#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৭
(অনুমতি ব্যাতিত কপি নিষেধ)
খাবার মুখে নিয়ে সবাই শালিকের রান্নার প্রশংসা করতে দেখে মিসেস লাকী আর অহনার মনে খুঁতখুঁতানির সৃষ্টি হয়।তরকারিতে এত লবণ দেওয়ার পরও সেভাবে কারও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না কেন!মিসেস লাকী রাগী চোখে মেয়ের দিকে তাকান।
” বিশ্বাস করো আম্মু আমি অনেক লবণ দিয়ে ছিলাম।নিজে চেকেও দেখে ছিলাম।”
ফিসফিসিয়ে বলে অহনা।মা মেয়ের কানাকানিটা বেশ ভালোই উপভোগ করে শালিক।মুখ টিপে হাসতে থাকে।দূর থেকে মা মেয়ের তা দেখে সর্বাঙ্গে তীব্র জ্বলুনির সৃষ্টি হয়।যদিও তা মনের জ্বালা নামেই পরিচিত! দুই পরিবার এক হয়েছে আজ।তাই দুই ধাপে খাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।ছেলেদের খাওয়ার পর্ব শেষ হলে মেয়েরা বসে।কাছ থেকে তরকারির রঙ দেখেই অহনার চোখ ছানাবড়া। কেমন একটা সাদা সাদা ভাব এসেছে তরকারিতে।অথচ লবণ মেশানোর সময় তা ছিলো টকটকে লাল। অহনা জোর পূর্বক স্বাভাবিক কন্ঠ নিয়ে বলে,,,
” তরকারির রঙ এমন কেন ভাবি?”
” বাটারমিল্ক চিকেনের রঙ এমন ইই হয় রায়বাঘিনী ননদিনী!”
খানিকটা ঠেস মেরেই বলে শালিক।খাবার মুখে তুলে মা মেয়ের চোখ কপালে উঠে যায়।এত সুস্বাদু রান্না তারা আগে কখনো খায় নি এ জন্য নয়।লবণ দেওয়া তরকারির স্বাদ এমন সুস্বাদু হওয়ায় বেশি অবাক হয় মা মেয়ে।
___💗
” তুই আসলেই লবণ দিয়েছিলি?”
” তোমার কসম আম্মু।”
” উল্টাপাল্টা কসম কাটবি না।তোর জন্য আমি মরতে পারবো না।”
মিসেস লাকীর কথা শেষ হতে না হতেই ট্রেতে মগ ভর্তি চা আর পিরিচে সাজানো বিস্কুট নিয়ে হাজির হয় শালিক।অপ্রস্তুত অবস্থায় শালিককে দেখে মা মেয়ে দু’জন ইই চমকে যায়।ট্রেটা ড্রেসিনটেবিলের ওপর রেখে বলে,,
” ট্রাস্ট হার ফুপ্পি সরি শ্বাশুমা।সে অনেকগুলা লবণ দিয়েছিলো।কিন্তু কি আর করার!আপনি ভুলে গেলেও কি আর আমি ভুলি!আমরা তো একই গুদামের চাল খেয়ে বড় হওয়া মেয়ে না?আপনিও যে বংশের মেয়ে আমিও সে বংশের।আপনি ডালে চললে আমি চলি পাতায়য়য়…পাতায়।”
কথাটা বলে কৃত্রিম হাসি দেয় বসে শালিক।অহনা ভেংচি কেটে বলে,,,
” তার নমুনা দেখলাম।ভাইয়াকে কালোজাদু করে বশ করেছো।”
” আচ্ছা! আমার জামাইকে করছি বশ তোর জামাইকেও তো বশে এনে দেবো নি ।শুধু বিয়ে কর তুই।”
শালিক এই কথা বলা মাত্রই অহনা কেঁদে দেয়।ন্যাকা কান্নাই বলা চলে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,,,
” দেখেছো আম্মু আসতে না আসতেই আমায় বিদায় করার জন্য উঠে পরেছে!”
” তোমার অভিনয় হয় নি তুমি আউট।”
গম্ভীর ভাব ধরে বলে শালিক।অহনার ন্যাকা কান্নার মাত্রা আরও বেড়ে যায়।মিসেস লাকী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে মেয়েকে স্বান্তনা দেওয়ার মিথ্যে চেষ্টা করে।শালিক কোনোটা আমলে নেয় না।নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াতে লাগে।
” গরম গরম চা টা খেয়ে ফেলার অনুরোধ রইলো।চা খেলে ভেতরের সব প্যাঁচ ছেড়ে যায়।”
মা মেয়ে দু’জন রক্তচক্ষু নিয়ে শালিকের যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।ট্যাকস ট্যাকস করে কিভাবে কথা শুনিয়ে গেলো।কিন্তু বড় কথা তো সেটা না।বড় কথা হচ্ছে শালিক লবণ দেওয়ার বিষয়টা জানলো কিভাবে?আর জানলোই বা কিভাবে যে লবণটা অহনা ই দিয়েছে?
_____💗
” বিয়ের এতগুলা বছর হয়ে গেলো আপা। জুঁই তো খুশীর খবর দেয় না।ওর সমস্যা আছে নাকি আপা?”
ফোনের এপাশ থেকে জুঁইয়ের মামীকে কথাটা বলে জুঁইয়ের শ্বাশুড়ি।রান্না শেষে ঘরে যাওয়ার সময় কথাটা শুনে ফেলে জুঁই।আড়িপাতা যদিও খারাপ স্বভাব তারপরও সে দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে নেয়।শ্বাশুড়ির কন্ঠ বলে দিচ্ছে জুঁইকে তিনি ভালো চোখে দেখছেন না।জুঁইয়ের চরিত্র দাগ ফেলতেও তিনি দ্বিধাবোধ করছেন না।অথচ তিনিও একজন মেয়ে।তিনিই জানেন চরিত্র,সম্মান, ইজ্জত মেয়েদের কাছে নিজেদের জীবনের চাইতেও বড়। জুঁই দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে চলে যায়। দীর্ঘ পাঁচ মাস পর আকাশও এসেছে ঈদে ছুটি কাটাতে।ঘরে এসেই জুঁই ধপ করে বসে পড়ে। প্রিয়তমার এ হেন আচরণে উদ্বীগ্ন হয়ে জুঁইয়ের কাছে যায় আকাশ।
” কি হয়েছে?তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন?”
” আমার এখন কি করা উচিত আকাশ?না পারছি আমি আনানকে নিজের মন থেকে সরিয়ে নিতে না পারছি তোমার প্রাপ্য তোমায় বুঝিয়ে দিতে।”
” তোমার মন যা চায় তাই ইই করবে।”
” মন তো আনানকে চায় আর মস্তিষ্ক তোমার পক্ষ হয়ে কথা বলে।”
” তো চলো।আমি নিজে তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিবো।”
” কখনোই না।আনান বলেছিলো মনকে গুরুত্ব কম দিতে।আমাদের মন আবেগকে প্রাধান্য দেয় আর মস্তিষ্ক বাস্তবতাকে।আর আনান কি আমার জন্য বসে আছে নাকি?দেখো গে,বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হয়ে গিয়েছে।আমার মতো ধুকে ধুকে কষ্ট পাওয়ার মানুষ ও নয়।সৃষ্টিকর্তা বোধহয় ওর ভাগের কষ্ট গুলো আমায় দিয়ে দিয়েছেন।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে জুঁই। আকাশ কিছু বলে না।ভাষা খুঁজে পায় না বলার।খানিকক্ষণ বাদে জুঁই আকাশের অনেকটা কাচগে গিয়ে বসে।আকাশ চমকে যায়।করুণ দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে জুঁই বলে,,,,
” আকাশ তোমার কাঁধে আমি মাথা রাখতে পারি?”
আকাশ অনুমতি দেয়।জুঁই আকাশের কাঁ্ধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে।চোখে মুখে তার প্রশান্তির ছাপ জেগে ওঠে।পরম আয়েশে জুঁই বলে,,,
” জানো?এভাবে আমি প্রথম মাথা রেখেছিলাম আনানের কাঁ্ধে।অন্য রকম একটা শান্তি পেয়েছিলাম।আজ তোমার কাঁধে মাথা রাখলাম।সেই শান্তি পাই নি।পাবোও না হয়তো।কিন্তু আরেকটা অন্য রকম শান্তি পাচ্ছি।”
চাপা কান্না নিয়ে বলে জুঁই।আকাশ এইবারও কিছু বলে না।জুঁইয়ের মাথার ওপর মাথা রেখে সেও পরম আয়েশে চোখ বন্ধ করে।জুঁই আবারও চাপা কান্না নিয়ে বলে,,,
” জানো আকাশ?আনান যাবার পর নিজেকে যেমন গুরুতর অভাগী মনে হয় ঠিক তেমন তোমায় স্বামী হিসেবে পাওয়ার পর ভাগ্যবতীও মনে হয়।তুমি বলেই আমায় এত সময় দিয়েছো।অন্য কেউ হলে সময় তো দূরে থাক প্রথম দিন ই জবরদস্তি করতো আমার সাথে।অন্যথায় ডিভোর্স দিতো।”
____💗
শ্রাবণের মেঘাচ্ছন্ন বিকেল।আনান ঘরে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।এমন সময় দরজায় শালিক টোকা দেয়।আনান পিছন ফিরে শালিককে দেখতে পায়।
” ভাইয়ের ঘরে আসবি দরজায় টোকা দেওয়ার কি আছে?”
” ভদ্রতা এটা।”
শালিকের কথা শেষ হতে না হতেই আহানের আগমন ঘটে। হাতে ট্রে।তিনটে মগে কফি।আহান শালিক আনানের হাতে কফির মগ দিয়ে নিজেরটা বুঝে নেয়।আনান আহানকে সিগারেটের অফার দেয়।আহান মুচকী হাসে।
” ভাইয়া ডাক্তারি পড়তেছি।আর মেডিকেলের স্টুডেন্টদের স্মোকিং করা ঠিক না আই থিংক।প্রফেশনের সম্মান রক্ষার্থে বাদ দিয়েছি।”
আনান কিঞ্চিৎ হাসে।শালিক কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,,,
” ভাইয়া টিরিংকুউউ ছু মাছ।”
” কেন?”
” তুমি না থাকলে সেদিন চরম বেইজ্জতির শিকার হতাম।”
শালিকের কথা শুনে আনান উঁকিঝুঁকি মারে।যে কেউ শুনছে নাকি ওর কথা!আনানের কর্মকাণ্ড দেখে আহান শালিক একসাথে হেসে ওঠে।
” চিল ভাইয়া।আম্মু আর অহনা পার্লারে গেছে আর আব্বু ফ্যাক্টরিতে।ভাইয়া তোমার মনে আছে?আগে আমরা দুইজন ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিতাম?সারাদিনে কি হয়েছে তুমিও বলতে আমিও বলতাম।”
আনান মুচকী হাসে।আনান এমনিতেই চুপচাপ স্বভাবের।জুঁইয়ের চলে যাওয়ার পর আরও চুপচাপ হয়ে গেছে।গু লি মে রেও মুখে বুলি ফুটে না।কাছের হওয়ায় এই বিষয়গুলো আহান খুব ভালো করেই লক্ষ্য করে।কষ্ট লাগে আহানের।ভাইকে জ্যান্ত লাশ হিসেবে সে মেনে নিতে পারে না।কিন্তু কি আর করার? আহানেরও যে হাত পা বাঁ্ধা।আনান ওকে দিয়ে ওয়াদা করিয়েছে।আহান যেন জীবনেও আনানের সামনে বা ওর অনুপস্থিতিতে আনানের বিয়ের কথা না তুলে।কেউ তুললেও যেন আহান তাকে থামিয়ে দেয়।
চলবে,,ইনশাআল্লাহ