#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পর্ব২৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
আহান শালিক বধূবরণের প্রস্তুতি নিতে আগে ভাগেই বাসায় চলে আসে।মিসেস লাকীর যদিও কোনো ইচ্ছা নেই জুঁইকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেওয়ার তাও পরিস্থিতির চাপে পরে নিতে হয়।শালিক নিজের হাতে সব কিছু গুছায়।আহান সাথে সাহায্য করে।শালিক ফুলের পাপড়ি ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,,
” দেখেন শ্বাশুমা,আমি আপনার ভাইঝি।তাই আমার সাথে যা খুশি তাই করেছেন আমি তেমন কিছু বলিনি।জুঁই আপু প্রেগন্যান্ট সাথে মা হারা মেয়ে।একটু আপন করে নিয়েন।তাতে দেখবেন সবার ইই ভালো।”
” তুই আমার বড় না আমি তোর বড়।”
মিসেস লাকী বিরক্ত নিয়ে বলে।শালিক মৃদু হেসে বলে,,
” অবশ্যই আপনি বড়।তাই বলে যে অন্যায় করবেন তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।নেহাৎ ইই আপনি আমার ফুপি আগে তারপর শ্বাশুড়ি।তাই কিছু বলি নি।না হলে….”
শালিক থেমে যায়।মিসেস লাকী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে বলে,,
” না হলে কি?”
” বয়স তো কম হলো না। কিছু কথা বুঝে নাও।তুমি আর শালিক কিন্তু একই ঘরের মেয়ে আম্মু।দাদির সাথে কেমন করতে মনে করে দেখো।”
সিরামিকের পিরিচে মিষ্টি রাখতে রাখতে বলে আহান।মিসেস লাকী ভেংচি কেটে ভেজা ঢোক গিলেন।
_____★
জুঁইকে নামমাত্র তুলে আনা হয়।পরে আবার আনান জুঁইকে নীল আর অদ্রির হাতে তুলে দেয়। নিজ বাড়িতে মা বোনের কারণে জুঁই,জুঁইয়ের বাচ্চাকে নিয়ে আনানের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়।আনানের পোস্টিং দূরে হওয়ায় লং জার্নির জন্য আনান জুঁইকে সেখানে নেয় না।এমনিতেই জুঁই অসুস্থ তার ওপর লং জার্নি করা ওর, বাচ্চার জন্য ভালো হবে না।তারমধ্যে আয়রন স্যালাইন নেওয়ার কারণে ওর শরীর প্রায়ই দূর্বল থাকে।
আনান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাছে কোথাও বদলি হয়ে আসবে।ততদিনে জুঁই নীল আর অদ্রির কাছেই থাক।সেখানে জুঁইয়ের যত্নের কোনো কমতি হবে না।
____★
” তাড়াতাড়ি উঠো।”
শালিকের এমন হুলুস্থুল কথায় আহান লাফ দিয়ে উঠে।ঘুম ঘুম চোখ দুটো ডলতে ডলতে বলে,,,
” কি হলো?”
” আগে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে এসো।না হলে ভাববে ইয়ার্কি করছি।”
” তুমি তো সব সময় ওইটাই করো।”
আহান উঠে ওয়াশরুমের দিকে যায়।মিনিট পাঁচেক পর তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়।বিছানায় শালিকের পাশে ধপ করে বসে বলে,,,
” এবার বলো।”
শালিক লাজুক হাসে।দুই হাত দিয়ে নিজের লাজুক মুখশ্রী সে আড়াল করে ফেলে।
” ড্রামা কুইন একটাকে বিয়ে করছি!এত ড্রামা পারে!”
শালিক অভিমান করে আহানের এ হেন কথায়।কন্ঠে তীব্র অভিমান নিয়ে বলে,,
” গুড নিউজ শোনা লাগবে না।ঘুমাও গে আবার।”
” এখন আবার অভিমান করে!”
” শোনো অভিমানী হওয়াটাই মেয়েদের ধর্ম। সৃষ্টিকর্তা নিজেই তাদের অভিমানী রূপে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ঢং করবে, ন্যাকামি করবে,চিল্লাবে, অযথা রাগ করবে, সামান্য কথায় চোখে জল চলে আসবে, হুটহাট অভিমানে গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে।
রাগে ফুলে যাওয়া নাক, দিঘির মতো জলে টইটম্বুর চোখ, লাজে লাল হয়ে যাওয়া গাল, মোহনীয় দৃশ্য সামলে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারলেই তুমি প্রকৃত পুরুষ। না হলে ভ্যাগাবন্ড।”
” ইদানীং বড় বড় শক্ত শক্ত কথা বলছো অনেক।”
” বলবো না?বড় হয়েছি।”
” শরীরে!ভিত্রে বাচ্চাই রয়ে গেছো।”
” গুড নিউজ দিতে ঘুম থেকে তুললাম।তা না ভদ্রলোক ঝগড়া করছে।”
অভিমান আর বিরক্তি নিয়ে বলে শালিক।এতক্ষণ আহান শব্দটা খেয়াল করে নি।শালিকের মুখে গুড নিউজ কথাটা শোনা মাত্রই আহানের কৌতুহল বেড়ে যায়।কি গুড নিউজ?এলাকায় শালিকের কুত্তা স্কোয়াডে আরও একটা কুকুর এসেছে কি?মেয়েটার কাছে তো এগুলোই গুড নিউজ হয়।আহান শান্ত হয়।অভিমানি শালিককে নিজের দিকে ঘুরিয়ে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করে,,,
” কি গুড নিউজ।”
” কংগ্রাচুলেশনস ডাঃ শেহজাদ আহান।আপনাকে আব্বা ডাকতে একজনকে আল্লাহ একটু একটু করে পাঠাচ্ছেন!”
_____★
কাল থেকে শালিকের মুড অফ।ঠিক মতো কথা বলছে না।খাচ্ছে না কিছু।মুড অফের কারণ জিজ্ঞেস করলেও আহানের দিকে ধেয়ে যায়।মাঝে মাঝে কি যে হয় না মেয়েটার আহান ভেবে পায় না।রাতে বাসায় যাওয়ার সময় শালিকের জন্য আহান চিকেন মোমো আর চটপটি নিয়ে যায়।যথারীতি কলিংবেল দেওয়া মাত্রই শালিক দরজা খোলে। তবে বেজায় মুখ নিয়ে।আহান রান্নাঘরে চলে যায়।মোমো গুলো প্লেটে আর সাথে দেওয়া চাটনিটাকে আলাটা ছোট বাটিতে নিয়ে খেতে বসে।শালিকের সামনেই।জানে আহান শালিকের মোমো খুব প্রিয়।আগে রাগ করলে তাও চুমু দিয়ে আহান রাগ ভাঙাতো শালিকের।কপালে আলতো করে চুমু দিলেই শালিকের সব রাগ গলে যেত।কিন্তু এই দুইদিন আহান কাছে গেলেই শালিক কেন যেন তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে।তাই এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলো।
আহান শালিককে দেখিয়ে মোমো খেতে লাগে।
” আহ!গরম গরম মোমো সাথে ধনেপাতার চাটনী!”
শালিকের লোভ লাগে।শালিক নিজেকে নিয়ন্ত্রণের বৃথা চেষ্টা করে।
” একটা দেও না।একটু চেখে দেখি।”
শালিকের কথায় আহানের পেট ফেটে হাসি আসে।মেয়েটা বাচ্চাই রয়ে গেলো।আহান হাসি চেপে বলে,,,
” পুরোটা দেবো তার আগে বলতে হবে মেডামের মুড অফ কেন?”
” আমি কেম্নে জানবো?”
” তোমার মুডের খবর তুমি জানবে না?”
” সত্যি আমি জানি না।ইদানীং হুদাই কিছু ভাল্লাগে না।”
” আচ্ছা।আর বলতে হবে না।নে এখন খা।আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
_____★
হসপিটালের করিডোরে পাইচারি করছে নীল,অদ্রি,আহান,শালিক।অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে জুঁইয়ের চিৎকার ভেসে আসছে।আনান এখনো পৌঁছে সাড়ে নি।ভোর থেকেই জুঁইয়ের প্রসব বেদনা উঠে। তখনই আনানকে খবর দেওয়া হয়।আনান জুঁইকে হাসপাতালে নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রওনা দেয়। জুঁইয়ের চিৎকার শুনে একদিকে যেমন শালিকের জুঁইয়ের জন্য চিন্তা হচ্ছে অন্যদিকে তেমন নিজের জন্যও ভয় লাগছে।
” এত কষ্ট জানলে জীবনেও আহানকে বলতাম না আব্বা আম্মা ডাকবে এমন কেউ লাগবে।এডপ্ট নিতাম।আপুর চিৎকার শুনে আমারই তো জান যায় যায় অবস্থা!আল্লাহ সহায় হও।”
শালিকের বিড়বিড়ানি শুনে এই পরিস্থিতেও আহানের পেট ফেটে হাসি আসে।এই মেয়ে নাকি দুইদিন পর বাচ্চার মা হবে!শালিককে হয়তো নিয়ে আসা ঠিকও হয় নি।মেয়েটার ভিতর ভয় ঢুকে গেছে।শালিক ঢোক ঢোক করে এক বোতল পানি সাবাড় করে ফেলে।হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে ঠোটের ওপরি ভাগে লেগে থাকা জলকণা মুছে ফেলে।শুকনো ঢোক গিলে আহানকে জিজ্ঞেস করে,
” আচ্ছা কোনটায় বেশি কষ্ট নরমাল না সি সেকশন?”
শালিকের আকষ্মিক প্রশ্নে আহান চমকে যায়।ঝাড়ি দিয়ে বলে,
” এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলে মনে হয় আমি আগে বাচ্চা জন্ম দিয়েছি!”
” ডাক্তার হয়েছো এইটুকু বলতে পারো না?হাতুড়ে ডাক্তার কোথাকার।”
” নরমাল ডেলিভারিতে টেম্পোরারি পেইন পাবি আর সি সেকশনের পেইন আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে!সিদ্ধান্ত নাও।সময় আছে ভাবার অনেক।”
” এইটাই ফার্স্ট এইটাই লাস্ট।এরপরে বাবু এডপ্ট নেবো।”
আহান মুখ টিপে হাসে।এরই মধ্যে আনান আসে।কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টি হওয়ায় বেশ ঠান্ডা পরেছে।তাও এই ঠান্ডা আবহাওয়ায় আনান ঘেমে একাকার।আতঙ্কিত কন্ঠে বলে,,,
” কে চিৎকার করছে আহান?”
” ভাবী।”
আহানের কথা আনানের কর্ণকুহরে পৌঁছা মাত্রই আনানের শরীর কেমন করতে লাগে।কিছু বুঝে উঠার আগেই ধপ করে মেঝেতে পরে যায় আনান।নীল আহান গিয়ে আনানকে ধরে।আহান তটস্থ গলায় শালিককে পানি আনার নির্দেশ দেয়। শালিক আনানের মুখে পানির ছিটা দেয়।আনানের জ্ঞান ফিরে।আহান নীল ওকে ধরে তুলে বসায়।আহান খোচা মেরে বলে,
” শা লা তুমি নাকি পুলিশ অফিসার।বউয়ের লিভার পেইনের চিৎকার শুনেই মাথা ঘুরায় পরে গেলা!”
অদ্রি আনানের কান্ডে মুখ টিপে হাসছে।শালিকও একটু মজা নিতে যাবে ঠিক সেই সময় অটি থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে।আহান উঠে ওটির কাছে যায়।ডাঃকামনা নবজাতককে নিয়ে বের হয়।
” ভাইঝিকে পরে নিবি।আগে মিষ্টি খাওয়া।”
ডাঃকামনা আহানের বন্ধু।তার পরামর্শে এবং তার তত্ত্বাবধানে থাকার কারণেই এই সিসেকশনের যুগে জুঁইয়ের নর্মাল ডেলিভারি হলো।আহান দৌড়ে মিষ্টি আনতে যায়।আনান উঠে যায় নবজাতককে কোলে নিতে।
” সাবধানে ভাইয়া।বাবুকে দেখে আবার ফিট খেয়ো না।জুঁই আপুর মতোই হয়েছে নিশ্চয়ই।”
শালিকের কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।ডাঃকামনা হাসতে হাসতে বলেন,,,
” শী ইজ সো লাকি।এমন লাইফ পার্টনার পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।”
” ডাঃ পেশেন্টের কি অবস্থা?”
” আলহামদুলিল্লাহ।কেবিনে তাকে শিফট করা হয়েছে। স্যালাইন চলছে।তবে উনার যেহেতু হিমোগ্লোবিন কমে যেত প্রেগন্যান্ট অবস্থায় তাই বেশি বেশি আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে।”
” আমি কি যেতে পারি?”
” শিউর।”
আনান নবজাতককে কোলে নিয়ে কেবিনে যায়।জুঁই তখন ক্লান্ত।একদম নেতিয়ে পরেছে।আনানকে দেখে তার মুখে হাসি ফোটে।আনান নবজাতককে জুঁইকে দেখিয়ে বলে,,,
” তোমার মতো পরী এসেছে।জুনিয়র জুঁই এসেছে।দেখো কেমন করে ঘুমিয়ে আছে।একদম তোমার জেরোক্সকপি।”
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ