মিঠা প্রেম পর্ব-০৮

0
603

#মিঠা_প্রেম
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(#কন্ঠ)
#পার্ট৮
(অনুমতি ব্যতীত কপি নিষেধ)

বিকালে ছাদে বসে সিগারেট টানছিলো আহান।পিছন থেকে কাঁধে কারও কোমল হাতের স্পর্শে সে পেছন ফিরে তাকায়।দেখতে পারে শালিককে।চোখে মুখে প্রফুল্লতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।

” কি খবর মেডাম?”

” ভালো।তোমার?”

” হু ভালো।”

কথাটা বলে আবার সিগারেটে টান লাগায় আহান।শালিক বিরক্ত হয়।কিন্তু প্রকাশ করে না।মনের ভেতরের বিরক্তিটাকে কৃত্রিম হাসি দিয়ে চাপা দিয়ে আহানের পাশে বসে।আহান বুঝতে পারে শালিক কিছু বলবে।সিগারেটে টান দিয়ে নিকোটিনের ধোঁয়াকে ফুসফুসের ভেতরটা ভ্রমণ করিয়ে গোধুলির মুক্ত বাতাসে সেই ধোঁয়াকে অবমুক্ত করে বলে,,,

” কিছু বলবি মনে হচ্ছে।”

” হু।বলবো বলেই এসেছি।”

” চটপট বলে ফেল।”

” বলবো আবার ধমকাবে না তো?”

” ধমকানোর কথা বললে অবশ্যই ধমকাবো।”

” তুমি নবীন বরণের দিন যেই কথাটা বললে সেটা কি সিরিয়াসলি বলেছো?”

” কোনো সন্দেহ হয়।”

নিকোটিনের ধোঁয়া ছেড়ে বলে আহান।শালিক চুপ করে থাকে।কোনো কথা বলে না।আহানকে সে বুঝ হওয়ার পর থেকে ভালোভাবে চিনে।জন্মের ঘাড়ত্যাড়া। নিজে যেটা বুঝবে সেটাই ঠিক।বাকী সব ভুল।না হলে কেউ ওভাবে বলে?নিজেকে কি ভাবে আল্লাহই জানেন।

” চুপ করে আছিস যে।”

আহানের কথায় শালিকের ধ্যান ভাঙে।শুকনো ঢোক গিলে বলে,,,,

” এ…এ..এমনি।গলায় এসে কথা আটকে যাচ্ছে।”

” এই কথাটাতো দিব্যি বললি।”

জলন্ত ফিল্টার ছুড়ে ফেলে বলে আহান।শালিক তোতলাতে তোতলাতে বলে,,,,

” ক…ক..কই।গলা পর্যন্ত এ..এ..এসে ক..ক..থা বার বার আ..টকে যা…চ্ছে।”

” হঠাৎ এমন তোতলা হলি কবে থেকে?”

শালিক চুপ।কথা বলবে না সে।বলতে গেলেই আবার তোতলানো শুরু হবে।তার থেকে নীরব থাকাই শ্রেয়।বেশ কিছুক্ষণ আহান আর শালিক পাশাপাশি বসে থাকে।কোনো কথা বলে না।আহান শালিকের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।গোধূলির সূর্যের সোনালী কিরণ মেয়েটার ওপর পরে মেয়েটার সৌন্দর্য মুগ্ধতা আরও বেড়ে গেছে।আহানের চাহনিতে শালিক বেশ লজ্জা পায়। যে কথাটা বলতে এসেছিলো সে কথাটা বলবে কি!লজ্জায় সে চোখ ই তুলে তাকাতে পারছে না। ❝শরম করলে গরম ভাত পাইবি না।❞ নানুর বলা কথাটা তৎক্ষনাৎ শালিকের মনে পরে যায়।লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে অবশেষে সে আহানকে সেই একই প্রশ্নটা করেই ফেলে।চোখ বুজে চিৎকার করে শালিক বলে,,,

” বলো না ভাইয়া।সিরিয়াসলি বলেছিলে কি না?”

” এই প্রশ্নটা আবার করতেই এত কাঁপা-কাঁপি? হ্যাঁ সিরিয়াসলিইই বলে ছিলাম।আই লাভ শালিক পাখি।”

” কিন্তু আমার কাছে মিথ্যে লাগছে।”

” বস্তির ছেলেদের সাথে প্রেম করে ধরা খাবার পর তোমার এই কথা মিথ্যা লাগবেই।”

” মনের ধারণা বাদ দাও।এখানে বিজ্ঞানের ব্যাখাও আছে।”

শালিকের কথা শুনে আহান তাচ্ছিল্যের ভাব নিয়ে বড় বড় চোখ করে তাকায়।

” সবে মাত্র কলেজে উঠেছিস এখনই এত কিছু জেনে গেছিস।শুনি।বল বিজ্ঞানের কি ব্যাখ্যা।”

নড়ে চড়ে গালে হাত দিয়ে বসে আহান।শালিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,,,,

” পৃথিবীতে সব ভালোবাসার স্থায়িত্ব বড়জোর চার বছর।”

” আচ্ছা!তা কেন শুনি?”

ইয়ার্কির ছলে বলে আহান।শালিক বিরক্ত হয় আহানের এ হেন আচরণে।আবারও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,,,

” ৪ বছর পর পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা নামক বৃক্ষ নেতিয়ে যায়। কারণ তখন একপর্যায়ে এসে ডোপামিন হরমোন তেমন নিঃসরণ হয় না।আর এই ডোপামিন হরমোনের কারণেই মূলত মন উড়ু উড়ু করে। সেখানে চার বছর যাবৎ আমার ছবি ফোনের ওয়ালপেপার, ওয়ালেটে নিয়ে তুমি ঘুরেছো। আমার মনে হয় তোমার ভালোবামা নামক বৃক্ষের আয়ু শেষ পর্যায়ে এসে গেছে আহি ভাইয়া।”

শালিকের কথা শুনে আহান শীতল দৃষ্টি নিয়ে শালিকের দিকে তাকায়।শালিক সেই চাহনির নেশায় পরতে গিয়েও পরলো না।চোখ ফিরিয়ে নিলো।মনে মনে নিজেকে সতর্ক করতে লাগলো।

“ ব্যাডা হইতে সাবধান।”

আহান শীতল চাহনি আর কন্ঠ নিয়ে শালিককে বলে,,,,

” আমাদের সবার ভেতরেই মায়া নামক একটি বৃক্ষ থাকে।যার আয়ুকাল আমৃত্যু।বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় ডোপামিন হরমোনের কারণে ভালোবাসার নামক বৃক্ষের আয়ু স্থায়িত্ব চার বছর হলেও মায়া নামক বৃক্ষের আয়ু আমৃত্যু।আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোর প্রতি আমার মায়া বিন্দুমাত্রও কমবে না।উলটো বাড়বে।”

” বাদ দাও আহি ভাইয়া।এগুলো মরিচীকা।মরুর বুকে কখনো সরোবর হয় না।”

” কিন্তু সমুদ্র আর মরুভূমি তো এক হতে পারে।”

আহানের কথা শুনে শালিক অবাক হয়।ভ্রু কুঁচকিয়ে বলে,,,

” মানে?”

” মানে উত্তর চিলির আন্তোফাগাস্তা অঞ্চলে প্রশান্ত মহাসাগর আর আতাকামা মরুভূমি এক হয়েছে।ঠিক এভাবেই প্রেমের সাগর আর অপ্রেমের রুক্ষ মরুভূমি এক হবে।জেনারেল নলেজ আর কমন সেন্সটা বরাবরই কম তোর।”

” সাথে তোমার সাথে কথায় জিততে পারার স্কিলটাও।”

ভেংচি কেটে উঠে যায় শালিক।শালিকের এ হেন আচরণে আহানের হাসি পায়।সে বোকা বোকা হাসতে লাগে।হাসতে হাসতে আরেকটা সিগারেট ধরায় সে।হঠাৎ কেউ এসে সিগারেটা তার ওষ্ঠাধর জোড়া থেকে কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।আহান হতভম্ব হয়ে উঠে দাঁড়ায়।

” আমার সাথে প্রেম করতে হলে এই ক্যান্সার স্টিক বয়কট করতে হবে।”

শালিক চলে যায়।

______💗

” সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা।তারপরে হয়তো মামী বিয়ে দিয়ে দিবে।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে জুঁই।আনানের সাথে ফাজলামো করা তার দৈনিকের কর্ম এটা আনানের অজানা নয়।স্বভাবগত ভাবেই ধরে নেয় যে জুঁই তার সাথে মজা করছে।ভাবলেসহীন কন্ঠে বলে,,,

” সবসময় ইয়ার্কি করবে না জুঁই। এসব ইয়ার্কি ভালো লাগে না।”

” ইয়ার্কি নয়।আইএম সিরিয়াস আনান।”

আনানের সেই এক ইই কথা।ইয়ার্কি করছে জুঁই।অবশেষে জুঁই বিরক্ত হয়ে চলে যায়।তিন দিন পর থেকে জুঁইয়ের পরীক্ষা। বলতে গেলে আজ ইই ছিলো আনান জুঁইয়ের শেষ দেখা।এরপরে দেখার হলে দূর থেকে দেখতে হবে।কারণ জুঁইয়ের মামা জুঁইকে হলে নিয়ে যাবে আর হল থেকে নিয়ে আসবে।আর জুঁই চায় না তার মামা এই সম্পর্কের কথা জানুক।শুধু মামা কেন!পুরো দুনিয়ার থেকে সে আনানকে আড়াল করতে চায়।জুঁই কু নজরে বড্ড ভয় পায়।হাদিসে বর্ণিত রয়েছে বদ নজর উটকে রান্নার পাতিল আর মানুষকে কবর পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে।একারণে বদ নজরে জুঁইয়ের বড্ড ভয়।
আনান জুঁইয়ের পিছু পিছু উঠে যায়।পেছন থেকে ”রাগিনী” বলে জুঁইকে ডাকতে লাগে কিন্তু জুঁই সাড়া দেয়।আনানের এমন গা ছাড়া ভাবে তার বড্ড রাগ হয়েছে।যার দরুন তার দৃষ্টিসীমানা ঘোলাটে হয়ে এসেছে নোনাজলে।আনান গিয়ে জুঁইয়ের সামনে দাঁড়ায়।জুঁই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই সে খপ করে হাতখানা ধরে ফেলে।

” এতই রাগ হয়েছে মেডামের?”

জুঁই চুপ কোনো কথা বলে না।আনান দেখে তার প্রেয়সীর আঁখিতে জমে আছে নোনাজল। গোধুলির সোনালী আভায় সেগুলো স্বর্ণবিন্দুর ন্যায় অবলোকন হচ্ছে।কান্নায় শ্যামাঙ্গিনী জুঁইয়ের মুগ্ধতা লাবণ্যে একটুও ভাটা পরেনি।উল্টো উত্তাল জোয়ার এসেছে।

” আজকে শেষ দেখা এর পরে লম্বা সময় দেখা হবে না।আজকেও এমন করবে?”

” চিরদিনের জন্যও শেষ দেখা হতে পারে আনান।”

জুঁইয়ের কথা শেষ হতে না হতেই আনান ওর মুখ চেপে ধরে।অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলে,,,

” প্লিজ এমন কথা বলবে না জুঁই।”

জুঁই আনানের হাত ওপর মুখ থেকে সরিয়ে নেয়।অশ্রুসিক্ত চোখে বলে,,,,

” আমি ইয়ার্কি করছি না।মামী তার বোনের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে।”

” এখন তোমার মামা মামীর সামনে যাবো তারা কি বলবে।একে তো আমার ফ্যামিলি ভালো না তারওপর আমি বেকার।তারা কখনোই আমায় তোমার হাতে তুলে দেবে না।উলটো অত্যাচার করবে তোমার ওপর।”

” মাঝপথে যদি এভাবে হাত ছেড়ে দিয়ে একলা করার কথা ইই ছিলো তো কেন এসেছিলে আমার জীবনে।”

আনান চুপ কোনো কথা বলে না।জুঁই চোখের পানি মুছতে মুছতে গটগট করে চলে যায়।আনান সেখানেই পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকে।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে