#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট২০
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
মেয়েদের সমাজে বৈবাহিক অবস্থান চারটি।বিবাহিত, অবিবাহিত, ডিভোর্সি,বিধবা।এর মধ্যে ডিভোর্সি,আর বিধবা অবস্থানটা মেয়েদের কাছে অভিশাপের ন্যায়।অদ্ভুত বিষয় হলো মেয়েদের এই দুই বৈবাহিক অবস্থানের জন্য মেয়েদেরকেই দ্বায়ী করা হয়।
আকাশ যাওয়ার পর দুর্বিষহ হয়ে ওঠে জুঁইয়ের জীবন।মা হওয়ার সময়টা প্রত্যেকটা মেয়ের কাছেই বিশেষ মুহুর্ত।এই সময় একটু বাড়তি যত্ন সব মেয়ের ইই প্রাপ্য।আকাশ চলে যাওয়ার পর জুঁই যত্নের আশা ছেড়ে দেয়।কিন্তু রাত দিন চব্বিশ ঘন্টা যে শ্বাশুড়ির কটু কথা শুনতে হবে এটা জুঁই কল্পনাও করেন নি।আকাশের মা নিজের ছেলের মৃত্যুর জন্য জুঁইকে দ্বায়ী করেন।যার দরুন জুঁইকে অনেক অকথা কুকথা বলেন।অথচ কোনো মেয়ে ইই চাইবে না নিজে স্বেচ্ছায় বিধবা ডিভোর্সি হতে।কোনো মেয়েই চাইবে না নিজের সংসার ভাঙতে বা ধ্বংস করতে।জুঁইয়ের বড্ড আফসোস হয়।যে তার শ্বাশুড়ি মেয়ে হয়ে জুঁইয়ের কষ্ট বোঝেন না। উলটো কথা শুনিয়ে বাড়িয়ে দেন। মানুষ জুঁইকে শুধায় যে সে কেন এখনো এই বাড়িতে পড়ে আছে।জুঁই উত্তর খুঁজে পায় না।খুঁজে পেলেও তা ঠোঁট অবধি আসে না।
সত্যি!আজ যদি জুঁইয়ে মা বাবা কেউ অন্তত যদি বেঁচে থাকতো জুঁইয়ের জীবনটা এমন হতো না।একটু হলেও সুন্দর হতো জীবনটা।অন্তত এই বিশেষ মুহুর্তে এমন কষ্ট করতে হতো না। জুঁই দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাপড়গুলো নিংড়ে পানি ঝড়িয়ে ছাদে শুকো দেয়।সংকীর্ণ চোখে দিবাকরের দিকে তাকায়।আজ তার বড্ড তেজ।তারমধ্যে লোডশেডিং।জুঁইয়ের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।শরীর উঠে না।পায়েও পানি এসেছে।এত অসুস্থতা, বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও জুঁই কোনো ছাড় পায় না।মাঝে মাঝে জুঁইয়ের মনে হয় হঠাৎ যদি জান কবজের ফেরেশতা হযরত আজরাইল(আ) আসেন তাহলে ঠিক শেষ মুহুর্তে জুঁই পানি চাইলে সে পাবে তো!মনে হয় না আছে কপালে।জুঁই বুঝতে পেরেছে আর মেনে নিয়েছে তার জীবন আর্টসেলের দুঃখ বিলাস।আর সে দুঃখ বিলাসী।
আসরের নামাজ শেষে জুঁই খোদার দরবারে মোনাজাত ধরে।
” আল্লাহ তুমি আনানকে সুবুদ্ধি দান করো।আকাশকে তুমি জান্নাতে নসীব করিও।”
জুঁই স্তব্ধ হয়ে যায়।অক্ষিপট থেকে গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে ফেলে।কি অদ্ভুত মানুষের প্রার্থনা।খোদার কাছে মানুষের চাওয়া।কয়েকদিন আগেও জুঁই খোদার দরবারে আকাশের জন্য দোয়া করতো যাতে সে সুস্থ থাকে।তার যেন কোনো বিপদআপদ না হয় আর এখন..?খোদার কাছে তার জান্নাত লাভের জন্য,আত্মার মাগফেরাতের জন্য প্রার্থনা করা লাগছে।সময়ের সাথে কেমন যেন সব কিছু বদলে যায়।শুধু বদলালো না জুঁইয়ের মোনাজাতে থাকা মানুষগুলা তবে তাদের জন্য জুঁইয়ের চাওয়া বদলে গেছে।একটা সময় আনানকেও জুঁই নিজের করে পাওয়ার জন্য আল্লাহর দরবারে রোজ মোনাজাত করতো।তারপরে চাইলো আনানকে ভোলার জন্য।আর এখন চায় আনানের সুবুদ্ধি যাতে সে বিয়ে করে।
____💗
আঁধারে আসমানে ভেসে বেড়াচ্ছে গোলাকার চাঁদ।ধবধবে সাদা বর্ণের আলোয় পৃথিবীকে জানান দিচ্ছে নিজের সৌন্দর্যের।তার চারিপাশেই জ্বল জ্বল করছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নক্ষত্র।লোডশেডিংয়ে বারান্দায় কফি কাপ হাতে দাঁড়িয়ে রাত্রির সৌন্দর্য উপভোগ করছে শালিক।পূর্নিমার চাঁদের জ্যোৎস্না এক চিলতে বারান্দাকে কাল্পনিক স্বর্গের রূপ দিয়েছে। ঢাকায় এসে শালিকের একটা লাভ হয়েছে।সে বারান্দা থেকে খোলা আকাশ দেখতে পায়।রোদ ঝলমলে দিন রাত্রিতে ভরা পূর্নিমার জোৎস্না প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পায় যা ঐ মফস্বল শহরে কখনো সম্ভব হয় নি।সেখানে জানালা,ছাদ থেকে দেখা যেত সবুজের সমারোহ যা দেখতে দেখতে শালিক বিরক্ত হয়ে উঠেছিলো। আহান ঘরে নেই।বাইরে টুকিটাকি জিনিস কিনতে গেছে সে। ঘরে থাকলেই শালিকের আহামরি কোনো লাভ হয় না।বিয়ের আগেই আহানের প্রেম ছিলো। এখন ফুরিয়ে গেছে।কোথায় একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে তা না করে শালিককে পড়তে বসতে বলে।নয়তো শালিককে খোঁচানোয় ব্যস্ত থাকে।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যে একটা সম্পর্ক থাকে তা নেই ওদের মধ্যে।আগেকার মতোই শালিককে চেতায় আহান।ফাজলামো করে।
শালিকের ভাবনা শেষ না হতেই কোনো আগুন্তক এসে শালিককে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।শালিক চিৎকার দিয়ে ওঠে।
” ওমাগো রাত্রি বেলা কে আসলো।কুতাবাসায় দরজা লক করে নাই বের হওয়ার সময়।আহানরে আজকে যদি আমি ম রি তাহলে তুইও শে ষ। ভুত হয়ে আসবো তোকে মা র তে।ওই মিয়া ছাড়েন।মানুষের বউকে এভাবে ধরেন শরম করে না?”
” মানুষের বউ কই?নিজের বউকেই তো ধরছি।”
চেনা কন্ঠস্বর শুনে শালিকের ছটফটানি কমে।জিজ্ঞাসা সূচক কন্ঠে বলে উঠে,
” আবুল?”
আহান শালিককে কোলে তুলে নেয়।
” হ্যাঁ তোর আবুল।”
” তুই এভাবে কোলে নিলি যদি আমার ফুলের টব ভাঙতো?”
” ভিতর ভিতর খিচুড়ি পাকাস।একটু রোমান্টিক মুডে এলেই ত এটা সেটা বলিস।”
” খিচুড়ি পাকাই মানে?”
তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে শালিক।আহান ভেংচি কেটে বলে,,,
” মানে তুই বুঝছিস।শুধু শুধু প্রশ্ন করবি না।”
আহান নামিয়ে দেয় শালিককে। শালিক ঠেস মেরে বলে,,
” শেষ প্রেম?”
আহান শালিকের কপালে চুমু দিয়ে বলে,,
” প্রেম কখনো শেষ হয় না।প্রকাশ করার পরিমাণটা শুধু কমে যায়।”
” ভালোবাসার স্থায়িত্ব বড়জোর চারবছর।”
” আচ্ছা চার বছর পরে আরেকটা বিয়ে করবো নি।”
ভাবলেশহীন উত্তর দেয় আহান।শালিক রেগে যায়।
” কি বললি?কলিজাটা ইই আছে তোর?
” আমি কিন্তু বড় তোর।রেস্পেক্ট দে।”
“রেস্পেক্টের মায়েরে বাপ!”
” তুই এমন গুন্ডাদের মতো আচরণ করিস কেন মাঝে মাঝে?”
শালিক উত্তর দেয় না।তার জানা নেই এর উত্তর।
____💗
দু দিন হলো শালিক আহান বাসায় এসেছে।শ্বাশুড়ি আর ননদ বাইরে থাকায় শালিকই যাবতীয় কাজ করে।সেদিন ছিলো শুক্রবার।আগেরদিন রাতে মিসেস লাকী শালিককে বলে দেন সকালে বাস্তায় চালের গুঁড়ার রুটি আর গরুর মাংসের কথা। যথারীতি শালিক সকালে উঠে নাস্তা বানানোর কাজে লেগে পরে।
এই প্রথম শালিক চালের গুঁড়ার রুটি বানায়।রুটিও শালিক তেমন ভালো বানাতে পারে না।ঢাকায় ফ্রোজেন পরোটা খাওয়ায় রুটি বানানোর ঝামেলা শালিকের তেমন ফেস করতে হয় নি। চালের রুটির ডো যে ঠান্ডা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে যায় এটাও শালিকের জানা ছিলো না।যার দরূন রুটিগুলোর আকার হয়েছে কোনোরকম!
কিন্তু ভাঁজতে গিয়ে বাজে আরেক বিপত্তি।রুটি বাদামি বর্ণের না হওয়ায় শালিক বেশ সময় নিয়ে রুটি ভাজে আর কিছু কিছু রুটি মৃদু পুড়ে যায়। যথারীতি সকাল আটটা বাজার আগেই শালিক টেবিলে নাস্তা পরিবেশন করে।আহান আজ আগেই উঠে যায়।ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসে। মিসেস লাকিও উঠে খেতে আসেন স্বামীকে নিয়ে। কিন্তু রুটি দেখতেই তার মুখ কালো হয়ে যায়।
” এগুলো কি বানিয়েছো?”
চিৎকার দিয়ে বলেন মিসেস লাকী।শালিক স্বাভাবিক কন্ঠে বলে,,,
” এইজন্য বলি কুটকাচানি বন্ধ করে হেলদি ফুড খান।হেলদি ফুড খেলে কি অকালে অন্ধ হওয়া লাগতো?শ্বাশুমা এগুলো রুটি।”
” এগুলো রুটি?না হয়েছে গোল। আর কেমন পোড়া।কু ত্তাও তো খাবে না এটা।”
” আপনার ছেলে অলরেডি দুটো খেয়ে ফেলেছে রুটি।আর আমি একটা শর্তে গোল বানিয়ে দিবো রুটি।সেটা হলো সেই গোল রুটিটা আপনাকে গোল অবস্থায় ইই খেতে হবে। ছিড়ে খেতে পারবেন না।আর ভুলে যাবেন না আমি আপনি একই বংশের মেয়ে।”
” আম্মু তুমি কিন্তু শুধু শুধু শালিকের সাথে বাজাবাজি করো।খাওয়া গেলেই হয়েছে।আর খারাপ তো হয়নি।আমি তিনটে খেয়ে ফেলেছি অলরেডি।”
খেতে খেতে বলে আহান।মিসেস লাকী তীব্র রাগ নিয়ে বলেন,,
” হু এখন বউ ইই তো আগে।কালোজাদু করে ভালোই বশে করেছো আমার ছেলেটাকে।”
” অহনার জন্যও শালিক কালোজাদু করে অহনার জামাইকে ওর বশে এনে দিবে নি।এখিন খাও তুমি।”
স্বামীর মুখে এ হেন কথা শুনে রাগে মিসেস লাকীর গা রি রি করে উঠে।হ্যাচকা টানে চেয়ারটা সরিয়ে তিনি খেতে বসেন।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ