মিঠা প্রেম পর্ব-১৫

0
660

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৫
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

একপ্রকার ছেলের জেদের কাছে হার মেনেই মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ভাইঝিকে নিজের পুত্রবধূ করে আনেন মিসেস লাকী।খুবই সাদামাটা একটা বিয়ে হয় শালিক আহানের।লাল জামদানীর সাথে হালকা কিছু রূপালি রঙের গয়না।শালিক বরাবরই ভারী মেকাপ বা সাজগোজের বিপক্ষে। মেট্রিকের পরে এক বান্ধবীর বিয়ের সাজ দেখে সে নিজের অবস্থানে শক্তপোক্ত হয়। লুজ পাউডারের প্রভাবে সে বার শালিকের বান্ধবী তৃষাকে জন্ডিস রোগীর থেকে কোনো অংশে কম লাগছিলো না।

হুমায়ুন আহমেদের উপন্যাসের নারী চরিত্রদের মতো শালিকের ভুবন ভোলানো তেমন রূপ নেই।ফর্সা হলেও শালিকের মুখে ব্রণ ব্রণের দাগের কোনো কমতি ছিলো না।সমাজের কাছে এ নিয়েও যে কত কথা শুনতে হয়েছে তার হিসেব নেই।সমাজের মানুষের শালিকের মুখের দাগ নিয়ে হাজারটা সমস্যা থাকলেও আহানের কোনো সমস্যা ছিলো না।আহানের কাছে তার প্রেয়সী শশীর অবতার।যাকে দাগেই মানায়। যার সৌন্দর্য দাগেই।

এমন না যে শালিক সাজতে পারে না। সে পারে সাজতে। কিন্তু সে মেকাপের ভারী আস্তরণে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত সৌন্দর্যকে ঢাকতে নারাজ।বিয়ের দিনও শালিক নিজেকে সম্পুর্ন সাধারণ রাখে।আহানের দেওয়া লাল জামদানীর সাথে হালকা পাতলা রূপোর গয়নাগুলোর মধ্যে ছিলো একটা হাল্কা ভৃঙ্গরাজ ফুলের নকশা খোচিত গলার চোকার,ভৃঙ্গরাজ ফুলের টানা ওয়ালা একজোড়া কানের দুল,কানের দুল আর চোকারের সাথে মিলিয়ে টিকলি।হাত ভর্তি লাল রঙের রেশমী কাঁচের চুড়ি।নামে মাত্র ফাউন্ডেশনের একটা পাতলা আস্তরণ দেয় শালিক।ব্রণের দাগ গুলো ঢাকে না সে।এগুলো আহানের প্রিয়।হাল্কা ব্লাশন,কাজল,লাল লিপস্টিক আর টিপে পূর্ণতা পায় শালিকের বধূ সাজ। বিয়েতে চুলে গাজরা পরার খুব শখ ছিলো শালিকের।আহান তা অপুর্ণতা রাখে না।সাথে হাতে পরার জন্যও দুটো গাজরা এনে সাদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়।

আহান পরেছিলো শালিকের সাথে মিলিয়ে লাল পাঞ্জাবী।কাছের কিছু বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনদের এই ঘরোয়া বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়।আনানও আসে।ফেলতে পারেনি আহান শালিকের অনুরোধ আবদারকে।তবে মানুষজনের কাছ থেকে দূরে দূরেই থাকে আনান।তারপরও এড়িয়ে যেতে পারে না আনান তাদের বিষমিশ্রিত মন্তব্য।

” বড় ছেলের বিয়ে না দিয়ে ছোটটার বিয়ে দিলো যে?বড় ছেলের নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে।”

মানুষের নামে সমালোচনা,নিন্দানোতে এরা পিএইচডি করা।পাড়ার মোড়,চায়ের দোকান গুলোতে বুদ্ধিজীবী পাওয়া যায়।যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা যদি পাড়ামোড় চায়ের দোকান গুলোতে হা ম লা চালাতো তাহলে মানুষের নামে সমালোচনা,নিন্দানোর জন্য এরা থাকতো না।

আহান পাশে থাকায় কথাগুলো আহানের কান এড়ায় না।ঠোঁটকাটা স্বভাবের আহান তাদের মুখের ওপর কথা না বলে থাকতে পারে না।ভেবেছিলো বিয়ের দিনটাতে অন্তত চুপচাপ থাকবে।কিন্তু তা আর হলো না।

” আজ একটা দিনই আহানের বিয়ে। বিয়েতে এসেছেন,ইঞ্জয় করবেন,খাবেন বাসায় চলে যাবেন।সব জায়গায় সমালোচনা না করলে খাবার হজম হয় না?অবশ্য আপনারা এখনো খান নি।”

আনান নিচু স্বরে আহানকে থামার অনুরোধ করে কিন্তু আহান তা কর্ণপাত না করেই তাদের বলতে থাকে। খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষে বিয়ের কার্য আরম্ভ হয়।আহান শালিককে সামনা সামনি বসানো হয়।মাঝখানে ফুলের পর্দার ফুলের মালার ফাঁক ফোকর দিয়ে প্রেয়সীকে দেখার বৃথা চেষ্টা করে আহান।এক হাত লম্বা ঘোমটা দ্বারা নিজেকে আড়াল করে রেখেছে শালিক।তিনবার ❝কবুল❞ শব্দটা বর কনের মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়ার মাধ্যমে বিয়ে পড়ানোর কার্য সম্পন্ন হয়।রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে আইনত ভাবে একে অপরের হয়ে যায় আহান শালিক। আহান উঠে হাঁটু গেড়ে বসে ফুলের পর্দার লম্বা মালাগুলো সরিয়ে শালিকের মুখশ্রীর ওপর থেকে ঘোমটা সরায়। আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে ভালোবাসার চুমু একে দেয় শালিকের কপালে।

জুঁই লাজুক হাসি দেয়।আনান দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,,,

” বলেছিলাম না মেডাম যেভাবেই হোক আপনাকে নিজের করে নেবো!”

” করলেন তো সেই বুড়ো বয়সেই।চুলে পাক ধরেছে।আমার বুড়ো বর।”

জুঁইয়ের কথায় আনান হেসে।জুঁইও হাসতে লাগে।এতগুলো বছর হয়ে গেলো আজও শ্যামাঙ্গীর সৌন্দর্যে একটুও ভাটা পরেনি।উল্টো মুগ্ধতার জোয়ার বইছে।

” ভাইয়া খেঁজুর খাবি না?”

আহানের ডাকে আনানের ধ্যান ভাঙে।খানিকটা চমকেই উঠে আনান।ধ্যান ভাঙলে বুঝতে পায় এগুলো ছিলো তার কল্পনা।মানুষ মূলত একা প্রাণী।কিন্তু একা এরা বাঁচতে পারে না।কল্পনায় কাওকে না কাওকে লাগেই।তাই হয়তো রোজ জুঁইকে কল্পনায় খুঁজে বেরোয় আনান।

______💗

ফুল দ্বারা সজ্জিত ঘরে বসে আছে শালিক।ভালোও লাগছে আবার বিরক্তও লাগছে।ভালো লাগার কারণ আহানকে সারাজীবনের জন্য পেয়ে গেছে তাই আর বিরক্ত লাগার কারণ এই ভ্যাপসা গরমে শাড়ি পরে বসে থাকতে হচ্ছে তাই। আধ ঘন্টা পরে আহান আসে।আহান আসতেই শালিক উঠে গিয়ে ওকে সালাম করে।

” আম্মু করতে বলছিলো সালাম।এখন সালামি দে।”

” ঈদ নাকি যে সালামি দিবো তোকে?”

” ঈদ ইই তো আমার মতো সুন্দর একটা বউ পেলি।”

শালিকের কথা শুনে আহান ভেংচি কাটে।চোখ উল্টিয়ে বলে,,,

” কাইল্যা ছেড়ি।”

” এই তোর থেকে কিন্তু আমি ফর্সা।”

” মেকাপ করলে আমিও ফর্সা হতাম।”

আহানের কথাটা শোনা মাত্রই শালিকের মাথা গরম হয়ে যায়।ঠাস করে মে রে দেয় সে আহানকে।আহান অবাক হয়।

” আমি তোর থেকে বড় আর তোর জামাই লাগি কিন্তু আমি!”

” তো?”

” মা র লি কেন?”

” মিথ্যা দোষ দিলি কেন?”

আহান জবাবে কিছু বলে না।শালিকের গাল ধরে টে নে বলে,,,

” আমার মাথামোটা বউটা।”

বউটা শব্দ শুনতেই শালিকের মনে হলো শালিকের ফোনে ছবি তুলা হয় নি।ফোনটা আহানের হাতে দিয়ে বলে,,,

” ছবি তুলে দে।”

” ছবি তুলে দে মানে?এত এত ছবি তুললি আবার ছবি তুলা লাগে?”

” হু লাগে।বিয়ে এক বার ইই করতেছি।”

আহান খানিকটা বিরক্তই হয়।এই মেয়ের এত ছবি তুলার নেশা।ফুল দিয়ে সাজানো খাটে বসে শালিক পোজ দিতে লাগে।এবং আহানকে ছবি বিভিন্ন দিক থেকে তোলার নির্দেশনা দেয়।আহান বিরক্ত হয়ে বলে,,,

” আগে জানলে শা লা বিয়েই করতাম না।”

____💗

” তোমার ছেলে কি আর মেয়ে পেলো না?শালিক আপুকেই বিয়ে করতে হলো?”

গয়না খুলতে খুলতে মা কে কথাটা বলে অহনা।অহনা আহানের বোন।ক্লাস নাইনে পড়ে।স্বভাব চাল চলন কথা বার্তা অনেকটা মায়ের ইই মতো।শুধু শুধু মিসেস লাকী মেয়েকে নিজের অংশ রূপে দেখেন না!শালিককে তার খুব একটা পছন্দ নয়।মামাতো বোন হওয়ায় টুকিটাকি কথা বলতো।এখন ভাইয়ের বউ হয়ে গেছে।সারাজীবনের মতো মেয়েটাকে সহ্য করতে হবে।উফফ!

” মা মেয়ে মিলে তাবিজ করছে নাকি খোদায় ইই জানে।না হলে আমার ওমন ছেলে ওই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়?আরেকটা তো বিয়ের কথা শুনে যোগাযোগ ই বন্ধ করে দিয়েছে।বিয়ের উছিলায় বাসায় এলেও কেমন দূরে থাকে।”

” তাবিজ করার কথাটা মা ভুল বলো নি।করতেও পারে।”

” আসলো মাথায়।শালিকের মধ্যে কি দেখে যে আহান পাগল হলো!না আছে মেয়েটার চেহেরা না আছে অন্য কোনো গুন।সাদা চামড়াটাই আছে শুধু।তাবিজ না করলে আমার ওই ছেলের গলায় ওই মেয়েকে কেমনে ঝুলাতো?”

পানি খেতে এসে মা মেয়ের সব কথপোকথন শুনে ফেলে আনান।শালিক সুন্দরী তাই এরা যা কথা বলছে জুঁই হলে না জানি কি বলতো।ভাবতেও লজ্জা লাগে আনানের এরা ওর মা বোন।এত নিচ মানসিকতা মানুষের হয়!শালিককে বলে রাখতে হবে এদের কথা।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে