব।

“জিনদের অনুমতি লাগেনা।”

নেহাৎই কবীরকে বাজিয়ে দেখার জন্য কথাটি বলল।এতে অবশ্য ক্ষতি হলো তোশার।তাকে নিজ থেকে সরিয়ে দিলো কবীর।

“বাসায় যাও।নাটক বহু হয়েছে।”

“আমি নাটক করছিনা।”

“বিষয়টা নতুনরুপ পাক আমি চাচ্ছি না তোশা।প্রথমদিন মজা করছো মেনে নিয়েছি।কিন্তু এভাবে শাড়ী পরে আসা বড্ড বেমানান।”

ধরা পড়লেও দমে যাওয়ার পাত্রী নয় তোশা।তাইতো খুব আত্মবিশ্বাসের সুরে বলল,

“আমার অভিনয়কে কতো নাম্বার দিবেন?একশ দুইশ তিনশ তে?এভাবে চলতে থাকলে হলিউড, বলিউড, টলিউড সব কনফার্ম।আমি তো অডিশনও দিচ্ছি।”

বাজপাখির মতোন শি কা রি দৃষ্টিতে মেয়েটিকে দেখছে কবীর।তার অপরিপক্ক ফলটি এখন পূর্ণরুপে পরিপক্ব হয়েছে।এতো সুন্দর সাজটা নষ্ট করে দিতে মন চাইলো কবীরের।সদ্য ঘুম থেকে উঠেছে বিধায় এখন ভ য় ং ক র ইচ্ছা জাগছে কীনা।।মূদু শীতল সমীরণে সে কেঁপে উঠলো। নিজের মন পরিবর্তন করার জন্য হুট করে তোশার গালে আস্তে করে চ ড় মারলো কবীর।

“অভিনেত্রীর অভিনয়ের পারিশ্রমিক।”

হতভম্ব তোশার ত্বকে আ ঘা ত না হলেও চড়ের ভারে সে যেন শ্বাস নিতে ভুলে গেলো।এতোটা নির্দয় কোনো ব্যক্তি হতে পারে?অশ্রুতে টইটম্বুর দুচোখ নিয়ে সে দেখছে কবীরকে।অথচ পুরুষটি আরামসে দৌড়াতে লাগলো।কিছু সময় হতভম্ব থেকে আশেপাশে দেখলো তোশা।অনতিদূরে লোকজন হেঁটে যাচ্ছে।ভারী লজ্জা অনুভব হলো যুবতীর।অথচ আশ্চর্যের বিষয় ভালোবেসে জড়িয়ে ধরার সময় এমন লেগেছিল না।অভিমানে,আত্মগ্লানিতে অপ্সরাদের বাড়ীর উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো তোশা।পরক্ষণে কিছু একটা ভেবে ফিরে এলো।কবীর ততোক্ষণ দৌড়ের কারণে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছে।অকস্মাৎ তার পিঠে ছোট হাতের কয়েকটা ঘু ষি পড়লো।

“মা র লে ন কেন?মা র লে ন কেন?আমি কী করেছিলাম হ্যাঁ?”

“তোশা কী করছো?”

ঘুরে তোশার দুহাত নিজের হাত দাঁড়া আঁকড়ে ধরলো কবীর।দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

“এমনি দিয়েছি।ব্যাথা তো লাগেনি।”

“তাও দিলেন কেন?”

“আমাকে যে দিলে?”

তোশা জবাব না দিয়ে কবীরের মুখ পানে তাঁকিয়ে রইলো।শুভ্র নাকটা চেরী টমেটোর মতোন রক্তিম আভা ছড়াচ্ছে।এইতো চোখে জমা জলরাশি যেকোনো সময় মেদুর গাল গড়িয়ে পড়বে।যুবতী নাক টেনে কবীরের বুকে মাথা ঠেকালো।পুরুষটি ধরে নিয়েছিল হয়তো অভিমান ব্যক্ত করবে।কিন্তু ত্বকে চিকন দাঁতের আভাস পেয়ে থমকে গেলো।ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছে আ ঘা ত টি।শান্তসুরে কবীর বলল,

“তোশামণি আমি ব্যাথা পাচ্ছি।এগুলোতে আমার খারাপ লাগেনা?”

নিশ্চুপ তোশা।ক্ষণবাদে ছেড়ে দিয়ে সিক্ত ঢোক গিললো।গলায় নোনতা স্বাদ পেলো অবশ্য।

“আমি র ক্ত ভুলে খেয়ে ফেলছি কবীর শাহ।পেট খারাপ হবে না তো?”

“অবিশ্বাস্য।এই তোমাকে নিয়ে আমি আজই সাইক্রাটিস্টের কাছে যাচ্ছি।আর দেখি দাঁত দেখি।”

নরম ঠোঁট আঙুলের সাহায্যে উপরে উঠালো কবীর শাহ।তোশার ছে দ ন দাঁতে র ক্ত লেগে আছে।

“তুমি নিশ্চয় ভ্যাম্পায়ার।যাও এখুনি বাসায় যাও।তাহিয়াকে আজকে বিচার দিবো।”

“দেন আমার কী তা?মা র লে ন কীসের জন্য?”

“মজা বুঝো না?শয়তান মেয়ে।যাও এখুনি বাসায় যাও।শরীরে বড় হলে কী হবে?দিনদিন আরো বাচ্চা হয়ে যাচ্ছো।”

তোশা ফিরে যাওয়ার আগে শুধালো,

” র ক্ত খেলে পেট খারাপ হয়না তো?বললেন না যে?আর আপনার উপর অধিকার আছে আমার।হেইট ইউ।হেইট ইউ।হেইট ইউ কবীর শাহ।”

ধুপধাপ পা ফেলে অতি সন্তপর্ণে বাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো তোশা।কবীর নিজের ক্ষ ত স্থান দেখে উষ্ণ শ্বাস ছাড়লো।অন্তত এটা বুঝতে পারলো তোশার আবেগ,অনুভূতি খারাপ লাগার পরিমাণ খুব বেশী।তার সামান্য আ ঘা ত মেনে নিতে পারেনি।

(***)

“মেয়েটির নাম তাইয়ুবা চৌধুরী তোশা।বর্তমানে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে।মা-বাবার ডিভোর্স হয়েছে আরো অনেক বছর আগে।নানার বাড়ীতে থাকে।এমনি খুব ভালো, ভদ্র।আপনার সাথে খুব ভালো মানাবে স্যার।”

“বলছো?”

“অবশ্যই।আপনি চাঁদের মতোন দেখতে।”

নিজের লোকের কাছে প্রশংসা শুনে প্রতিকের মুখের উজ্জ্বলতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে গেলো।শীতাতপ নিয়ন্ত্রণিত কক্ষ হওয়ার পরেও সে ঘেমে উঠেছে।টিস্যু দিয়ে কপালের ঘামটি মুছে বলল,

“অফ স্ক্রীন জুটি কেমন হয় সেটা পরে দেখা যাবে।কিন্তু আপাতত অন স্ক্রীনে দেখি মানুষ কতোটা পছন্দ করে।অভিনয় কেমন?”

“মোটামুটি চলে।”

“তবে পরবর্তী নাটকে তোশাকে নিয়ে নাও।কিন্তু আমি যে অন্যরুপে পছন্দ করেছি সেটা যেন না জানে।”

“কখনো জানবেনা স্যার।আপনার শ্যুটিং শুরু হবে।”

“ওকে।আমি আসছি একটু পর।”

ব্যক্তিটি চলে গেলো প্রতীক ল্যাপটপের স্ক্রীনে পুনরায় তাঁকালো।সেখানে হাসৌজ্জ্বল তোশার একখানা ছবি রয়েছে।যেটা আজ থেকে তিন মাস আগের তোলা।কোনো এক অডিশন হুট করে দিয়েছিল মেয়েটা।তেমন ভালো অভিনয় না করার কারণে আগেই রি জে ক্ট হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু দুই সপ্তাহ আগে তোশার ছবিটা অজান্তে প্রতীকের সামনে চলে আসে।ওইযে প্রথম দেখার প্রেম।সেটা হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে।প্রতীক আনমনে নিজের সঙ্গে বলল,

“দেখা হতে হতে প্রেমটা হয়ে যাবে তোশা চৌধুরী।এখন কবে দেখা হবে সেটাই তো বুঝতে পারছিনা।”

(***)

“আহারে তোশা।তোমার কবীর শাহ একটু বেশীই অভিজ্ঞ।তাকে বোকা বানানো এতো সহজ হবেনা মনে হয়।আর ছোট্ট করে চ ড় টা দিয়েছে।দূর থেকে আমি দেখেছি।এমন তো কতো টিকুকে দেই আমি।এতো কাঁদার কী হলো?”

“বুঝবি না তুই।আমার কষ্ট হচ্ছে।কবীর শাহ একটুও ভালোবাসে না।”

“সেটা তো আমরা সকলে জানি।নতুন কিছু বল।”

তোশা সকাল থেকে কেঁদে যাচ্ছে।তার ভাষ্যমতে এতো সেজে যাওয়ার পরেও মজা করেও কীভাবে কবীর চ ড় টা দিলো?মায়া হলো না?অপ্সরা এতো বোঝানোর পরেও মানছেনা।তোশার যে আবেগ বেশী সেটা সে জানে।

“কান্না থামাবি তুই তোশা?”

“উহু,কবীর শাহ যতোক্ষণ অবধি না বলবে আমার সঙ্গ না দিবে ততোক্ষণ অবধি থামবেনা।”

“এটা কখনো হওয়ার নয় তুই জানিস।”

“তাহলে থামাবো না।”

“অসুস্থ হয়ে পড়বি তো।”

“তুই তাকে কল করে বল তোশা খুব কাঁদছে।”

হকচকিয়ে অপ্সরা জবাব দিলো,

“অসম্ভব।”

“না তুই ও আমাকে ভালোবাসিস না।”

অপ্সরা আরো কিছুসময় মেয়েটির কান্না দেখলো।পরবর্তীতে সহ্য করতে না পেরে তোশার ফোন দিয়ে কবীরকে কল করলো।পুরুষটি যতো সীম চেঞ্জ করুক না কেন?তোশা প্রত্যেকবার নাম্বার ম্যানেজ করে নিতো।দীর্ঘ চার মিনিট কথা বলার পর অপ্সরা বিরস মুখে বলল,

“তোর কবীর শাহ আসছে।রেডী থাকতে বলেছে।”

তোশার মুখে যেন মিঠা রোদের আভাস দেখা গেলো।সে এতো কান্নার মধ্যে হাই তুলে বলল,

“যাক অভিনয় কাজে লাগলো।তুই ও বুঝতে পারলি না যে আমি নাটক করছিলাম।হুহ আমার অভিনয়ের পারিশ্রমিক কীনা চ ড়?আজকে সারাদিন নাকানিচুবানি খাওয়াবো।হ্যাঁ রে আসতে কতোক্ষণ?”

অপ্সরা বারংবার চোখের পলক ফেললো।সে বুঝোছিল তোশা কার্যসিদ্ধির জন্য এমন করছে।পরক্ষণে মেয়েটির চোখের পানি দেখে মায়া হয়েছিল।দীর্ঘ এক শ্বাস ফেলে অপ্সরা বলল,

“কবীর শাহ লোকটা তোর এসব নাটক বুঝেও কেন যে কিছু বলেনা।আমি হলে সোজা কাজী অফিসে নিয়ে যেতাম।অন্তত মানসিক শান্তি তো থাকতো।”

চলবে।

#মিঠা_রোদ
#পর্ব:২৬
#লেখা:সামিয়া_খান_প্রিয়া

“না আমি আপনার প্রাক্তন।না আপনার বর্তমান।তবে কেন প্রত্যেক দিন ঘন্টায় ঘন্টায় নিজের হয়ে জবাবদিহিতা করার জন্য ফোন করেন আমাকে?”

আসিফ মৃদু হাসলো।ক্লান্ত হয়ে থাকা শরীরটা চেয়ারে এলিয়ে দিলো,

“একজন সচেতন মন্ত্রী হওয়ার দরুণ দেশের নাগরিকের খোঁজ খবর নেওয়া কর্তব্য।তাছাড়া তোমাকে বোঝানোর জন্য চারটে বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি তাহিয়া।এতোদিনে তো পাহাড় কেঁটে পাথরও তৈরী করা যায়।”

“হায়া হীন কথাবার্তা।আপনার বয়স নিশ্চয় তোশামণির মতো নয়?”

“তা অবশ্য নয়।মেয়ে কোথায়?”

“বান্ধুবীর বাড়ীতে গিয়েছে।”

“তাদের চিনো?”

“হ্যাঁ।”

ক্ষণকাল দুজনে মৌন থাকলো।আসিফ যে ক্লান্ত তা খুব ভালোমতন উপলব্ধি হচ্ছে তাহিয়ার।কিন্তু একটা অদৃশ্য পর্দার আড়ালে রয়ে গিয়েছে তারা।

“ঘর পো ড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় প্রবাদের অনুসারী তুমি তাহিয়া।অথচ দেখো মায়ানকে কিন্তু এতোদিন সময় দাও নি।চট করে বিয়ে করে নিয়েছিলে।সেই তো সংসারটা টিকলো না।কী লাভ হলো?অথচ আমি অভাবী অনাহারে থেকে গেলাম।”

“আমি নিশ্চয় কোনো খাদ্য বস্তু নই।যাই হোক মায়ানের কথা না উঠানো ভালো।”

“কেন নয়?জানো গতকাল মায়ানের সঙ্গে ফোনে কথা হলো।স্ত্রী,সন্তান নিয়ে প্যারিসে বেড়াতে গিয়েছে।আইফেল টাওয়ারের সামনে ফটোও তুলেছে।দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে।ইয়াং লাগছে।স্ত্রী ও সুন্দর।আসলে কী সব গরু জীবনে ভালো থাকে।কিন্তু কিছু ছোটখাটো গরু আছে যারা ভালো থাকতে ভয় পায়।”

থমথমে কণ্ঠে তাহিয়া জবাব দিলো,

“অপমান করার হলে সরাসরি করুন।এভাবে গরু বলবেন না।আমি চল্লিশ বছর বয়সী একজন নারী।কোনো টিনেজার নই।”

“সেটাই আমার মন্দ ভাগ্য।তবে টিনেজারের থেকে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছি।ঠিক এই বয়সে ভাবা যায়?”

“আসলেও যায়না।অল্প বয়সী মেয়েদের এমনিতেও মাথা খারাপ থেকে।নিজের থেকে এতো বছর বেশী কাওকে কীভাবে যে পছন্দ করে বুঝে আসেনা।এমন মেয়েদের দেখতে পারি না আমি।”

নিশ্চুপ হয়ে গেলো আসিফ।কবীর ও তোশার মুখটা ভেসে উঠলো।সামনে ঝড়,টর্নেডো সব আসছে।এই কারণে সময় থাকতে তাহিয়াকে নিজের দিকে টেনে নিতে চায়।অথচ মানুষটা বুঝেও না।ওপাশের মানুষটা নিশ্চুপ দেখে তাহিয়া ডাকলো,

“আসিফ ভাই।”

“হু বলো।”

“খেয়ে নেন।আমি রাখছি।আর এতোবার ফোন করবেন না।”

আসিফ আচ্ছা বলে ধণাত্মক প্রতিক্রিয়া জানালো।তাহিয়া নিষেধ করার পরেও রাতে আরেকবার ফোন করবে বলে সিদ্ধান্ত নিলো।এখন সে ভেতরে ভেতরে আসন্ন সময় নিয়ে চিন্তিত।

(***)

কবীরকে দেখে দৌড়ে তার কাছে গেলো টিকু।লোমশ তুলতুলে দেহটি দিয়ে পুরুষটির গায়ে এসে পড়ছে।মিষ্টি হেসে টিকুকে কোলে তুলে নিলো।বিড়ালটির সঙ্গে টুকটাক কথা বলার মাঝে তোশা সেখানে উপস্থিত হলো।গাঢ় দৃষ্টিতে মেয়েটিকে একবার অবলোকন করে গাড়ীতে গিয়ে বসলো।তোশা কিন্তু এমন অবহেলায় বিন্দুমাত্র দমে গেলো না।বরং মলিন মুখে গাড়ীতে উঠে বসলো।

“আমরা কোথায় যাবো তোশা?”

“মণি বললেন না যে।রাগ করে আছেন?”

“কোথায় যাবে সেটা বলো।কান্না করে মুখের অবস্থা করুণ কেন করেছো?কী এমন করেছিলাম আমি?”

“পাগলের ডাক্তারের কাছে যাবো।নিয়ে যাবেন?”

“সম্ভব না।কারণ আমি জানি তুমি সুস্থ।মিছে মিছে শুধু চিন্তা করে লাভ নেই।”

“রাগলে আপনাকে ভীষণ সুন্দর দেখা যায় কবীর শাহ।”

কথাটার বিপরীতে কবীর সৌন্দর্যের দুই চারটে বাক্য বলতে পারতো।কিন্তু ওইযে মাঝেমধ্যে মনের ভাবনাকে দমিয়ে রাখতে হয়।তা নয় ভীষণ বিপদ হয়ে যায়।

“আমি সুন্দর সেটা বহু পুরোনো কথা কমলা সুন্দরী।আমরা এখন গাজীপুর যাচ্ছি।”

“ওইযে আপনার সেই বাসায়?যেখানে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল?”

“হ্যাঁ।”

তোশা উচ্ছাসিত হয়ে হাত তালি দিয়ে উঠলো।অভিনয় দ্বারা মাঝেমধ্যে দারুণ কিছু পাওয়া যায়।না সে তার এই প্রতিভাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

গাজীপুর পৌঁছাতে তাদের তিন ঘন্টার মতো সময় লাগলো।এই সময় পুরোটা দুজন মানুষ নিশ্চুপ ছিল।যেন নীরবে বোঝাপড়া চলছে।তোশা অবশ্য পাশে বসে থাকা মানুষটিকে বুঝতে পারছেনা।রেগে যে আছে তা স্পষ্টত।আচ্ছা রাগ দেখাবে কীভাবে? মা র বে না সেটা তোশা জানে।আবার মনে পড়ে গেলো।একবার চুল মুঠোয় ভরে ব্যাথা দিয়েছিল।

“বাড়ীটা অনেকদিন ধরে বন্ধ ছিল।দেখেশুনে ঢুকবে।”

“এইযে আমাকে নিয়ে নির্জনে এলেন ভয় লাগছে না কবীর শাহ?”

ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে উঠলো কবীরের।প্রশ্নটি কী তার শুধানো উচিচ ছিল না?গম্ভীর সুরে বলল,

“আমার ভয় কেন লাগবে?”

“আমি লাবণ্যময়ী রম্ভা।খুব বেশী দূরে থাকা দুষ্কর।অবশ্য আপনি তো মানুষ নয়।মহাপুরুষ।”

“সোফায় গিয়ে বসো।আমি মূলত তোমাকে এখানে কিছু কথা বলতে ডেকেছি।যদিও এসব বলতে বলতে আমার শক্তি প্রায় শেষ হয়ে আসছে।”

“তো কেন বলতে যান সবসময়?কেন মেনে নিতে পারেন না?আজ যদি আমার জায়গায় কোনো নিপিড়ীত নারী থাকতো তবে মহৎ হওয়ার জন্য এক চান্সে রাজী হয়ে যেতেন।চিনি তো পুরুষদের।”

তোশার কণ্ঠ বেশ উচ্চ শোনা গেলো।কবীরের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় জমতে থাকা রাগ এবার আরো বড় হয়ে বের হয়ে এলো।

“চিল্লিয়ে কথা বলবেনা।বেয়াদব মেয়ে।তাহিয়া যদি সময় থাকতে শাসন করতো তবে আজ এমন পরিস্থিতি কখনো আসতো না।”

“করেনি শাসন।করবেও না।বরং আমি ভালোবাসার জিনিস।”

“চুপ ইডিয়ট।সোফায় গিয়ে বসো।খুব রাগ লাগছে আমার কিন্তু।”

তোশা নিশ্চুপে সোফাতে গিয়ে বসলো।মনে মনে সে ভীষণ বিমর্ষ হয়ে উঠলো।ভেবেছিল অতীতের মতোন আজ কিছু সময় অতিবাহিত করবে তারা।কিন্তু সেসব তো কিছু হচ্ছে না।বরং মন খারাপের বাক্সের ভার বেড়ে যাচ্ছে।কবীর নিজেকে শান্ত করার দরুণ পায়চারি করছে।গলায় সুন্দর করে লেগে থাকা টাইয়ের বাঁধন ঢিলা করে দিলো।তাকে দেখতে ছোটখাটো আগুনের গো লা লাগছে।তোশার মনে পড়ে গেলো সংগীত শিল্পী মমতাজের সেই বিখ্যাত গানের লাইনটি।’পোলা তো নয় যেন আগুনের গোলা’।কিন্তু আফসোস সেটা যদি এখন গায় তো কবীর তার হাতের ব্যায়াম তোশার গালে করতে পারে।মিনমিন কণ্ঠে যুবতী শুধালো,

“আমার খুদা লাগছে।শুনেনা ফুড পান্ডায় অর্ডার দেই।”

“সিরিয়াস একটি পরিবেশ তোশা।কীভাবে মজা করো?”

“তাহলে দেন আপনাকে খেয়ে ফেলি।”

“তুমি আমাকে বলো না যে খেয়ে ফেলার ভয়ংকর অর্থটি তোমার জানা নেই।”

কবীর এগিয়ে এসে তোশার সামনে বসলো।হাতের আজলায় ছোট্ট তুলতুলে মুখটা তুলে বলল,

“কেন এমন করো সবসময়?আমার সাথে তোমার যায় বলো?বুড়োতে কী মজা পেয়েছো তাই বলো?”

“ভালোবাসা চিনেন কবীর শাহ?”

“চিনিনা এবং চিনতেও চাইনা।শুধু আমার জীবন থেকে সরে যাও।চারটে বছর তো দূরে ছিলে।আবার কেন সব এলেমেলো করছো?”

অধর দ ং শ ন করে তোশা।অশ্রুপূর্ণ দৃষ্টি মেলে তামাটে পুরুষটিকে দেখছে।পোড়াখাওয়া কপালের ঘামগুলো হাত দ্বারা মুছে দিলো।

“আপনি চান আজীবন প্রথম চাওয়া পাওয়া কিংবা ভালোবাসা ছাড়া বেঁচে থাকি আমি?”

“প্রথম কিংবা শেষ প্রেম বলে কিছু হয়না তোশামণি।তুমি ভুল।ওয়াদা করো আমাকে আজকের পর সব ভুলে যাবে।যেমন এই কয়দিন চললো।”

“সম্ভব না।”

“আমার বয়স বেশী।দুদিন পর চামড়া ঢিলা হওয়া শুরু করবে।মজা নাও আমার সাথে?এসব ভালোবাসা তোমার মতো সুন্দরী মেয়ের কাছ থেকে পাওয়া আমার জন্য উপহাস বৈ কি কিছু নয়।আজ জিম করা,নিয়ন্ত্রিত খাদ্যভাস পাল্টে দিলে চলে যাবে সব।ধরো সম্পর্ক হতো।তোমার আশেপাশে আমাকে তুমি ঠিক দশ বছর পর সহ্য করতে পারবে?আমার স্পর্শ পারবে মেনে নিতে?”

তোশা জবাব না দিয়ে কাঁপা কাঁপা অধরযুগল তামাটে কপালে ঠেকালো।কবীর তৎক্ষনাৎ ছিটকে দূরে সরে গেলো।যেন এই মুহুর্তে কয়েক হাজার ভোল্টেজ তার শরীর দিয়ে বয়ে গেলো।

“এটা কী করলে তোশা?”

“আপনাকে দেখে লোভ সামলাতে পারিনি।ভীষণ আদুরে আপনি।কথা বলেন সুন্দর করে।যেন হাজার বছরের পুরনো কাব্য।কবীর শাহ আপনাকে নিয়ে বলতে গেলে দেখা যাচ্ছে আমার সময় শেষ যাবে।কিন্তু অনুভূতি মিটবেনা।”

চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ