#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট১৩
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)
” তুই তৃপ্তিকে মে রে ছি স?”
” হু।”
ভাবলেশহীন জবাব দেয় শালিক।আহান রেগে যায়।দিন দিন মেয়েটার আচরণ কেমন হিংস্র হয়ে উঠছে।আহান শালিকের কোমলতাকে ভালোবাসে, হিংস্রতাকে নয়।ধমক দিয়ে বলে,,
” কেন মে রে ছি স?যদি ম রে যেত?”
” ম র লে ম র তো।আমার কি তাতে?”
” জেলের ঘানি টানতে খুব শখ হয়েছে না?কেন মে রে ছিস ওকে।”
” আচ্ছা!আমার দিকে যদি কোনো ছেলে তাকায় তাহলে তুমি তাকে কি করবে?”
” চোখ উ প ড়ে ফেলে দিবো।”
শালিক রহস্যময় হাসি দেয়।ভ্যানিলা ফ্লেভারের কোর্নেটো আইসক্রিমের ঠোঁটের আলতো স্পর্শ মুখে তুলে খেতে খেতে বলে,,,
” তৃপ্তির ভাগ্য ভালো ওর চোখ উ প ড়ে দেই নি আমি।কয়েকটা চ ড় মে রে ছি।”
” কি জন্য মে রেছি স বলবি না?”
” আমার বয়ফ্রেন্ডের দিকে নজর দিবে ওকে মা র বো না তো কি পূজো করবো? মা*** কোথাকার।”
শালিকের মুখে গা লি শুনে আহান ঠাস করে চ ড় মা রে।এমন উশৃংখল কোনো মেয়ে হয়?শালিক থ মে রে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ।তারপর ঠাস করে আহানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।বাচ্চাকালের মতো আহানের হাতে কামড় দিয়ে নিজের সব রাগ নিংড়ে নেয় শালিক।আহান চিৎকার করে।শালিক ছাড়লে আহান স্থানটায় হাত ডলতে ডলতে বলে,,,
” কু ত্তা নাকি?ছোটবেলার অভ্যাস এখনো যায় নাই?”
” নাহ যায় নাই।হুদাই মা র বি কেন তুই?”
” আমার দিকে নজর দিয়েছে তাই বলে তোর ওকে মা র তে হবে?এমন বিশ্রী গা লি দিতে হবে?”
” আলবাত মা র তে হবে,আলবাত গা লি দিতে হবে।মেয়েরা সব কিছুর ভাগ দিতে পারে কিন্তু নিজের প্রিয় মানুষের না।”
” কিন্তু আমি তো চারটা বিয়ে করবো।”
দুষ্টুমি করে বলে আহান।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে শালিক আহানের দিকে তাকায়।ভেংচি কেটে বলে,,,,
” উহুম উহুম অত বড় কলিজাটাই আছে তোমার?”
_____💗
জুঁইয়ের সাথে আকাশের বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হলো।বিয়ের সপ্তাহ খানেক পর ইই আকাশ কর্মক্ষেত্রে চলে যায়।মানুষটা আসলেই ভীষণ ভালো।জুঁই আনানের ব্যাপারে আকাশকে জানায় এবং সময় চেয়ে নেয় আকাশের কাছে।আকাশ হাসি মুখে বলে,,
” ভালোবাসার অপর নাম অপেক্ষা।তোমার জন্য আমি আমৃত্যু অপেক্ষা করতে পারি।”
তবে জুঁইয়ের শ্বাশুড়িটা বেশি সুবিধার লোক না।ওয়ারিশ সুত্রে জুঁই তার বাবার ভাগের যেটুকু পেয়েছিলো সবটুকু আকাশের নামে লিখে দেওয়ার জন্য প্রায়ই চাপ দেন আকাশের মা।বিয়ে হওয়ার পর জুঁইয়ের বাইরে যাওয়া লেখাপড়া সব বন্ধ হয়ে গেছে।আকাশ অনার্সে ভর্তি করাতে চাইলেও আকাশের মায়ের তাতে রাজ্যের আপত্তি। ভারতীয় উপমহাদেশে কেন যেন ছেলের বউকে শ্বাশুড়ি মেয়ের চোখে দেখতে পায় না।নয়তো বউ শ্বাশুড়িকে মায়ের চোখে দেখতে পায় না।বলতে গেলে এখানে মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু।একটা মেয়ে বা মহিলা কখনো অন্য মেয়ে বা মহিলার ভালো দেখতে পায় না।
ছেলেকে মাছের টুকরো বড়টা দিয়ে মেয়ের প্লেটে ছোট টুকরোটা দেওয়ার ভুল কখনোই বাবা করেন না।এটা মা করেন নতুবা দাদি করেন।
নতুন বউ ঘরে আনার পর গয়না খুলে নেওয়ার কাজটাও করেন শ্বাশুড়ি বা ননদ ননাশরা।
বউকে বেশি সময় দিলে বাড়ির মা ফুফু বোনেরাই আগে আগে সমালোচনা করে
ছেলের কাছে মায়ের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা অভিযোগ করে মাকে খারাপ বা দোষী সাব্যস্ত করার কাজটা করতেও বিবেকে বাঁধে না বউয়ের
আবার,বউয়ের নামে মিথ্যা অভিযোগ করে ছেলের দাম্পত্য জীবনে কলহ সৃষ্টি করতেও পিছপা হয় না মা বোন
ছেলেটা বিবাহিত জানা সত্ত্বেও তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক করে এক মেয়ের বৈবাহিক/সাংসারিক জীবনে আশান্তি লাগানোর কাজটাও দায়িত্ব নিয়ে করে আরেক মেয়ে
এরা সবাই কিন্তু একই জাতের।এরা সবাই নারী।প্রত্যেক্টা ঘরের কোণে একজন নারী কাঁদে আরেকজন নারীর জন্যই। মূল কথা এরা নিজেরাই নিজেদের ছোট করে।পুরুষ নয়!
____💖
বছর তিনেক পর,,,,
আনান আজ পুলিশের এসআই।বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ তার সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ।আহি মাঝে মধ্যেই ফোন দেয়।প্রাইভেট একটা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সে।শালিক উচ্চ মাধ্যমিকের প্রস্তুতি নিচ্ছে।জুঁইয়ের ব্যাপারটা দু জনেই জানতো।আনান যে নিজে থেকে বিচ্ছেদ করেছে এই বিষয়টাও শালিক আহানের অজানা নয়।বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ বন্ধের একটা কারণ রয়েছে বটে।ফোন দিলেই এরা আনানের বিয়ের প্রসঙ্গ তোলে।মেসেজেও প্রায়ই বায়োডাটা পাঠায় বিভিন্ন মেয়ের।কিন্তু আনান যে আর বিয়ে করবে না।জুঁইকে ছাড়া সে আর কাওকে অর্ধাঙ্গিনীর সম্মান দেবে না।যদিও এটা অসম্ভব। আনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে।ওয়ালেটটা বের করে জুঁইয়ের ছবিতে আলতো করে হাত বোলায় সে।এতদিনে মনে হয় জুঁই পুরোদমে সংসারি হয়ে গেছে।বাচ্চার মা ও হয়তো হয়ে গেছে আর আনানকেও ভুলে গেছে।ও ভালো থাকলেই ভালো।কিন্তু আনানের বুকের ভেতরটা আজও সেই শ্যামাঙ্গিনীর জন্য হাহাকার করে। সেদিন জুঁইকে প্রচন্ড কষ্ট দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলো আনান।প্রকৃতি হয়তো তার ইই ফল আনানকে দিচ্ছে।
” স্যার আপনি যা যা রান্না করতে বলছিলেন রান্না হইছে।”
বাবুর্চির ডাকে ধ্যান ভাঙে আনানের।আজ ১৪ই সেপ্টেম্বর। জুঁইয়ের জন্মদিন।প্রতিবছর এই দিনটাতে আনান এতিমখানার বাচ্চাদের খাওয়ায়।মোরগ পোলাও ছিলো জুঁইয়ের ভীষণ পছন্দের।গত তিন বছর ধরে আনান এই দিনটি এভাবে উদযাপন করে আসছে। আনান রান্না ঘরে গিয়ে নিজ দায়িত্বে সব খাবার গুলো প্যাকেট করে।তারপর গাড়িতে তুলে এতিমখানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
___💗
” শালিক কখনো কি তোর মনে হয় নি তুই ঠকেছিস?”
” হু,তামিমের সাথে প্রেম করে মা রা খাওয়ার পর খুব মনে হতো এটা।সর্বক্ষণ মাথায় এটা ঘুরপাক খেতো।”
শালিকের কথা শুনে আনান বিরক্ত হয়।এক লাফ দিয়ে উঠে বসে সে।হাল্কা রাগ নিয়ে বলে,,,
” তোকে বলছি না তামিমকে আনবি না আমাদের মাঝে।”
” তুমিই তো আনলা।ওহ ভালো কথা।তোমার ব্যাচমেট ছিলো না?কায়েস নাকি কি নাম?কমার্সের।”
” হু।ওই কায়েস কি করছে।”
” হুদাই মেসেজ দেয়।মতলব সুবিধার লাগতেছে না।ও কি জানে না?তোমার আমার সম্পর্কের কথা?”
” ইগ্নোর করবি।বেশি করলে মুখের ওপর দু চারটা কথা শুনিয়ে ব্লক দিবি।”
” আসবে কবে?অনেক দিন হলো দেখি না তোমায়।”
” টার্ম চলছে।টার্মের পরে প্রুফ।এরপরেই এসে ঘুরে যাবো।তোর পড়াশোনার খবর কি?”
” তুমি বয়ফ্রেন্ড। তুমি রোমান্টিক কথা বলবা।তুমি কেন পড়াশোনার কথা জিগ্যেস করবা?”
রেগে গিয়ে বলে শালিক।পড়াশোনায় আজকাল তার এক্টুও মন বসে না।শিক্ষা বোর্ডকে যদি গিয়ে বলতে পারতো,! “এতদিন যা পড়ছি তার ওপর একটা সার্টিফিকেট দিয়া দেন যাই গা।” আহানও আগে ভীষণ ছন্নছাড়া ছিলো এই পড়াশোনার ব্যাপারে।হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো এখন পড়াশোনা ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। এ প্লাস না পেলে ব্রেকাপেরও হুমকি দিয়েছে আহান শালিককে।এমন বয়ফ্রেন্ডও কি হয়?
চলবে,,,ইনশাআল্লাহ