#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব২৪
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” মা বাবুকে দেখবে না?”
জুঁইয়ের আকষ্মিক প্রশ্নে আনানের মুখ কালো হয়ে যায়।ধরা গলায় বলে,,,
” দেখানোটা কি খুব জরুরি?”
” কেন নয়?তিনি তার নাতনিকে দেখবেন না?ভিডিও কল দাও তুমি।”
অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মিসেস লাকীকে ভিডিও কল দেয় আনান।বহু বছর পর ছেলের নাম্বার থেকে কল আসায় মিসেস লাকী কিছুটা অবাক হন।রিসিভ করে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দেয়।আনান কৃত্রিম হাসি দিয়ে বলে,,
” আমাদের মেয়ে হয়েছে।দেখাই তোমায় দাঁড়াও।”
” আমাদের আমাদের করছিস কেন?ঐ বাচ্চা তোর নাকি?পরের বাচ্চাকে নিয়ে এত আলগা দরদ দেখাতে হবে কেন?”
মিসেস লাকী বলেন।আনান আগে থেকেই আন্দাজ করে রেখেছিলো।তাই ফোন ব্লুটুথ ইয়ারফোনের সাথে সংযুক্ত করে রেখেছিলো। তাই জুঁই কিছু শুনতে পায় নি।আনান ফোনটা নিয়ে বাইরে যায়।
” তুমি কি কখনো মানুষ হবে না?”
” তুই আমায় পেটে ধরেছিস না আমি তোকে পেটে ধরেছি?”
” গর্ভে ধারণ করেছো বলে যে তোমার ভুল দোষ অপরাধ থাকবে না এমন না!আমার সমস্যা নেই তোমার সমস্যা হচ্ছে কেন?তুমিও তো আহানের বাবাকে বিয়ে করেছিলে। আহানের বাবাকে আমি বাবা হিসেবে না মানলেও তিনি আমায় যথেষ্ট স্নেহ করেন।জুঁইও তোমার মতো পরিস্থিতির শিকার। একটা মেয়ে হয়ে কেন আরেকটা মেয়ের অবস্থান বুঝতে চাইছো না?”
মিসেস লাকী কিছু বলেন না।কল কেটে দেন।
____★
” কয়েকদিন আগে বিল গেটসের বউ তাকে ডিভোর্স দিলো এখন জাস্টিন ট্রুডোর বউ।এত টাকা পয়সা ক্ষমতা দিয়ে কী লাভ যদি বউ ইই না থাকে।অবশ্য বেডি মানুষ নিজেও জানে না তারা কিসে আটকায়।”
নিউজফিড স্ক্রোল করতে করতে তাচ্ছিল্যের সুরে কথাটা বলে আহান।শালিক তখন রাতের খাবার রান্না করছে।রান্নাঘর থেকে আহানের সব কথা শুনে ফেলে শালিক।
” তুমি নিজে মাথা খাটায় ডাক্তারি পড়েছো তো?”
” অবশ্যই। তাই চুল পেকে গেছে।”
” আমার মনে হয় না।”
” কেন?”
উঠে গিয়ে শালিকের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় আহান।শালিক তরকারির ঝোল হাতের তালুতে নিয়ে চেখে বলে,,,
” না হলে ওই কথা বললে কেন যে বেডি মানুষ কিসে আটকায় তারা নিজেও জানে না।বেডা মানুষের খুলির ভিতর শুধুই হাওয়া।”
” তুমি জানো বেডি মানুষ কিসে আটকায়?”
” হু জানি তো।নারী টাকায়ও আটকায় না,নারী ক্ষমতায়ও আটকায় না।
নারী আটকায় মায়া,ভালোবাসা,বিশ্বাস,যত্নে।
ব্যাক্তিগত নারীকে সময় দিন,দেখবেন নারী আটকে গেছে।”
” তারমানে আমি তোমায় সময় দিই না?”
” দাও।তবে অল্প।বিয়ের আগে অনেক সময় দিতে কেয়ার নিতে।”
” আচ্ছা!”
আহান শালিককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।কাঁধে আলতো করে থুতনী ঠেকায় আহান।শালিক মোচড় দিয়ে হেসে ওঠে।
” কাতুকুতু লাগছে।”
” লাগুক আজকে আর ছাড়বো না।আমায় নিয়ে এত অভিযোগ।”
” অভিযোগ করেছি ভাগ্য ভালো।অভিমান করে দূরে সরে যাই নি।”
” যা না করেছে কে?”
” আটকে রাখলে যাবো কিভাবে?”
” আমি আবার তোকে কিভাবে আটকে রাখলাম?”
” এইযে বিয়ের পরে বাইরে দাওয়াত ছাড়া কখনো আমায় নিজ হাতে খেতে দাও নি।সব সময় খাইয়ে দাও।পিরিয়ডের দিন গুলোতে হট ওয়াটার ব্যাগে পানি ভরে দাও,চকলেট এনে দাও।চুলে তেল দিয়ে দাও।রাতে ঘুম না আসলে মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।এগুলোর জন্যই তো আটকে গেছি।”
______★
আনশি এখন বড় হয়েছে।বসা শিখেছে।মাঝে মাঝে আবু আবু বলে আনানকে ডাক দেয়।বদলি হয়ে সিরাজগঞ্জ আসার কয়েকদিন পরেই জুঁইকে আনান নিয়ে আসে।থানার ইই কোয়ার্টারে থাকছে দু’জন।পুতুলের সংসার পেতেছে।আনানের অবসর কাটে জুঁই আনশিকে নিয়ে।যতটুকু সময় পায় পুরোটুকুই জুঁই আনশিকে দেওয়ার চেষ্টা করে সে।
কোয়ার্টারের বাসাটাকে জুঁই নিজের মতো করে সাজিয়েছে।বারান্দা,বাড়ির সম্মুখমুখে,ছাদে সবুজের সমারোহ হয়েছে জুঁইয়ের বদৌলতেই।পুরাতন জীর্ণশীর্ণ দেয়ালগুলো রঙ তুলির ছোয়ায় পেয়েছে নতুন রূপ। দিব্যি চলছে জীবন তবে আকাশের কথা মনে পরলে মনটা হোঁচট খেয়ে থেমে যায়।আনশিকে দেখতে পারলো না আকাশ।আকাশ চলে যাবার পর জুঁই ভেবেছিলো তার অনাগত সন্তান হয়তো তার মতোই কপাল পোড়া।বাবার আদর পাবে না।আনশির জন্যই হয়তো বিধাতা আনানকে এনেছে।যেভাবে আনান আনশিকে সময় দেয়!
সকালে আনান ইউনিফর্ম পরে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো।আয়নার প্রতিবিম্বে আনান খেয়াল করে জুঁই তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধ চাহনি নিয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।আনান মৃদু হাসে।
” কী দেখছো?”
” আমার বুড়ো বরকে।”
আনান আবারও হাসে।জুঁই আর আনশির কপালে চুমু দিয়ে বেরিয়ে যায়।
_____★
পূর্ণিমা রাত। লোডশেডিং চলছে।তীব্র গরমে প্রিয়তমাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে আহান।শালিক আহানের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আর নিজেদের অনাগত সন্তানকে নিয়ে না পরিকল্পনা করছে।
” মেয়ে হলে তো আনশির নামের সাথে মিলিয়ে ওর বোনের নাম রাখবো আনশিরা। আর যদি ছেলে হয় তাহলে নাম কি রাখবো?”
” আগে বাচ্চাটাকে সুস্থ ভাবে আনো তারপর দেখা যাবে নি।যে লাফালাফি করো এই শরীর নিয়ে!”
” করি যাতে আমার বাচ্চা আমার মতো এক্টিভ হয়।”
” তুই এক্টিভ?আলসের ডিব্বা।আলসেমির জন্য তো তুই টয়লেটেও যেতি না একসময়।পরে পেট ব্যাথা পেট ব্যাথা বলে কি কান্না কাটি!”
” আউ।”
উঠে বসে শালিক।আহান আতঙ্কিত হয়ে যায়।
” কি হলো?”
” পেট ব্যথা!”
” কই ব্যাথা?”
” লাথি মা র লো।ব্যাথা লাগছে আবার ভালোও লাগছে।”
মৃদু হাসে শালিক।এই বুঝি মাতৃত্বের স্বাদ।গর্ভস্থ সন্তান লাথি দি লে, হাত পা লম্বা করলে পেটের ভিতর অনুভুত ব্যথার মধ্যেও মা সুখ খুঁজে পায়।এই ভেবে যে তার গর্ভস্থ সন্তান সুস্থ আছে।ভালো আছে।
” আমার বাচ্চা এখনই মায়ের মতো হতে শুরু করেছে।”
” মায়ের মতো ভালো না দুষ্টু?”
আহান প্রশ্ন করে।শালিক বড় বড় চোখ নিয়ে আহানের দিকে তাকায়।অবাক কন্ঠে বলে,,,
” ভালো?”
” হু।ওর মা ভালো না?”
” না একদম ইই না।আমি টাকা উড়াই,সারাদিন শুয়ে বসে থাকি,ফোন চালাই প্রচুর,পড়াশোনায় ফাঁকি মারি, PNPC করি,খাওয়াদাওয়া নিয়ে ঝামেলা করি,মানুষের সাথে মিশি না।মিশলেও বলে অহংকার দেখাই,কথা বলার সময় ম্যাচিউরিটি দেখাই,রাগ করি,নিজের ওপর নিজেই রাগ জিদ খাটাই।”
আহান হাসে।হাসতে হাসতে বলে,,,
” এতগুলো দোষ তোর?কই আমি তো পেলাম না।আমি শুধু পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি,ফোন চালানো আর PNPC টাই দেখি।তাও আমার কাছেই করিস মানুষের PNPC। ”
” টাকা যে উড়াই সেটা তো বললে না।”
” হাত খরচের টাকা থেকে সেভিং করে নিজের শখ পূরণ করাটাকে সেল্ফলাভ বলে টাকা উড়ানো না।এইটা একটা ভালো গুণ যেটা সবার মধ্যে থাকে না।”
” আমি হচ্ছি পর্যায় সারণির দ্বিতীয় চৌদ্দ নাম্বার গ্রুপের মৌল।কারও কাছে কয়লা কারও কাছে হীরা।”
” মাঝে মাঝে বড্ড শক্ত কথা বলিস।এগুলো তোকে মানায় না।তোর সরলতা শিশুসুলভ আচরণই আমায় শান্তি দেয়।”
” সেই কখন কারেন্ট এসেছে।এখনো ঘুমাচ্ছো না।সকালে হসপিটালে যেতে হবে না?”
” তুই ঘুমাবি না?”
” মন মতো শু তেই পাই না আর ঘুম।তুমি ঘুমাও।আমি একটু হাঁটাহাঁটি করি।”
” কত কষ্ট করছিস!”
” কষ্ট ছাড়া জীবন অর্থহীন।আর মা হতে গেলে কষ্ট করতেই হবে।না হলে পুর্ণাঙ্গ ভাবে মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া যায় না।এখন আমি করছি।বাবু আসলে তুমিও করবে কষ্ট।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ