#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৬
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মেয়েকে ডাক দেন মিসেস লাকী।বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠে অহনা বলে,,,
” এত সকালে কেউ ডাকে?কালকে একটা বিয়ে গেলো!”
” শালিককে ডেকে তুলে আবার ঘুম দিস। যা শালিককে ডেকে উঠা।আমি ডাকলে বিষয়টা খারাপ দেখাবে।তুই ননদ লাগিস তুই যা।”
” এত সকালে ও কি করবে?বেচারি ঘুমাক।কালকে বিয়েতে ত ওর ওপর দিয়ে কম ধকল যায় নি!”
চোখ কচলাতে কচলাতে বলে অহনা।মেয়ের কথায় খানিকটা বিরক্ত হন মিসেস লাকী সাথে রেগেও যান।বড় হয়ে গেলো এখনো এই মেয়ে কিচ্ছু বুঝে না কথার ইশারা ইঙ্গিত। রেগে গিয়ে মেয়েকে বলেন,,,
” সব কথা তোকে ভেঙে বলা লাগবে?নেচে নেচে বিয়ে বসেছে এবার বুঝতে হবে না সংসারের জ্বালা?”
মায়ের কথা শুনে অহনা মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসে দেয়।
” বুঝেছি।”
অহনা উঠে যায়।গিয়ে আহানের ঘরে কড়া নাড়তে থাকে।কিন্তু কারও দরজা খোলার নাম নেই।বেশ কিছুক্ষণ কড়া নাড়ার পর আহান উঠে দরজা খুলে।
” এত সকালে কি?”
” তোর জেনে লাভ নাই।তোর বউকে ডাক। ”
” বল তুই।তারপর ওকে ডেকে তুলছি।”
” আম্মু শালিক আপুকে নাশতা বানাতে বলছে।”
অহনার কথা শুনে আহান ঘড়িতে সময় দেখে।পাঁচটা বেজে পয়তাল্লিশ মিনিট।খানিকটা রেগেই যায় আহান।ধমক দিয়ে অহনাকে বলে,,,
” এত সকালে কেন ও নাস্তা বানাবে?নাস্তা তো করা হয় আটটার দিকে।সারাদিন কালকে ধকল গেছে আমার শালিক দুইজনের ওপর দিয়েই।তোর ক্ষুধা লাগলে নিজের নাস্তা নিজে বানিয়ে খা যা।”
কথাটা বলে মুখের ওপর আহান দরজা আটকিয়ে দেয়।আহানের ব্যবহারে অহনার শালিকের ওপর বেশ রাগ হয়।বিয়ে করতে না করতেই ভাইকে বশ করে ফেলেছে।কিভাবে বউয়ের হয়ে কথা বলে মুখের ওপর দরজা মেরে দিলো!রাগে গজ গজ করতে করতে নিজের ঘরে ফিরে যায় অহনা।মেয়েকে দেখতেই মিসেস লাকী শালিক উঠেছে কি না জিজ্ঞাসা করেন।অহনা উচ্চস্বরে মাকে বলে,,,
” তোমার ছেলেকে যেভাবে বশ করেছে তাতে মনে হয় না নবাব নন্দিনী কোনো কাজ করবে সংসারের।”
” কি হয়েছে?”
” কি আর হবে বউকে কাজ করতে হবে শুনে তোমার ছেলে কথা শুনিয়ে মুখের ওপর দরজা লাগিয়ে দিলো।”
____💗
ন’টার দিকে আহানের ঘুম ভাঙে।উঠে দেখে শালিক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মানুষ ঘুমালে ত্বকের লোমকূপ থেকে তৈলাক্ত পদার্থ নির্গত হয় যার কারণে মানুষের মুখে তৈলাক্ত ভাব আসে।শালিকের মুখেও তৈলাক্ত ভাব এসেছে।কিন্তু তাতেও তার সৌন্দর্যের এক্টুকুও ভাটা পরে নি।আহান অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ঘুমন্ত শালিকের দিকে তাকিয়ে থাকে।কি নিষ্পাপ দেখাচ্ছে মেয়েটাকে! কে বলবে জাগ্রত অবস্থায় এই মেয়ে আহানকে জ্বা লি য়ে মা রে।
আহান মুচকী হেসে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে যায়।আধঘন্টা পরে এসে দেখে শালিক এখনো সেই ম রার মতো ঘুমোচ্ছে।
” শালিক ওঠ।দশটার মতো বাজে।”
” আম্মু আরেকটু ঘুমাই না!তুমি যাও।”
” আমি তোর আম্মুর বাপ বলছি।ওঠ।”
হালকা ধমক দেয় আহান।ধমক শুনে শালিক “আল্লাহগো” বলে লাফ দিয়ে ওঠে।
” এমন লাফ দিয়ে উঠলি যে!”
” অহ তুমি?আমি ভাবছি আম্মুর ম রা বাপ।আমায় নিতে এসেছে।”
” তোকে নিতে এসেছে মানে?তোকে নিতে আসবে কেন?”
” ছোট গিন্নি বলতো তো!তার বউ বিয়ে করলো আরেকজনকে তাই হয়তো রাগ করে নিতে আসছেন উনি!”
” হয়েছে হয়েছে!যা ফ্রেশ হয়ে আয়।তুই বেরুলে আমি নাস্তা করতে যাবো।”
নাস্তা মিসেস লাকী ইই বানিয়েছেন।খাবার তালিকায় আছে জ্যাম পাউরুটি,ডিম পোচ আর ফলের জুস।এক কথায় ইংলিশ ব্রেকফাস্ট যাকে বলে।
আশরাফ সাহেব আজ ভীষণ খুশী।কত্ত দিন পর সবাই এক সাথে সকালের নাস্তা করতে চলেছেন।
আহান আর শালিক পাশাপাশি বসে।শালিক আহানকে পাউরুটিতে জ্যাম লাগিয়ে দেয়।তারপর নিজের জন্য প্রস্তুত করে।খেতে খেতে মিসেস লাকী বলে,,,
” আমাদের শালিক কিন্তু খুব ভালো পোলাও আর মুরগীর মাংস রান্না করতে পারে।আজকে দুপুরের খাবার শালিক রান্না করবে।”
শালিক আর তাতে দ্বিমত পোশন করে না। ব্রেকফাস্ট শেষ করেই শালিক দুপুরের রান্নার কাজে লেগে পরে।প্রথমেই ফ্রিজ থেকে বের করে মুরগী মাংসের বরফ ছাড়ার জন্য পানিতে ভিজিয়ে রাখে। মাংসের বরফ ছাড়ার সময়টুকুতে পোলাও করে ফেলে সে।বেশিক্ষণ নিয়ে চাল ভাজায় পোলাওটা বেশ ঝড়ঝড়ে হয়।তেলের সাথে ঘি দিয়েছিলো শালিক।যার কারণে সুন্দর একটা গন্ধ বের হয়।আহান দাঁড়িয়ে শালিকের রান্না করা দেখছিলো।অলস মেয়েটা একদিনে কেমন সংসারি হয়ে গেছে।আগে মন না চাইলে পানি পর্যন্ত গ্লাসে ভরে খেতো না। সৃষ্টি কর্তার সব সৃষ্টিই রহস্যময়।তবে মেয়ে জাতটা একটু বেশিই রহস্যে ঘেরা।
আহানের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা শালিক খেয়াল করে।সে টিপ্পনী কেটে বলে,,,
” নয়া নয়া বিয়ে করছো তো তাই এমন বউয়ের আঁচল ধরে আছো।কয়টা দিন যেতে দাও!তখন দেখবো ভালোবাসা কই যায়!”
” তোমায় যতবার দেখি ততবার ইই নতুন করে তোমার প্রেমে পরি।ভালোবেসে ফেলি নতুন করে।”
” বাদ দাও মিয়া।পৃথিবীর সব ভালোবাসার স্থায়িত্ব বড়জোর চারবছর।আগেও বলছি আমি।”
” তাই রোজ তোমাকে নতুন করে ভালোবাসি।”
মাংস কষানো হয়ে গেলে আহান একটা বাটি নিয়ে শালিকের পাশে দাঁড়ায়।শালিক তা দেখে মজা করে বলে,,,
” মাফ করবেন টাকা নাই।”
” টাকা কে চাইছে।মাংস দে।টেস্ট করি।”
শালিক কোমড়ে হাত দিয়ে আহানের দিকে পেছন ফিরে তাকায়।আদুরে রাগ নিয়ে বলে,,,
” কালকে রাত্রে কি চুক্তি হইছে?”
” কী?”
” এই ব্রেন নিয়ে তুমি ডাক্তারি পড়ছো?কালকের কথাও মনে নেই?”
” ডাক্তারি পড়তে পড়তেই সব ভুলে যাচ্ছি।”
” চুক্তি হয়েছিলো আমাদের।যে আমাদের মধ্যে তুই তুকারি থাকবে না।নো মোর তুই তুকারি।ভালোভাবে বলো। ”
” মাননীয় অর্ধাঙ্গিনী আপনার রান্না চেকে দেখার সুযোগ করে দিন প্লিজ।”
শালিক হেসে বাটিতে এক টুকরো মাংস দেয়।আহান তার অর্ধেক খেয়ে বলে,,,
” উমমম!অসাধারণ। ”
” লবণ ঠিক আছে?আমি আবার লবণ দিতে ভুলে যাই।”
” তুমিই খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে!”
কথাটা বলে আহান বাকী মাংসটুকুও শালিককে খাইয়ে দেয়।
_____💗
ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে রুমে নিয়ে আসছিলো আনান।এমন সময় অহনাকে রান্না ঘরে দেখে সে।চাল চলণ সন্দেহ ভাজন দেখে সে আড়ালে দাঁড়িয়ে অহনাকে পর্যবেক্ষণ করে।কেবিনেট থেকে লবণের কৌটা বের করে বেশ খানিকটা লবণ অহনা মুরগীর তরকারিতে দিয়ে দেয়।
খাবার নষ্ট করা আনানের বরাবরই অপছন্দের। কত মানুষ না খেয়ে আছে।এদিকে জিদ আর হিংসের বশে অহনা এতগুলো মানুষের খাবার নষ্ট করলো।
আনান নিজের ঘরে না গিয়ে আহানের ঘরে যায়।আহান তখন ফোনে ব্যস্ত।আনান গিয়ে খাটে বসে।
” শালিক কই?”
” গোসলে।কেন?”
” এমনি।ওকে একটু আমার সাথে দেখা করতে বলিস তো!কথা আছে।”
কথাটা বলে আনান উঠে চলে যায়।ঘন্টাখানেক পর শালিক বের হয়।আহান শালিককে আনানের কথা জানায়।শালিক দেরি না করে আনানের ঘরে যায়।
” ভাইয়া ডাকছিলে?”
” হু।রান্নাঘরে চল একটু।”
” কেন?”
” গেলেই বুঝতে পারবি।”
আনান রান্না ঘরে গিয়ে একটা চামচে করে তরকারির কিছুটা ঝোল শালিককে খেতে দেয়।শালিক খায় না।তীব্র আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে লাগে,,,
” নিজের রান্না এভাবে খেলে তো বাকীরা খেতেই পারবে না ভাইয়া।”
” না খেলে খাওয়া তো দূরে থাক মুখেও তুলতে পারবে না কেউ।খা।”
শালিক খায়।মুখে তোলা মাত্রই চেহারার ভাবভঙ্গি বদলে যায়।আনান ওর মুখের ভঙ্গিমা দেখে মুখ টিপে হাসে।দৌড়ে বেসিনের কাছে ছুটে যায় শালিক।কুলকুচি করে আবার রান্না ঘরে আসে।
” এত লবণ আসলো কোথা থেকে!”
” ঘর শত্রু।”
” এখন এতগুলো তারকারি কি করবো?খাবার জিনিস নষ্ট করবো ফেলে দিয়ে?”
আনান হাসে।হাসতে হাসতে জগের অনেকটা পানি তরকারিতে ঢেলে দেয়।শালিকের তা দেখে মাথায় হাত।
” এটা তুমি কি করলে ভাইয়া?”
” ঝটপট ক’টা আলু কে টে দে তো আমায়।”
” কেন?”
” যা করতে বলছি কর।হাতে সময় নেই একটু পরেই গেস্টরা চলে আসবে। ”
শালিক আনানের কথামত আলু কেটে দেয়।আনান আলুগুলো তরকারিতে দিয়ে তরকারিটা জ্বাল দিতে লাগে।ঝোল খানিকটা শুকিয়ে এলে দুই জন আবার চেকে দেখে।নোনতা ভাব কিছুটা কমেছে।বেশি জ্বাল দিলে আবার মাংস গলে যাবে।তৎক্ষনাৎ শালিকের মাথায় একটা বুদ্ধি আসে।আচ্ছা এখানে একটু দুধ ফেটিয়ে দিলে কেমন হয়!চোরাই পদ্ধতিতে বাটার মিল্ক চিকেন কারী!
শালিক ফ্রিজ থেকে দুধ বের করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খানিকটা গরম করে নিয়ে লেবুর রস দেয়।দুধ খানিকটা ফেটে যায়।তারপর দুধ টুকু তরকারিতে ঢেলে দেয়।দু চার মিনিট জ্বাল দিয়ে নামিয়ে নেয়।চামচে করে একটু ঝোল নিয়ে শালিক আনান দুইজন ই স্বাদ চাকেএ। নাহ!এবার সব ঠিক আছে।
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ