#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
পর্ব২১
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
আজ শুকনো মুখ নিয়ে আহান বাড়ি ফেরে।শালিকও চিন্তিত হয়ে যায় আহানের মুখশ্রী দেখে।বারবার জিজ্ঞেস করে আহানকে এমন দেখাচ্ছে কেন।কিন্তু আহান কিছু বলে না।শুকনো গলায় এক গ্লাস পানি চায় শালিকের কাছে।শালিক তাড়াতাড়ি করে পানি আনে।আহান এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পানি খেয়ে ফেলে।
” কি হয়েছে?এমন অস্থির হয়েছো কেন?”
” জুঁই আপু….”
আহান বলতে পারে না থেমে যায়।শালিক আরও চিন্তিত হয়ে পরে।
” আপু?আপুর কি হয়েছে?”
” আপুর…”
” আরেহ শা লা তুই তোতলাস কেন?টেনশন হয় না আমার?”
আহান লম্বা শ্বাস নেয়।বেশ সময় নিয়ে সে চুপচাপ হয়ে থাকে।অত:পর শুকনো গলায় বলে,,,
” জুঁই আপুর হাজবেন্ড মা রা গেছেন।সাত মাস রানিং।শ্বাশুড়ি অত্যাচার করেন।হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে।আরও অনেক সমস্যা রয়েছে।”
শালিক থ মেরে বসে পরে।শীতল কন্ঠে বলে,,,
” কবে হলো?”
” মাস খানেক আগের ঘটনা।আজ চেকাপের জন্য এসেছিলো সঙ্গে ছিলো জুঁই আপুর ভাবী।”
____★
আনান আজ শালিকের কাছে জুঁইয়ের স্বামী মারা গেছে জানলো।এই খবর শুনে আনান কি প্রতিক্রিয়া করবে বুঝে উঠতে পারে নি। একটা কথা বারবার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রকৃতি কখনো সুন্দরী মেয়েদের ভালো থাকতে দেয় না।কোনো না কোনো ভাবে তাদের দুঃখে বুদ করে রাখে। যা একটু শক্ত হয়েছিলো সে খবরটা শুনার পর ভেতর থেকে আনান দ্বিগুণভাবে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে পরেছে। মনটা বারবার ছুটে চলে যাচ্ছে জুঁইয়ের দিকে। ওয়ালেট বের করে ওয়ালেটে থাকা জুঁইয়ের ছবির দিকে করুণ অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে তাকায় আনান।কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,,,
” এইযে দূরে থেকেও তুমি আমায় যে প্রতিনিয়ত চম্বুকের মতো আকর্ষণ করো এটাই কি ভালোবাসা?”
_______★
দুপুরে একটু ঘুমিয়েছিলো আহান।শালিকের ঘুম আসে নি।যার দরূণ সে ঘুমায়ও নি।কথায় বলে অলস মস্তিষ্কে শয়তানের বাস।কোনো কাজকর্ম না থাকায় শালিকের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি পোকার ন্যায় কিলবিল কিলবিল করতে থাকে।আহানের দিকে সে শয়তানি দৃষ্টি নিয়ে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে।আহানের চুল গুলো বেশ বড় হয়েছে।আর ছেলদের বড় চুল রাখা শালিকের পছন্দ নয়।আচ্ছা আহানের চুলের ওপরে ভিন্ন কিছু ট্রাই করলে কেন হয়?
শালিক স্বযত্নে আহানের চুল আচড়িয়ে দেয়।তারপর ছোট ছোট অসংখ্য বেণুনী করে আহানের চুলে।সেই বেণুনীর ওপর আবার কয়েক স্তরের হেয়ার সেটিংস স্প্রে দেয়।পরিশেষে সে মুগ্ধ দৃষ্টি আহানের দিকে তাকায়।বাতাসে উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দেয় আহানের দিকে।স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলে,,,
” এখন একটু শান্তি লাগছে।”
লম্বা হাই তুলে শালিক শুয়ে পরে। মাগরিবের আগ দিয়ে আহানের চিৎকারে শালিকের ঘুম ভাঙে।শালিক ঘুম ঘুম চোখে উঠে যায়।গিয়ে দেখে আহান আয়নার সামনে রেগে বোম হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শালিককে দেখে আহান রাগান্বিত কন্ঠে বলে,,,
” এইটা তুই করেসিস না?”
” তোমার কসম আমি করি নাই।”
” মিথ্যা কসম কেটে আমার লাইফ রিস্ক বাড়াবি না শালিক।বাসায় একমাত্র তুই ইই আমার সাথে থাকিস।আর এরকম আকাম তুই ইই করিস।”
” জ্বীনেও তো করতে পারে!”
” জ্বীনের এত আজাইরা টাইম নাই তোর মতো।এমন শক্ত হয়ে আছে কেন? গ্লু টু দেস নাই তো?”
” হেয়ারস্পে দিছি একটু তাই এমন করো!”
অভিমানি কন্ঠে বলে শালিক।আহান বিরক্তি আর রাগ নিয়া বলে,,,
” ন্যাকামি টা বন্ধ করবি কবে?”
” সৃষ্টিকর্তা মেয়েদের ন্যাকামি, ঢং করার জন্যই সৃষ্টি করেছেন।ঢং, ন্যাকামি,একটু আঘাতেই কেঁদে ফেলা,আবার বিশাল আঘাতের ক্ষত হাসি মুখে বয়ে বেড়ানো এগুলো মেয়েদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।এগুলোই মেয়েদেরকে অন্যান্য সৃষ্টির থেকে বিশেষ ভাবে আলাদা করে।”
” বড় বড় কথা না বলে আমার চুল ঠিক কর।”
” ন্যাড়া করতে হবে।”
ন্যাড়ার কথা শুনে আহানের চক্ষু কপালে উঠে যায়।এত শখের চুল ন্যাড়া করে ফেলে দেবে?অতই সস্তা।ভয়ার্ত আতঙ্কিত কন্ঠে আহান শালিককে বলে,,
” কী?”
” জাস্ট কিডিং।”
মৃদু হেসে শালিক আহানের চুলের ক্ষুদ্র সরু বেণুনী খোলায় লেগে পরে।বেণুনী করতে যে না কষ্ট হয়েছে বেণুনী খুলতে তার চারগুণ কষ্ট হচ্ছে।এগুলো আগে জানলে শালিক কখনো ইই এই কাজটা করতো না।বেণুনী সব গুলো খোলার পরে আহানের লুক দেখে শালিকের পেট ফেলে হাসি আসে।চেপে রাখতে পারে না সে। হো হো করে হেসে দেয়।আহান সন্দেহভাজন ও কৌতুহল দৃষ্টি নিয়ে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায়।
আয়নার মানুষটা সত্যিই আহান তো? নাকি অন্য কেউ?আহানের ভাবনা শেষ হতে না হতেই শালিক হাসত্ব হাসতে বলে,,,
” ট্রাস্ট মি ব্রো!তোমায় পুরো দেশী আফ্রিকান লাগছে।স্ক্রিনটোন সাউথ এশিয়ান আর হেয়ারে আফ্রিকান কার্লি।মিক্সড ব্রিড।”
কথাটা বলে শালিক আবার হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খায়।আহান ধমক দেয় শালিককে।কিন্তু সে তা বরাবরের মতোই গায়ে মাখে না।উড়িয়ে দেয়।আহান আফসোস,কষ্ট রাগ নিয়ে বলে,,
” যা বুঝলাম ফুফাতো ভাইয়া থেকে তোর ছাইয়া হওয়া আমার ঠিক হয় নাই।বিয়ের আগে ফুফাতো ভাই, বড় ভাই হিসেবে যে ইজ্জত দিতি এখন তার দুই আনাও দেস না।আমার লাভ লস নাই।আমার লাইফটাই লস।”
_____★
জুঁইয়ের সাথে শালিকের নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয়।শালিক ইই যে চে নিতো জুঁইয়ের খবর।জুঁইয়ের মামাতো ভাই জুঁইকে তার বাসায় নিয়ে এসেছেন।জুঁইয়ের ভাবীও ভীষণ ভালো মানুষ।জুঁইকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখেন।কিন্তু জুঁইয়ের কথা বার্তায় যা বুঝা গেলো এভাবে অন্যের ঘাড়ে বসে খাওয়া জুঁইয়ের নিজের ইই পছন্দ হচ্ছে না।আত্মসম্মানে লাগছে।শালিককে একটা চাকরি জোগার করে দেওয়ার অনুরাধা করে জুঁই।তৎক্ষনাৎ শালিকের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।আচ্ছা আনান ভাইয়ার সাথে জুঁই আপুর বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়?কিন্তু ভাইয়া কি এমন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করবে?তার মধ্যে অন্তসত্ত্বা। সময় বদলায়।সাথে মানুষের অনুভূতিও।অনেক ছেলেই আছে নিজের প্রেমিকাকে বিয়ে করতে চায় না।এমন অনেক গল্প আছে।যেখানে মেয়েটি থাকতে চেয়েছিলো।কিন্তু ছেলেটি তাকে রাখে নি।জুঁইঈ থাকতে চেয়েছিলো।হাউমাউ করে কেঁদেছিলো থাকার জন্য।আনান তাকে রাখে নি।বা জুঁইও কি আদো আনানকে মেনে নিবে?মেয়েদের কাছে ভালোবাসার থেকেও বেশি প্রাধান্য পায়৷ নিজেদের আত্মসম্মান। যেখানে কোনো নারী একবার অপমানিত হয়েছে সেখানে ঐনারী জীবনেও ফিরে চায় না।
শালিক নিজের চিন্তাভাবনা আহানের সাথে শেয়ার করে।আহানেরও মন্দ লাগে না শালিকের ভাবনা টা।কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এগুলো আনানকে ফোনে জানানো যাবে না।জানালেই ফোন বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হবে।আর বন্ধ না করলেও আহান কল দিলে তা কেটে দেবে।
জুঁইকেও সরাসরি বিষয়টা বলা যাবে না।আনানের ফিরিয়ে দেওয়া নিয়ে যে জুঁইয়ের মনে আনানের প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হয় নি তা বলা যাবে না।
পুরুষের সত্যিকারের ভালোবাসা ভয়ংকর আর নারীর ভয়ংকর ঘৃণা ।পুরুষও যাকে তাকে মন থেকে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসে না আবার নারী যাকে তাকে ঘৃণা করতে পারে না।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ