#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২২
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
আহান শালিক আনান বা জুঁই কাওকেই কিছু জানায় না।আহান সরাসরি বাবা আশরাফ সাহেবকে বিষয়টা জানায়। আশরাফ সাহেব কোনো আপত্তি করেন না।ছেলের ভালো থাকা তার কাছে সবার আগে।যদিও আনান তার সন্তান নয়।কিন্তু বাধ সাধে মিসেস লাকী আর অহনা।তারা কিছুতেই সদ্য বিধবা মেয়েকে আনানের বউ হতে দেবে না। না মানে না।
মেয়ে মানুষ জাতটা খুব অদ্ভুত।নিজেদের জাতের ইই আরেকজনের ভালো এরা দেখতে পায় না।সহ্য করতে পায় না।উঠে পড়ে লাগে এরা নিজেদেরই জাতে থাকা মানুষটার ক্ষতি করার জন্য।বা তাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
আশরাফ সাহেব স্ত্রী আর মেয়ের কথা গায়ে না মেখে জুঁইয়ের মামা-মামীর কাছে আনান জুঁইয়ের বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।বিধবা ভাগ্নির জন্য এমন ঘর এমন ছেলের থেকে প্রস্তাব আসায় তারাও আর দ্বিমত প্রকাশ করে না।
আনানকে এক প্রকার ভুলিয়ে ভালিয়ে মিথ্যে কথা বলেই যশোর থেকে আনা হয়।নির্ধারিত দিনে পরিবারের সবাই বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েই জুঁইয়ের মামার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
বাসায় এত আয়োজন দেখে জুঁইয়ের মনে প্রশ্ন জাগে।সে অদ্রিকে জিজ্ঞেস করে,,,,
” ভাবি বাসায় কিছু হবে আজ?এত আয়োজন!”
” হু,তোমার ভাইয়ের বিয়ে দিবো।”
মজা করে বলে অদ্রি।জুঁই মৃদু হাসে।তৎক্ষনাৎ অদ্রির মনে পরে শালিক জুঁইয়ের জন্য একটা লাল জামদানী শাড়ি কিনে পাঠিয়েছে।অদ্রি হাত ধুয়ে জুঁইকে নিয়ে নিজের ঘরে যায়।আলমিরা থেকে প্যাকেটে মোড়ানো শাড়িটা জুঁইয়ের হাতে দিয়ে বলে,,
” এটা নাও।”
জুঁই কিছু না বলে আগে প্যাকেটটা ছিড়ে।লাল জামদানী শাড়ি দেখে তার মাথায় হাত।বিধবা মেয়ে হয়ে কিভাবে সে এমন উজ্জ্বল রঙের শাড়ি পরবে?সমাজ কি বলবে?সবচে বড় কথা ওকে মানাবে তো? একে তো সাত মাসের অন্তসত্ত্বা তার ওপর বিধবা।নিজের কাছেই তো বিষয় টা বেমানান লাগবে জুঁইয়ের।আর আকাশ নেই।লাল শাড়ি পরলে এখন কে ইই বা দেখবে জুঁইকে?
” ভাবি বিধবা হয়ে লাল শাড়ি?”
” পরবে।এটা তেইশ সাল।এখন এইগ্লা কেউ মানে না।”
” কিন্তু আমার কাছেই তো বিষয়টা হ্যালাল্যালা লাগছে।”
” লাগলে লাগুক গে।নীল পরতে বলেছে তোমায়।এটা তুমি পরবে।আর হ্যাঁ শ্যাম্পু করিও আজকে।বাসায় একটা অনুষ্ঠান মানুষজন আসবে।তেল ওয়ালা মাথায় ঘুরে বেড়িও না।আর তাড়াতাড়ি গোসলটা সেড়ে নাও।”
” বেড়ালেই কী?কে দেখবে আমায়?”
” আমরাই দেখবো।আর তুমি কিন্তু ইদানীং বেশি তর্ক করছো জুঁই।চুপচাপ কথা শুনবে না হলে সিরিয়ালের ভাবীদের মতো করবো।”
হেসে বলে অদ্রি।জুঁইও হাসে।
_____★
অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই আনান পরিবারের সাথে দাওয়াত খেতে আসে।আশরাফ সাহেবের বন্ধুর বাসায় আনানকে কেন আনতে হবে। ড্রয়িংরুমের সোফায় গিয়ে সবাই বসে।অদ্রি নাস্তা এনে পরিবেশন করে।এ পর্যন্ত ঠিক ইই ছিলো।কিন্তু আনানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে নীলকে দেখে।জুঁইয়ের সাথে সর্বশেষ যখন কথা হয়েছিলো সামনাসামনি তখন নীল ছিলো সাথে।যদিও চেহারা সঠিক ভাবে আনানের খেয়াল নেই।কিন্তু তাও আন্দাজ বলছে এ নীল ইই।জুঁইয়ের মামাতো ভাই।তাহার সাথে পাঞ্জাবি পরা দাড়ি ওয়ালা এক মধ্যবয়সী লোক।এই লোক কাজী নন তো?আনানের পরিবার কী কোনো ভাবে ওকে মাইনকার চিপায় ফেলে বিয়ে দিতে চাচ্ছে?জুঁইয়ের সাথে?দিলে অবশ্য সমস্যা নেই।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে জুঁই আনানকে মেনে নিবে তো?যে ব্যবহার করেছে আনান জুঁইয়ের সাথে তাতে মনে হয় না জুঁই আনানকে ক্ষমা করবে।
কাজী সাহেব বসলেন।আদ্রি জুঁইকে ঘুর থেকে নিয়ে আসে।আনানকে দেখে জুঁইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।আনান?আনান এখানে কি করছে? করুণা করতে এসেছে?লাগবে না জুঁইয়ের আনানের করুণা।আগে যেভাবে পাগলের মতো আনানকে জুঁই ভালোবাসতো এখন তার কয়েকগুণ আনানকে ঘেন্না করে।যখন থাকতে চেয়েছে জুঁই তখন তো ঠিক ইই মানবতা দেখিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলো।আজ কেন এসে?
অদ্রি জুঁইকে নিয়ে বসায়।কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করতে যাবেন ঠিক সেই মুহুর্তে আনান তাকে থামিয়ে দেয়।
” এই বিয়েতে আমার আপত্তি নেই।কিন্তু কনের সাথে আমার কিছু কথা আছে।যা আমার কাছে অতি জরুরি।একটা সম্পর্ক শুরু করার আগে বিপরীত পাশের মানুষটারও মতামত নেওয়া উচিত। যেহেতু দুইজনের ইই সমান দায়িত্ব থাকে সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার!”
আনানের অনুরোধ রাখা হয়।দু’জন কথা বলার জন্য আলাদা ঘরে সুযোগ পায়।জুঁই আনানের দিকেও তাকায় না।অভিমানে।আনান অপরাধবোধ নিয়ে বলে,,,
” দেখো তোমার সাথে আমি যা করেছিলাম সেটা অন্যায়।কিন্তু আমিও তখন নিরুপায় ছিলাম।টক্সিক ফ্যামিলিতে তোমায় নেবো তারমধ্যে আমি বেকার।”
” নিবেন না তো আসছেন কেন আজ?”
” কারণ এখন বেকার নই।”
” টাকা পয়সাই ইই কি সব?”
” সব না আবার সবও।”
জুঁই অভিমানে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয়।আনান আবার বলে,,
” দেখো ওপরওয়ালা আমায় একটা সুযোগ দিয়েছেন প্রায়শ্চিত্ত করার।তুমি প্লিজ আমায় ফিরিয়ে দিও না।”
” সেদিন আমিও এভাবে বলেছিলাম।শুনেছিলেন আপনি আমার কথা?ঠিকই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমায়।অবশ্য ভুল কিছু করো নি বটে!প্রায় ছেলেই প্রেমিকার সাথে এমন ব্যবহার করে যাতে প্রেমিকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়!এবং পরে ঐসব ছেলেরা ইই বলে বেড়ায় নারী ছলনাময়ী, নারী বেঈমান। সেখানে তুমি আমায় সরাসরি চলে যেতে বলেছো।একড়ু তো বাহবা পাও তুমি!”
” আজীবন এটার খোটা শুনতে আমি রাজী।কিন্তু হাতের কাছে তোমায় এভাবে পেয়ে আমি হারাতে রাজি না।লিপস্টিকের গ্যারান্টি দিতে পারবো না।তবে তোমার চোখের কাজল নষ্ট হতে দেবো না আর তোমার বাচ্চার মুখের হাসি।বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেবো না তাকে।যদিও আমি কখনো আকাশ হয়ে উঠতে পারবো না।তবে নিজের দিক থেকে আমি সর্বচ্চো চেষ্টা করবো।কথা দিলাম।”
” এর আগেও তো একবার কথা দিয়েছিলেন শেষটা অবধি পাশে থাকবেন।মিস্টার শেহজাদ আনান,মুখে কথা দেওয়াটা যত সহজ কথা রাখা ততটা সহজ না।”
” এইবার শেষ অবধি থাকার চেষ্টা করবো।জীবন দিয়ে হলেও রাখবো আমি আমার কথা।”
জুঁই কিছু বলে না।অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নেয়।আনান হাঁটু গেড়ে বসে।
” ফাঁ সি র আসামীকেও ক্ষমা চাওয়ার,প্রায়শ্চিত্তের সুযজগ দেওয়া হয়।আমি কি এত বড়ই অপরাধ করেছি?যে আমি কিছুই পাবো না?”
জুঁই এবারও চুপ। কিছু না বলেই সে বেরিয়ে যায়।আনানও পিছন পিছন বের হয়।জুঁই বিয়েটা ভেঙে দেবে না তো?আনানের মনে শঙ্কার সৃষ্টি হয়।
” কাজী সাহেব?”
কথাটা জুঁইয়ের মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়া মাত্রই আনানের হৃদস্পন্দন ক্রমশ বাড়তে লাগে।জুঁই বিয়েটা ভেঙে দিলো বলে।নারী এমন ভয়ংকর হতে পারে আনান কল্পনাও করে নি।হয়তো আনান তার কর্মফল পাবে এবার!
” এই বিয়েতে আমরা দুইজন ইই রাজি।আপনি আনুষ্ঠানিকতা শুরু করুন।”
আনানের চক্ষু চরক গাছ।ভুল শুনেনি তো আনান?নাকি এটা দিবা স্বপ্ন?কাজী সাহেব বিয়ে পড়ানোর কার্যক্রম শুরু করেন।তিন বার কবুল শব্দ উচ্চারণ করে আনানের কাছে নিজেকে সঁপে দেয় জুঁই।আর জুঁইয়ের কাছে আনান নিজেকে।
চলবে,, ইনশাআল্লাহ