#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৮
(অনুমতি ব্যাতিত কপি নিষেধ)
এডমিশনের কোচিং করার জন্য শালিক আহানের সাথে ঢাকায় চলে আসে।দু রুমের একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে শুরু করে টোনাটুনির সংসার।শালিক আগেই হার স্বীকার করে যে পৃথিবীর সব খাবার রান্না করতে পারলেও ভাত রান্না সম্পর্কে তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই এবং সে এটাতে বিন্দুমাত্র আগ্রহীও নয়।অগত্যা ভাতটা আহানেই করে।আর বাদ বাকী রান্না শালিক ইউটিউব দেখে করে।
শ্রাবণের মেঘলা বিকেল।বিরতিহীন টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে।রুমের সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দাটা শালিক নিজের মতো করে সাজিয়েছে।ওয়ান টাইম পাতলা প্লাস্টিকের গ্লাসে ছোট ছোট গাছ লাগিয়েছে।ক্যাকটাস শালিকের ভীষণ প্রিয়।তাই বেশির ভাগ গাছ গুলো ক্যাকটাস প্রজাতির।কোনোটা ফুল দেয় আর কোনোটা নিজের কাঁটা যুক্ত দেহ দিয়েই বারান্দার সৌন্দর্য বর্ধন করে। আহান শালিক বাসায় থাকে তখন এই বারান্দায় এসে দু’জন সময় কাটায়।
____💗
হসপিটাল থেকে চেকাপ করে বের হচ্ছিলো জুঁই।আচমকা পেছন থেকে কারও ডাকে সে থামে।পিছন ফিরে এক তরুণীকে হাসি মুখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে।জুঁইকে দেখে মেয়েটা এগিয়ে আসে।
” জুঁই আপু?”
” তুমি?”
তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে জুঁই।মেয়েটা মুচকী হেসে বলে,,,
” আমি শালিক।আনান ভাইয়ার মামাতো বোন আর এখন ছোট ভাইয়ের বউ।ভাইয়ার ফোনের ওয়ালপেপারে সেদিন আপনার ছবি দেখেছিলাম তাই চেনা আপনাকে।”
শালিকের মুখে আনানের কথা শুনে জুঁইয়ের মন বড়সড় হোঁচট খায়।আনানের ফোনের ওয়ালপেপারে জুঁইয়ের ছবি।তারমানে আনান এখনো জুঁইকে ভালোবাসে!আচ্ছা ওর বউ কি কিছু বলে না ওকে?নাকি আকাশের মতো ওর বউও সব জেনে শুনে মেনে নিয়েছে? খুব জানতে ইচ্ছে জুঁইয়ের আনানের সম্পর্কে। কেমন আছে ও।ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে।
” আমার অনেক ইচ্ছা ছিলো আপনার সাথে দেখা করার।”
শালিকের ডাকে জুঁইয়ের ধ্যান ভাঙে।
” ভাইয়াকে যে কত বলছি বলতো বিয়ের সময় দেখিস।আমার সাথে কি এক কাপ কফি খাওয়া যাবে?”
” শিউর।”
শালিক জুঁই হসপিটালের ক্যান্টিনের দিকে যায়।গিয়ে দু কাপ কফি আর দুটো শর্মা অর্ডার দেয় শালিক।জুঁই কফির কাঁপে চুমুক দিয়ে বলে,,,
” তা বলো তোমার খবর কি?”
” আর খবর!আপনার না হওয়া…..”
” তুমি বলতে পারো আমায়।”
” ওই তো তোমার না হওয়া দেবরকে বিয়ে করে ভেবেছিলাম লক্ষ্মী বউ হয়ে সংসার করবো তা আর হলো কই!ঘাড়ে ধরিয়ে এডমিশনের কোচিংয়ে ভর্তি করিয়ে দিলো।”
শালিকের কথায় জুঁই হাসে।বেশ অনেক দিন পর সে প্রাণ খুলে হাসতে পারছে।জুঁইকে এভাবে হাসতে দেখে শালিক এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।বিমোহিত কন্ঠে বলে,,,
” ভাইয়া মনে হয় এই হাসি দেখেই তোমার প্রেমে পরেছিলো না?”
জুঁইয়ের হাসি মলিন হয়ে যায়।বুকের মধ্যে থাকা ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠছে একটু একটু করে।ভুলতে গিয়েই বারবার মনে পরছে আনানকে।সামনে চলে আসছে ওর সম্পর্কিত নানা প্রসঙ্গ।জুঁই দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসি মুখে বলে বলে,,,
” আমার না হওয়া দেবরের খবর কি?”
” এই মেডিকেলেই এমবিবিএস করছে।”
কথা শেষ হতে না হতেই শালিকের ফোন আসে।ব্যাগ থেকে বের করে ফোনের স্ক্রিনে আহানের নাম ভাসতে দেখে শালিক।ফোন রিসিভ করে সালাম দেয় শালিক।ওপাশ থেকে সালামের জবার দিয়েই আহান শালিককে জিগ্যেস করে যে সে কথায় আছে।শালিক জবাব দেয়।
” ক্যান্টিনে আছি।তুমিও তাড়াতাড়ি আসো।একটা সারপ্রাইজ আছে।”
শালিক কল কেটে দেয়।জুঁইকে ওর স্বামী,শ্বশুরবাড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে শালিক।জুঁই খুব স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দেয় সেগুলোর।এরই মধ্যে আহানও চলে আসে। জুঁইকে দেখে সে ছোটো খাটো ধাক্কা খায়।সাথে খুশীও হয়। এতদিনের জমানো সব কথা এক এক করে বলতে লাগে তিনজন।কথার এক পর্যায়ে জুঁই বলে,,,
” আনানের ছেলে হয়েছে না মেয়ে হয়েছে?”
জুঁইয়ের কথা শুনে শালিক আহান দু’জন একেঅপরের দিকে তাকায়।দীর্ঘশ্বাস ফেলে আহান বলে,,,
” ভাইয়া বিয়ে করে নি।রাজী হয় নি করতে।”
” তোমরা আছো কি করতে?জোর করে বেঁধে বিয়ে করিয়ে দিতে পারলে না?”
” তুমি তো জানোই ভাইয়া কেমন মানুষ।”
” সবসময় নিজেকে সঠিক মনে করে।এবং ত্যাগ করে মহান হতে চান।”
তাচ্ছিল্যের সুরে উদাস কন্ঠে বলে জুঁই।
” আপু তুমি হসপিটালে এসেছিলে কেন?কারও কিছু হয়েছে?”
আহানের কথায় ধ্যান ভাঙে জুঁইয়ের।কিঞ্চিৎ হেসে বলে,,,
” তোমার ভাইকে বলে দিও তার ত্যাগের পুরষ্কার
হিসেবে আল্লাহ চাইলে তিনি মামা ডাক শুনতে পারবেন।”
জুঁইয়ের কথা শুনে আহান শালিক দুইজন ই খুব খুশী হয়ে যায়।দু’জন ইই একসাথে জুঁইকে অভিনন্দন জানায়।আহান জুঁইকে সিএনজি ঠিক করে উঠিয়ে দেয়।শালিক জুঁইকে বিদায় দেওয়ার আগে জুঁইয়ের নাম্বার নিয়ে নেয়।গল্প গুজব করা যাবে।
____💗
রাতে খাওয়া শেষে আহান শালিক দু’জনেই পড়ছিলো।আহানের পড়ার দিকে পুরোদমে মনোযোগ থাকলেও শালিকের নেই। সে বিছানায় বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে।তা আহানের চোখ এড়ায় না।সে গম্ভীর গলায় বলে,,,
” পড় শালিক পড়।না হলে রিক্সা ওয়ালার সাথে তোকে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
” তুই জামাই।তুই রোমান্টিক রোমান্টিক আলাপ পারবি।তুই কেন পড়তে বলিস আর রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ের হুমকি দেস।লজ্জা করে না?”
” পড়াচোর মেয়েকে বিয়ে করে লজ্জার মাথা খে য়ে ফেলেছি।”
শালিক কিছু বলতে গিয়েও বলে না।আহানও পড়ায় মন দেয়।কিন্তু খানিকক্ষণ বাদে দেখা যায় শালিকের আচার-আচরণে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। লাজুক লাজুক হাসছে সে।আহান বইয়ের ভেতর কলম রেখে বইটা বন্ধ করে বলে,,,
” সমস্যা কি?”
” অনেক কিছু।আনলিমিটেড প্রবলেম ওয়ান সালিউশন।”
শালিকের কথার মানে খুঁজে পায় না আহান।ভ্রু কুঁচকে বলে,,,
” মানে?”
” তোমার কি মনে চায় না একটা বাবু তোমায় আব্বা ডাকুক?”
” বড় হ।তখন একটা কেন দশটা বাবু আমায় আব্বা ডাকবে নি আর তোকে আম্মাও ডাকবে নি।”
” আর কত বড় হবো?আমার বয়স একুশ।আর আমার দশটা লাগবে না একটা হলেই হবে।”
কথাটা বলেই হেসে মুখ লুকোয় শালিক।আহান ভেংচি কেটে বলে,,,
” নির্লজ্জ মেয়ের লাজুক হওয়ার বৃথা চেষ্টা।”
” দাদু বলছে জামাইয়ের সামনে শরম পাওয়া লাগে না আর তুমি তো আমার আগে থেকেই চেনা।জন্মের পর থেকেই। তোমার সামনে কিসের লজ্জা শরম?”
শালিকের কথা শুনে আহানের অনেক হাসি পায় কিন্তু প্রকাশ করে না সে।হাসিকে গলধঃকরণ করে ফেলে সে।কিছুটা রাগী ভঙ্গিতে শালিককে ধমক দেয় সে।শালিক তা গায়ে মাখে না।লাজুক কন্ঠে বলে,,,
” জুঁই আপুর কথা শোনার পর থেকে আমারও না মন চাচ্ছে সাদ ভাইয়াকে মামা আর আনান ভাইয়াকে……
থেমে যায় শালিক।মনে মনে এক গভীর হিসাব মিলাতে থাকে যার প্রকাশ ঘটায় তার চোখজোড়া।প্রশ্নসূচক কন্ঠে আহানকে বলে,,,
” আচ্ছাহ!আনান ভাইয়া আমার ফুফাতো ভাই।তার মানে সেই হিসাবে ভাইয়া আমার বাবুর মামা।আবার তোমার বড় ভাই।সেই হিসাবে বাবুর চাচ্চু লাগবে ভাইয়া।এতগুলা ডাক বাবু কিভাবে দিবে ভাইয়াকে?কনফিউজড হয়ে যাবে না বাবু?”
” গরু কিনার নাম নাই হাড়ি কোনটায় দুধ,কোনটায় ঘি,কোনটায় মাখন,কোনটায় ননি রাখবে তা নিয়ে বসেছে।সামনে মেডিকেল এডমিশন পড়।বাবু কোনো অশিক্ষিত মহিলাকে আম্মা ডাকবে না।”
ধমক দিয়ে বলে আহান।শালিক পালটা রাগ দেখিয়ে বলে,,
” হুহ,বাবুর মা অশিক্ষিত হয় কিভাবে?বাবুর মা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে।”
চলবে,,ইনশাআল্লাহ